বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় গত শনিবার সন্ধ্যায় মঞ্চস্থ হচ্ছিল ‘নিত্যপুরাণ’ নাটকের প্রদর্শনী। কিন্তু বিক্ষোভের মুখে মাঝপথে নাটকটির প্রদর্শনী বন্ধ করে দেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক সৈয়দ জামিল আহমেদ। এ ঘটনায় শনিবার রাত থেকেই সামাজিক মাধ্যমে চলছে তোলপাড়। তবে এ নিয়ে ‘নিত্যপুরাণ’-এর প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ‘দেশ নাটক’-এর পক্ষে এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি দেওয়া হয়নি।
জানা যায়, শনিবার সন্ধ্যায় ‘নিত্যপুরাণ’ নাটকের পূর্বনিধারিত প্রদর্শনী ছিল। বিকাল থেকে টিকিট বিক্রিও শুরু হয়। কিন্তু সন্ধ্যা ৬টার দিকে একদল লোক শিল্পকলার গেটের সামনে দেশ নাটকের এহসানুল আজিজ বাবুকে ‘আওয়ামী লীগের দোসর’ আখ্যা দিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। পরে একাডেমির মহাপরিচালক সৈয়দ জামিল আহমেদ গিয়ে বিক্ষোভকারীদের শান্ত করলে যথারীতি নাটকের প্রদর্শনী শুরু হয়। কিন্তু পরবর্তীতে বিক্ষোভকারীরা আবারও সংগঠিত হয়ে নাট্যশালার গেটের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন।
এক পর্যায়ে গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করলে শিল্পকলার মহাপরিচালক ‘দেশ নাটকের’ সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে প্রদর্শনী বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেন।
গতকাল রবিবার সকালে ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলন করে নাটক বন্ধের কারণ, ওই সময়ের পরিস্থিতি ও করণীয় নিয়ে কথা বলেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক।
জামিল আহমেদ বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে দেশের ২২ জায়গায় শিল্পকলা একাডেমিতে হামলা হয়েছে। সেসব আমার মাথায় ছিল। ঢাকার শিল্পকলা একাডেমির নাট্যশালার হলের ভেতরে দর্শক ছিল। উত্তেজিত কেউ গিয়ে যদি দর্শকদের আক্রমণ করে বসে সে শঙ্কাও ছিল। দর্শকের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে আমরা প্রদর্শনী বন্ধ করি। আমি ভেতরে গিয়ে দর্শকদের কাছে ক্ষমা চেয়েছি।’
ঘটনা সম্পর্কে সৈয়দ জামিল আহমেদ বলেন, ‘সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চে শিল্পকলার আয়োজনে যাত্রা উৎসব চলছে। আমি এবং নাট্যকলা বিভাগের পরিচালক ফয়েজ জহির সেখানে ছিলাম। নাট্যশালার সামনে বিক্ষোভ হচ্ছে শুনে আমি সেখানে যাই। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলি। তারা বলেন, এহসানুল আজিজ বাবু স্বৈরাচারের দোসর। তার নাট্যদলের প্রদর্শনী করতে দেবে না। আমি তাদের বুঝিয়েছি, দেশ নাটকের জনা বিশেক সদস্যও জুলাই গণ-অভ্যুথানে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছেন। তাদের মধ্যে এক গুলিবিদ্ধও হয়েছেন।’
সৈয়দ জামিল আরও বলেন, ‘প্রথমে তারা আমার কথা মেনে নেয়। আমরা নাটকের প্রদর্শনী শুরু করতে বলি। কিন্তু পরে আবার বিক্ষোভ শুরু করে তারা। তখন তারা বেশ উত্তেজিত হয়ে পড়ে। তাদের একজন নিজেকে রিকশাচালক পরিচয় দিয়ে জানায় যে, জুলাই আন্দোলনে তিনিও গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।’
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, বিক্ষোভকারীরা দেশ নাটকের সদস্য এহসান আজিজ বাবুর ফেসবুকে দেশবিরোধী নানা প্রচারণা ও বর্তমান সরকার প্রধানসহ অন্যান্য উপদেষ্টার ব্যাঙ্গাত্মক কার্টুন প্রকাশ ও রাজাকার আখ্যা দেওয়ার প্রতিবাদ জানিয়েছে। পাশাপাশি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাকে নাটকের দল থেকে বহিষ্কার করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানায়।
হাসান