দেশের পোলট্রিশিল্প বিকশতি হচ্ছে। পাশাপাশি নানা সমস্যাও রয়েছে। এ খাতের সবচেয়ে বড় সমস্যা সিন্ডিকেটের আধিপত্য ও বাজার নিয়ন্ত্রণ। এর সমাধানে সরকারি ফিড মিল ও হ্যাচারি চালু করা, ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা এবং বাজারে ভারসাম্য বজায় রাখতে একটি মনিটরিং (তদারকি) সেল গঠন করা প্রয়োজন। পোলট্রিশিল্পের সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে খবরের কাগজ কথা বলেছে বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএ) সভাপতি মো. সুমন হাওলাদারের সঙ্গে। সাক্ষাৎকারে নিয়েছেন সাখাওয়াত হোসেন সুমন।
খবরের কাগজ: পোলট্রিশিল্পের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?
সুমন হাওলাদার: বাংলাদেশের পোলট্রিশিল্প বর্তমানে একটি সংকটময় সময়ের মধ্যে রয়েছে। করপোরেট সিন্ডিকেট এবং বাজারের ভারসাম্যহীনতার কারণে প্রান্তিক খামারিরা তাদের উৎপাদনের জন্য ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না, ফলে তারা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। এর ফলে অনেক খামারি তাদের উৎপাদন বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছেন, ফলে পোলট্রিশিল্পের স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়েছে।
খবরের কাগজ: পোলট্রিশিল্পের উন্নয়নে বিপিএর ভূমিকা কী এবং ভবিষ্যতে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে?
সুমন হাওলাদার: বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ) পোরট্রিশিল্পের উন্নয়নের জন্য একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো সরকারি ফিড মিল এবং হ্যাচারি চালুর উদ্যোগ, যাতে করে করপোরেট সিন্ডিকেটের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ ভাঙা যায়। এ ছাড়া, বিপিএ ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে খামারিদের সরাসরি বাজারে সংযোগ স্থাপনের ব্যবস্থা করেছে, যা তাদের লাভজনক উৎপাদন নিশ্চিত করবে। ভবিষ্যতে খামারিদের জন্য ঋণ সুবিধা সহজলভ্য করার উদ্যোগ এবং প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।
খবরের কাগজ: পোলট্রিশিল্পের জন্য সরকারের নীতি এবং সহায়তা সম্পর্কে কিছু বলুন?
সুমন হাওলাদার: সরকার পোলট্রিশিল্পের উন্নয়নে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, কিন্তু সেগুলোর কার্যকর বাস্তবায়ন এখনো হয়নি। উদাহরণস্বরূপ, ফিড মিল এবং হ্যাচারি স্থাপন প্রক্রিয়ায় আরও উদ্যোগী হতে হবে। সরকারের উচিত প্রান্তিক খামারিদের জন্য ন্যায্যমূল্য নির্ধারণ এবং বাজারের ওপর শক্ত মনিটরিং ব্যবস্থা তৈরি করা, যেন তারা বাজারে প্রতিযোগিতা করতে সক্ষম হন।
খবরের কাগজ: পোলট্রি মাংস ও ডিমের বাজারে দাম বৃদ্ধি এবং সরবরাহের সমস্যা সম্পর্কে আপনার মতামত সম্পর্কে বলুন।
সুমন হাওলাদার: বর্তমানে পোলট্রি মাংস ও ডিমের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা মূলত সিন্ডিকেটের কারণে। এই একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ খামারিদের জন্য ক্ষতিকর, কারণ তারা উৎপাদন খরচ মেটাতে পারছেন না। এর সমাধানে, সরকারি উদ্যোগে ফিড মিল ও হ্যাচারি চালু করার পাশাপাশি খামারিদের জন্য সরাসরি বিক্রির ব্যবস্থা করা প্রয়োজন, যাতে তারা বাজারের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারেন।
খবরের কাগজ: পোলট্রি খামারে রোগবালাইয়ের সমস্যা অনেক বড় একটি বিষয়। বিপিএ এই সমস্যা মোকাবিলায় কী পদক্ষেপ নিচ্ছে?
সুমন হাওলাদার: পোলট্রি খামারে রোগবালাই একটি বড় চ্যালেঞ্জ, কিন্তু বিপিএ খামারিদের জন্য স্বাস্থ্যবিধি ও রোগ প্রতিরোধে আধুনিক ব্যবস্থা গ্রহণে সচেষ্ট। তারা নিয়মিত সচেতনতা কার্যক্রম এবং উন্নত চিকিৎসাপদ্ধতির মাধ্যমে রোগ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করছে। খামারিদের রোগ প্রতিরোধক ব্যবস্থা ও স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে প্রযুক্তি ব্যবহার করতে উৎসাহিত করা হচ্ছে।
খবরের কাগজ: পরিবেশবান্ধব পোলট্রি চাষের জন্য বিপিএ কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেছে কি না?
সুমন হাওলাদার: হ্যাঁ, বিপিএ পরিবেশবান্ধব পোলট্রি চাষের জন্য আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের উদ্যোগ নিয়েছে। তারা খামারের বর্জ্য থেকে জৈব সার উৎপাদন এবং পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে পোলট্রি চাষ পরিচালনার জন্য খামারিদের উৎসাহিত করছে, যাতে পোলট্রিশিল্পের পরিবেশগত প্রভাব কমে।
খবরের কাগজ: বর্তমানে পোলট্রি খামারি ও প্রোডিউসারদের মধ্যে সবচেয়ে বড় সমস্যাগুলো কী এবং সেগুলোর সমাধান কীভাবে করা যেতে পারে?
সুমন হাওলাদার: সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো সিন্ডিকেটের আধিপত্য এবং বাজার নিয়ন্ত্রণ। এর সমাধানে, সরকারি ফিড মিল ও হ্যাচারি চালু করা, ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা এবং বাজারের ভারসাম্য বজায় রাখতে একটি মনিটরিং সেল গঠন করা প্রয়োজন। তাছাড়া, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে খামারিদের সরাসরি বাজারে সংযোগ তৈরি করা প্রয়োজন।
খবরের কাগজ: পোলট্রিশিল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে আপনার কী দৃষ্টিভঙ্গি? এই শিল্প কোন দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলে আপনি মনে করেন?
সুমন হাওলাদার: পোলট্রিশিল্পের ভবিষ্যৎ খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিশেষত যদি প্রান্তিক খামারিদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা যায় এবং বাজারে প্রতিযোগিতা বাড়ানো যায়। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে খামারিরা সরাসরি বাজারে তাদের পণ্য বিক্রি করতে সক্ষম হবেন এবং সরকারি সহায়তার মাধ্যমে শিল্পের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে। এই শিল্পে টেকসই উন্নয়ন এবং লাভজনক বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে।
খবরের কাগজ: আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের পোলট্রিশিল্পের অবস্থান কেমন এবং বিশ্ববাজারে এর প্রতিযোগিতার সঙ্গে কীভাবে মানিয়ে চলা সম্ভব?
সুমন হাওলাদার: বাংলাদেশের পোলট্রিশিল্প আন্তর্জাতিক বাজারে ধীরে ধীরে প্রভাব বিস্তার করছে। বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতা করতে হলে আমাদের উৎপাদন খরচ কমাতে হবে এবং পণ্যের মান বাড়াতে হবে। আন্তর্জাতিক মানের পণ্য সরবরাহ করতে পারলে বাংলাদেশের পোলট্রিশিল্প বিশ্ববাজারে আরও প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠবে।
খবরের কাগজ: নতুন পোলট্রি খামারি হিসেবে যারা এই ব্যবসা শুরু করতে চান, তাদের জন্য কী পরামর্শ দেবেন?
সুমন হাওলাদার: নতুন পোলট্রি খামারিদের জন্য প্রথমেই প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা এবং বাজারের চাহিদা বুঝে উৎপাদন শুরু করা উচিত। এ ছাড়া, সরকারি সহায়তা এবং ঋণ সুবিধা ব্যবহার করে ব্যবসা শুরু করা উচিত, যাতে প্রাথমিক পর্যায়ে আর্থিক সহায়তা পাওয়া যায়।
খবরের কাগজ: খামারিদের জন্য ঋণ সুবিধা বা ফিন্যান্সিং সুযোগ বিষয়ে বিপিএর কোনো উদ্যোগ আছে কি?
সুমন হাওলাদার: বিপিএ খামারিদের জন্য সহজ শর্তে ঋণ সুবিধা এবং সরকারি সহায়তা প্রদানের জন্য উদ্যোগ নিয়েছে। এই সুবিধাগুলো প্রান্তিক খামারিদের জন্য বিশেষভাবে উপকারি, যাদের আর্থিকসংকট কাটানোর জন্য ঋণ প্রয়োজন।
খবরের কাগজ: ডিম ও মুরগির বাজারে স্বস্তি রাখতে বিপিএর লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য কী?
সুমন হাওলাদার: বিপিএর মূল লক্ষ্য হলো ডিম ও মুরগির বাজারে দাম ও সরবরাহের ভারসাম্য বজায় রাখা। এ জন্য তারা নিয়মিত বাজার বিশ্লেষণ এবং খামারিদের জন্য প্রান্তিক পণ্য সরবরাহের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। বিপিএ খামারিদের সাহায্য করতে এবং তাদের পণ্য বাজারে সঠিক মূল্য প্রাপ্তির জন্য বাজার ব্যবস্থাপনা ও সরবরাহ শৃঙ্খলা শক্তিশালী করার জন্য কাজ করছে। সংকটকালে সরবরাহ সিস্টেম সহজতর করার জন্য বিপিএ নিত্যনতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করছে, যার মধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা করার জন্য উন্নত মানের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং স্থানীয় বাজারের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।