প্রকৃতির দিকে তাকালেই দেখতে পাওয়া যায় হাজারো রঙ। তা ফুল হোক কিংবা ফল। ফলের রঙে মুগ্ধ হয়ে ফ্যাশন ডিজাইনার বিপ্লব সাহা তৈরি করেছেন বেশ কিছু ছেলেদের পোশাক। তার সঙ্গে কথা বলে সেসব পোশাক নিয়ে লিখেছেন মেরিনা আহমেদ
‘রঙ’ একটি শব্দ। কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা জানতে না পারছি কী রঙ, ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের কল্পনায় সে ধরা দেয় না। যখনই জানতে পারছি ‘সবুজ রঙ’ তখনই কল্পনায় ভেসে ওঠে সবুজ রঙের অনেক রূপ। তা শুধু হালকা সবুজ বা গাঢ় সবুজ বলে বর্ণনা করা যাবে না, সম্ভবও না। ওই রং প্রকৃতিতে কোন জিনিসে অবস্থান করছে সে জিনিসটির নাম ধরে বলতে হবে। যেমন- পেয়ারা পাতার মতো সবুজ অথবা বাঁধাকপির খেতের মতো নীলচে সবুজ। এখানে কিন্তু পেয়ারা পাতার সবুজ অথবা বাঁধাকপির সবুজ সম্পূর্ণই আলাদা।
এসব ফল আর ফুল আমাদের উদ্বুদ্ধও করে নানাভাবে। উসকে দেয় আমাদের সৃজন ভাবনা। ফুল নিয়ে অনেক কথা হয়। কাজও হয়। ফল নিয়ে ততটা হয় না। এবার একটু ফলকেই না হয় প্রাধান্য দেওয়া হোক।
অবশ্য আমরা জানি, বিদেশের ডিজাইনাররা মৌসুমি ফল থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছেন। নানা প্রিন্টে ব্যবহার করেছেন। আমাদের এখানকার ডিজাইনাররাও তাদের অনুসরণ করেছেন। এবারের গ্রীষ্মেও সে উদাহরণ আমরা দেখেছি। ফ্যাশন ডিজাইনার বিপ্লব সাহার মাথায় খেলে নানা কিছু। এবারও তেমন কিছুই তিনি করেছেন। নানা ফল থেকে তিনি সৃষ্টির প্রেরণা পেয়েছেন। এসব ফলের বেশির ভাগই গ্রীষ্মের। মাল্টা তো সারা বছরই পাওয়া যায়। আর কমলা শীতের হলেও এখনো আছে বাজারে। ফলে গ্রীষ্মের ফলের সঙ্গে এই দুটি ফল যোগ হয়েছে। তাতে রঙের প্যালেট হয়েছে বৈচিত্র্যময়।
আবার ফটোশুটও তিনি করেছেন ঘটনাস্থলে। মানে প্রতিটি ফলের সমাহারকেই তিনি বেছে নিয়েছেন ব্যাকগ্রাউন্ড হিসেবে। এতে পোশাকের রং আর ফলের রং এবং আবহ এক চমৎকার দ্যোতনা সৃষ্টি করেছে। দিন কয়েক আগে তার সঙ্গে এই বিষয় নিয়ে কথা হচ্ছিল। তিনিই জানালেন ফলের রঙে উদ্বুদ্ধ হয়ে নতুন পোশাক তৈরির বিষয়টি। তিনি অবশ্য ছবিগুলোও শেয়ার করেন।
বিপ্লব সাহা জানান, বাংলার ঋতুবৈচিত্র্য তাকে সৃষ্টির প্রেরণা দেয়। পোশাক তৈরিতেও প্রকৃতির অনাবিল বর্ণবৈচিত্র্য তাকে উদ্দীপ্ত করেছে।
এই প্রসঙ্গে বিপ্লব সাহা বলেন, ‘আমরা কিন্তু কোনো রঙের প্রসঙ্গ এলে কোনো না কোনো ফল, ফুল বা পাতার রঙের সঙ্গে তুলনা করি। এটাই প্রমাণ করে প্রকৃতি আমাদের জীবনের সঙ্গে কতটা জড়িয়ে আছে। এ জন্যই একটা ভালো কাজ করার সময় প্রকৃতির এই সময়ের ফলের রঙে আস্থা রাখি।’
কথায় কথায় বিপ্লব সাহা জানান শুটের পরিকল্পনাও। সেটা যে খুব সহজ ছিল তা নয়। তবু তিনি ঠিকই সামলে নিয়েছেন। প্রচণ্ড গরমের কারণে এই পোশাক তৈরিতে কিছুটা বিলম্ব হলেও গরমকে উপেক্ষা করে বাইরেই শুট করেছেন। যেটা যেখানে পেয়েছেন সেখানেই গেছেন।
‘ইনডোরে হয়তো করা যেত, গ্রাফিক্সের সাহায্যও নেওয়া যেত; কিন্তু আমি সেটা চাইনি। তাই গরম সত্ত্বেও বাইয়ে গিয়ে শুট করেছি। মডেল সিয়াম আর ফটোগ্রাফার সুজনকে নিয়ে চলে যাই এবং ঘুরে ঘুরে শুট করি’, যোগ করেন বিপ্লব সাহা। ভীষণ আরামদায়ক আর আকর্ষণীয় এসব পোশাক কেবল ছেলেদের। মেয়েরা অতএব, একটু হতাশ হতেই পারেন। তবে ভবিষ্যতে তাদের জন্য নিশ্চয়ই ফলের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে পোশাক তৈরি করবেন বিপ্লব সাহা।
পোশাক মানুষকে বাহ্যিকভাবে সুন্দর করে তোলে। পোশাকের রঙ-ই সবার আগে মানুষের নজর কাড়ে। তারপর নকশা ও প্যাটার্ন। রঙ চঙে পোশাকই একটি মানুষকে সুন্দর করে তুলতে পারে। দৃষ্টিনন্দন সব রঙ আর আরামদায়ক কাপড় পরার আনন্দ নিশ্চিত হবে কোনো সন্দেহ নেই। ফলের রঙ থেকে অনুপ্রাণিত এসব পোশাক পাওয়া যাবে বিশ্বরঙের সব আউটলেটে। বিশ্বরঙের সাব-ব্র্যান্ড বিআর কোড বাই বিপ্লব সাহা অধীন বাজারজাত করা হয়েছে এসব পোশাক।
কলি