প্রাণবন্ত ঝলমলে চুল কার না পছন্দ, হোক তা বড় কিংবা ছোট। বর্তমানে ছোট চুলের ট্রেন্ড চলছে। অনেকে ব্যস্ততা কিংবা নানাবিধ কারণে চুল ছোট রাখতে পছন্দ করেন। চুল ছোট হলে তার যত্ন করতে নেই এমন ভাবনা অনেকেরই থাকে তবে এটি ভুল। চুল ছোট কিংবা বড় যেমনই হোক সঠিক যত্ন ছাড়া চুলের সৌন্দর্যে ভাটা পড়ে। ছোট চুলের যত্ন নেওয়া মোটামুটি সহজ। এ সম্পর্কে জানিয়েছেন জারা’স বিউটি লাউঞ্জ অ্যান্ড ফিটনেস সেন্টারের স্বত্বাধিকারী ফারহানা রুমি। তার সঙ্গে কথা বলে লিখেছেন হাসিবা আক্তার
চিরুনির অতিরিক্ত ব্যবহার পরিহার করতে হবে। ছোট চুলে সাধারণত জট বাঁধার প্রবণতা কম থাকে। চুলে অতিরিক্ত ব্রাশ চুলের ভলিউম কমে যেতে পারে। লম্বা চুলের তুলনায় ছোট চুলে জট কম হয়, তাই ব্রাশ না করে শুধু আঙুল দিয়েই হালকা করে চুলগুলো আঁচড়ে নিতে পারেন।
চুলে নতুনত্ব আনার জন্য অনেকেই হিটিং টুলস ব্যবহার করে থাকেন। ছোট চুলের জন্য এ ধরনের হিটিং টুলসের অত্যধিক তাপ হতে পারে চুল ভঙ্গুর হওয়ার কারণ। খুব ঘন ঘন এই টুলসগুলো ব্যবহারের ফলে চুল রুক্ষ এবং নিস্তেজ হয়ে যেতে পারে। তাই চেষ্টা করতে হবে এগুলো কম ব্যবহারের।
চুল ফেটে যাওয়া বা রুক্ষ হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা থেকে বাঁচতে ছয় সপ্তাহ পরপর চুলে ট্রিম করার অভ্যাস করুন। ছোট চুলের জন্য ট্রিমিং একটি ভালো অভ্যাস। প্রতিদিন চুল ধোয়ার অভ্যাস গড়তে হবে।
আপনার চুল ছোট হওয়ার কারণে তা স্বাভাবিকভাবেই তেল উৎপাদনকারী ফলিকলের কাছাকাছি থাকে তাই চুলে দ্রুত ময়লা জমতে পারে। এ সমস্যা সমাধানের সর্বোত্তম উপায় হলো প্রতিদিন আপনার চুল ধোয়া। ভালো মানের কোনো মাইল্ড শ্যাম্পু ব্যবহার করতে পারেন, তার সঙ্গে একটি স্ট্রং এক্সফলিয়েশন গুণসম্পন্ন কোনো শ্যাম্পু রাখবেন এবং অদল-বদল করে ব্যবহার করলে চুল ভালো থাকবে। চুলের যত্নে ডিপ কন্ডিশনার চমৎকার উপাদান। চুল সিল্কি ও ঝলমলে রাখতে এর বিকল্প নেই। বাজারে বিক্রি হয় এমন ভালো মানের কোনো ডিপ কন্ডিশনার কিনে তা ব্যবহার করা যেতে পারে। চুলের গোড়ায় ব্লাড সার্কুলেশন বাড়ানোর জন্য হট অয়েল ম্যাসাজের জুড়ি নেই। নারিকেল তেলের সঙ্গে অল্প ক্যাস্টর অয়েল মিশিয়ে তেলটা গরম করে মাথায় ধীরে ধীরে ম্যাসাজ করতে হবে।
চুলের বাড়তি যত্নে অল্প কিছু সময় বের করে ঘরেই বিভিন্ন উপাদান দিয়ে প্যাক বানিয়ে তা ব্যবহার করা যেতে পারে।
অ্যালোভেরার জেল ব্লেন্ড করে তাতে ২ টেবিল চামচ চা পাতা, ২ টেবিল চামচ বাদামের তেল, ৩ টেবিল চামচ কোকোনাট অয়েল, ২ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল মিশিয়ে তা মাথার স্কাল্পসহ সম্পূর্ণ চুলে লাগিয়ে দুই ঘণ্টা অপেক্ষা করুন। তারপর চুল ভালো করে শ্যাম্পু দিয়ে পরিষ্কার করে ধুয়ে কন্ডিশনার দিন। সপ্তাহে অন্তত একবার এই মাস্ক চুলে লাগান। এতে চুল কোমল, ঝরঝরে এবং মসৃণ হয়, শুধু তাই নয় চুল পড়াও কমে।
চুলের উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে কলা, লেবু ও পেঁয়াজের রসের প্যাক লাগাতে পারেন। একটি পাকা কলা, দুটি লেবুর রস ও দুটি পেঁয়াজের রস ভালো করে ব্লেন্ড করে নিন। এরপর গোসলের আগে চুলে মেখে আধাঘণ্টা অপেক্ষা করুন। শুকিয়ে এলে শ্যাম্পু দিয়ে গোসল করে রিঠা পানি দিয়ে আরেকবার চুল ধুয়ে ফেলুন।
চুলের ময়েশ্চার ধরে রাখার জন্য আরেকটি প্যাক ব্যবহার করতে পারেন। পরিমাণমতো মেহেদী গুঁড়া, একটি ডিমের সাদা অংশ, তাতে অল্প আমলকীর রস এবং সঙ্গে ১ চা চামচ মেথি গুঁড়া এবং পেঁয়াজের রস যোগ করুন, তারপর একসঙ্গে খুব ভালো করে মিশিয়ে তা চুলে লাগিয়ে ঘণ্টাখানেক অপেক্ষা করুন তারপর শ্যাম্পু দিয়ে ভালো করে ধুয়ে ফেলুন, কন্ডিশনার লাগাতে ভুলবেন না কিন্তু। এই হেয়ার প্যাকটি চুলের সফটনেস ফিরিয়ে আনতে ব্যাপকভাবে কার্যকরী।
ছোট চুল ভেবে যত্নের প্রয়োজনীয়তা নেই এমনটা ভাববেন না যেন। যত্ন ছাড়া কোনো কিছুই সুন্দর ও সুস্থ থাকে না তাই ছোট চুলের প্রতিও যত্নশীল হোন।
কলি