তাসলিমা নীলু ২০০৭ সাল থেকে হোপ ইন্টারন্যাশনাল বিদ্যালয়ের শিক্ষকতা করছেন। ২০১৮ সালে শিক্ষকতার পাশাপাশি কিছু করার ইচ্ছায় উদ্যোক্তা হওয়ার চিন্তা করেন। সেই চিন্তা থেকে কিছু পোশাক এনে স্কুলের কলিগ ও আত্মীয়স্বজনদের কাছে বিক্রি করেন। ভালোই সাড়া পেয়েছিলেন। একটা ফেসবুকে পেজ খুলেছিলেন। কিন্তু কীভাবে পণ্যের ছবি তুলতে হয়, সে সম্পর্কে একেবারেই ধারণা ছিল না। যা বিক্রি হতো পরিচিতের মধ্যে।
কিন্তু চাকরি ও ব্যবসা একসঙ্গে করতে পারছিলেন না। তাই ২০১৯ সেটা বন্ধ করে দেন। এরপর ২০২০ সালে করোনাকালীন যখন সবকিছু বন্ধ হয়ে যায়। স্কুলের কাজে তেমন চাপ ছিল না। এ ছাড়া তার স্বামীর চাকরি চলে যাওয়ার কারণে তিনি তার ফেসবুক পেজটা আবার চালু করেন। পুরোনো পেজটা কাজ না করার কারণে সেটা খুলতে পারছিলেন না। তাই সেলাইঘর নাম দিয়ে আরেকটা পেজ খুলেন। একটু আলাদা ধরনের নাম দেওয়ার জন্য পেজটির নাম দিয়েছিলেন সেলাইঘর। যাতে সবার মুখে মুখে থাকে। অনেকভাবে সেলাইঘর মানে সেলাই শিখানো হয়, আসলে কিন্তু তা নয়। সেলাইঘর মানে পোশাক বিক্রি হয়। তিনি সেলাইয়ের কাজ জানতেন বলে এই নামটি দেওয়া। নীলু সবসময় নিজের এবং তার শাশুড়ির জন্য অনেক কাপড় ও লেইস কিনে রাখতেন। করোনাকালীন এটি কাজে দিয়েছিল। শিশুদের একটা পোশাক বানিয়ে হাতের কাজ করে প্রথম সেলাইঘরে পোস্ট করেন। পোশাকটি ছবি পোস্ট করার পর অনেকগুলো প্রি-অর্ডার পেয়ে গেলেন। তখন নিজের আত্মবিশ্বাস বেড়ে গেল, সবগুলো অর্ডারই সময়মতো নিজেরাই ডেলিভারি করলেন। যেহেতু পেজ থেকে সাড়া ভালোই পেলেন, তাই চিন্তা করলেন একটা শোরুম দেওয়ার। ২০২১ সালে দিয়েও ফেললেন। সেখানে নিজের তৈরি পোশাকের পাশাপাশি বাইরের পোশাকও বিক্রি করা শুরু করলেন।
এই ক্ষেত্রে প্রথম যেটা হয়েছে সেটা হলো কাপড় সম্পর্কে তেমন কোনো ধারণা ছিল না। শোরুম দেওয়ার পর মার্কেটে মার্কেটে ঘুরেছেন, কোথায় ভালো শাড়ি পাওয়া যায়, কোথায় থ্রি-পিস পাওয়া যায়, সেখানে গিয়ে সেগুলো সংগ্রহ করেছেন। যত দিন গিয়েছে ততই অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। এসএমই থেকে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ধাপে ফ্যাশন ডিজাইনারের কোর্স করে সার্টিফিকেট পেয়েছেন। এটা তার জীবনের একটা বড় প্রাপ্তি। এ ছাড়া ব্লক বাটিকের ওপরে অনেকগুলো কোর্স করেছেন। বিভিন্ন রকমের মেলায় অংশগ্রহণ করে অনেকের ভালোবাসা পেয়েছেন। উদ্যোক্তা হতে গিয়ে অনেক সমস্যায় সম্মুখীন হয়েছেন। পেজের লাইভ করার সময় অনেক নেতিবাচক মন্তব্য শুনতে হয়েছে। এ ছাড়া যেখানে শোরুম দিয়েছেন সেখান থেকে কটূক্তি শুনতে হয়েছিল। কিন্তু তার স্বামী এবং তার শাশুড়ি অনেক সাপোর্ট কারণে তাকে পারিবারিকভাবে তেমন কোনো বাধা পেরোতে হয়নি। বরং অনেক বেশি সাপোর্ট পেয়েছেন।
নীলু যেহেতু দেশীয় প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করেন। তিনি চান ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী ভালো মানের পোশাক দিতে। তাই তার মূল ফোকাস হচ্ছে দেশীয় পোশাক নিয়ে কাজ করা। দেশের পণ্যকেই তুলে ধরা। দেশের গণ্ডি পেরোনোর ইচ্ছা কার না থাকে, তারও ইচ্ছা আছে। কিন্তু তার আগে দেশের ভেতরেই নিজের একটা শক্ত অবস্থান গড়ে তুলতে চান। তিনি চান তার পোশাক দেশের প্রতিটি জেলায় ছড়িয়ে যাক। সবার মুখে মুখে সেলাই ঘরের নাম থাকুক। এরপর দেশের বাইরে যাওয়ার পরিকল্পনা করবেন। এখনই দেশের অনেক জেলায় তার অনেক ক্রেতা আছে। সেসব ক্রেতাও ইনবক্সে খোঁজখবর নেন। নীলু বলেন, নারীরা কেন বসে থাকবেন। সংসার চালানোর পাশাপাশি যেকোনো কিছু করতে পারেন। সে শিক্ষিত, অশিক্ষিত যেকোনো নারীই হতে পারে। যে বিষয় তিনি দক্ষ সেটা নিয়েই কিছু করতে পারেন। পারিপার্শ্বিক অবস্থার কারণে অনেকে শিক্ষার সুযোগ পায় না।
তারাও যেন পিছিয়ে না থাকে। তাদের উদ্যোক্তা হিসেবে তুলে পারি। এখন নারীরা অনেক আগ্রহী তাই অনেক উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে। নারীরা যে যা পারেন তাই নিয়ে কাজ করেন। সেটা ক্রাফটের কাজ হোক, কিংবা গয়না তৈরি। নারীকে সৃজনশীল কাজ করতে হবে। নিজে স্বাধীনভাবে থাকতে চাইলে, নিজের যে গুণ আছে সেটা কাজে লাগাতে হবে। তারা কাজ করে আয় করে স্বনির্ভর হতে পারে। তাহলেই দেশ এগিয়ে যাবে। সরকারের কাছে নীলুর চাওয়া হলো স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা করা। সরকার যদি আমাদের স্বল্প সুদে ক্ষুদ্র নারী উদ্যোক্তাদের ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করেন থাকলে নারীরা আরও এগিয়ে যাবে।
কলি