নির্ভরতা, বিশ্বাস ও ভালোবাসার অপর নাম বন্ধুত্ব। বন্ধুত্বের বন্ধনে কোনো স্বার্থ থাকে না। বন্ধুত্বের বন্ধন আসলে কোনো কিছু দিয়ে মাপা যায় না। একজন প্রকৃত ভালো বন্ধুই হতে পারে জীবন পরিবর্তন করার জন্য যথেষ্ট। জীবনে সবচেয়ে বড় পাওয়া হয় তখনই যখন কোনো বন্ধু মানসিক দিকসহ সব ধরনের বিপদে-আপদে ছুটে এসে পাশে থাকে। একজন সত্যিকারের বন্ধু কখনোই তার বন্ধুকে ছেড়ে যায় না।
তেমনি বন্ধুত্ব গড়ে তুলেছেন ভারতের বিখ্যাত ইমামি গ্রুপের মালিকদ্বয় রাধেশ্যাম আগরওয়াল এবং রাধেশ্যাম গোয়েঙ্কা। স্কুল থেকে তাদের বন্ধুত্ব। ২০ হাজার টাকা দিয়ে ব্যবসা শুরু করে ২৫০০০ কোটি টাকার মালিক হন। বাল্যবন্ধু থেকে ব্যবসায়িক অংশীদার হয়েও বন্ধুত্বের গভীরতা কমেনি। এখনো রয়েছে তাদের আগের মতোই বন্ধুত্বের সম্পর্ক। এ ছাড়া শীর্ষ সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটসের সঙ্গে মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা পল গার্ডনার অ্যালেন বন্ধুত্বের কথা তো সবার জানা। ১৯৭৫ সালে একসঙ্গে মাইক্রোসফট প্রতিষ্ঠা করেন দুই বাল্যবন্ধু। বিল গেটস কলেজ জীবনের ইতি টেনে মাইক্রোসফট নামে নতুন এক প্রতিষ্ঠান তৈরি করতে পেরেছিলেন, পলের কারণে। পল ছিল বলেই এটা সম্ভব হয়েছিল। তাদের মতো এমন অনেক অসাধারণ বন্ধুত্বের উদাহরণ আছে। যা যুগে যুগে অমর হয়ে আছে।
প্রকৃত বন্ধুই সুখে-দুঃখে, আপদে-বিপদে সব সময়ই ছায়ার মতো পাশে থাকে। মানুষের জীবনে স্বাভাবিকভাবেই বাধা আসে, বিভিন্ন কারণে অনেকে খুব হতাশ হয়ে ভেঙে পড়েন। এমন সময় ভরসার হাত বাড়িয়ে দেন একজন প্রকৃত বন্ধুই। নিজের জানমাল নিয়ে বন্ধুর পাশে সাধ্যমতো দাঁড়ানোই বন্ধুত্বের আসল রূপ। রক্তের সম্পর্ক, বৈবাহিক সম্পর্ক, সামাজিক সম্পর্ক- সব সম্পর্কের মধ্যেই বন্ধুত্ব থাকা প্রয়োজন।
শুধুমাত্র সহপাঠীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব তৈরি হবে তা কিন্তু নয়। বয়সে ছোট বড় কিংবা পরিবারের যে কারোর সঙ্গে বন্ধুত্বের বন্ধন তৈরি হতে পারে। বন্ধুত্ব যতই পুরোনো হয়, ততই দৃঢ় হয়। উইলিয়াম শেকসপিয়ারও গেয়েছেন বন্ধুত্বের জয়গান। কাউকে সারা জীবনের জন্য কাছে পেতে হলে তাকে প্রেম দিয়ে নয়, বরং বন্ধুত্ব দিয়ে আগলে রাখার কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, ‘প্রেম এক সময় হারিয়ে যায়, কিন্তু বন্ধু কখনোই হারায় না।’
বন্ধু দিবস
জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই বন্ধুর অবদান এবং বন্ধুর প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্যই বিশ্বব্যাপী পালিত হয় বন্ধু দিবস। ২০১১ সালে জাতিসংঘ ৩০ জুলাইকে বন্ধু দিবস ঘোষণা করে। জাতিসংঘ জুলাইয়ের ৩০ তারিখ বন্ধু দিবস পালন করলেও যুক্তরাষ্ট্রের মতো বাংলাদেশ, ভারত, মালয়েশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আগস্টের প্রথম রোববার বন্ধু দিবস হিসেবে পালিত হয়।
উদযাপন
জীবনের প্রতিনিয়ত ব্যস্ততার ভিড়ে বন্ধুকে হয়তো বলা হয়ে ওঠে না, তোমাদের অনেক ভালোবাসি। এই দিনে তাদের ভালোবাসার কথা, বিশ্বাস-ভরসার কথা একে-অপরকে প্রকাশ করুন। বন্ধুদের নিয়ে দূরে কোথাও ঘুরতে গিয়ে,সিনেমা দেখা,সারপ্রাইজ পার্টি আয়োজন করে, প্রিয় কিছু উপহার দিয়ে উদযাপন করতে পারেন। এ ছাড়া ফ্রেন্ডশিপ ব্যান্ড, গিফট বাস্কেট, চকোলেট, ফোন কভার, বই, পারফিউম, ইলেকট্রনিক ডিভাইস যেমন ওয়্যারলেস ইয়ারফোন, ফিটনেস ট্র্যাকার, পোর্টেবল স্পিকার, পাওয়ার ব্যাঙ্ক ইত্যাদি উপহার দিয়ে চমকে দিতে পারেন। মানে সবাই মিলে হাসি-আনন্দে দিনটা উদযাপন করুন।
বন্ধুত্বের বন্ধন অটুট রাখতে যা করবেন
• বন্ধুকে সম্মান করুন। আপনার বন্ধু আপনার সঙ্গে তার জীবনের কতটুকু শেয়ার করতে আগ্রহী তা বোঝার চেষ্টা করুন। মাঝেমধ্যে সে হয়তো এই সম্পর্ক থেকে সাময়িক বিরতিও নিতে পারে। তাদের সিদ্ধান্তকে সম্মান করুন ও তাদের সময় দিন।
• বন্ধুর সঙ্গে ইতিবাচক চিন্তা আর শক্তিতে ভরপুর থাকুন। নেতিবাচক মনমানসিকতা ঝেড়ে ফেলুন। বন্ধু যেমন, তাকে সেভাবেই গ্রহণ করুন। একজন ভুল করলে অপরজন ভুলটা ধরিয়ে দিন। বন্ধুর ভুলগুলো সংশোধন করতে পাশে থাকুন।
• বন্ধুর সঙ্গে মন খুলে কথা বলুন। বন্ধুকে কথা বলতে দিন। ধৈর্য নিয়ে তার সব কথা শুনুন। বন্ধুত্ব রক্ষায় আপনি যে আন্তরিক তা বুঝতে দিন।
বন্ধুত্বের ভালোবাসার আভা ছড়িয়ে দিন সব বন্ধুর মাঝে। সম্প্রীতি ও ভালোবাসার বন্ধনে মুছে যাক ভুল বোঝাবুঝি আর মন খারাপের গল্প।
কলি