শিশুরাই জাতির ভবিষ্যৎ। তারা সুস্থ-সুন্দরভাবে বেড়ে উঠলে দেশ ও জাতি সুন্দর একটা আগামী পাবে। বড় হতে হতে পারিপার্শ্বিক পরিবেশ থেকে বিভিন্ন উপাদান নিয়ে নিজের শেখার পরিধিকে প্রসারিত করতে থাকে। উত্থান-পতনে আমাদের প্রতিক্রিয়া কেমন হওয়া উচিত বা কীভাবে এসব পরিবর্তনকে মানিয়ে চললে নিজের মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকবে আবার আশপাশের মানুষের জীবন ও সুখকর করা যাবে, তা নির্ভর করে ইতিবাচক মনোভাবের ওপর। শিশুর মধ্যে ইতিবাচক মনোভাব তৈরি করা দেশ ও সমাজের জন্য খুবই জরুরি। কীভাবে শিশুর মনে ইতিবাচক মনোভাব তৈরি করবেন সেই সম্পর্কে লিখেছেন শারমিন রহমান
ইতিবাচক আচরণ করা
শিশুরা সাধারণত অনুকরণপ্রিয়। আপনি যা করবেন শিশু তাই শিখে ফেলে। শিশুর সামনে নেতিবাচক শব্দ কম ব্যবহার করা। কাজে কর্মে ইতিবাচক থাকা। সাধারণত অন্যকে সাহায্য করা নিজের কাজে আগ্রহী থাকা, শিশুর সঙ্গে সব ধরনের কাজে এক ধরনের আগ্রহ প্রদর্শন করা। এতে শিশু নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ ভাবে এবং নিজের ভেতরে আত্মবিশ্বাস তৈরি হয় এতে শিশুর মধ্যে ইতিবাচক মনোভাব তৈরি হয়।
ইতিবাচক কথা
মুখের কথা শিশুর মনোজগতে অনেক পরিবর্তন ঘটায়। শিশুকে বিভিন্ন ইতিবাচক শব্দে ভূষিত করুন। উৎসাহ দেওয়া, যেকোনো কাজের জন্য ধন্যবাদ জানান। এতে শিশুর জীবন সম্পর্কে আগ্রহ বাড়ে নতুন নতুন কাজ করার সাহস পায়। নতুন কিছু করে সফল হওয়ার প্রচেষ্টা তৈরি হয়।
পুরস্কৃত করা
শিশুরা নতুন কোনো কাজে হাত দিলে তাকে উৎসাহিত করার জন্য সঙ্গে সঙ্গে একটা কিছু উপহার দেওয়া। ছোট হোক তবুও একটা উপহার তার কাজ করার স্পৃহাকে জাগিয়ে তুলবে। তাকে আরও নতুন কিছু করতে আগ্রহী করবে। নতুন নতুন রাস্তায় চললে তার কর্মদক্ষতাও বাড়বে।
মেনে নেওয়া
সন্তান নিয়ে বাবা-মায়ের অনেক ধরনের স্বপ্ন থাকে। সেসব স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে তারা সন্তানদের শিক্ষা দেওয়াসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। এসব প্রশিক্ষণ বা শিক্ষা নিতে গিয়ে যদি শিশু অনেক ভালো কিছু নাও করতে পারে তাহলে তার সেই অপারগতাকে মেনে নিতে হবে। বাবা-মা শিশুর অপারগতাকে মেনে নিলে শিশুর হীনম্মন্যতা কেটে যায়, ফলে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সাহস পায়। অভিভাবকদের মেনে নিতে হবে তাদের সন্তান পৃথিবীর সব বিষয় পারদর্শী হবে না।
ভালোবাসা
সন্তানের যেকোনো কাজে উৎসাহ যেমন দিতে হবে তেমনি কোনো কাজে সফলতা-বিফলতায় যেন ভালোবাসার তারতম্য না ঘটে। এসব বিষয়ে শিশুরা খুব সহজে অনুভব করতে পারে। কোনো কাজে বিফল হলে বাবা-মায়ের ভালোবাসা কম পড়লে তারা মানসিক চাপে পড়ে যায়। বাবা-মায়ের মন রক্ষায় বিভিন্ন ভুল সিদ্ধান্ত নিতে থাকে, এতে বিফলও হয় বেশি এবং নিজের মধ্যে নেতিবাচক চিন্তা তৈরি হয়। সুতরাং সফল হলে হয়তো ভালোবাসা একটু বেশি হবে কিন্তু বিফল হলে তার প্রতি যত্নের কমতি করা যাবে না।
বিশ্বাস করা
কোনো কাজ করতে গেলে নিজের কাজকর্ম ও আচরণে তাকে বোঝাবেন আপনি তাকে বিশ্বাস করেন এবং তার মাধ্যমে সবচেয়ে ভালো ফলাফল পাওয়া সম্ভব। এতে শিশু নিজের প্রতি বিশ্বাস অনুভব করবে এবং ঝুঁকি নিতে সাহস করবে।
সাহস দেওয়া
কোনো কাজে অসফল হলে সাহস দিতে হবে এটা হয়নি এর চেয়ে ভালো কিছু হবে। পৃথিবীর সবচেয়ে খারাপ কিছুও যে সময়ের পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে ভালো বলে প্রমাণিত হতে পারে এ সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা দিতে হবে। এতে শিশু বিফল হলেও ভেঙে পড়বে না। আবার উঠে দাঁড়ানোর শক্তি পাবে।
সিদ্ধান্ত নিতে দেওয়া
যুগ পরিবর্তন হচ্ছে। মানুষ নিজের জীবনে নতুন নতুন কৌশল, পেশা ও পদ্ধতি অবলম্বন করছে। আমাদের সন্তানদেরও যুগের এসব পরিবর্তন মেনে চলতে হবে। তাই তারা যদি কোনো বিষয় সিদ্ধান্ত নিতে চায় তাহলে তাদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ দিতে হবে। নিজের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে সহযোগিতা করতে হবে। আবার সিদ্ধান্ত ভুল প্রমাণিত হলে সাহস, শক্তি হয়ে পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। এভাবেই শিশুর ইতিবাচক মনোভাব তৈরি হবে। সর্বোপরি, আপনজনের সহযোগিতা ও ভালোবাসা পেলে এমনি অনেক কাজ সহজ হয়ে আসে। আর যদি একটু সান্ত্বনা পাওয়া যায় তাহলে ঘুরে দাঁড়াতে বেশি সময় লাগে না।
কলি