ব্যস্ত দিন অথবা নিদারুণ ক্লান্তি কিংবা স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়া- যেকোনো পরিবেশ-পরিস্থিতিতে সৌরভ আপনার মন ভালো করে দিতে পারে। ঘর থেকে বেরোনোর আগে নিজেকে একটু সুরভিত করে নিতে শেষ ধাপে ব্যবহার হয় বিভিন্ন ধরনের সুগন্ধি। সারা দিন নিজেকে স্নিগ্ধ আর সতেজ রাখতে কার না ভালো লাগে। আর তাই সতেজতার প্রথম শর্ত হচ্ছে সুরভিত থাকা। সব সময় নিজেকে সুরভিত রাখবেন কীভাবে সে সম্পর্কে জানাচ্ছেন হাসিবা আক্তার
গরম হোক কিংবা বর্ষার গুমোট আবহাওয়া, পছন্দের পারফিউমের সুগন্ধ নিমেষে মনটাকে চাঙা করে তুলতে পারে। গোসলের পর বাড়তি তরতাজাভাব আনতেও ভরসা সেই পারফিউম। তবে পারফিউম সে যত দামিই হোক, একটা সময় পর সেই গন্ধটা ফিকে হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে চাইলেও সারা দিন সুরভিত থাকা যায় না, এমন আশঙ্কা কাজ করতেই পারে। আর তাই তো সুগন্ধি লাগানোর ক্ষেত্রে কিছু জিনিস জানতে হবে-
গোসলের পর সুগন্ধি মাখুন
সুগন্ধির উপস্থিতি সারাক্ষণ জানান দিক- এমনটা কমবেশি আমাদের সবারই চাওয়া থাকে। এমন চাওয়াকে বাস্তবে রূপ দিতে গোসলের পরই ব্যবহার করতে পারেন আপনার পছন্দের সুগন্ধি। গোসলের পর শরীরের লোমকূপগুলো খুলে যায়। এতে সুগন্ধি লাগালে তা অনেকক্ষণ শরীরে স্থায়ী হয়। অনেকেই পারফিউম অয়েল বা সুগন্ধি তেল ব্যবহার করে থাকেন। দীর্ঘ সময় সুঘ্রাণ ধরে রাখতে খেয়াল রাখুন শরীরে যাতে ভেজা ভাব না থাকে এবং অবশ্যই সুগন্ধহীন কোনো ময়েশ্চারাইজার মেখে নেবেন।
স্থান নির্বাচন
সুগন্ধি মাখার জন্য স্থান নির্বাচন করতে হবে। যথাযথ স্থানে সুগন্ধি ব্যবহার করা গেলে এ ঘ্রাণ দীর্ঘস্থায়ী হয়। বলা হয়ে থাকে পালস পয়েন্ট বা কবজি সবচেয়ে ভালো জায়গা সুগন্ধি ব্যবহারের জন্য। কেননা, এখানে ধমনি খুব কাছাকাছি থাকে ত্বকের এবং এখানেই শুধু আমরা নিজেদের হৃৎস্পন্দন টের পাই। এ অংশটি বেশ উষ্ণ হয়ে থাকে। এ উষ্ণতা সুগন্ধির ঘ্রাণ দীর্ঘস্থায়ী করতে সাহায্য করে। ফলে এ স্থানটিকে ধরা হয়ে থাকে সুগন্ধি ব্যবহারের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত স্থান। এ ছাড়া আরও কিছু স্থান আছে, যেমন- কানের পেছনে, গলার পেছনে, কনুইয়ের ভাঁজে এমনকি চুলেও সুগন্ধি ব্যবহার করলে তার ঘ্রাণ অটুট থাকে অনেকটা সময়।
সুগন্ধি বাছুন চিন্তা করে
যদি বেস নোট শক্তিশালী হয় তবে গন্ধও দীর্ঘস্থায়ী হয়। কেনার সময় অবশ্যই পারফিউমের তিনটে নোট আলাদাভাবে দেখে কিনতে হবে। উড, অ্যাম্বার, লেদার, মাস্কের মতো বেসনোট থাকলে পারফিউমের সুগন্ধ স্থায়ী হয় বেশি। কারও যদি হালকা ফ্লোরাল বা ফ্রুটি সুগন্ধ বেশি পছন্দ হয়, তা হলে ভারী বেসনোটের পারফিউম প্রথমে লাগিয়ে তার ওপর হালকা সুগন্ধ লাগাতে পারেন। এ ছাড়া কেনার সময় লেবেল খেয়াল করবেন।
ঘরোয়া উপায়ে সুরভিত
বাজারে থাকা পারফিউমগুলো ছাড়াও বাসায় কিছু ঘরোয়া উপাদান সহযোগেই সুরভিত থাকা সম্ভব।
নিমপাতা
গরমে ঘাম কমানোর জন্য এবং সতেজ থাকার জন্য নিমপাতা এক অনন্য প্রাকৃতিক উপাদান। এক লিটার পানিতে কয়েক মুঠো নিমপাতা ১০-২০ মিনিট জ্বাল দিন। নিমপাতার সবুজ নির্যাসটি বেরিয়ে এলে তা গোসলের পানির সঙ্গে মিশিয়ে গোসল করে নিন। এতে শরীরে ঘাম কম হবে এবং দুগর্ন্ধও থাকবে না।
গ্লিসারিন ও গন্ধরাজ লেবু
গ্লিসারিন ও গন্ধরাজ লেবু গোসলের পর ব্যবহার করতে হবে। এক টেবিল চামচ গ্লিসারিনের সঙ্গে ৪ টেবিল চামচ পানি ও ১ চা-চামচ গন্ধরাজ লেবুর রস খুব ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। শরীরের যেসব অংশে ঘাম হয় বেশি সে জায়গায়গুলোতে লাগিয়ে রাখলে সারা দিন সুরভিত থাকা যায়।
দুধ ও মধু
দুধের সঙ্গে মধু মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে তা গায়ে লাগিয়ে অপেক্ষা করুন। গোসল করার সময় প্যাকটি ধুয়ে ফেলুন। দুধের সুঘ্রাণ আপনার শরীরকে সুরভিত রাখার সঙ্গে সঙ্গে সতেজতাও এনে দেবে।
যা করা মানা
• আমরা সাধারণত ক্রিম বা ময়েশ্চারাইজ়ার ব্যবহারের আগে বোতল ঝাঁকিয়ে নিই। দেখা যায় পারফিউমের ক্ষেত্রেও অনেকে এ কাজটা করে থাকে। পারফিউমের বোতল ঝাকানো যাবে না, কারণ ঝাঁকালে পারফিউমের বোতলে বাতাস ঢুকে গন্ধ ফিকে হয়ে যেতে পারে।
• পালস পয়েন্টে সুগন্ধি স্প্রে করার পর কখনোই দুই কবজি ঘষা যাবে না। অনেকেরই ভুল ধারণা আছে যে, ঘষলে ঘ্রাণ বেশি সময় স্থায়ী হয়, মোটেও এমন হয় না। এভাবে ঘষার কারণে সুগন্ধির টপ নোটটি হারিয়ে যায় দ্রুত। ফলে সুঘ্রাণ পাওয়া যায় না।
• কাপড় কিংবা অলংকারের ওপর ভুলেও সুগন্ধি স্প্রে করা যাবে না। এতে সুগন্ধিটি যেমন ঘ্রাণ ছড়াবে না তেমনি কাপড় কিংবা অলংকারে দাগ বসে যাবে।
• ত্বকের ওপর সরাসরি পারফিউম স্প্রে করা যাবে না। অন্তত ৫-৭ ইঞ্চি দূর থেকে স্প্রে করুন।
কলি