গ্রীষ্ম-বর্ষা-শীত এই তিনের মিশ্রণ রয়েছে শরতে। এ কারণে শরৎ ঋতুতে আবহাওয়া বুঝে পোশাকের রঙ আর নকশায় থাকে স্নিগ্ধ রঙের খেলা। গরমের আধিপত্য এ সময়ে বেশি থাকে বলে, সেই অনুযায়ী পোশাক নির্বাচন করতে হয়। এ সময় আরামের জন্য চাই সঠিক পোশাক। শরতে পোশাকের কাপড়, রঙ এবং ডিজাইন নির্বাচন করা হয় বিশেষভাবে। তবে সেক্ষেত্রে মানা হয়, আবহাওয়ার ধরন।
দেশীয় পোশাকের ডিজাইনাররা শরতে বেছে নেন সাদা, নীল, সবুজ আর সোনালি রঙগুলো। এ সময় সবাই কাশবনে ঘুরতে যায় বলে ফ্যাশন হাউসগুলোর পোশাকে শুভ্র সাদা আর আকাশের নীলাভ রঙের সমন্বয়ে বেশি দেখা যায়। এ ছাড়া গাঢ় নীল, হালকা নীল, আসমানি নীল, ময়ূরকণ্ঠী নীল, রয়্যাল ব্লু, নেভি ব্লু রঙের প্রাধান্য থাকে। অনেক ফ্যাশন হাউস তাদের শরৎ–সংগ্রহে ফিরোজা, ছাই, সোনালি, খয়েরি, সবুজ, হলুদ, কমলা, বেগুনি, গোলাপি রঙের মিশেলে নান্দনিক ডিজাইনের পোশাকও তৈরি করে থাকেন। সালোয়ার-কামিজ, ফতুয়া, টপস ও শাড়ি সব পোশাকেই থাকে বিচিত্র সব রঙের খেলা। অ্যাপ্লিক, টাইডাই, ব্লক, এমব্রয়ডারির আলাদা আর সমন্বিত কাজ শরতের পোশাকের রঙকে করে আরও সমৃদ্ধ।
এই ঋতুতে বেশির ভাগ মেয়ে শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ পরে থাকেন। শরৎ উঠে আসে শাড়ির রাঙা আঁচল, পাড় কিংবা জমিনে। শাড়ি পরতে চাইলে হালকা ফিকে নীল শাড়িতে জরির পাড় দেওয়া, সাদা জমিনে বুটি তোলা জামদানি শাড়ির সঙ্গে ম্যাচিং ব্লাউজ বেছে নিতে পারেন। ব্লাউজের হাতার ক্ষেত্রে থ্রি কোয়ার্টার হলে ভালো মানাবে। শরতের কাশফুলের মোটিফে টাইডাই ও ব্লক সুতি শাড়িও বেছে নিতে পারেন। সালোয়ার-কামিজের ক্ষেত্রে কম কাজ ও প্রশস্ত ওড়না নতুনত্ব আনবে। হ্যান্ড পেইন্টেড সালোয়ার-কামিজ এ সময়ের পোশাকের তালিকায় থাকতে পারেন।
এ ছাড়া নতুন প্যাটার্নের কুর্তিও পরতে পারেন। কুর্তিতে নতুনত্ব নিয়ে আসতে মুন শেইপ, ওভাল শেইপ আবার পেছনের অংশের ঝুল রেখে ডিজাইন করা হয়েছে। কুর্তির হাতার ক্ষেত্রে বৈচিত্র্য আনা হয়েছে। ডিজাইনাররা কোনো কোনো কুর্তির স্লিভের ডিজাইনে কনুইয়ের একটু নিচ পর্যন্ত কাটিংয়ে বিভিন্নতা রেখেছেন। কুর্তির সঙ্গে প্যান্ট অথবা পালাজ্জো বেছে নিতে পারেন। জিন্সও পরা যায়। সঙ্গে রাখতে পারেন স্কার্ফ। পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে অথবা পোশাকের বিপরীত রঙের স্কার্ফ বেছে নিতে পারেন। ঢিলেঢালা কাটের পোশাকও চাইলে পরতে পারেন। এ ছাড়া শার্ট, টিউনিক, স্কার্ট, শ্রাগ ইত্যাদি বেছে নেওয়া যেতে পারে।
এ সময় পোশাকের ফেব্রিকসের দিকে গুরুত্ব দিতে হবে। পোশাক ভিজে গেলে যাতে দ্রুত শুকিয়ে যায় এমন ফেব্রিকসের পোশাকই বেছে নিতে হবে। তাই শরতের উষ্ণতায় আরাম আর আভিজাত্য বজায় রেখে তরুণীদের পছন্দের তালিকায় বরাবরই শীর্ষে থাকে সুতি পোশাক। সুতির পাশাপাশি লিনেন আর তাঁতে বোনা ফেব্রিকে অনায়াসেই আরাম পাওয়া যায়। মসৃণ ফেব্রিক এ সময়ে শরীরে দেয় স্বস্তি। এ ছাড়া শরতে সিল্ক কিংবা জর্জেট পরার উপযুক্ত সময়। আরামদায়ক হয় ধুপিয়ান, ভয়েল, মসলিন, তাঁতের কাপড়ও। জর্জেট, জয়সিল্ক, সিল্ক কাপড়েও উৎসবের জন্য ফ্যাশনেবল।
বেশির ভাগ শরতের পোশাকের নকশায় ঠাঁই পায় ফুলেল ও জ্যামিতিক মোটিফ। এ ছাড়া শাপলা-শালুক, কাশফুল, নদী, নৌকা, পাখি, গোধূলির আকাশ ও নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা, গ্রামীণ আখ্যান বা বিমূর্ত চিত্রকলা শরতের প্রকৃতির এমন নানা রূপ ডিজাইন করা হয়েছে শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, কুর্তি, পাঞ্জাবিসহ নানা ধরনের পোশাকে। এ ধরনের পোশাকের নকশার বেশির ভাগেই থাকছে সুই-সুতার কাজ, হ্যান্ড পেইন্ট, স্ক্রিন পেইন্ট ও ব্রাশ পেইন্ট, কাঠের ব্লক, বাটিক, ডিজিটাল প্রিন্ট। আরও থাকে কারচুপি, ভরাট অ্যাপলিকসহ হরেকরকম হাতের কাজ।
ফ্যাশন ও লাইফস্টাইল ব্র্যান্ড কারু বুটিক তাদের শরৎকালীন পোশাকের সংগ্রহ নিয়ে এসেছে। কারু বুটিকের কর্ণধার জান্নাতুল ফেরদৌস জানান, কারু বুটিক সব সময় চেষ্টা করে বাংলার ঐতিহ্য-সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে। সে উদ্দেশ্যেই শরতের অপরূপ সৌন্দর্যকে তুলে ধরার প্রচেষ্টা এবারের শরৎ আয়োজনে। পোশাকে শরতের উপযোগী সুতি, লিনেন, হাফসিল্ক, মসলিন, পেপার সিল্ক ইত্যাদি আরামদায়ক কাপড় বেছে নেওয়া হয়েছে। রঙ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে নীল, আকাশি ও সাদা রঙকে। স্ক্রিন ও ব্লক প্রিন্টসহ নানা রকম হাতের কারুকাজ করে তৈরি করা হয়েছে শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, সিঙ্গেল কামিজ, ফ্রক, পাঞ্জাবিসহ রকমারি কালেকশনে। এ ছাড়া রয়েছে পুরো পরিবারের জন্য ম্যাচিং পোশাকও।
কোথায় পাবেন
অঞ্জন’স, নিপুণ, সাদা-কালো, বিবিয়ানা, গ্রামীণ মেলা, বালুচর, সারা লাইফ স্টাইল, ভারগোসহ যেকোনো শো-রুমে পাওয়া যাচ্ছে শরতের পোশাক। এ ছাড়া যমুনা ফিউচার পার্ক, এলিফ্যান্ট রোড, নিউমার্কেট, বঙ্গবাজার, পান্থপথের বসুন্ধরা শপিং মল, ধানমন্ডির মেট্রো শপিং মল, শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেট, গুলিস্তানসহ যেকোনো মার্কেটে পাবেন এ সময়ের সব মানানসই পোশাক।
শরতের সাজ
এ সময় মেকআপের ক্ষেত্রে কিছুটা শুভ্রতা রাখা জরুরি। অফিস, ক্লাস কিংবা কাজে বাইরে গেলে ত্বকে জেলবেজড ময়েশ্চারাইজার ও সানস্ক্রিন লাগাতে পারেন। খুব ভারী মেকআপ এ সময় এড়িয়ে চলাই ভালো। মুখে দাগ থাকলে কনসিলার ব্যবহার করতে হবে। মুখে অতিরিক্ত তেল যাতে না জমে, সে জন্য ফেস পাউডার ব্যবহার করা ভালো। পিচ কিংবা হালকা পিংক ব্লাশন দিয়ে বেজ মেকআপ শেষ করতে হবে। চোখের সাজ খুব ভারী না করে নীল কাজল এবং মাসকারা ব্যবহার করতে পারেন। তবে রাতের সাজে নীল স্মোকি আই লুক করা যেতে পারে।
কলি