আজকের শিশু আগামী দিনের সমাজের একজন দায়িত্বশীল নাগরিক। শিশু জন্ম নিয়েই সব কিছু শেখে এবং জেনে ফেলে না। শিশুর ক্ষুধা-তৃষ্ণা পূরণের সঙ্গে সঙ্গে তাকে আরও একটা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গড়ে তুলতে হয়, তা হলো সামাজিকীকরণ। সামাজিকীকরণ হলো এমন একটা প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে শিশুরা সামাজিক মূল্যবোধ, নৈতিকতা, যোগাযোগ ইত্যাদি বিষয় শেখে। শিশুরা জন্মের প্রথম কয়েক মাস বাবা-মা ছাড়া বাইরের মানুষের সঙ্গে খুব একটা মেশে না। সব কিছু তার জন্য সহজ হয়ে যাবে, যদি তার সামাজিক বিকাশ ঠিকমতো হয়। শিশু সবচেয়ে বেশি থাকে মায়ের কাছে। তাই শিশুর যেকোনো ধরনের বিকাশে মায়ের ভূমিকা অনস্বীকার্য। সামাজিকভাবে পরিপূর্ণ বিকাশ লাভের ক্ষেত্রেও শিশু মায়ের ওপরই নির্ভরশীল।
দৈহিক নিরাপত্তা দান
শিশু জন্মের পর একদম অসহায় থাকে। তখন তাদের প্রতিকূল আবহাওয়া থেকে শুরু করে ছোটখাটো প্রাণীর আক্রমণ থেকে রক্ষা করেন মা। একটু বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিবেশের বিভিন্ন ক্ষতিকর জিনিস থেকে যেমন রক্ষা করে, তেমনি কার সঙ্গে কীভাবে মিশতে হবে, মারামারি করা যাবে না বা গুড টাচ, ব্যাড টাচ এসব বিষয়ও মা-ই সন্তানকে শেখান। তাছাড়া কারও সঙ্গে শক্তির পরীক্ষা করতে গেলে নিজের স্বাস্থ্যের ঝুঁকি থাকে, বড় ধরনের ব্যথা পেয়ে যেতে পারে- এটাও মা শেখান।
ব্যক্তিত্বের বিকাশ
ব্যক্তিত্ব বিকাশে শিশু অনেকের দ্বারা প্রভাবিত হলেও সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হয় পরিবারের সদস্যদের দ্বারা। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সবচেয়ে কাছে যাকে পায়, সে হলো মা। শিশুর ব্যক্তিত্ব বিকাশে মাকে রোল মডেল হিসেবে কাজ করতে হবে। শিশু বুঝতে শেখার আগেই তার সামনে ভালো কাজের দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করতে হবে। যেকোনো কাজের জন্য অন্যদের ধন্যবাদ দেওয়া, সবার সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলা। এমনকি শিশুর সঙ্গেও। নিজের সংসারের বা অফিসের চাপের কারণে শিশুকে ধমক না দেওয়া এবং পরিবারের অন্য সদস্যরাও যেন এমন করতে না পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখা মায়ের কাজ। আর শিশু উৎসাহিত হয়ে ভালো কাজ করলে তার প্রশংসা করা, সম্ভব হলে কিছু উপহার দেওয়া।
অন্ধ বিশ্বাস ও কুসংস্কার বর্জন
শিশুরা কল্পনাপ্রবণ। তাদের কল্পনার জগতে জিন-ভূত, পরী, দৈত্য কোনো কিছুর কমতি নেই। শিশুর রাগ কমাতে বা কান্না থামাতে আমরা ভূত, পরী, দৈত্য-দানোর গল্প বলি। কিন্তু বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের বোঝাতে হবে বাস্তবে এসবের কোনো অস্তিত্ব নেই। এ ছাড়া আমাদের সমাজে নানা ধরনের অন্ধ বিশ্বাস প্রচলিত আছে, যা ব্যবহার করে একটা বিশেষ গোষ্ঠী নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার করছে। শিশুদের ভেতর থেকে এসব অন্ধ বিশ্বাস ও কুসংস্কার দূর করতে হবে। শিশুরা যেহেতু সবচেয়ে বেশি বিশ্বাস করে তাদের মাকে, সুতরাং এ ক্ষেত্রে ত্রাতার ভূমিকা পালন করতে হবে মাকে। শৈশব শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিজ্ঞান সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা দিতে হবে এবং শিশুর মন থেকে অন্ধকার দূর করতে হবে। এভাবেই সে সামাজিকভাবে আরও ভালো মানুষ হয়ে গড়ে উঠবে।
অভিযোজনে সহায়তা
সমাজের মানুষের মতো ভাষা, এমনকি সংস্কৃতি ও খাদ্যাভাসেও বহু বৈচিত্র্য থাকবে। এসব বৈচিত্র্যকে মেনে নিয়ে তাদের সঙ্গে মিলেমিশে থাকার শিক্ষা শিশুরা মায়ের কাছে থেকেই পায়। যেমন- দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ ঝাল বেশি খায় আবার ঢাকার মানুষ খেতে পারে না এটা নিয়ে পরস্পর পরস্পরকে খোঁটা না দেওয়া অন্যের পছন্দ ও মতামতকে সম্মান করা। সব ধরনের পরিবেশ পরিস্থিতিতে মানিয়ে চলা। নিজের আবেগ ও মানসিক চাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারা- এগুলো ছোট বয়স থেকে মা শিশুকে শিক্ষা দিয়ে থাকেন। এতে শিশু দীর্ঘ জীবনে ভিন্ন ভিন্ন মানুষের সঙ্গে সহজে কাজ করতে পারে।
আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন
বর্তমান যুগ তথ্যপ্রযুক্তির। শিশুর জন্মর পর তার চারপাশের পরিবেশই তার পৃথিবী। কিন্তু যেহেতু পৃথিবী এখন গ্লোবাল ভিলেজ হয়ে গেছে, তাই শিশুকে আধুনিক পৃথিবী এবং তার কৃষ্টিকালচার সম্পর্কে জানতে দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে মা বড় ধরনের ভূমিকা রাখতে পারে। শিশু বয়সের জন্য কোনটি উপযোগী, কৈশোরে কোনটি- এগুলো মনিটরিংয়ের মাধ্যমে তাদের শেখানো। এতে তারা বৈশ্বিক জ্ঞান লাভ করবে আবার নেতিবাচক কিছু শিখবে না।
কলি