ঋতু পরিবর্তন, কোভিড, ডেঙ্গু ও টাইফয়েডের কারণে জ্বর চলে আসা এই সময়ে অস্বাভাবিক নয়। হঠাৎ করেই জ্বরে আক্রান্ত হতে পারে ঘরের শিশু থেকে শুরু করে বয়স্করা। অনেক সময় চিকিৎসকের কাছে যাওয়া লাগলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে ঘরে বসেই জ্বর কমানো যায় কিছু প্রাকৃতিক উপায়ে। ঘরোয়া উপায়ে জ্বর কমানো নিয়ে লিখেছেন তানজিলা মীম
মধু ও তুলসী পাতার ব্যবহার
সর্দি-কাশি কিংবা জ্বরের মতো সমস্যায় মধু বেশ উপকারী। অসুখে মধুর ব্যবহার বেশ পুরোনো। এ ছাড়া তুলসী পাতায় আছে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিবায়োটিক উপাদান। যা জ্বর, সর্দি, গলা ব্যথা, ব্রংকাইটিস, ম্যালেরিয়ার মতো অনেক রোগের উপশমে সাহায্য করে। মধু আর তুলসী পাতা এক সঙ্গে খেলে গলার কফ পরিষ্কার হবে। সর্দি-কাশি দূর করার জন্য প্রতিদিন সকালে মধু আর তুলসী পাতা এক সঙ্গে খেতে পারেন। ৮-১০টি তুলসী পাতা পরিষ্কার করে ধুয়ে নিয়ে, গরম পানিতে তুলসী পাতা ভালোভাবে ফুটিয়ে নিন। এই পানি প্রতিদিন সকালে এক কাপ খেলে শরীরের তাপমাত্রা কমিয়ে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলবে।
ভিটামিন-সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া
শরীরে বিভিন্ন ভিটামিনের অভাব হলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। তখন বাইরের রোগজীবাণু সহজেই শরীরকে আক্রমণ করতে পারে। তাই ফ্লু থেকে দূরে থাকতে ভিটামিন খাওয়া জরুরি। কিছু খাবারে থাকে প্রচুর ভিটামিন এ বি সি। জ্বরের সময় ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমে যায় এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত হয়। হালকা গরম পানিতে লেবুর রস পান করলে জ্বরের পাশাপাশি সর্দি, ফ্লু এবং অন্যান্য রোগ কমাতে সহায়তা করে। তাই খাবারের একটি ঠিকঠাক তালিকা তৈরি করার চেষ্টা করুন, যাতে শরীরে সব ধরনের ভিটামিন ঠিকমতো প্রবেশ করতে পারে।
মধু ও লেবুর মিশ্রণ
মধু ও লেবু জ্বর কমাতে বেশ উপকারী। এক গ্লাস সামান্য গরম পানিতে এক চামচ মধু এবং অর্ধেক লেবুর রস মিশিয়ে পান করুন। এতে আপনার শরীরের ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে দেবে।
রসুন
রসুনের থেকে ভালো ওষুধ আর হয় না। রসুনের গুণাগুণ অনেক। ভাইরাল ফিভার, ঠান্ডা লাগার মতো অসুখের প্রতিরোধ করতে রসুন খুব উপকারী। শুধু ঠান্ডা লাগাই নয়, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, কোলেস্টেরল কমাতে, হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোক প্রতিরোধেও রসুন খুব কাজে দেয়। ৫ থেকে ৬ কোয়া রসুন থেঁতো করে নিন। তারপর সেটা শুধু খেতে পারেন কিংবা স্যুপের সঙ্গে মিশিয়েও খেতে পারেন। এর সঙ্গে চাইলে আপনি মধু মিশিয়ে পান করতে পারেন। ভালো ফল পাবেন ।
আদা
জ্বর কমাতে আদা খুবই উপকারী ঘরোয়া উপাদান। আদা সহজে রেহাই দিতে পারে জ্বর কিংবা সর্দি-কাশির অস্বস্তি থেকে। শুধু গলার কফ দূর করতেই নয়, বুকের কফ পরিষ্কার করতেও আদার তুলনা হয় না। এক কাপ আদার সেদ্ধ রসে মধু মিশিয়ে খান। এ ছাড়া আদা চা করে খেলেও সর্দির সময় মাথা ধরা কমে যায়। দুর্বলতা কেটে শরীর সতেজ হয়ে ওঠে।
উষ্ণ পানিতে গোসল
হালকা উষ্ণ পানিতে গোসল শরীরের তাপমাত্রা কমানোর পদ্ধতিগুলোর মধ্যে একটি। হালকা গরম পানি দিয়ে গোসল করলে পেশি শিথিল হয় এবং শরীর প্রশমিত হয়। ২৭ থেকে ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার পানি দিয়ে গোসল করা ভালো। জ্বর যখন কমে ১০০ ডিগ্রিতে আসবে, তখন আপনি হালকা কুসুম গরম পানিতে গোসল করতে পারেন। অতিরিক্ত ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করা ঠিক না। এতে ত্বকের নিচে রক্তজালিকা সংকুচিত হয়ে যায়। কাঁপুনি শুরু হয়ে যেতে পারে। গোসলের বিকল্প হতে পারে ভেজা গামছা বা তোয়ালে দিয়ে সারা শরীর মুছে দেওয়া। এক্ষেত্রেও ব্যবহার করতে হবে কুসুম গরম পানি।
তরল খাবার খাওয়া
জ্বরের সময় শরীর ডি-হাইড্রেটেড হয়ে যায়। তাই ওই সময় প্রচুর পানি খাওয়া উচিত। সম্ভব হলে ফলের রস ও হারবাল চা খেতে পারেন। অনেকটা উপকার পাবেন। জ্বর শরীরকে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি গরম করে তোলে। শরীরকে ঠান্ডা করার চেষ্টায় ঘামতে বাধ্য করে। এতে করে শরীর থেকে তরল পদার্থ বের হয়ে ডিহাইড্রেশন হতে পারে। তাই জ্বর হলেই পানি পানের পাশাপাশি ফলের রস, লেবুর রস, ডাবের পানি, স্যুপ ইত্যাদি প্রাপ্তবয়স্কদের পাশাপাশি শিশুদেরও পান করাতে হবে। তবে বেশি খাবার এক সঙ্গে খাওয়ানো উচিত নয়। কেননা, এটি শরীরের তাপ উৎপাদন বৃদ্ধি করবে। বদহজম হতে পারে।
পোশাক
এ সময় সুতি কাপড়ের জামা পরা দরকার, যাতে ভেতর দিয়ে বাতাস প্রবাহিত হয়। দরজা-জানালা খুলে দেবেন, পাখা ছেড়ে দেবেন, যাতে বাতাস চলাচল করে।
মনে রাখুন
জ্বর তিন দিনের বেশি স্থায়ী হলে, বেশি মাত্রায় জ্বর হলে কিংবা তীব্র মাথাব্যথা, খিঁচুনি, অস্বাভাবিক আচরণ, শ্বাসকষ্ট, ক্রমাগত বমি ও তীব্র পেটব্যথা হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
সূত্র: হেলথলাইন, মেডিকেল নিউজ টুডে, মেডিসিননেট
কলি