অনেকে আছেন যারা কোনোরকম প্রয়োজন ছাড়াই জিনিসপত্র কেনেন। অতিরিক্ত কেনাকাটা করা আসক্তিতে পরিণত হয়। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় এদের শপিং অ্যাডিকশন বা শপাহলিক বলা হয়। তারা আসলে ‘কমপালসিভ বায়িং ডিজঅর্ডার’ রোগে আক্রান্ত। বর্তমান যুগে বিষয়টি একটা মানসিক সমস্যা হিসেবে বিবেচিত। প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত কিনছেন, কিন্তু তার পরও নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন না। তাই অকারণে যারা কেনাকাটা করেন, তাদের এই অভ্যাস কাটিয়ে ওঠা জরুরি।
লোক দেখানো মনোভাব দূর করতে হবে
অনেকে তাদের সামর্থ্যের বাইরে গিয়ে লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে নানান ধরনের জিনিস কিনেই থাকেন। লোক দেখানোর মনোভাব থেকে নিজেকে দূরে রাখতে হবে। আয়ের বেশির ভাগ অর্থই কেনাকাটার পেছনে ব্যয় করা থেকে বিরত থাকতে হবে। কেনাকাটার ব্যাপারে তাই খুব বেশি সতর্ক হতে হবে।
অপ্রয়োজনীয় জিনিস কেনা থেকে দূরে থাকুন
শপিংয়ে গেলে অবশ্যই প্রয়োজনীয় জিনিসের একটি তালিকা তৈরি করে নিয়ে যাবেন। দোকানে গিয়ে সেই তালিকা ধরে কেনাকাটা করতে চেষ্টা করবেন। যতটুকু প্রয়োজন বা যে জিনিসটা প্রয়োজন, কেবল সেটাই কিনুন। সুপার শপগুলোতে অনেক সময় চমকপ্রদ অফার দেওয়া থাকে। এতে প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে গিয়ে চটকদার অফারের লোভে পড়েও বাড়তি টাকা ব্যয়ের ফাঁদে পড়তে পারেন। তাই মূল্য ছাড়ের অফারেও প্রয়োজন না পড়লে পা দেবেন না। এদিক-ওদিক ঘোরাঘুরি করে জিনিস কেনার প্রবণতা কমিয়ে যেটা কিনতে গিয়েছেন সেটা কেনার দিকে মনোযোগ দিতে হবে।
নতুন বিষয়ে মন দিতে হবে
মন ভালো করার জন্য গঠনমূলক কাজ খুঁজে বের করতে হবে। ব্যায়াম করা, বই পড়া, লেখালেখি করা, গান শোনা, ছবি আঁকা নিজের শখের কাজ করে মন ভালো রাখতে পারে। এ ধরনের কোনো কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখলে মনের মধ্যেও সহজে কেনাকাটার খেয়াল আসতে পারবে না।
নিজের বাজেট তৈরি করুন
নিজের খরচের জন্য একটি বাজেট তৈরি করতে হবে। প্রতি মাসে শখের কেনাকাটার জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা রাখতে পারেন। তা শেষ হয়ে গেলে নতুন মাস শুরুর আগ পর্যন্ত কেনাকাটা বন্ধ করুন। এ ছাড়া হিসাবের একটি খাতা তৈরি করতে পারেন। মাসের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সব খরচের হিসাব সেই খাতায় লিখে রাখতে পারেন। এ পন্থা অবলম্বন করে অতিরিক্ত খরচের ভয় থেকেও কেনাকাটা থেকে দূরে থাকতে পারবেন।
কাছে বেশি টাকা রাখবেন না
প্রয়োজনীয় শপিংয়ের একটা তালিকা প্রস্তুত করে সে অনুযায়ী টাকাপয়সা নেবেন। প্রয়োজনের বেশি টাকা নিয়ে শপিংয়ে যাওয়া মানে কিছু অতিরিক্ত পণ্য ঘরে আসা। খরচ করার সময় যতটা সম্ভব কার্ড এড়িয়ে চলা উচিত। এতে খরচের মানসিকতা বাড়ে। চাইলে ডেবিট কিংবা ক্রেডিট কার্ড ঘরে রেখে বাইরে যাবেন।
অনুকরণ করা বন্ধ করতে হবে
অনেকে মডেল ও ইনফ্লুয়েন্সারদের মতো একাধিক পোশাক পরার কথা ভাবেন। এতে করে মনের অস্থিরতা বাড়ে। তারা যা করে আমাকে তাই করতে হবে- এই মনোভাব থেকে দূরে থাকতে হবে। বেশির ভাগ মডেল ও ইনফ্লুয়েন্সার বিভিন্ন ব্র্যান্ড-এর ফটোশুট করে থাকে। ফটোশুটের পর মডেলদের কাছ থেকে কাপড় ফিরিয়ে নিয়ে যায়। তাদের নিজ টাকায় কিনতে হয় না। তাই মডেলদের অনুকরণ করে অতিরিক্ত কেনাকাটা করা থেকে বিরত থাকুন।
উইন্ডো শপিং করুন
কেনাকাটার আসক্তি থেকে নিজেকে দূরে রাখার অন্যতম একটি উপায় ‘উইন্ডো শপিং’। উইন্ডো শপিং মানে হলো, কোনো কিছু কেনার উদ্দেশ্যে বের হননি, কিন্তু একটু ঘোরাঘুরি করে ছোটখাটো কিছু কিনে মনের সাধ মেটানো। ধীরে ধীরে শপিং-আসক্তি দূর করতে এটি একটি কার্যকর উপায়। আসক্তি দূর করার পাশাপাশি উইন্ডো শপিং মানসিক প্রশান্তি প্রদান করে মনকে করে তোলে ফুরফুরে।
অনলাইনে কম সময় কাটাতে হবে
অনলাইনে কেনাকাটা সময় বাঁচায়, কিন্তু এই কেনাকাটায় নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে অনেকের আসক্তিতে পরিণত হয়। অনেক ক্ষেত্রে ব্যক্তি বুঝতে পারেন না অনলাইন কেনাকাটায় আসক্ত হয়ে পড়েছেন। ঝামেলাহীন এই কেনাকাটার অভ্যাস থাকলে এখনই নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ আনতে হবে।
যেসব পেজ থেকে কেনাকাটা করা যায়, সেসব পেজে লাইক দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। এতে তাদের নতুন পণ্য এলেও সহজে সামনে আসবে না। দরকার ছাড়া সামাজিক মাধ্যমে বেশি সময় কাটানোর প্রবণতা অনেক সময় অযথা কেনাকাটায় আসক্তি আনে। তাই অনলাইনে সময় কাটানো কমিয়ে দিতে হবে । মুঠোফোন থেকে সব কেনাকাটার অ্যাপ সরিয়ে ফেলতে হবে। ওয়েবসাইটের সমস্ত নোটিফিকেশন ও ইমেইল সাবস্ক্রিপশন ক্যানসেল করে দিতে হবে।
চ্যালেঞ্জ নিতে হবে
হঠাৎ করে কেনাকাটা একদম বন্ধ করে দিতে চাইলে তেমন কোনো লাভ নাও হতে পারে। তার চেয়ে দীর্ঘমেয়াদি অভ্যাস তৈরি করতে হবে। প্রথমে ১৫ দিনের জন্য অপ্রয়োজনীয় কেনাকাটা থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করতে হবে। এরপর ধীরে ধীরে সময়টা ১৫ দিন থেকে বাড়তে হবে।এ রোগ শুরুতেই সামাল দিতে হবে। চাইলে কোনো মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শে কাউন্সেলিং করানো যেতে পারে।
কলি