পড়াশোনা, লেখালেখি বা অফিসের টুকিটাকি কাজ করার জন্য শব্দমুক্ত ও আরামদায়ক একটি জায়গার প্রয়োজন। পড়ার ঘর ছাড়া এই পরিবেশ পাওয়া বেশ কঠিন। তাই বাসার অন্যান্য ঘরের চেয়ে পড়ার ঘরটি অন্য ঘরগুলো থেকে আলাদা হতে হবে। বয়স অনুযায়ী পরিবর্তন করতে হয় পড়ার ঘরের রঙ এবং আসবাবপত্রকে। বর্তমানে ফ্ল্যাটে পড়ার ঘর বড় করার সুযোগ কম থাকে।
কেমন হবে আসবাবপত্র
পড়ার ঘরের আসবাবপত্র হবে অন্য সব ঘর থেকে কিছুটা ভিন্ন। কারণ এখানে আপনার একই সঙ্গে প্রয়োজন মনোযোগ এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশ। চেয়ার, টেবিল, ল্যাম্প, ডিভান, ক্যাবিনেট ইত্যাদি আসবাব দিয়ে সাজাতে পারেন এই ঘরটি। যত ছিমছাম হবে তত ভালো দেখাবে। তাই বেশি আসবাবপত্র না থাকাটাই বাঞ্ছনীয়। বই বা অন্যান্য জরুরি খাতাপত্র রাখার জন্য শেলফ বা তাকগুলো এমনভাবে বসাতে হবে, যাতে তা দাঁড়িয়ে বা বসে হাতের নাগালে পাওয়া যায়। বিশ্রাম নেওয়ার জন্য বা শুয়ে পড়ার জন্য এই ঘরে একটি ডিভাইন রাখা যেতে পারে। এ ছাড়া ডেস্কটপ কম্পিউটার অথবা ল্যাপটপ রাখার এবং ব্যবহারের জন্য একটি নির্দিষ্ট জায়গা ঠিক রাখা যেতে পারে। চা, কফি বা টুকটাক জিনিস রাখার জন্য ছোট সাইড টেবিল রাখলে ভালো দেখাবে। চাইলে ঘরের ওয়ালে ঝোলানো যেতে পারে পছন্দের কিছু ছবি। ঘরের এক কোণে ছোট টব বা একটি গাছ রাখলে চোখ এবং মনে এনে দেবে প্রশান্তির ছোঁয়া।
কেমন হবে এই ঘরের পরিবেশ
পড়ার ঘরটিতে পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের ব্যবস্থা থাকতে হবে। অন্ধকার, স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে থাকলে পড়ায় মনোযোগ আসবে না। তাই ঘরে পর্যাপ্ত বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা থাকছে কি না, সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। এ ছাড়া এই ঘরের আলোর প্রতি বিশেষ নজর দিতে হবে। পড়ার ঘরে পর্যাপ্ত আলো না থাকলে চোখের ওপর চাপ পড়ে, মাথাব্যথা ও চোখে নানান সমস্যা দেখা দিতে পারে। সে ক্ষেত্রে পড়ার ঘরে অবশ্যই এলইডি লাইট ব্যবহার করতে হবে। সাধারণত সাদা আলো বেশি উপযোগী পড়ার ঘরের জন্য। টেবিলের ওপর ঠিকমতো আলো পড়ছে কি না, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। টেবিলে বাড়তি আলোর জন্য একটি টেবিলল্যাম্প রাখা যেতে পারে। একটু বেশি সাজাতে চাইলে বুকশেলফের চারপাশে সোনালি আলোর ফেইরি লাইটস জড়িয়ে দিতে পারেন। তা হলে ঘরটা দেখতে ভালো লাগবে।
কেমন হবে পড়ার ঘরের রঙ
পড়ার ঘরে অতি উজ্জ্বল কিংবা অতি গাঢ় রঙ ব্যবহার না করাই ভালো। লাল, কমলার মতো উজ্জ্বল রঙ মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটায়। শুধু তাই নয়, গাঢ় রঙ পড়ার ঘরকে ছোট আর অন্ধকার করে তোলে। সেক্ষেত্রে দেয়ালে হালকা রঙ ব্যবহার করলে ঘরটি আরামদায়ক হবে। সবুজ, ক্রিম, অফহোয়াইট, হালকা হলুদ রঙ পড়ার ঘরের জন্য মানানসই রঙ।
বুকশেলফ
পড়ার ঘরের প্রধান অনুষঙ্গ হলো বই ও বইয়ের শেলফ। পড়ার ঘরে রাখা বুকশেলফটিও চাইলে সাজানো যেতে পারে ভিন্নভাবে। বয়স্করা গল্পের বই বা খবরের কাগজ পড়তে বেশি ভালোবাসেন। তাই তাদের ক্ষেত্রে একটু ছড়ানো বুকশেলফ হলেই ভালো হয়।
খবরের কাগজ রাখার জন্য বুকশেলফে একটি আলাদা জায়গা রাখুন। বই রাখার জন্য ভারী আলমারি ব্যবহার না করাই ভালো। দেয়াল আলমারি বা ছোট ছোট আকর্ষণীয় ডিজাইনের বুকশেলফ ঘরে রাখতে পারেন। এ ছাড়া দেয়ালে টানানোর মতো বহু ডিজাইনের ক্যাবিনেট কিনেও বই রাখা যেতে পারে। অবশ্যই সহজে পরিষ্কার করা যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ঘরে ছোট শিশু থাকলে বুকশেলফ একটু উঁচুতে হওয়াই ভালো, যাতে তা শিশুদের নাগালের বাইরে থাকে।
টেবিল-চেয়ার কেমন হবে
পড়ার ঘরের চেয়ার এবং টেবিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। টেবিলের সঙ্গে চেয়ারটিও মানানসই হতে হবে। চেয়ারটি আরামদায়কও হতে হবে। পড়ার ঘরের টেবিল সব সময় জানালার কাছে বসানো ভালো। এতে আলো-বাতাস পাওয়া যাবে, দমবন্ধকর পরিবেশ তৈরি হবে না। সারা দিন দেয়ালের দিকে না তাকিয়ে কিছু সময় জানালার বাইরে আকাশ বা গাছপালা দেখলে মন ভালো থাকবে। জানালার কাছে ইনডোর প্ল্যান্টও রাখতে পারেন। মনোযোগ ধরে রাখার জন্য পড়ার ঘরের টেবিল খালি রাখুন। বই ও কলমদানি বাদে আর কিছু না রাখাই ভালো। জিনিস যত বেশি থাকবে, গোছাতে তত বেশি সময় লাগবে।
কলি