ব্যাচেলরদের ঘর মানে অগোছাল একটি চিত্র ভেসে ওঠে। দু-একটি আসবাব অবিন্যস্ত। ব্যাচেলরদের বাসা আকারে ছোট হয়ে থাকে অথবা একটি রুমেই সীমাবদ্ধ থাকে। সেই সঙ্গে আর্থিক সীমাবদ্ধতা তো থাকেই। সবকিছু সামলিয়ে একা বাসা সাজানো কঠিন হয়ে পড়ে। কিন্তু, বাসা আপনার বিশ্রাম আর আরামে সময় কাটানোর স্থান। সারা দিনের কর্মব্যস্ততার পর, শান্তির আবাস। সেটি যদি একটু গোছানো না হয়, তা মানসিক প্রশান্তি বাধাগ্রস্ত করে।
যেমন হবে ঘরের রং
ব্যাচেলর ঘরের নিউট্রাল প্যালেট ব্যবহার করতে পারেন। সাদা, ধূসর এবং সঙ্গে আপনার ব্যক্তিত্ব ও স্টাইলকে তুলে ধরবে এমন রং ব্যবহার করতে পারেন। সবুজ, হালকা নীল, বাদামি রং বাসায় প্রশান্তি আনবে এবং সহজেই বাসার ডিজাইন আর আসবাবপত্রের সঙ্গে মিলে যাবে তাই এই রংগুলো ব্যবহার করতে পারেন। এ ছাড়া হালকা রঙের সোফায় সঙ্গে গাঢ় রঙের বালিশ রাখতে পারেন। আসবাব এবং ঘর সাজানোর জিনিস দিয়ে মিক্স ম্যাচ করে ঘর সাজালে ঘর সুন্দর দেখায়।
আলো
পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা না থাকলে সবই ফিকে হয়ে যায়। আলোর সঠিক ব্যবহার সাধারণ একটি ঘরকে অসাধারণ করে তুলতে পারে। আপনার কাজের বা পড়ার টেবিলে আলো সরাসরি পড়ে তা খেয়াল রাখতে হবে। জানালার কাছে কোনো আসবাবপত্র না রাখাই ভালো। এলইডি লাইট ব্যবহার করলে খরচ কমবে। অন্য সময়ের জন্য ডিম লাইট ব্যবহার করতে পারেন। এ ছাড়া লাইটের আলো ঘরের কোথায় পড়বে সেখানেও আনতে পারেন পরিবর্তন। দেখতে হবে ঘরের আসবাবের কোনো কম্বিনেশনে ঘরটি আরও পরিপাটি লাগে। ঘরকে একটু নতুনভাবে সাজাতে চাইলে ল্যাম্পশেড, টেবিল ল্যাম্প, স্ট্রিং লাইট রাখতে পারেন।
আয়নার ব্যবহার
ছোট সুন্দর এবং আলোকিত করতে আয়না একটি চমৎকার উপায়। দেয়ালে একটি বড় আয়না ঝুলিয়ে দিতে পারেন। বেত, বাঁশ বা প্লাস্টিকের তৈরি অর্গানাইজার আয়নার পাশে রাখতে পারেন। ছোট আয়না ব্যবহারের ফলে ড্রেসিং টেবিলের খরচ বাঁচবে, ঘরে নতুনত্ব আসবে। এ ছাড়া বাতিল জিনিসের ব্যবহার ফেলে না দিয়ে সেই জিনিসপত্রগুলো দিয়ে ঘরে ভিন্নতা আনতে ব্যবহার করতে পারেন। চাইলে অনলাইনে ভিডিও টিউটোরিয়াল দেখে বাতিল জিনিসগুলো দিয়ে বানিয়ে ফেলতে পারেন সুন্দর সব শোপিস।
রান্নাঘর
ব্যাচেলর বাসায় আলাদা রান্নাঘর পাওয়া বেশ কঠিন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই শেয়ার করে কাজ করতে হয়। এক্ষেত্রে নিজের ব্যবহৃত জিনিসগুলো আলাদা কোনো শেলফ, বেতের ঝুড়ি বা কিচেন অর্গানাইজারে রাখতে পারেন। যদি আপনার নিজস্ব রান্নাঘর থাকে, তাহলে রান্নাঘরের একপাশে ছোট টেবিল আর চেয়ার দিয়ে ডাইনিং রুম বানিয়ে নিতে পারেন। আপনার খাবার আনা-নেওয়ার কাজও সহজ হবে।
বেডরুম
বাসার আকারের ওপর নির্ভর করে বেডরুমটি বিভিন্ন রকম হতে পারে। বেডরুমে একটি ছোটখাটো, আলমারি, টেবিল, আয়না রাখতে পারেন। খাটের ক্ষেত্রে চাইলে বক্স খাট ব্যবহার করতে পারেন, যা একই সঙ্গে স্টোরেজের কাজ করবে। চাইলে মাল্টিফাংশন ফার্নিচার যেমন সোফা কাম বেড ব্যবহার করতে পারেন। এতে আপনার অর্থ আর জায়গা দুটোই বাঁচবে।
ঘর সাজাতে যা করবেন
• ঘরের কোণে ইয়োগা ম্যাট, জিমের সরঞ্জাম রাখতে পারেন। ঘরেই ব্যায়াম করলে, জিমের অর্থ বাঁচবে। খাটের পাশের সাইড টেবিলে পানি, ছোট ল্যাম্প, বই রাখতে পারেন। জানালার ধারে ছোট ছোট গাছ রাখতে পারেন, এতে ঘরের শোভা বাড়াবে।
• দেয়ালে বিভিন্ন শিল্পীর পেইন্টিং যোগ করতে পারেন, ছোট মেমোরি ওয়াল তৈরি করতে পারেন। যেমন- প্রাকৃতিক দৃশ্যের আইকনিক ল্যান্ডস্কেপ পেইন্টিং, প্রিয় খেলোয়াড় বা টিমের জার্সি, ব্যান্ড বা কনসার্টের পোস্টার অথবা ফ্রেম ইত্যাদি দিয়ে দেয়াল সাজাতে পারেন।
• মেঝেতে ছোট কার্পেট বা পাটি রাখতে পারেন। তুলা, উল বা পশমের মতো প্রাকৃতিক উপকরণ বেছে নিতে পারেন, যা নরম এবং আরামদায়ক পরিবেশ তৈরি করবে।
• ঘরে প্রকৃতির ছোঁয়া আনতে গাছের জুড়ি নেই। সেক্ষেত্রে কম রক্ষণাবেক্ষণের গাছগুলো বেছে নিন। যেমন স্নেক প্ল্যান্ট, অ্যালোভেরা, স্পাইডার, মানি প্ল্যান্ট ইত্যাদি। এগুলোর জন্য খুব বেশি সূর্যালোক বা যত্নের প্রয়োজন হয় না।
• ঘরের একটা অংশ বা কর্নারে নিজের সঙ্গে একান্তে সময় কাটাতে কিছু রাখতে পারেন। একটি আরামদায়ক চেয়ার, কুশন আর চা রাখার ছোট টেবিল। যেখানে আপনি বসে বই পড়তে পারবেন, আকাশ দেখতে পারবেন।
• বাসাকে সহজ এবং ছিমছাম রাখতে চেষ্টা করুন। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রই রাখুন। এতে ঘর পরিষ্কার করা সহজ হবে, বাসা বদলাতে কষ্ট কম হবে। এ ছাড়া খরচ কমবে ও ঘর সুন্দর দেখাবে।
কলি