১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিশ্ব মানচিত্রে এক নতুন দেশ জায়গা করে নেয়, যার নাম বাংলাদেশ। বিজয়ের এ দিনটিকে আমরা প্রতি বছর স্মরণ করি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার সঙ্গে। দিবসটিকে সামনে রেখে বিভিন্ন ফ্যাশন হাউস সেজেছে বর্ণিল রূপে।
দেশমাতৃকার সেবায় যে যেভাবে পারেন সেভাবেই নিজস্ব সামর্থ্যটুকু দিয়ে কাজ করার চেষ্টা করেন। কেউ ছবি এঁকে, কেউ লিখে, কেউ যোদ্ধা হিসেবে, কেউ বোদ্ধা হিসেবে দেশের প্রতি দায়িত্ব পালনের চেষ্টা চালিয়ে যান। আমাদের ফ্যাশন হাউসগুলো এ প্রজন্মকে পোশাকের দিক থেকে করেছে স্বদেশমুখী। ফলে তাদের ডিজাইনের একটা বড় অংশজুড়ে রয়েছে দেশাত্মবোধের চেতনা। এবারের বিজয় দিবসে আবারও সে চেষ্টাই চালিয়েছে তারা।
মূলত ফ্যাশনের ধারাটা সময়কে ধারণ করে। স্টাইল, স্মার্টনেস, আউটলুকিংয়ের সামগ্রিক কনসেপ্টে বৈচিত্র্য এলেও ১৬ ডিসেম্বর (বিজয় দিবস), ২৬ মার্চ (স্বাধীনতা দিবস) এবং ২১ ফেব্রুয়ারির (আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস) ফ্যাশনে দেশাত্মবোধের ভাবধারাটা উন্মোচিত হয়।
দীর্ঘ আন্দোলন, সংগ্রাম, যুদ্ধের পর এ দেশ স্বাধীনতা অর্জন করে। আর এই অর্জনের ভেতর দিয়েই অন্ধকার সরিয়ে বাঙালির পথচলা শুরু হয়েছে সেই ৫৩ বছর আগে পাওয়া রক্তোজ্জ্বল বিজয়ের আলোয়। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরের বিজয় এখন ফ্যাশন স্টাইলের অনুষঙ্গ হিসেবে যোগ করেছে নতুন মাত্রা। এ ফ্যাশন-স্টাইলে উৎসবী আমেজ থাকলেও তার থেকে বেশি থাকে দেশাত্মবোধ তথা দেশপ্রেম।
আর সে কারণেই বিজয়, স্বাধীনতা কিংবা ভাষা দিবসে ফ্যাশনের প্রথম চিত্রকল্প হিসেবে পোশাকে, শোপিসে উঠে আসে মুক্তিযুদ্ধের স্থিরচিত্রের চিত্রকর্ম, বঙ্গবন্ধু, রবীন্দ্রনাথের মুখচ্ছবি। ’৭১-এর আত্মত্যাগের বাঙালি ধরনটা যেমন হৃদয়ছোঁয়া, মর্মস্পর্শী, আবেগঘন; তেমনি আনন্দের রেশটাও কম নয়। ফলে দুটি রূপেরই প্রতিফলন ঘটে ১৬ ডিসেম্বর, ২৬ মার্চ এবং ২১ ফেব্রুয়ারির ফ্যাশন কনসেপ্টে। আর এই ফ্যাশন বোধের মর্মকথাটা চিত্রে ও কবিতার পঙ্ক্তির মাধ্যমে পোশাকে উৎকীর্ণ করার সফল প্রয়াসটা প্রতি বছরের এই বিশেষ দিনগুলোয় করে থাকেন প্রতিষ্ঠিত আউটলেটগুলোর ডিজাইনাররা।
এবারের বিজয় দিবসও এর ব্যতিক্রম নয়। ইতোমধ্যে দেশীয় প্রতিষ্ঠিত ফ্যাশন হাউসগুলো বিভিন্ন প্রজন্মের ফ্যাশন সচেতনদের জন্য ডিসপ্লেতে সাজিয়েছে পোশাকের মনোহর পসরা। যেহেতু বিজয় দিবস তাই টি-শার্ট, ফতুয়া, পাঞ্জাবি, থ্রি-পিস, শাড়িসহ নানা পোশাকে প্রাধান্য পেয়েছে লাল ও সবুজ রং। আমাদের জাতীয় পতাকার রংকে তুলির আঁচড়ে নান্দনিকভাবে পোশাকের গায়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে নান্দনিক আঙ্গিকে।
বিজয়ের রঙে পোশাক-অনুষঙ্গ
বিজয়ের রঙে সেজেছে দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলো। এর মধ্যে অঞ্জন’স, কে ক্রাফট, নগরদোলা, বিশ্বরঙ, রঙ, দেশাল, নিত্যউপহার, আড়ং উল্লেখযোগ্য। শুধু ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে নয়, দায়িত্ব ও মূল্যবোধ থেকেই বিজয় দিবসের বিশেষ আয়োজন করে থাকে। লাল-সবুজ আমাদের পতাকার রং, আমাদের বিজয়ের প্রতীক। বিজয়ের এই মাসজুড়ে তাই লাল-সবুজকে নিয়েই তাদের যত আয়োজন।
শীতের আগমনে এই আয়োজনে বিজয় দিবসে কিছুটা ভিন্নতা আনা হয়েছে। পোশাকগুলোয় ব্যবহার করা হয়েছে মোটা সুতি ও খাদি কাপড়। শাড়ি, থ্রি-পিস, ফতুয়া, পাঞ্জাবি, ছেলেমেয়েদের কুর্তা, টি-শার্ট ইত্যাদিতে তুলে ধরা হয়েছে দেশীয় ভাবনা। পাশাপাশি দেশীয় সংস্কৃতির বিভিন্ন উপাদান এসেছে ডিজাইনের অনুষঙ্গ হিসেবে। কাজের মাধ্যম হিসেবে এসেছে টাইডাই, ব্লক, বাটিক, অ্যাপলিক, ক্যাটওয়াক, স্ক্রিন প্রিন্ট ইত্যাদি। আর এসব পোশাকের দাম ক্রেতাদের নাগালের মধ্যেই।
কলি