
আমাদের সমাজে এখনো অনেকে মনে করেন বাড়ন্ত বয়সে ছেলেদের বেশি খাবার প্রয়োজন। মেয়েদের কম খাবার হলেও চলে। তবে মেয়েদের খাবারেও গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন দুটি কারণে। বয়ঃসন্ধিকালে মূলত হাড়, পেশি ও মস্তিষ্কের গঠন সম্পন্ন হয়। এ সময় শারীরিক, মানসিক ও হরমোন ক্রিয়া অনেক বেড়ে যায়। প্রয়োজনীয় খাবারের অভাব হলে এসব কিছু ব্যাহত হয়। যার অভাব সারা জীবনেও পূরণ করা সম্ভব হয় না। অন্যদিকে কিশোরী বয়সে মেয়েদের মাসিক শুরু হয় ও প্রজনন স্বাস্থ্য গড়ে উঠে। প্রজনন স্বাস্থ্য রক্ষায় পর্যাপ্ত ও সুষম খাবার না খেলে ভবিষ্যতে অসুস্থ সন্তান জন্ম দেওয়ার ঝুঁকি থাকে।
হাড়ের গঠন ও উচ্চতায়
একজন মানুষের হাড় গঠনের ৯০ ভাগই বয়ঃসন্ধিকালে সম্পন্ন হয়। এ সময় মজবুত হাড় গঠন না হলে পরবর্তী সময়ে অস্টিওপোরোসিস বা হায় ক্ষয় রোগে ভুগতে হয়। নারীরা সন্তান জন্ম দেন বলে তাদের হাড় ক্ষয় রোগের সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই কিশোরী বয়সে মজবুত হাড় তৈরির জন্য ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার প্রতিদিন রাখা প্রয়োজন। দুধ ক্যালসিয়ামের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। নিয়মিত দুধ খেলে উচ্চতা বাড়ে এ কথাও বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত। কিশোরীর খাবার তালিকায় প্রতিদিন ২০০ থেকে ২৫০ মিলিলিটার দুধ রাখুন। এ ছাড়া দই, পনির, ছোলা, বাদাম, সয়াবিনের তৈরি খাবার, সবুজ পাতা বিশিষ্ট শাক ও কাঁটাসহ ছোট মাছ খেলে বয়ঃসন্ধিকালের ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণ হয়।
মস্তিষ্ক বিকাশে
শৈশবে আমাদের মস্তিষ্ক থাকে অপরিণত। বয়ঃসন্ধিকালে এসে মস্তিষ্ক বিকাশ লাভ করে অর্থাৎ যুক্তি, তর্ক, চিন্তা করার ক্ষমতা লাভ করে। কিশোরীদের বুদ্ধিবৃত্তিক উন্নয়নের জন্য এ সময় মস্তিষ্কের জন্য উপকারী পুষ্টিকর খাবার খাওয়া প্রয়োজন। এ ছাড়া বিশেষ কিছু খাবার রয়েছে যেগুলো এ সময় মনোযোগ, স্মৃতিশক্তি ও শেখার ক্ষমতা বাড়াতে কার্যকরী। মাছের তেলে রয়েছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, যা মস্তিষ্কের কার্যক্রম পরিচালনা করতে সহায়তা করে। এ ছাড়া নিয়মিত ওটস, আখরোট, ডার্ক চকলেট খেলে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ে। সবুজ শাকসবজি ও ফলের ভেতর আঙুর, কলা, পেঁপে, স্ট্রবেরি, গাজর, ব্রকলি মস্তিষ্ক বিকাশে উপকারী।
রক্তস্বল্পতা দূর করতে
মাসিকের সময় প্রতি মাসে মেয়েদের শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থের সঙ্গে নির্দিষ্ট পরিমাণে রক্ত বেরিয়ে যায়। ফলে বয়ঃসন্ধিকালে অনেক মেয়েই রক্তস্বল্পতায় ভুগে থাকেন। রক্তের ঘাটতি পূরণে কিশোরীদের প্রচুর পরিমাণে আয়রনযুক্ত খাবার খাওয়া প্রয়োজন। কলা আয়রনের গুরুত্বপূর্ণ উৎস। কলা বারোমাসি ও সহজলভ্য ফল। কিশোরীর খাবারে প্রতিদিন একটি কলা রাখুন। এ ছাড়া গরুর কলিজা, বাদাম, কচুশাক সয়াবিন শরীরে আয়রনের ঘাটতি পূরণ করে। ভিটামিন বি ১২ ও ফলিক অ্যাসিড রক্তের উৎপাদন ও উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য। মাংস, ডিম, দুধ ও দুগ্ধজাত খাবারে এই দুই উপাদান পাওয়া যায়।
প্রজনন স্বাস্থ্য সুরক্ষায়
বয়ঃসন্ধিকাল প্রজনন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিকাশ ও সক্রিয় হয়ে ওঠে। কিশোরীদের প্রজনন স্বাস্থ্যের সুরক্ষায় জিংকযুক্ত খাবার বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। খাবারের এই উপাদান হরমোন সঞ্চালনে সাহায্য করে ও প্রজনন অঙ্গ সুস্থ রাখে। মাংস, ডাল, বাদাম, বিভিন্ন ধরনের শস্যদানা শরীরে জিংকের ঘাটতি পূরণ করে।
ত্বকের যত্নে
কিশোরী বয়সে কমবেশি সবার ত্বকেই ব্রণ হয়। এ ছাড়া অনেকের মুখে র্যাশ, কালো দাগ, চামড়া ফেটে যাওয়া ও ত্বকের উজ্জ্বলতা কমতে দেখা যায়। এ সময় শরীরে হরমোনাল পরিবর্তনের কারণে এ ধরনের সমস্যা তৈরি হওয়া স্বাভাবিক। তবে শুধু হরমোন প্রক্রিয়াই নয়। পুষ্টিকর খাবারের সঙ্গেও রয়েছে কিশোরীর ত্বকের সম্পর্ক। অতিরিক্ত শর্করা ও উচ্চ ক্যালরি যুক্ত খাবার খেলে ব্রণ হতে পারে ও ত্বক নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এখন কিশোরীরা ফাস্টফুড খেতে পছন্দ করে। এ জাতীয় খাবার কিন্তু ত্বকের সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী করে। এমনকি জাংকফুড থেকে মুখে অবাঞ্ছিত লোম গজাতে পারে। এই বয়সে ত্বকের সমস্যা প্রতিরোধ করা যায় না। তবে ত্বকের সুরক্ষায় কিশোরীদের প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। সেই সঙ্গে ভিটামিন সি, অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ ফলমূল ও সবুজ শাকসবজি খেতে হবে।
মানসিক সুস্থতায়
কিশোরী মেয়ের মন যেন এই ভালো এই খারাপ। অবসাদ, বিষণ্নতা, মেজাজ খিটখিটে হওয়া এই বয়সে মেয়েদের পরিচিত অভিজ্ঞতা। শরীরে হরমোনাল প্রক্রিয়া ও মাসিক হওয়ার কারণে মানসিক এই পরিস্থিতি দেখা যায়। এরকম পরিস্থিতিতে মন ভালো রাখতে বাদাম, প্রোটিন, স্বাস্থ্যকর চর্বি যেমন জলপাই ও অ্যাভোকাডোর তেল এই জাতীয় খাবার খাওয়া যেতে পারে।
কলি