
আর্কা ফ্যাশন উইকের দ্বিতীয় দিন শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) অনুষ্ঠিত হয়েছে প্রথম ফ্যাশন শো। জমকালো আয়োজনের ফ্যাশন শোর সবগুলোই ফ্যাশনিস্তাদের মুগ্ধ করেছে।
প্রথম ফ্যাশন শোর প্রথম স্লটে বাংলাপাংক, এজেড ক্লদিং ও ট্যাপারড তাদের মডার্ন আরবান কালেকশন প্রদর্শন করে। ফ্যাশন শো প্রথম কিউ শুরু হয় ডিজাইনার রুবার বাংলাপাংক দিয়ে। তার ফিউশন ও নিরীক্ষাধর্মী ডিজাইন নজর কেড়েছে সবার। মেয়েদের গাউন, হাই স্লিটেড ড্রেস, লং কোট আর ছেলেদের শার্ট, প্যান্ট, লুঙ্গি ছিল এই নিরীক্ষাধর্মী কালেকশনে।
এই স্লটের দ্বিতীয় অংশে ছিল আজিম উদ্দৌলার ব্র্যান্ড এজেড ক্লদিংয়ের শো। সিল্ক ও লেদারের ওপর বেনারসির নকশা নজর কেড়েছে এই শোতে। তার এই কালেকশনে ছিল ছেলেদের পাঞ্জাবি, প্যান্ট, শার্ট ও লং কোট। আর মেয়েদের পোশাকে ছিল স্কার্ট, টপ ও প্যান্ট।
প্রথম স্লটের তৃতীয় অংশে ট্যাপারডের শোটি ছিল সবচেয়ে আকর্ষণীয়। নাটকীয়তার মাধ্যমে কালেকশন প্রদর্শন করেন ডিজাইনার রাইয়ান চৌধুরী। জংগল থিমে সাজানো ছিল তার এই সংগ্রহ। পাখি, প্রাণী, শার্ক, রয়েল বেঙ্গল টাইগার উঠে এসেছে তার বৈচিত্র্যময় কালেকশনের ডিজাইনে।
দ্বিতীয় স্লটের ফ্যাশন শোতে অংশ নেয় রয়েল বেঙ্গল কতুর, দানিয়া এবং ওয়ান পারসেন্ট ক্লাব ব্যান্ডগুলো। এ শোর প্রথম কিউ ছিল রয়েল বেঙ্গল কতুরের। মূলত পুরুষদের জন্য করা এই কালেকশনের ডিজাইনার সাইফুল্লাহ গালিব। পেইন্টিং, ডিজিটাল প্রিন্টে বিভিন্ন অভিব্যক্তি উঠে এসেছে তাদের কালেকশনে। ছেলেদের ক্যাজুয়াল ওয়্যার নিয়ে সাজানো হয়েছিল কালেকশনটি।
এরপর র্যাম্পের রানওয়েতে আসে লাক্সারিয়াস ব্র্যান্ড দানিয়া। ওভারসাইজড পোশাকের সংগ্রহ নিয়ে অংশ নেয় ব্র্যান্ডটি। মিধাত হুদার এই পোশাক সংগ্রহের অনুপ্রেরণা আধ্যাত্মিকতা ও আত্মপ্রেম। পোশাকের ক্ষেত্রে প্রাধান্য পেয়েছে ওভারসাইজড জ্যাকেট, কেপ, হুডি, লং কোট, ওয়াইড ও কার্গো প্যান্টের মতো স্টাইলিশ সব আউটফিট। নজর কেড়েছে পোশাকগুলোতে পশমের ব্যবহার।
এই স্লটের শেষ কিউতে অংশ নেয় ওয়ান পারসেন্ট ক্লাব। সাদাসিধে কিন্তু এলিগেন্ট এই কালেকশনে ছিল ব্যাগি প্যান্ট, শার্ট ও জ্যাকেট।
তৃতীয় স্লটে একক শো করে ঢেউ (বাই সারা)। তাদের কালেকশনের থিম ছিল ‘দ্য শ্যাডোড ওয়েভ’। ঢেউয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও সারা সাইয়ারার এই সংগ্রহের অনুপ্রেরণা ছায়া ও ঢেউয়ের শক্তি। ইন্ডিভিজুয়ালিটি আর কনফিডেন্সকে উদযাপন করতে চেয়েছে তারা এই কালেকশনে।
ঢেউয়ের শোতে দুই ধরনের পোশাক প্রদর্শিত হয়। প্রথম কিউতে পশ্চিমাধাঁচের পোশাক আর পরের কিউতে ডেনিমের পোশাক পরে র্যাম্প মাতান মডেলরা। প্রথম কিউতে নেট, সিকুইনের ব্যবহার নজর কেড়েছে। স্লিটেড ড্রেস, স্কার্ট, বিভিন্ন কাট ও প্যাটার্নের টপ দেখা গেছে মেয়েদের সংগ্রহে। আর ছেলেদের জন্য ছিল ফর্মাল ও ক্যাজুয়াল কালেকশন।
জিরো ওয়েস্ট ডেনিম দিয়ে সাজানো সংগ্রহে দ্বিতীয় কিউতে ক্যাটওয়াক করেছেন মডেলরা। এ কালেকশনে ছিল ডেনিমের ড্রপ শোল্ডার টি-শার্ট, জ্যাকেট, প্যান্ট, মিনি স্কার্ট ও টপ। নিরীক্ষাধর্মী কাট আর প্যাটার্নও দেখা যায় সংগ্রহটিতে। সব মিলিয়ে ঢেউয়ের ফ্যাশন শো ফ্যাশনিস্তাদের মুগ্ধ করেছে।
দ্বিতীয় দিনের জমজমাট আয়োজনের ফ্যাশন শো শেষ হয় আর্কা স্টুডিও প্রডাকশনের ব্র্যান্ড আমি ঢাকা ও কাঁঠালের প্রদর্শনীর মাধ্যমে। আমি ঢাকার শোতে মর্ডান আরবান কালেকশন নজর কেড়েছে। টি-শার্ট, জ্যাকেট ও প্যান্ট ছিল তাদের এই সংগ্রহে। নগর বাউল জেমসের ছবি সহ বিভিন্ন বিমূর্ত নকশা উঠে এসেছে তাদের সংগ্রহে। ডিজিটাল প্রিন্ট, প্যাচওয়ার্ক ও এম্ব্রোয়ডারিতে বিভিন্ন নকশার পাশাপাশি আমি ঢাকা লেখা ছিলো এই কালেকশনের প্রতিটি পোশাকে। এই স্লটের দুটি শোর মাঝে আকর্ষণীয় একটি ফায়ার শো আয়োজন করা হয়।
ওই দিনের রানওয়ের বর্ণাঢ্য আয়োজনের পর্দা নামে কাঁঠালের শো দিয়ে। জেন জিদের প্রাধান্য দিয়ে ক্যাজুয়ালওয়্যার প্রাধান্য পেয়েছে এই কালেকশনে। স্লিটেড স্কার্ট, মিনি স্কার্ট, টপস, কার্গো প্যান্ট, টি-শার্টে সাজানো এই সংগ্রহ । কাট ও প্যাটার্নের ভিন্নতাও চোখে পড়েছে।
এ ছাড়া ফ্যাশন উইকের দ্বিতীয় দিন শুক্রবার যথারীতি ছিল মাস্টারক্লাস। তবে গ্লাসহাউসের ডিজাইন ল্যাব ও মার্কেটপ্লেসে দর্শক উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়। আর শুক্রবারের সংগীতায়োজনে অংশ নেয় আরসি বিডি, সাইতারা ও রেদোয়ান। তাদের সংগীত পরিবেশনাও সবাইকে আনন্দ দিয়েছে।
আজ (শনিবার) তৃতীয় দিন থাকবে ফ্যাশন ডিজাইনার শিক্ষার্থীদের ডিজাইনে ফ্যাশন শো, গ্লি ও আমিরা। আগামীকাল রবিবার সমাপনী দিন থাকবে ঢং, তাসা, ফ্রেন্ডশিপ কালারাস অব দ্য চরস-ইন্ডি, গ্রিশো বাই সৌহার্দ্য, ব্লিস ক্লদিং, উড়ুক্কু বাংলাদেশ, তান, অরণ্য ও কুহু। সব মিলিয়ে থাকছে ১২টি ফ্যাশন কিউ।