
কখনো কখনো ভেঙে যাওয়া থেকেই নতুন করে শুরু হতে পারে। এই বিশ্বাসটুকু নিজের ভেতরে রাখতে হবে। অতীত মানে সব সময় সুখকর নয়। অনেকের ক্ষেত্রেই থাকে তিক্ত অনেক অভিজ্ঞতা। সেসব নিয়ে পড়ে থাকলে চলবে না। সম্পর্কে তিক্ততা দূর করা এবং নতুনভাবে শুরু করা একটি চ্যালেঞ্জিং কিন্তু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে। এ ক্ষেত্রে ধৈর্য, আত্ম-সচেতনতা, এবং পারস্পরিক সম্মান প্রয়োজন।
খোলামেলা আলোচনা করুন
সম্পর্কের মধ্যে জমে থাকা সমস্যা বা অভিমান নিয়ে খোলাখুলি কথা বলুন। প্রত্যেকের দৃষ্টিভঙ্গি শোনার জন্য সময় দিন এবং সেগুলো বুঝতে চেষ্টা করুন। একতরফাভাবে কারও ওপর দোষ চাপানো থেকে দূরে থাকতে হবে। দুজনের মধ্যে যেকোনো ধরনের সমস্যাতেই তৃতীয়পক্ষকে না জানিয়ে নিজে বসে খোলামেলা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করুন। যা আপনার সম্পর্ককে টিকিয়ে রাখতে সহায়তা করবে।
ক্ষমা প্রার্থনা ও ক্ষমা করতে শিখুন
যদি আপনি ভুল করে থাকেন, তবে আন্তরিকভাবে ক্ষমা চান। অপরজনের ভুলগুলো মেনে নিয়ে তাকে ক্ষমা করতে শিখুন। ভুল বোঝাবুঝি হলে কিংবা ভুল হলে ক্ষমা চাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

অতীত ভুলের পুনরাবৃত্তি থেকে বিরত থাকুন
যে বিষয়গুলো তিক্ততার কারণ ছিল, সেগুলো এড়িয়ে চলুন এবং নতুনভাবে সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করুন। আগে যে ভুলগুলো হয়েছিল সেগুলো মন থেকে ঝেড়ে ফেলুন। অভিমান চেপে রাখতে যাবেন না, এতে ফল বিপরীত হয়ে যাবে। মন খুলে কথা বলুন। এতদিন যেগুলো সমস্যা বলে মনে হয়েছে, মনে পুষে না রেখে সেগুলো তাকেও বুঝতে দিন।
ইগো বাদ দিন
সম্পর্ক মেরামতের পথে অহংকার বা আত্মসম্মান অতিরিক্ত হয়ে উঠলে তা বাদ দিতে হবে। ‘আমি ঠিক, তুমি ভুল’ মানসিকতা এড়িয়ে, সম্পর্ককে গুরুত্ব দিন। ইগো থাকলে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা কষ্টকর হয়ে ওঠে। তাই ইগো বাদ দিতে হবে।
ভালো স্মৃতিগুলোকে গুরুত্ব দিন
অতীতের ভালো মুহূর্তগুলো মনে করুন এবং নতুন ইতিবাচক স্মৃতি তৈরির চেষ্টা করুন। যেসব মুহূর্ত খারাপ গেছে সেগুলো মন থেকে ঝেড়ে ফেলুন। প্রয়োজনে নতুন কোনো স্থানে ঘুরতে যান। একান্ত সময় কাটান।
আপনার প্রত্যাশাগুলো পরিষ্কার করুন
একজন মানুষ কখনো আরেকজন মানুষের মন পুরোপুরি বুঝতে পারে না। তবু আমরা বেশির ভাগই প্রত্যাশা করে থাকি যে আমরা না বললেও আমাদের ভালোবাসার মানুষটি মনের কথা বুঝে নেবে। এরকমটা প্রত্যাশা না করাই ভালো। তাই যদি কিছু বলতে হয়, তাকে সরাসরি বলুন। নয়তো অবাস্তব প্রত্যাশা আপনাকে হতাশ করতে পারে। সেখান থেকে সম্পর্ক নষ্ট হতে পারে। তাই প্রত্যাশাগুলোতে সততা বজায় রাখতে হবে, যেন ভবিষ্যতে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি না হয়।
সময় দিন এবং ধৈর্য ধরুন
সম্পর্ক পুনরায় গড়ে তুলতে সময় লাগে। প্রতিটি ছোট পদক্ষেপে ধৈর্য এবং ইতিবাচকতা বজায় রাখুন। পছন্দের মানুষকে সময় দিন। তার কথা শুনুন। ক্ষমা করুন। ভুল ধরা থেকে বিরত থাকুন।
আন্তরিক প্রচেষ্টা
একে অপরের ভালো দিকগুলোর প্রতি মনোযোগ দিন এবং সেগুলোর প্রশংসা করুন। সম্পর্ক সুস্থ, সুখী এবং নিরাপদ রাখার জন্য দুজনেরই সমান সহযোগিতা প্রয়োজন হয়। নিজেকে গভীরভাবে জেনে, একে অপরকে বুঝে সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারলে জীবন সুখের হয়ে ওঠে। তাই প্রতিটি সম্পর্কেই দুজনকে সমান যত্নশীল হতে হবে। সমান সমান না হোক, সম্পর্কের প্রতি দুজনের আন্তরিকতা অন্তত সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। তাহলেই সম্পর্কে নতুনত্ব থাকবে।
বিশ্বাস পুনঃস্থাপন করুন
বিশ্বাস আবার গড়ে তুলতে ছোট ছোট পদক্ষেপ নিন এবং প্রতিশ্রুতি পূরণে আন্তরিক হন। বিশ্বাস পুনঃস্থাপনের জন্য সময় এবং ধৈর্য প্রয়োজন। এক দিনে সবকিছু সঠিক হবে না, তবে স্থির ও শক্ত মনোবল নিয়ে আগানো উচিত। ছোট ছোট বিষয়েও আস্থার অনুভূতি তৈরি করা জরুরি। প্রতিশ্রুতি পালন এবং ইতিবাচক আচরণ সম্পর্কের মধ্যে আস্থার ভিত্তি গড়ে তুলতে সাহায্য করে। সম্পর্কের পুনঃস্থাপন একটি যৌথ প্রক্রিয়া, তাই দুজনের পক্ষ থেকে সহযোগিতা ও মনোযোগ থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সহায়তা নেওয়া (প্রয়োজনে)
গুরুতর সমস্যার ক্ষেত্রে কাউন্সেলর বা বিশ্বস্ত তৃতীয় পক্ষের সহায়তা নেওয়া যেতে পারে। তৃতীয় ব্যক্তি অনেক সময় যেকোনো সম্পর্কের সমস্যাগুলোকে নতুন দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখতে সাহায্য করে। তাদের পরামর্শ বা অভিজ্ঞতা থেকে পাওয়া শিক্ষায় সম্পর্কের দ্বন্দ্বের মধ্যে আসতে পারে সৃজনশীল সমাধান, যা সম্পর্ককে আরও মজবুত করতে পারে। অনেক সময় তৃতীয় ব্যক্তির কাছ থেকে পাওয়া পরামর্শ কিংবা সমর্থন যেকোনো সম্পর্কের সমস্যা সমাধানে কাজ করতে পারে টনিকের মতো। কেননা এসব পরিস্থিতি তৃতীয় ব্যক্তি নিরপেক্ষভাবে মূল্যায়ন করতে পারে এবং একটা যৌথ সমাধান খুঁজে পেতে সহায়তা করতে পারে। তাই প্রয়োজনে তৃতীয় পক্ষের সহায়তা নিতে পারেন।
কলি