বিশ্বের সবচেয়ে বড় শিল্প ও সংস্কৃতি উৎসবগুলোর মধ্যে অন্যতম ‘বার্নিং ম্যান’। উৎসবটি যুক্তরাষ্ট্রের নেভাডা ব্ল্যাক রক সিটির মরুভূমিতে প্রতি বছর অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শিল্পী, উদ্যোক্তা এবং দর্শকেরা এসে একত্রিত হন। সৃজনশীলতা, মুক্ত পরিবেশ, স্বাধীনতা—এগুলোই হচ্ছে উৎসবের মূলমন্ত্র। একই আদর্শে সংগীত, শিল্পকলা ও প্রকৃতির মিশেলে ২৯ থেকে ৩১ জানুয়ারি অভিনব উৎসবের আয়োজন হতে যাচ্ছে কক্সবাজারের মারমেইড বিচ রিসোর্টে। উৎসবের নাম দেওয়া হয়েছে ‘বার্নিং ক্র্যাব ফেস্টিভ্যাল’। এতে বিভিন্ন দেশের শিল্পী, উদ্যোক্তা আর সৃজনশীল মানুষেরা অংশ নেবেন।
উৎসবের আয়োজক মারমেইড ইকো ট্যুরিজম লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনিসুল হক চৌধুরী বলেন, ‘টেক এ ব্রেক’–এ উৎসবের মূল ধারণা। আয়োজনের তিন দিনে অতিথিদের রোমাঞ্চকর সব অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। খাবারে শুধু স্বাদ নয়, ইতিহাস, সংস্কৃতি ও সৃজনশীলতাও খুব গুরুত্বপূর্ণ’।
বার্নিং ক্র্যাব ফেস্টিভ্যালের কিউরেটর হিসেবে থাকছেন জাপানের বিখ্যাত ফেস্টিভ্যাল আর্কিটেক্ট ও লাইটিং ডিজাইনার জিরো এনদো। উৎসবে ইনারা জামালের তৈরি খাবারগুলোর মধ্যে থাকবে সামুদ্রিক মাছের নানান পদ। এ ছাড়া থাকবে ঐতিহ্যবাহী বাংলাদেশি খাবারের অভিনব সব পরিবেশনা।
এশিয়ার মর্যাদাপূর্ণ চলচ্চিত্র উৎসব বুসানের সেরা পুরস্কারজয়ী সিনেমা ‘বলী: দ্য রেসলার’ এবার প্রদর্শিত হবে বার্নিং ক্র্যাব ফেস্টিভ্যালে।
শবে বরাতে রুটির সঙ্গে হালুয়ার আয়োজন থাকে অনেক বাড়িতেই। একই হালুয়ার স্বাদ বদলে যায় রান্নার গুণে। নতুন স্বাদ আর গন্ধে ভরা নানারকম হালুয়ার রেসিপি দিয়েছেন রন্ধনশিল্পী আনিসা আক্তার নূপুর
প্রণালি প্রথমে আলু সিদ্ধ করে ম্যাশ করে নিতে হবে ৷ কড়াইয়ে ঘি গরম করে নিয়ে ম্যাশ করে রাখা আলুর সঙ্গে দুধ মিশিয়ে কড়াইতে ঢেলে দিয়ে অনবরত নাড়তে হবে৷ তার পর চিনি, গুঁড়া দুধ দিয়ে মিক্স করে একে একে সব উপকরণ দিয়ে ভালো করে কষাতে হবে। শুকিয়ে এলে নামিয়ে বড় থালার মধ্যে হালুয়া ঢেলে নিতে হবে। ঘির মধ্যে বাদাম ও কিশমিশ ভেজে হালুয়ার উপরে দিয়ে পরিবেশন করতে হবে।
প্রণালি প্রথমে বাদাম হালকা টেলে নিয়ে বাদামের খোসাটা পরিষ্কার করে গরম দুধের মধ্যে ২০ মিনিট ভিজিয়ে রাখতে হবে ৷ তার পর ব্লেন্ডারে মিহি করে ব্লেন্ড করে নিতে হবে ৷ কড়াইয়ে ঘি গরম করে বাদামের মিশ্রণটি ঢেলে দিতে হবে এবং কম আঁচে রেখে নাড়তে হবে। তার পর চিনি-দুধ মিশিয়ে এলাচ গুঁড়া দিয়ে অনবরত নাড়তে হবে৷ হালুয়া থেকে ঘি বের হয়ে এলে নামিয়ে বড় থালায় দিয়ে চেপে বরফির মতো কেটে পরিবেশন করতে হবে।
ছোলার ডালের হালুয়া/বুটের হালুয়া
উপকরণ ছোলার ডাল আধা কেজি, লিকুইড দুধ ১ কেজি, চিনি ৭০০ গ্রাম, দারুচিনি এলাচ ৪ থেকে ৫ টুকরা, ঘি আধা কাপ, জাফরান সামান্য পরিমাণ, পেস্তা বাদাম কিশমিশ প্রয়োজনমতো ৷
প্রণালি ছোলার ডাল ধুয়ে পরিষ্কার করে দুধের মধ্যে সিদ্ধ করে নিতে হবে ৷ ভালো করে সিদ্ধ করে ঠাণ্ডা হলে মিহি করে বেটে নিতে হবে ৷ চুলায় কড়াই গরম করে বেটে রাখা ডাল, চিনি, এলাচ, দারুচিনি দিয়ে নাড়াতে হবে৷ চুলার আঁচ মিডিয়াম রেখে ভালো করে মেশাতে হবে। তার পর জাফরান দিয়ে নেড়েচেড়ে প্রয়োজনে একটু ঘি দেওয়া যেতে পারে। হালুয়া কষাতে কষাতে শুকিয়ে আসার পর কড়াই থেকে তেল উপরে উঠে এলে নামিয়ে ফেলতে হবে। এর পর বড় একটি প্লেটে ঢেলে নিয়ে হাত দিয়ে চেপে চেপে সমান করে বাদাম ও কিশমিশ ছড়িয়ে বরফি করে কেটে পরিবেশন করতে হবে।
পোশাকে বাঙালিয়ানা ফুটিয়ে তুলতে চুড়ির বিকল্প নেই। চুড়ির রিনিঝিনি শব্দ জানান দেয় আনন্দ-উৎসবের বার্তা। দুই হাত ভরে চুড়ি পরলে সাদামাটা সাজ হয়ে ওঠে অসাধারণ। ফ্যাশন সচেতন তরুণীরা পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে নানান ঢঙে বিভিন্ন নকশার চুড়ি পরছেন। চুড়ি সাজে নিয়ে আসে দেশীয় আমেজ। সারা বছরই রাজধানীর শপিংমল কিংবা ফুটপাতে চুড়ির পসরা দেখা যায়। ফাল্গুনে চুড়ি ছাড়া সাজে পরিপূর্ণ হয় না। বাঙালি সংস্কৃতির ঐতিহ্যে চুড়ির এক বিশেষ স্থান রয়েছে।
নানা রঙের চুড়ি সাধারণত পোশাকের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে চুড়ির রং বেছে নেওয়া হয়। পোশাকের রঙের বিপরীত রঙের চুড়িও পারেন কেউ কেউ। লাল, সবুজ, টিয়া, নীল, হলুদ, কমলা, খয়েরি, কালোসহ বিভিন্ন রঙের চুড়ি সঙ্গে শেডের চুড়িও পরেন অনেকে। হলুদ-লাল-কমলা-সবুজ-টিয়া রঙের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ফাল্গুনের চিরন্তন রূপ। এর বাইরেও এখন ফাল্গুনের রঙিন সাজে রয়েছে নানা রং। দুটি লাল চুড়ির পর তিনটি হলুদ চুড়ি, এরপর একটি টিয়া রঙের চুড়ি পরে রংধনু রঙে রাঙিয়ে নিতে পারেন আপনার হাত। এ ছাড়া পরতে পারেন একরঙের রেশমি চুড়ি।
ভিন্ন ধরনের চুড়ি কাচের চুড়ির পাশাপাশি সমানভাবে জায়গা করে নিয়েছে চৌকো, ত্রিকোণ, ডিম্বাকৃতির প্লাস্টিক ও মেটাল চুড়ি। মাটি, সুতা, চামড়া, ব্যাকেলাইট, রবার, কাঠ, মাটি, বিডস, পুঁতি, সিটি গোল্ডসহ নানা ধরনের চুড়ির ব্যবহার বাড়ছে। এগুলো চুড়ির বৈচিত্র্য বাড়িয়ে দিয়েছে। চাইলে এমন চুড়ি কিনতে পারেন। কিছু চুড়িতে এখন মখমলের কাপড়ও ব্যবহার হয়। ফাল্গুনের সাজের সঙ্গে সুতা জড়ানো চুড়ি বেশ যায়। ধাতব উপকরণে তৈরি রংবেরঙের চিকন চুড়িও পছন্দ করেন অনেকে। ধাতব চুড়ির ওপর সুতা প্যাঁচিয়ে, চুমকি আর পুঁতি বসানো চুড়ি পরে সাজে আনতে পারেন ভিন্নতা। ভেলভেট জাতীয় কাপড় বসানো নকশা করা কাচের চুড়িগুলোও দেখতে সুন্দর। অনেকে পলা বা কাচবালা বেছে নেন। এ ছাড়া পুরোনো নকশার একরঙা সাদামাটা কাচের চুড়ির পাশাপাশি খাঁজকাটা, চুমকি ও পাথর বসানো, রাজস্থানি, কাশ্মীরিসহ নানা নকশার কাচের চুড়ি পরলে সৌন্দর্য আরও দ্বিগুণ হয়ে যায়।
আধুনিক ফ্যাশনে চুড়ির ব্যবহার নতুন মাত্রা পেয়েছে
কাচ, কড়ি, কাঠ, পুঁতি প্লাস্টিকের ওপর রাজশাহী সিল্ক, ডেনিম, একরঙা সুতি ভয়েল কাপড়, গামছার কাপড় নানা বৈচিত্র্যময় কাপড়ের ব্যবহার করে চুড়ি তৈরি হচ্ছে। সেই চুড়ির ওপর কড়ি, কাঠের পুঁতি বা সিড বিডসের মতো নানা উপকরণও ব্যবহার করে নানা নকশা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া কাঠের চুড়ির ওপর ফুলের নকশা আঁকা চুড়ি পরা যায়।
আধুনিক ফ্যাশনে চুড়ির ব্যবহার চুড়ি পরার কোনো বাঁধাধরা নিয়ম নেই। আধুনিক ফ্যাশনে চুড়ির ব্যবহার নতুন মাত্রা পেয়েছে। কাচের চুড়ি প্রচলিত থাকলেও এখন ব্রাস, মেটাল এবং পলিশ চুড়িরও বেশ কদর রয়েছে। বড় সাইজের চুড়ি বা স্ট্যাকিং ব্যাঙ্গলস ট্রেন্ডে রয়েছে। দেশীয় পোশাকের সঙ্গে এক হাত ভরে চুড়ি পরলে অন্য হাতে একটি মোটা বালা পরা চলে অথবা দুই হাতে চুড়ি পরলে কিছুটা ফাঁকা রেখে পরলে ভালো লাগে। চুড়ির সঙ্গে মিলিয়ে কাঠের বা অক্সিডাইজড ধাতুর মোটা বালাও পরছেন অনেকে। আবার কাচের চুড়ির মধ্যে একটু মোটা ধরনের চুড়ি অল্প কয়েকটা এক হাতে ব্রেসলেটের মতো করে পরলেও ভালো লাগে। চুমকি বসানো বা জমকালো নকশার চুড়িগুলোর সঙ্গে মাঝে পাথর বসানো মোটা চুড়ি দেখতে ভালো লাগে। এছাড়া ওয়েস্টার্ন আউটফিটের সঙ্গে মোটা কাঠের চুড়ি কিংবা মেটাল ব্রেসলেট বেশ মানানসই। ফিউশন ফ্যাশনে হাতে বড় দু-একটি চুড়ি সহজে মানিয়ে যায়।
কোথায় পাবেন ঢাকার চকবাজার, নিউমার্কেট, গাউছিয়া, চাঁদনীচকে চুড়ির বিশাল সংগ্রহ রয়েছে। এমন কোনো চুড়ি নেই, যা এখানে পাওয়া যায় না। এ ছাড়া ঢাকার মৌচাক, আনারকলি, ইস্টার্ন প্লাজা, বসুন্ধরা সিটিসহ অন্য মার্কেটগুলো থেকেও চুড়ি কিনতে পারেন। এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার সামনে ও কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে এবং ঢাকার বেইলি রোডের ফুটপাতেও সাধারণত চুড়ি বিক্রেতারা তাদের পসরা সাজিয়ে বসেন। চাইলে এসব স্থান থেকে নিজের পছন্দসই চুড়ি কিনতে পারেন।
ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে তারকা হোটেল আমারি ঢাকা রয়েছে নানা আয়োজন।
দম্পতি রুম প্যাকেজ এবং আমায়া ফুড গ্যালারিতে বুফে ও ড্যান এবং ডেক ৪১-এ থাকবে দম্পতিদের জন্য বিশেষ সেট মেনু। আমারির সিগনেচার বুফে আমায়াতে থাকছে বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা। ৮৪৯৯ টাকা করতে পারবেন প্রিয় মানুষের সঙ্গে রোমান্টিক ডিনার। বিশেষ এই অফার চলবে ১৩ ফেব্রুয়ারি তারিখ থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
দেশীয় ঐতিহ্যবাহী কারুশিল্পকে নতুন প্রজন্মের কাছে উপস্থাপন করার লক্ষ্যে রাজধানীর আলোকি কনভেনশন সেন্টারে বসেছিল ঢাকা মেকার্সের তৃতীয় আসর। ঢাকার নতুন প্রজন্মের সৃজনশীলতার কিছুটা হলেও আঁচ পাওয়া গেছে এবারের আসরে।
এবারের আয়োজনে জামদানি, নকশিকাঁথা, শতরঞ্জি, শীতলপাটি, টেপাপুতুল ইত্যাদি ঐতিহ্য নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে আলোকির গ্লাস হাউসে বসেছিল ক্র্যাফট মার্কেট। মার্কেটপ্লেস ছিল আলোকির মূল বলরুমে। প্রায় ৬০ জন উদীয়মান শিল্পী ও উদ্যোক্তা বৈচিত্র্যময় এবং উদ্ভাবনী সব পণ্য তুলে ধরছেন। দোতলা ছিল আর্ট মার্কেট, যেখানে ছিল শিল্প প্রদর্শনী ও ক্রয়ের ব্যবস্থা। উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে করা হয়ে ছিল সংগীতের মঞ্চ। মুক্তমঞ্চের পাশেই লাল রঙের ফলের ক্রেট দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল খাবার জায়গা।
জিরো ওয়েস্টকে মাথায় রেখে, পরিবেশবান্ধব প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি পাত্রে খাবার পরিবেশন করা হয়। মেকার্স মার্কেটের পাশে প্লে গ্রাউন্ড ইংকের সৌজন্যে ম্যানুয়াল গেম জোনে ‘রস-কশ’ গেমস নামের গেমস জোন করা হয়েছিল। সংগীতপ্রেমীদের জন্য ঢাকা জ্যান প্যাড নামে মিউজিক্যাল বুথ করে ছিল। এখানে হারমোনিয়াম, তবলা, গিটার, কি-বোর্ড, ইউকেলেলের মতো বাদ্যযন্ত্র রাখে সাজানো হয়েছিল। যে যার খুশিমতো এসে গিটার বাজিয়ে ছবি তুলেছে।
ফুড জোনের পাশেই ছিল ‘হাউস অব অ্যানিমেশন’ যেখানে তিনজন অ্যানিমেশন আর্টিস্টের ইলাস্ট্রেশন, গ্রাফিকস, এনিম, এলিমেন্ট, ভিজ্যুয়াল আর্ট উপস্থাপন করা হয়েছে। ঢাকা মেকার্সের পাঁচ দিনই মুক্তমঞ্চে ছিল সংগীতায়োজন।
বাইরের খোলা অংশে ডেমোনেস্ট্রেশন জোনে রিসাইকেলড ক্র্যাফট, আলপনা, বডি পেইন্টিং পারফরম্যান্স ও রিকশা আর্ট অন অবজেক্ট, ইয়ান্ত্রার পরিচালনায় ট্যাপেস্ট্রি তৈরির পরিবেশনা, ফোক পেইন্টিং অন অবজেক্ট পরিবেশনা, লাঠিখেলা, বাঁশি বাজানো পরিবেশনা ও সাধুসঙ্গের পরিবেশনার মাধ্যমে প্রাণবন্ত হয়ে উঠে আলোকির প্রাঙ্গণ।
এ ছাড়া মিনিয়েচার টেরারিয়াম, ক্যালিগ্রাফি, সাস্টেইনেবল লেদার, জিরো ওয়েস্টেজ ওয়ার্কশপ আর নকশিকাঁথার অনুপ্রেরণায় ভূত ইলাস্ট্রেশনের ওয়ার্কশপগুলো নজর কেড়েছে।
এবারের আয়োজনে রিকশার হুডের আর্টওয়ার্ক দিয়ে পণ্য তৈরি করেছেন হল্লা, কানের দুল, মালা, টোট ব্যাগ, গিটার স্ট্রাপসহ অনেক পণ্য। নতুন প্রজন্মের কাছে লুঙ্গির ঐতিহ্য তুলে ধরতে ল-তে ছিল বেশ কিছু উদ্যোগ। পাবনায় তৈরি করা তাদের ভেজিটেবল ডাই করা টাই আর লুঙ্গি ছিল আকর্ষণীয়।
ভবিষ্যতে সম্ভব হলে মসলিনের পকেট স্কয়ার আনার পরিকল্পনাও রয়েছে তাদের। আইচা নারকেলের খোল দিয়ে বিভিন্ন জিনিস বানিয়ে চমক দিয়েছেন। জেন–জি ফ্যাশনিস্তাদের পছন্দের শীর্ষে ছিল বান্দরবানের বিডসের গহনা। অনেকেই গলায় পরে ঘুরেছেন পুরো মেলাজুড়ে। ৩০ জানুয়ারি শুরু হওয়া পাঁচ দিনের এই উৎসব শেষ হয় ৩ ফেব্রুয়ারি।
মডেল: সাদিয়া ইসলাম মৌ, পোশাক: বিশ্বরঙ,ছবি: জি এম সুজন
বিগত কয়েক বছরে বসন্তের সাজ-ফ্যাশনে বেশ পরিবর্তন এসেছে। পাশ্চাত্যর মতো আমাদের দেশে বসন্তকালে পরার জন্য তৈরি পোশাকগুলোর মোটিফে ঘুরে ফিরে এসেছে ফুল। ফুলেল ছাপার পোশাক এবারের বসন্ত সংগ্রহে দেখা যাচ্ছে। বৈচিত্র্য রয়েছে পোশাকের মোটিফ ও ডিজাইনে। বাহারি রঙের পোশাকেও বসন্তবরণ করা হচ্ছে।
যেমন হবে পোশাক বসন্তবরণ মানেই বর্ণিল পোশাক। এই দিনটিতে নারীদের বেশির ভাগই শাড়ি বেছে নেন। তবে সালোয়ার কামিজ, কুর্তা, স্কার্ট-টপস অথবা পাশ্চাত্য ঘরানার পোশাকও মানিয়ে যায় বসন্তের আবহের সঙ্গে। শাড়ি পরলে ব্লাউজে আনতে পারেন নতুনত্ব। সুতি, কোটা, জর্জেট ও সিল্কের শাড়ি বেছে নিতে পারেন। শাড়ির জমিনের কোথাও আছে এক থোকা ফুল বা কোথাও একগুচ্ছ পাতা। আবার কোথাও কবিতা বা গানের লাইন এঁকে শাড়িতে আনা হয়েছে বাংলা প্রকৃতির আদল। বাংলাদেশের প্রকৃতি ও ঐতিহ্য এত সমৃদ্ধ যে, প্রতিটি ঋতুতেই আলাদা আলাদা মোটিফে কাজ করার সুযোগ থাকে। তাই অনেকে হলুদ জমিন শাড়ির ওপর ছোট ছোট সাদা ফুলের কাজ করে। সাদা কাপড়ের ওপর হলুদ রঙের ফুলও বসন্তের বার্তা দেয়।
শাড়ির জমিনের কোথাও আছে এক থোকা ফুল বা কোথাও একগুচ্ছ পাতা
অনেকগুলো রং দিয়ে শাড়িতে স্ট্রাইপের নকশা করেছে। এ ছাড়া এই সময়ে ঢিলেঢালা কামিজ, কুর্তি, টিউনিক, টপস পরেন অনেকে। ফুলহাতা না পরে হাফহাতা বা স্লিভলেস পোশাক পরতে পারেন। বটম হিসেবে পালাজ্জো, ধুতি সালোয়ার, ওয়াইড লেগড জিনস বা গ্যাবার্ডিনের প্যান্ট, লম্বা স্কার্ট পরলে ভালো লাগবে। ট্রেন্ড হিসেবে মিডি ও ম্যাক্সি ড্রেসের জনপ্রিয়তা অনেক।
চাইলে এগুলো দর্জির কাছ দিয়ে সুতি বা লিনেন ফেব্রিকে বানিয়ে নিতে পারেন। বসন্তে বর্ণিল পোশাক এনেছে ফ্যাশন হাউসগুলো। বসন্ত কালেকশনে রয়েছে মেয়েদের জন্য শাড়ি, থ্রি-পিস, কেপ টপ, কাফতান, কুর্তি, শর্ট টপ। ছেলেরা অন্য সময় ফুলেল মোটিফ এড়িয়ে চললেও এ সময়ে বেশ পছন্দ করে। পাঞ্জাবিতেও জায়গা করে নিয়েছে ফুলেল নকশা। ছেলেদের পাঞ্জাবির পাশাপাশি ক্যাজুয়াল শার্ট, কুর্তা, পলো, টি-শার্ট, ডাই শার্ট রয়েছে। ছোটদের কালেকশনে টি-শার্ট, স্কার্ট টপ, ফ্রক, টপস, প্যান্ট টপ, জাম্প স্যুট, ক্যাজুয়াল শার্ট, কুর্তা, পলো, টি-শার্ট, টুইন টপসহ আরও নানা স্টাইলিশ পোশাক।
পোশাকের কাপড় ঋতুর তাপমাত্রার কথা মাথায় রেখে ক্রেতাদের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে আরামদায়ক শিফন ও কটন ফেব্রিক। এমন আবহাওয়ায় সবচেয়ে ভালো সুতি কাপড়ের পোশাক। সুতি কাপড়ের ভেতর দিয়ে বাতাস চলাচল করতে পারে। এ ছাড়া এর ঘাম শোষণক্ষমতাও বেশি। সুতির পরই আরামদায়ক কাপড়ের দৌড়ে এগিয়ে নরম লিনেন। এ ছাড়া বেছে নিতে পারেন খাদি, ভিসকস, ধুপিয়ান, শিফন, সিল্কের পোশাক।
ফুলের নকশা জমিনের রং, কাপড়ের ধরন, পোশাকের ডিজাইন সবকিছুই আপনার শারীরিক অবয়বে প্রভাব ফেলতে পারে। পাতলা গড়নের মেয়েদের যেকোনো ছাপা নকশাতেই মানাবে। ভারী গড়নের মেয়েরা আজকাল ফ্রকের মতো চারদিকে ছড়ানো পোশাক বেশি পছন্দ করছেন। ঢোলা কিন্তু কলার দেওয়া কুর্তা, বড় টপের সঙ্গে মেঝেছোঁয়া স্কার্ট কিংবা লম্বা কোটির মতো দুই পরত দেওয়া কামিজ পরছেন অনেকে। ঘন ফুলের নকশা বা ফুলের মোটিফের পোশাক ভালো লাগে। এ ছাড়া মাল্টিকালার প্রিন্টের পাশাপাশি ফ্লোরাল প্রিন্টে ওয়াটার প্রিন্ট ইফেক্ট ব্যবহার করে অনেকে পোশাক ডিজাইন করছেন।
সালোয়ার-কামিজ, স্কার্ট, টপস, গাউনে রং মেলেছে ছোট বড় উজ্জ্বল বিভিন্ন ফুলের পোশাক। এ ছাড়া লিনেন, কটন, সিল্ক, হাফসিল্ক, ভয়েল, টু-টোন কাপড়ে তৈরি পোশাকগুলোতে নকশা ফুটিয়ে তুলতে হাতের কাজ, এমব্রয়ডারি, স্ক্রিন ও ব্লক প্রিন্ট, ডিজিটাল প্রিন্ট এবং টাই-ডাইয়ের ব্যবহার হয়েছে।
পোশাকে প্রকৃতির রং ফাল্গুনের প্রথম দিনটিতে চারদিক প্রকৃতির রংগুলোতে সেজে উঠে। নতুন পাতার কচি সবুজ রং কিংবা গাঁদা ফুলের হলুদ-কমলা রং- বসন্তবরণের সাজে প্রকৃতির এই রংগুলোতেই সেজে উঠতে পছন্দ করে সবাই। বসন্তের চিরায়ত রং বাসন্তীর পাশাপাশি লাল, কমলা, সবুজসহ অনেক রং দেখা যায়। সাদার ওপরেও বিভিন্ন রঙের নকশা করা কাপড় জড়িয়ে নিতে পারেন গায়ে। যে রঙেরই হোক না কেন, বসন্তে ফুলেল নকশা দারুণ মানিয়ে যায়। এ ছাড়া সব উজ্জ্বল রঙের ফুটে উঠেছে ফুলের প্রিন্টগুলো। লাল, গোলাপি, হলুদ, নীল, পিচ, বেগুনি, কমলা, চকলেট আর সবুজের সব কটি শেড ফুটে দেখতে পাবেন ফুলেল ছাপার যেকোনো কাপড়ে।
কাপড়ের কাটছাঁট ফুলের আকৃতি আর কাপড়ের ধরন বুঝে পোশাক কাট ঠিক করা হয়। অনেক ফ্যাশন হাউস ঝলমলে কাপড়ে আধুনিক ছাঁট পোশাক ডিজাইন করেছে, আরামদায়ক কাপড় সুতিতে চেনা কাটের পাশাপাশি ফুলেল ছাপায় কাটিং, প্যাটার্ন ট্রেন্ডি অনুসরণ করেছে।
টপসে সেমি বোট নেক, রাউন্ড নেক, রাউন্ড উইথ ফল, ব্র্যান্ড কলার পোশাক বসন্তে বেশ মানানসই। গাউন, কামিজ, টরসোর মতো ড্রেসে ফ্লোরাল প্রিন্টের ব্যবহার করে আলাদা ডিজাইন করা হয়েছে। এ ছাড়া কিছু কিছু ফ্যাশন হাউস উৎসবের মোটিফে ডিজাইন না করে, সব জায়গায় সব আয়োজনে পরা যায় এমন পোশাক ডিজাইন করেছে। বেন কলার দেওয়া লুজ ফিটিংয়ের শার্ট, স্লিভলেস, স্লিভসহ তুর্তি। ভি নেক, নচ বা কোট কলার ও সাইড বেল্ট দিয়ে ভিন্ন লুক আনা হয়েছে, যা পরা যাবে উৎসব থেকে শুরু করে যেকোনো আয়োজনে।