
নিজেকে নতুনভাবে উপস্থাপন করতে রঙিন পোশাকের জুড়ি নেই। শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, লং কামিজ, শর্ট কামিজ, শার্ট, টি-শার্ট, পছন্দের সব পোশাক রঙিন হলে নিজেকে আলাদাভাবে উপস্থাপন করা যায়। বিচিত্র রঙের ব্যবহারই ফ্যাশনে নতুনত্ব আনে। পরিবর্তনের এ ফ্যাশনজগতে রঙের বিষয়টি এখন সবার কাছেই সমানতালে প্রাধান্য পাচ্ছে। প্রতিটি উৎসবে পোশাকে দেখা যায় নানা রঙের খেলা।
রঙের প্রাধান্য
তারুণ্যের চাহিদা ও রুচির কথা মাথায় রেখে আমাদের দেশের বিভিন্ন ফ্যাশন হাউস, বুটিক শপের ডিজাইনাররা নিত্যনতুন পোশাক ডিজাইন করছেন। ফ্যাশন ধারণাকে নিয়মের শৃঙ্খলে বেঁধে না রেখে পোশাকে নানা রং ব্যবহার করছেন। বাঙালি সংস্কৃতিতে উজ্জ্বল রংকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়। তাই প্রতিটি উৎসবে উজ্জ্বল রঙের চাকচিক্য লক্ষ করা যায়। লাল, সাদা, মেরুন, পেস্ট, গ্রিন, অলিভ গ্রিন সময়োপযোগী বলে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

নকশায় বিভিন্নতা
মেয়েদের পোশাকের নকশাতে এসেছে ভিন্ন ধারা। সালোয়ার-কামিজ, টপ, স্কার্ট কাটের এখন নেই ধরাবাঁধা কোনো নিয়ম। ফ্যাশন হাউসগুলো পোশাকের নকশা এবার শুধু রঙের ওপর নয়, বিভিন্ন মোটিফ ধরেই করছে। সুতি, অ্যান্ডি কাপড়ের ওপর ব্লক প্রিন্ট, স্ক্রিন প্রিন্ট, হাতের কাজ ও এমব্রয়ডারি করছেন। জামদানি মোটিফ, কাঁথা স্টিচ, প্যাচওয়ার্ক, ফুল, কারচুপি, ভরাট অ্যাপলিকসহ হরেক রকম হাতের কাজে রয়েছে ভিন্নতা। এ ছাড়া জ্যামিতিক নকশার সঠিক ব্যবহার পোশাকের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিচ্ছে কয়েক গুণ।
রঙিন প্রিন্ট
প্রিন্ট বরাবরই ফ্যাশনের অবিচ্ছেদ্য একটি অংশ। বেশ কয়েক বছর ধরেই রং-বৈচিত্র্যের জন্য ডিজিটাল প্রিন্টের প্রতি মানুষের রয়েছে আলাদা আকর্ষণ। সুতি, ম্যানমেইড ফাইবারের কাপড়, তসর, সিল্ক, লিনেন, জর্জেট, ভিসকসসহ যেকোনো ধরনের কাপড়ে ডিজিটাল প্রিন্ট করতে দেখা যায়। এ ধরনের পোশাক যেকোনো আবহাওয়ায় আরামদায়ক। প্রিন্টের সম্পূর্ণ ডিজাইন কম্পিউটারে করা হয়, যার দরুন ফিনিশিংও হয় নিখুঁত। একদম ছবির মতো ঝকঝকে। আগের গতানুগতিক ধারার দু-তিন ধরনের রঙের ব্যবহারের একঘেয়েমি কাটিয়ে ডিজিটাল প্রিন্টে ব্যবহার করা যায় যত খুশি তত রং।
নানান কাটের পোশাক
ছিমছাম, পরিপাটি লুক আনতে পোশাকের কাটের ওপর গুরুত্ব দিয়েছে ফ্যাশন হাউসগুলো। প্যান্ট বা চাপা কাটের সালোয়ারের সঙ্গে কখনো লম্বা শার্ট, কখনোবা টপসের ছাঁটে বানানো হচ্ছে কুর্তি। শুধু কাপড়েই নয়, কাটছাঁটে আরামের বিষয়টি প্রাধান্য দেওয়ায় ফ্যাশনসচেতনদের কাছেও বেশ জনপ্রিয়তা পাচ্ছে এ ধরনের পোশাক। এসব পোশাকে আছে অভিজাত লুক, কিন্তু পোশাকে কারুকাজ থাকে খুব কম। উজ্জ্বল রংগুলোই বেছে ডিজাইন করা হচ্ছে। বিভিন্ন দিক বিবেচনায় রেখে এসব পোশাকে ব্যবহার করা হয়েছে ভিসকস, পলিয়েস্টার আর রেয়ন কাপড়। এসব পোশাকে দেশীয় আমেজ আনতে টার্সেল, কড়ি কিংবা পমপমের মতো অনুষঙ্গ যোগ করা হয়েছে। এ ছাড়া পাশ্চাত্য ঘরানার পোশাকে প্রাচ্যের সঙ্গে দেশীয় সংস্কৃতির মিশেলে ফিউশন আনা হচ্ছে। পোশাকের নিচের দিকটায় একটু ঢিলেঢালা কাট রাখা হলে আরাম পাওয়া যায় বেশ আর বৈচিত্র্যময় কাটে দেখায়ও অনন্য। এ ছাড়া পোশাকে নতুনত্ব নিয়ে আসতে মুন শেইপ, ওভাল শেইপ আবার কখনোবা পেছনের অংশের ঝুল রেখে ডিজাইন করা হয়েছে।

কো অর্ড সেটের আধিপাত্য
একই নকশার কাপড়, রং দিয়ে তৈরি পোশাকের পুরো সেটকে ফ্যাশনধারায় কো-অর্ডিনেট সেট বলা হয়। বর্তমানে এই সেটকে সংক্ষেপে কো-অর্ড বলা হয়। বেশির ভাগ কো-অর্ড সেট বানানো হচ্ছে বেশ ঢিলেঢালা কাটে। এই কাটের কারণেই নজর কেড়েছে বেশি। এই পোশাকে পকেট থাকার কারণে মোবাইল বা ছোট জিনিস রাখা যায়। এ জন্য কো-অর্ড নানা নকশার হয়ে থাকে। প্রিন্ট কিংবা একরঙা রঙিন কো-অর্ডগুলো উৎসব-আয়োজনে পরা যায়। ফুলের মোটিফ, জ্যামিতিক মোটিফ কিংবা টাই-ডাইয়ের কো-অর্ড দেখতেও সুন্দর। পীতাভ সবুজ, হালকা বেগুনি, পাউডার পিংক, পাউডার ব্লু কিংবা ক্রিমরোজ ইয়েলো অনেকেরই পছন্দ। তবে নিউট্রাল রঙের বাইরেও সবুজ, নীল, নিয়ন, শর্ষে হলুদ, হট পিঙ্কের মতো উজ্জ্বল কিংবা গাঢ় রঙের কো-অর্ড।
পরতে পারেন যেমন পোশাক
এই সময় চলছে রঙিন কুর্তি-কামিজ। লম্বা কাটের কুর্তি-কামিজের পাশাপাশি চলছে মাঝারি কাটিংয়ের কুর্তি-কামিজ। অফিস কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার জন্য কুর্তি ও সালোয়ার-কামিজ এখন বেশ জনপ্রিয়। কুর্তির সঙ্গে পরতে পারেন প্যান্ট অথবা পালাজ্জো। জিনসও মানিয়ে যাচ্ছে বেশ। পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে অথবা পোশাকের বিপরীত রঙের স্কার্ফ অনায়াসে বেছে নিতে পারেন।
কলি