
শীতকালে ত্বক ও চুল রুক্ষ হয়ে পড়ে। শুষ্ক ত্বকের যত্নে, ত্বককে হাইড্রেট, নরম এবং মসৃণ রাখতে সাহায্য করে গোলাপজল। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রেখে ত্বককে রাখে সতেজ। প্রতিদিনের পরিচর্যায় গোলাপজল ব্যবহারে ত্বককে সুস্থ রাখে, চুল করে ঝলমলে।
গোলাপজলের গুণ
গোলাপজলে আছে ফ্ল্যাবনয়েড, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, ট্যানিন, ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন ডি, ভিটামিন ই এবং ভিটামিন বি৩। ফেস মাস্কের উপাদান, টোনার বা ফেস মিস্ট হিসেবে গোলাপজল ত্বককে স্নিগ্ধ, আর্দ্র ও সতেজ রাখে।
যেভাবে বাড়িতেই গোলাপজল বানাবেন
গোলাপের পাপড়িগুলো প্রথমে ছিঁড়ে নিতে হবে। চুলায় পরিমাণমতো পানি ফুটতে দিন। পানি ফুটে গেলে তাতে গোলাপের পাপড়িগুলো ছেড়ে দিন। চুলা বন্ধ করে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রাখুন ১৫ থেকে ২০ মিনিট। এরপর ছেঁকে পানি বের করে নিলেই তৈরি হয়ে গেল গোলাপজল। বোতল বা মুখবন্ধ বয়ামে সংরক্ষণ করুন। ফ্রিজে অথবা ঘরের স্বাভাবিক তাপমাত্রায়ও রাখতে পারেন।
ময়েশ্চারাইজার হিসেবে
ত্বকের জন্য গোলাপজল ময়েশ্চারাইজার হিসেবে বেশ উপকারী। গোলাপজল, গ্লিসারিন ও জলপাইয়ের তেল একসঙ্গে মিশিয়ে ময়েশ্চারাইজার বানিয়ে নিতে পারেন। এটি চেহারায় বয়সের ছাপ রোধেও কাজ করবে। পাশাপাশি আপনার ত্বককে বেশ লম্বা সময় ধরে আর্দ্র রাখবে। হাত ও পায়েও এটি ব্যবহার করা যাবে।
টোনার হিসেবে ব্যবহার
প্রাকৃতিক টোনার হিসেবে গোলাপজলের কোনো বিকল্প নেই। টোনার হিসেবে ব্যবহার করলে ত্বকের অতিরিক্ত তেল কন্ট্রোল হয় এবং ত্বকের পিএইচ ভারসাম্য বজায় থাকে। মুখ পরিষ্কার করার পরেও ত্বকের ভেতরে ময়লা জমে থাকে। টোনার হিসেবে গোলাপজল ব্যবহার করলে তা ত্বকের ভেতরে থেকে সব ধরনের ময়লা বের করে আনে। আর সব ধরনের ত্বকেই গোলাপজল টোনার হিসেবে খুব ভালো কাজ করে।
মেকআপ তুলতে
মেকআপ তোলার কাজে ব্যবহার করতে পারবেন গোলাপজল। অন্যান্য মেকআপ তোলার প্রসাধনীতে অ্যালকোহল জাতীয় এমন কিছু পদার্থ থাকে, যা ত্বককে শুষ্ক করে দেয়। তাই মেকআপ তোলার জন্য আদর্শ হলো গোলাপজল। দুই চামচ গোলাপজলের সঙ্গে এক চামচ আমন্ডের তেল মিশিয়ে ত্বকে লাগান। মেকআপ তোলার সঙ্গে সঙ্গে ত্বককে ময়েশ্চারাইজও করবে এই মিশ্রণ। বাড়িতে বানানো গোলাপজল মুখে স্প্রে করুন, আলতো হাতে মালিশ করুন। প্রতি রাতে অনুসরণ করুন এই রুটিন।
পুরো শরীরকে সতেজ রাখতে
সাধারণত যে লোশন বা ক্রিম ব্যবহার করেন, তার সঙ্গে সামান্য গোলাপজল মিশিয়ে শরীরে লাগাতে পারেন। এ ছাড়া পানিতে গোলাপজল মিশিয়ে গোসল করলে এর ঘ্রাণেও আপনি সতেজ বোধ করবেন।
সানস্ক্রিন হিসেবে গোলাপজল
গোলাপজলে উচ্চমাত্রায় ভিটামিন সি আছে, যা সানস্ক্রিন হিসেবে চমৎকার কাজ করে। বাইরে যাওয়ার আগে শসার রসের সঙ্গে সামান্য একটু গ্লিসারিন ও গোলাপজল নিয়ে লোশন তৈরি করে মুখে লাগালে অনেক উপকার পাওয়া যাবে।
ব্রণ হওয়ার প্রবণতা কমাতে
গোলাপজলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিসেপটিক অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল, যা প্রতিরোধকারী হিসেবে কাজ করে। ব্রণ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া রোধের পাশাপাশি ত্বকের দাগ কমাতেও সাহায্য করে। এ ছাড়া গোলাপজল ত্বকের জ্বালাপোড়া কমাতে সাহায্য করে। এর ফলে ত্বকের লালচে ভাব দূর করে।
সুগন্ধি হিসেবে
গোলাপজলের সুগন্ধি আপনার মনকে খুব অল্প সময়ে সতেজ করতে পারে। তাই প্রশান্তির জন্য অনেক সময় গোলাপজলের সুগন্ধি ব্যবহার করতে পারেন।
ত্বকের অ্যালার্জি দূর করতে
ত্বকের অ্যালার্জি বা যেকোনো সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে গোলাপজলের সঙ্গে পরিমাণমতো তুলসীপাতার গুঁড়া মিশিয়ে ব্যবহার করুন।
চুলের যত্নে গোলাপজল
চুলের কন্ডিশনার হিসেবেও গোলাপজল ব্যবহার করতে পারেন। চুলে শ্যাম্পু করার পর ১ মগ পানিতে ১ কাপ গোলাপজল দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। গোলাপজল দেওয়ার পর চুলে আর পানি লাগাবেন না। এভাবেই চুল মুছে শুকিয়ে ফেলুন। গভীর থেকে চুলকে নরম করা এবং উজ্জ্বলতা বাড়াতে গোলাপজলের ভূমিকা অনেক।
ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে গোলাপজল
২ টেবিল চামচ মুলতানি মাটির গুঁড়া, ১ টেবিল চামচ দুধ, ১ টেবিল চামচ গোলাপজল একসঙ্গে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। প্রথমে ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে মুছে নিন। তারপর এই পেস্টটি মুখে লাগিয়ে নিন। ২০ মিনিট রাখার পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে দু-একবার এই পেস্ট ব্যবহার করলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়বে।
কলি