
পোশাকে বাঙালিয়ানা ফুটিয়ে তুলতে চুড়ির বিকল্প নেই। চুড়ির রিনিঝিনি শব্দ জানান দেয় আনন্দ-উৎসবের বার্তা। দুই হাত ভরে চুড়ি পরলে সাদামাটা সাজ হয়ে ওঠে অসাধারণ। ফ্যাশন সচেতন তরুণীরা পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে নানান ঢঙে বিভিন্ন নকশার চুড়ি পরছেন। চুড়ি সাজে নিয়ে আসে দেশীয় আমেজ। সারা বছরই রাজধানীর শপিংমল কিংবা ফুটপাতে চুড়ির পসরা দেখা যায়। ফাল্গুনে চুড়ি ছাড়া সাজে পরিপূর্ণ হয় না। বাঙালি সংস্কৃতির ঐতিহ্যে চুড়ির এক বিশেষ স্থান রয়েছে।
নানা রঙের চুড়ি
সাধারণত পোশাকের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে চুড়ির রং বেছে নেওয়া হয়। পোশাকের রঙের বিপরীত রঙের চুড়িও পারেন কেউ কেউ। লাল, সবুজ, টিয়া, নীল, হলুদ, কমলা, খয়েরি, কালোসহ বিভিন্ন রঙের চুড়ি সঙ্গে শেডের চুড়িও পরেন অনেকে। হলুদ-লাল-কমলা-সবুজ-টিয়া রঙের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ফাল্গুনের চিরন্তন রূপ। এর বাইরেও এখন ফাল্গুনের রঙিন সাজে রয়েছে নানা রং। দুটি লাল চুড়ির পর তিনটি হলুদ চুড়ি, এরপর একটি টিয়া রঙের চুড়ি পরে রংধনু রঙে রাঙিয়ে নিতে পারেন আপনার হাত। এ ছাড়া পরতে পারেন একরঙের রেশমি চুড়ি।
ভিন্ন ধরনের চুড়ি
কাচের চুড়ির পাশাপাশি সমানভাবে জায়গা করে নিয়েছে চৌকো, ত্রিকোণ, ডিম্বাকৃতির প্লাস্টিক ও মেটাল চুড়ি। মাটি, সুতা, চামড়া, ব্যাকেলাইট, রবার, কাঠ, মাটি, বিডস, পুঁতি, সিটি গোল্ডসহ নানা ধরনের চুড়ির ব্যবহার বাড়ছে। এগুলো চুড়ির বৈচিত্র্য বাড়িয়ে দিয়েছে। চাইলে এমন চুড়ি কিনতে পারেন। কিছু চুড়িতে এখন মখমলের কাপড়ও ব্যবহার হয়। ফাল্গুনের সাজের সঙ্গে সুতা জড়ানো চুড়ি বেশ যায়। ধাতব উপকরণে তৈরি রংবেরঙের চিকন চুড়িও পছন্দ করেন অনেকে। ধাতব চুড়ির ওপর সুতা প্যাঁচিয়ে, চুমকি আর পুঁতি বসানো চুড়ি পরে সাজে আনতে পারেন ভিন্নতা। ভেলভেট জাতীয় কাপড় বসানো নকশা করা কাচের চুড়িগুলোও দেখতে সুন্দর। অনেকে পলা বা কাচবালা বেছে নেন। এ ছাড়া পুরোনো নকশার একরঙা সাদামাটা কাচের চুড়ির পাশাপাশি খাঁজকাটা, চুমকি ও পাথর বসানো, রাজস্থানি, কাশ্মীরিসহ নানা নকশার কাচের চুড়ি পরলে সৌন্দর্য আরও দ্বিগুণ হয়ে যায়।

কাচ, কড়ি, কাঠ, পুঁতি
প্লাস্টিকের ওপর রাজশাহী সিল্ক, ডেনিম, একরঙা সুতি ভয়েল কাপড়, গামছার কাপড় নানা বৈচিত্র্যময় কাপড়ের ব্যবহার করে চুড়ি তৈরি হচ্ছে। সেই চুড়ির ওপর কড়ি, কাঠের পুঁতি বা সিড বিডসের মতো নানা উপকরণও ব্যবহার করে নানা নকশা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া কাঠের চুড়ির ওপর ফুলের নকশা আঁকা চুড়ি পরা যায়।
আধুনিক ফ্যাশনে চুড়ির ব্যবহার
চুড়ি পরার কোনো বাঁধাধরা নিয়ম নেই। আধুনিক ফ্যাশনে চুড়ির ব্যবহার নতুন মাত্রা পেয়েছে। কাচের চুড়ি প্রচলিত থাকলেও এখন ব্রাস, মেটাল এবং পলিশ চুড়িরও বেশ কদর রয়েছে। বড় সাইজের চুড়ি বা স্ট্যাকিং ব্যাঙ্গলস ট্রেন্ডে রয়েছে। দেশীয় পোশাকের সঙ্গে এক হাত ভরে চুড়ি পরলে অন্য হাতে একটি মোটা বালা পরা চলে অথবা দুই হাতে চুড়ি পরলে কিছুটা ফাঁকা রেখে পরলে ভালো লাগে। চুড়ির সঙ্গে মিলিয়ে কাঠের বা অক্সিডাইজড ধাতুর মোটা বালাও পরছেন অনেকে। আবার কাচের চুড়ির মধ্যে একটু মোটা ধরনের চুড়ি অল্প কয়েকটা এক হাতে ব্রেসলেটের মতো করে পরলেও ভালো লাগে। চুমকি বসানো বা জমকালো নকশার চুড়িগুলোর সঙ্গে মাঝে পাথর বসানো মোটা চুড়ি দেখতে ভালো লাগে। এছাড়া ওয়েস্টার্ন আউটফিটের সঙ্গে মোটা কাঠের চুড়ি কিংবা মেটাল ব্রেসলেট বেশ মানানসই। ফিউশন ফ্যাশনে হাতে বড় দু-একটি চুড়ি সহজে মানিয়ে যায়।
কোথায় পাবেন
ঢাকার চকবাজার, নিউমার্কেট, গাউছিয়া, চাঁদনীচকে চুড়ির বিশাল সংগ্রহ রয়েছে। এমন কোনো চুড়ি নেই, যা এখানে পাওয়া যায় না। এ ছাড়া ঢাকার মৌচাক, আনারকলি, ইস্টার্ন প্লাজা, বসুন্ধরা সিটিসহ অন্য মার্কেটগুলো থেকেও চুড়ি কিনতে পারেন। এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার সামনে ও কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে এবং ঢাকার বেইলি রোডের ফুটপাতেও সাধারণত চুড়ি বিক্রেতারা তাদের পসরা সাজিয়ে বসেন। চাইলে এসব স্থান থেকে নিজের পছন্দসই চুড়ি কিনতে পারেন।
কলি