বাস থেকে নামতেই শরীরটা ছমছম করে উঠল। খুব যে রাত হয়েছে, তা নয়। এখনো ১০টা বাজেনি। কিন্তু বাসস্ট্যান্ডে কোনো লোকজন নেই। অসম্ভব নীরব। স্ট্রিটলাইট জ্বললেও রাস্তার দুই পাশে গাছগাছালির লম্বা ঘন ছায়া পরিবেশটাকে ভূতুড়ে করে তুলেছে। দুই স্টপেজ আগেই বাস খালি হয়ে যায়। এমনকি বাসের হেল্পারও নেমে পড়ে। বাসচালক তাকে একা নিয়েই পল্লবী সাড়ে এগারো পর্যন্ত চলে আসে। এখানেই তাকে নামতে হবে। চালকটা যেন একটু তড়িঘড়িই করছে। এর পরেরটাই মিরপুর-১২ লাস্টস্টপেজ।
খুব ক্লান্ত লাগছে। তবু হুড়োপাড়া করেই তাকে নামতে হলো। হাতে ব্রিফকেস।
ব্রিফকেসটা তার নিত্য সাথী। বিশেষ করে অফিসে আসা-যাওয়ার পথে। কাকরাইলে তার অফিস। বাসা মিরপুরের প্রায় শেষ মাথায়- সাড়ে এগারো পল্লবীতে। শহরের এ মাথা-ও মাথা। মেইন রাস্তা থেকে ভেতরের দুই রাস্তা পরেই তার বাসা। পাড়ার রাস্তাগুলো দিনের বেলাতেও প্রায় ফাঁকা থাকে। আর রাতে তো ঝুম নীরবতা। এর মধ্য দিয়েই তার প্রতি রাতে ঘরে ফেরা। বাস থেকে নামলেই গা ছমছম করে ওঠে। তার পরই ভয় আর থাকে না। নিজের পাড়া। দীর্ঘদিনের বাস। গটগট করে পা ফেলে চলে আসে বাসায়। ব্রিফকেসটা হাতেই থাকে। ওতে কোনো ঐশ্বর্য নেই, দামি কিছুও নয়, রয়েছে খালি একটি টিফিন বক্স- দুপুরের জন্য ঘরের টিফিন নিয়ে যায় ওই কৌটায়।
সোহান আজও নামল বাস থেকে। যথারীতি গা ছমছম আমেজ নিয়ে। সেই নিঝুম বাসস্টপেজে। আজ রাত ১০টা পেরিয়ে গেছে।
বাস থেকে নেমে সে এদিক-ওদিক তাকাল। কোথাও কেউ নেই। রাস্তায় নামলে একটা কুকুর এসে দাঁড়ায় তার পাশে। বাসা পর্যন্ত তাকে এগিয়ে দিয়ে যায়। আজ কুকুরটাকে দেখা গেল না। হয়তো অন্য কোথাও কোনো কাজে ব্যস্ত। হয়তো কোথাও সুস্বাদু ভোজের সন্ধান পেয়েছে।
বাসার দিকে পা বাড়াতেই নজর পড়ল, কোনার অন্ধকার থেকে বেরিয়ে এল একজন লোক। দাঁড়াল তার সামনে। ফ্যাসফ্যাসে গলায় বলল: রাইতবিরেত, যাইবেন কই?
ঠিক এ সময়ই কোত্থেকে যেন কুকুরটির উদয়। সোহান ও লোকটির মাঝখানে দাঁড়িয়ে পড়েছে।
সোহান একটু ভয়ই পেয়ে গিয়েছিল। কুকুরটাকে দেখে তার ভিতর সাহস ফিরে এল। খানিকটা মেজাজ দেখিয়ে বলল: এখানেই আমার বাসা। আপনার কোনো অসুবিধা?
লোকটা বলল: রাইত হইছে। সাবধানে যাইয়েন।
লোকটা গাছের ছায়ায় হারিয়ে গেল।
কুকুরটি সারা পথ সোহানের সঙ্গে। বাসায় পৌঁছে গেট খুলে পেছনের দিকে তাকিয়ে দেখে: কুকুরটি কোথাও নেই।
প্রতিদিনকার ঘটনা। দীর্ঘশ্বাস ফেলে সোহান বাসায় ঢুকল।
কয়েকদিন পর। সে রাতেও যথারীতি বাস থেকে নামল। বাসস্টপেজ থেকে কয়েক কদম এগিয়ে যেতেই চারপাশটা কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা মনে হলো সোহানের। এ সময় রাস্তাঘাট তো ফাঁকাই থাকে, এর পরও মনে হচ্ছে আজ রাতে তার সঙ্গে একটা কিছু নেই যেন। ব্রিফকেসটা কি? সেটা তো তার হাতেই ধরা। ওতে খালি টিফিন বক্স ছাড়া আর কিছু নেই।
আচমকাই সোহানের সামনে এসে দাঁড়াল এক বালক। হাফ প্যান্ট পরনে পুরো গা খালি। কখন যেন সে উল্টোদিকের গলি থেকে রাস্তা পেরিয়ে এসে তার পথ আগলে দাঁড়িয়েছে।
সোহানের ভুরু জোড়া কুঁচকে গেল। বিরক্ত হয়ে বলল: কে রে তুই?
এই রাতেও ছেলেটার মুখে কোনো ভয়ডরের চিহ্ন নেই। নির্বিকার কণ্ঠে বলল: আমি রাস্তার পোলা। রাস্তাতেই থাহি। আপনেরে হুঁশিয়ার করতে আইছি।
থমকে দাঁড়াল সোহান। সন্দিগ্ধ চোখে তাকাল ছেলেটার দিকে। উদোম গায়ে ধুলোবালিতে গড়াগড়ির নোংরা ছাপ। ছায়া ছায়া ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে আলো-আঁধারিতে- কেমন এক রহস্যময় ভঙ্গি।
ছেলেটা বাঁকা ঠোঁটে মনে হলো একটুখানি হাসল। বলল: সার, আপনের ডেরাটা তো ওই রাস্তা পারাইয়া পরের রাস্তায়। হেইদিকে কয়ডা গুন্ডা মার্কা মানুষরে যাইতে দেখছি। দেইখা-শুইনা হিসাব-কিতাব কইরা যাইয়েন।
ছেলেটা কি ভয় দেখাতে এসেছে, নাকি সত্যি সত্যি সতর্ক করতে? একটু ভয় ভয় করছে অবশ্য। তবু ছেলেটা তাকে সাবধান হওয়ার সুযোগ করে দিল। ধন্যবাদ তাকে জানানোই যেতে পারে। কিছু বখশিশও দেওয়া যেতে পারে। হিপ-পকেটে মানিব্যাগ আছে, কিন্তু সেখানে কোনো টাকা নেই। সকালে অফিসে যাওয়ার সময় বৌয়ের কাছ থেকে গুনে গুনে টাকা নিয়ে আসে যাতায়াতের খরচা বাবদ। টানাটানির হিসাবের সংসার। সোহান প্যান্টের সাইডপকেটে হাত দিল। ওখানে কয়েকটা খুচরো কয়েন থাকার কথা। দুটো কয়েন পেয়েও গেল। বের করে দিতে গিয়ে দেখতে পেল, ছেলেটা নেই। চারপাশে তাকিয়ে কোথাও তাকে দেখতে পেল না। সারা শরীর শিউরে উঠল তার। পেয়ে বসল ভয়ানক নিঃসঙ্গতা। এ সময়ই খেয়াল হলো, তার নিত্যকার রাতসাথী কুকুরটি আজ নেই। বাস থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গেই তাকে দেখতে পায়। পুরো পথটাতেই সে সঙ্গ দেয় তাকে। আজ রাতে এই বেলায় কোথাও তার দেখা নেই।
মনটা ভার হয়ে গেল। বিষণ্ণ মনে পা ফেলল বাসার পথে।
সোহানের মাথায় এখন নানান আশঙ্কা উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে। ছেলেটা কোথা থেকে তার সামনে এসে হাজির হলো? একে তো এর আগে এদিকে কখনো দেখা যায়নি? আজ কোথায় থেকে তার উদয় ঘটল? শুধুই কি তাকে সাবধান করতে? কেন?
ছেলেটা যে গুন্ডামার্কা লোকদের দেখেছে, তারাই বা কোথা থেকে এসে এই পাড়ায় ঘোরাঘুরি শুরু করল? কী মতলব তাদের?
এর চাইতেও রহস্যজনক, বেছে বেছে ঠিক আজকের রাতেই কুকুরটা গরহাজির! কেন? এর মাঝেও কি কোনো রহস্য রয়েছে? নাকি ওই গুন্ডাগুলোই কুকুরটাকে সরিয়ে দিয়েছে?
সে নিজেই কি গুন্ডাদের হামলার টার্গেট? সম্ভাবনাটা সে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিল। তার কাছে তো কিছুই নেই। শুধু এই ব্রিফকেসটা আর এর ভিতর খালি টিফিন বক্স। অবশ্য এটা কি আর এই গুন্ডারা জানে?
কিছুটা ভয়ে কিছুটা আশঙ্কায় হাঁটতে হাঁটতে সে বাসায় যাওয়ার রাস্তার মোড়ে এসে গেল। হাঁটতে হাঁটতেই তার মনে হচ্ছিল, দুজন লোক তার পেছনে পেছনে আসছে। কারা আসছে, বোঝার জন্য তার পেছনে তাকিয়ে দেখার সাহস হয়নি।
কোথা থেকে যেন দুজন লোক তার সামনে এসে দাঁড়াল। ওদের হাতে চাকু আর ছুরি। তাকে থমকে দাঁড়াতেই হলো। পেছনে ফিরে ছুটে পালাবে কিনা- এই ভাবনা থেকে ঘুরতে গিয়েই টের পেল, তার ঘাড়ের ওপর এসে পড়েছে পেছনের লোক দুজনও। একজনের হাতে লোহার রড, আরেকজনের হাতে ছোট সাইজের একটা পিস্তল।
সোহানের ভিমরি খাওয়ার অবস্থা। হাঁটু দুটোই কাঁপাকাঁপি করছে। সামনের একজন লোক কাঁধ ধরে তাকে সামলালো। আরেকটা হাতে ব্রিফকেস ধরল।
এ সময়ই কুকুরের গর্জন। ফিরে এসেছে সোহানের নৈশসঙ্গী। সে ঝাঁপিয়ে পড়ল ব্রিফকেস-লুটেরা লোকটির ওপর। চারজন গুন্ডাই একসঙ্গে তেড়ে আসতে গিয়ে থমকে দাঁড়াল। অবাক বিস্ময়ে দেখতে পেল, এক দঙ্গল কুকুর তাদের ঘিরে ধরে সমস্বরে ঘেউ ঘেউ শুরু করেছে। রাস্তার দুই পাশের বাসাবাড়িগুলোর জানালার কপাট খুলে গেছে। কৌতূহলী পাড়া-পড়শীরা রাস্তার ঘটনার দিকে মুখ বাড়িয়েছে। ওরা রাস্তায় নেমেও আসতে পারে। গুন্ডারা বেগতিক দেখে যার যার মতো সটকে পড়ল।
এ যাত্রায় বেঁচে গেল সোহান। গায়ের কাঁপুনি তখনো থামেনি। ব্রিফকেসটা দুই হাতে বুকে জড়িয়ে সে তার বাসার দিকে হাঁটতে লাগল। সঙ্গে সঙ্গে কুকুরগুলোও।
সব কুকুর সোহানের বাসা পর্যন্ত এল না। পথের মাঝখানেই তারা যার যার মতো কেটে পড়ল। সঙ্গে রইল শুধু তার প্রিয় নৈশসঙ্গী। বাসা অবধি।
বাসার গেটের কাছে এসে সোহান দাঁড়াল। সাথীকে কৃতজ্ঞতা জানানোর জন্য সে পেছনে ফিরল। রাস্তার ওপর লাইটপোস্টের আলো ঠিকরে পড়ে ঝিকঝিক করছে। শূন্য রাস্তা। কোথাও কোনোখানে কুকুরটি নেই।
কয়েকদিন পরই আরেকটা ঘটনা। সেদিন অফিস থেকে বেরোতে সোহানের দেরি হয়ে যায়। বাসস্ট্যান্ডে এসে লাস্ট বাসটা পেয়ে যায়। প্যাসেঞ্জারের সংখ্যা কম, আসনগুলো ভরাট হয়নি। বাসের একপাশে একটা আস্তো বেঞ্চের দখলে নিয়ে সে বসে পড়ল। কোলের ওপর ব্রিফকেসটা দুই হাতে জড়িয়ে ধরে রইল।
বাস চলতি পথে একেকটা স্টপেজে যতগুলো যাত্রী নামাল, তার অর্ধেক যাত্রীও উঠল না। এমন করতে করতে যাত্রী সংখ্যা একদম পাতলা হয়ে এল। যে কজন এখনো আছে, সবাই ঝিমুচ্ছে। ঝিমুনি সোহানকেও পেয়ে বসছে। যত ঝিমুনি ততই সে তার ব্রিফকেসটা আঁকড়ে ধরছে। মিরপুর-১০ নম্বরে এসে যাত্রীশূন্য হয়ে গেল বাসটি। এমনকি বাসের হেল্পারও নেমে গেল। আজ রাত ১২টার কাছাকাছি। ড্রাইভার একবার শুধু জানতে চাইল: কোথায় যাবেন? সাড়ে এগারো পল্লবীতে তো?
জবাব দিতে গিয়ে সোহানের তোতলামি ভাবটা কেন জানি এসে গেল: হ্যাঁ। পল্লবী। সাড়ে এগারো।
আর কোনো কথা নেই। জনমানবশূন্য রাস্তায় বাস ছুটে চলল। একটানে এসে থামল পল্লবীতে।
সোহান নেমে যেতে না যেতেই বাস সোহানকে পুরোপুরি একা করে দিয়ে ছুটে গেল তার শেষ গন্তব্যের দিকে।
সোহান এদিক-ওদিক চারপাশ তাকাল। কোথাও কোনো প্রাণের সাড়া নেই। এমনকি গাছে গাছে পাতাও নড়ছে না।
বাসার দিকে পা বাড়াতেই নৈশকালের সঙ্গী কুকুরটি এসে হাজির। বরাবর সে সোহানের সামনে বা পেছনে দাঁড়ায়। হাঁটতে শুরু করলেই সে পিছু নেয়। বাসা পর্যন্ত তাকে অনুসরণ করে।
কুকুরটা আজ তার পাশে দাঁড়াল। কখনোই যেটা সে করে না, আজ রাতে সেটাই করছে। কেন জানি হাতে ধরা ব্রিফকেসটায় নাক লাগাচ্ছে। কী যেন শুঁকছে।
সোহান খানিকটা অবাক হলো। কুকুরটা ব্রিফকেস থেকে কীসের গন্ধ পাচ্ছে? দুর্গন্ধ কি? কীসের?
ব্রিফকেসে টিফিন বক্সটি আছে। যথারীতি খালি। দুপুরের টিফিন খাওয়ার পর সোহান বক্সটি নিজের হাতে পরিষ্কার করে। আজ অবশ্য তাড়াহুড়োয় বক্সটি আধোয়া অবস্থাতেই রেখে দিয়েছে। দুর্গন্ধটা কি সেখান থেকেই পাওয়া যাচ্ছে?
বাসা পর্যন্ত কুকুরটি একইভাবে ব্রিফকেসে নাক ঠেকিয়ে ঠেকিয়েই এল। মাঝে মাঝে গলা উঁচিয়ে ঘেউ ঘেউও করল।
কিন্তু বাসার কাছে এসেই এবার কুকুরটা অদ্ভুত কাজ করে বসল। বরাবর সে পেছন থেকেই অদৃশ্য হয়ে যায়। কিন্তু আজ রাতে সেটা হলো না।
সোহান বাসার গেট খুলে ভেতরে ঢোকার উদ্যোগ করতেই কুকুরটা ব্রিফকেস শোঁকা ছেড়ে পথ আগলে দাঁড়াল। তার চোখজোড়া যেন জ্বলছে। উচ্চস্বরে ঘেউ ঘেউ ডেকে উঠল।
চমকে উঠল সোহান। খানিকটা ভয়ও পেল। ব্রিফকেসটা এতক্ষণ সে হাতে ঝুলিয়ে নিয়েছিল। এখন সেটা বুকে জড়িয়ে নিল। কুকুরটাকে প্রায় ঠেলেই ভিতরে ঢুকে গেটটায় তালা লাগিয়ে দিল। তাড়াহুড়োয় চলে এল নিজের ফ্ল্যাটে। বেডরুমে ঢুকে সাইডটেবিলে ব্রিফকেসটা রেখে স্বস্তির শ্বাস ফেলল।
ঘরে তখন কেবলমাত্র বৌ জেগে অপেক্ষা করছিল। ছেলেমেয়েরা যার যার রুমে ঘুমোচ্ছে। বৌ অবাক হয়ে সোহানের আচরণ দেখছিল। আজকে তার চলাফেরায় কেমন যেন অস্থিরতা ও ছটফটে ভাব। ঘরে ফিরে এমন অস্থিরতা এর আগে কখনো দেখা যায়নি।
বৌ বলল: আজ এমন করছ কেন? অফিসে কি কোনো ঝামেলা?
সোহান প্রশ্নের কোনো জবাব না দিয়ে বলল: ব্রিফকেসটা এখনই আলমারিতে রেখে দাও।
বৌ আরও অবাক। বলল: ব্রিফকেস তো টেবিলেই থাকে। আজ আলমারিতে ঢুকবে কেন? ওতে কি আজ সোনাদানা আছে?
সোহান বৌকে টেনে টেবিলের সামনে নিয়ে এল। ব্রিফকেসটা খুলল। সেদিকে তাকিয়ে বৌয়ের চোখ ছানাবড়া। বিস্মিত স্বর বেরিয়ে এল: এতো টাকা!
সোহান ফিসফিস করে বলল: একটা পার্টি দিয়েছে। ওদের ফাইলটা তাড়াতাড়ি ছেড়ে দিতে হবে।
বৌয়ের মুখ গম্ভীর। সে আর কোনো কথা বলল না, মন্তব্যও না। ব্রিফকেস থেকে টিফিন বক্সটা বের করে নিল। টাকাসহ ব্রিফকেসটা রেখে দিল আলমারিতে।
হাতমুখ দিয়ে সোহান রাতের খাবার নিয়ে ডাইনিং রুমে বসল। খেতে খেতে সে বৌকে শোনাল আজ রাতে কুকুরটির অদ্ভুত আচরণের কথা।
বৌ কোনো মন্তব্য করল না। অপলক তাকিয়ে রইল তার মুখের দিকে।
সোহান খাওয়াদাওয়া সেরে শোয়ার আয়োজন করছিল। এ সময়ই বৌ তাকে ডেকে নিয়ে এল বারান্দায়। আঙুল তুলে দেখাল গেটের বাইরের দৃশ্য।
সেদিকে তাকিয়ে অবাক হলো সোহান। বাসার বাইরে গেটের সামনে এক দঙ্গল কুকুর হামাগুড়ি দিয়ে বসে আছে। মাথা উঁচিয়ে। তাকিয়ে আছে তাদের বাসার দিকে। মনে হয় পাড়ার সব কুকুরই এসে জড়ো হয়েছে ওখানে। ওদের ঠিক মাঝখানেই দাঁড়িয়ে আছে কুকুরটা। তাদের বাসার দিকেই মুখ করে তারস্বরে ঘেউ ঘেউ করছে।
বৌয়ের ঠোঁটে এক ঝলক বাঁকা হাসি খেলে গেল। সোহানকে জিজ্ঞেস করল: ওই কুকুরটাই তোমার প্রতি রাতের সঙ্গী?
সোহান ঘাড় নাড়ল। বৌয়ের চোয়াল শক্ত: বলছিলে না কুকুরটা তোমার ব্রিফকেস শুঁকছিল! কুকুরদের ঘ্রাণশক্তি প্রবল। সে তোমার ব্রিফকেস নয়, ওর ভেতরে রাখা ঘুষের টাকার দুর্গন্ধ পাচ্ছিল।