ঢাকা ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, শনিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪

বিভূতিভূষণের শিল্পীব্যক্তিত্বের স্বরূপ

প্রকাশ: ০১ নভেম্বর ২০২৪, ০২:১৩ পিএম
আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০২৪, ০২:১৩ পিএম
বিভূতিভূষণের শিল্পীব্যক্তিত্বের স্বরূপ
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়। আঁকা: নিয়াজ চৌধুরী তুলি

নগরজীবনের মানুষের বাস্তব জীবনকে কেবলই যে বিভূতিভূষণ ব্যথা-বঞ্চনার বিড়ম্বিতরূপে দেখেছেন তা নয়। বেদনায় মলিন না হলেও এ কথা সত্য যে, সাধারণ মানুষের জীবন নিতান্তই একঘেয়ে বিবর্ণ। তবুও জীবন সম্পর্কে বিভূতিভূষণ চিরদিনই পরম আস্থাশীল। তার দৃষ্টিতে জীবন সব আপাততুচ্ছতা সত্ত্বেও কখনোই অর্থহীন নয়, বরং অপরূপ সুন্দর, অর্থবহ। লেখকের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে লেখা দুটি সুন্দর গল্প: ‘সিঁদুরচরণ’ (ক্ষণভঙ্গুর) ও ‘একটি ভ্রমণ কাহিনী’ (উপলখণ্ড)। এই আপাততুচ্ছ জীবনের তাৎপর্য-সন্ধান নিয়ে আরেকটি সার্থক রচনা ‘একটিদিন’ (যাত্রাবদল)। ব্যর্থ-বিড়ম্বিত জীবনের যে উত্তরণ-প্রবণতা বা গূঢ় আশাবাদের ইঙ্গিত মেলে বিভূতিভূষণ-এর গল্পে, তার মূলে আছে বঞ্চিত হতভাগ্য মানুষের জন্য অন্তহীন মমত্ববোধ।…

‘হরি দিন তো গেল সন্ধ্যা হলো, পার কর আমারে’। এই গানটি লিখেছিলেন কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদার (১৮৩৩-১৮৯৬)। আর এই গানটি ব্যবহার করেছিলেন বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা সত্যজিৎ রায়। ১৯৯১ সালে অস্কার জয় করেছিল তার ‘পথের পাঁচালী’ চলচিত্র। ভারত ছাড়িয়ে বিশ্বের দরবারে পরিচিতি লাভ করেছেন। তিনি নিজে একজন শিল্পী, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। শিল্প ও জীবন নিয়ে তার ভাবনাগুলো চলচ্চিত্রে নির্মাণ করেছিলেন।

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় (১৮৯৪-১৯৫০) বাংলা সাহিত্যে একজন ব্যতিক্রমী কথাকার। বিভূতিভূষণ তার সাহিত্যে জীবনকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করেছিলেন, তাই অন্যদের মতো তিনি হতে পারেননি। তিনি উপন্যাস, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনি, স্মৃতিকথা লিখেছেন। সাহিত্যের মধ্যে জীবনের আস্বাদন পেয়েছেন। তার ‘পথের পাঁচালী’, ‘অপরাজিত’, ‘আরণ্যক’, ‘ইছামতি’, ‘দৃষ্টিপ্রদীপ’, ‘আদর্শ হিন্দুহোটেল’ অন্যতম। এই উপন্যাসগুলোর মধ্যে তিনি মানুষকে খুঁজেছেন। তিনি অসংখ্য ছোটগল্প লিখেছেন, যার মধ্যে মানুষ ও প্রকৃতি প্রাধান্য পেয়েছে। আমরা তার ছোটগল্প বিষয়ে এই দিকটির আলোচনা করব।

বিভূতিভূষণের গল্পে আমরা কয়েকটি প্রবণতা লক্ষ্য করি। প্রকৃতিচেতনা, মহাকালের স্বরূপ উপলব্ধি, অতীত দিনের স্মৃতিরস এবং আধ্যাত্মবিশ্বাস। তবে এখানে একটি কথা মনে রাখা প্রয়োজন যে, বিভূতিভূষণ আদৌ জীবনবিমুখ ছিলেন না, বরং বিশ্বলোক ও মহাকালের বিশাল পটভূমিতে মানবজীবনকে নিরীক্ষণ করে, সৃষ্টির বিস্ময়কর মহিমা ও মানব জীবনের অমেয়কে, ঐশ্বর্যকে প্রকাশ করেছিলেন। তার গল্পগুলো আমাদের সংবেদনশীল করে বেদনার অপার পথের দিকে নিয়ে যায়। তিনি কল্লোলীয় জীবনদৃষ্টির বিপরীত দিকের শিল্পী। নির্জন আকাশ, মাঠ আর নিঃসঙ্গ নদীতীরের গোপন সাহচর্য তার ভালো লাগে। চিত্র ও সংগীত-ধর্মের বৈচিত্র্যময় নিসর্গশিল্পী বিভূতিভূষণ সিদ্ধিলাভ করেছিলেন তার গল্প ও উপন্যাসে। 

বিভূতিভূষণ একদিকে যেমন সহজ, অকপট, অন্যদিকে তেমনই অবাধ প্রাণশক্তিতে পূর্ণ। জীবনের কঠিন বাস্তবতা সম্পর্কে তার গল্পের পাত্রপাত্রীরা যথেষ্ট সচেতন। লেখক শিল্পী বলেই কখনো মনে হয় তার সব রচনা মিলে শেষ পর্যন্ত তৈরি হয় একটি অখণ্ড ‘পথের পাঁচালী’। কোথাও নায়কের (বা স্বয়ং লেখকের) দৃষ্টিকোণ, কোথাও-বা কালের পরিবর্তনের স্রোত এই ঐক্যসূত্র রচনা করেছে। কখনো কখনো মনে হয় গল্পের সংখ্যা উপন্যাসের চেয়ে বেশি হয়েছে, অন্যদিকে ছোটগল্পের বিষয়গত বৈচিত্র্য উপন্যাসের চেয়ে অধিক পরিস্ফুট হয়েছে। তার গল্পে মানুষের প্রাধান্য বেশি, প্রকৃতি নয়। 

একান্তভাবে মানুষের মানবিক পরিচয়-সন্ধানই সেখানে লেখকের অন্বিষ্ট। বাংলাদেশের গ্রামীণ জীবনপটে মুখ্যত মানুষের প্রাত্যহিক জীবনের সহজ আনন্দ-বেদনার কথা বিভূতিভূষণ তার গল্পে বলেছেন। প্রায় ৩০টি গল্পগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে, প্রায় দুই শতাধিক গল্পের মধ্যে বিষয়গত শ্রেণিবিন্যাস কঠিন। তবুও বিভূতিভূষণের গল্পগুলো বিশ্লেষণ করলে জীবন-জগৎ ও মানুষ সম্পর্কে তার দৃষ্টিভঙ্গির কয়েকটি তাৎপর্য স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এর প্রবণতার সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে বিভূতিভূষণের শিল্পীসত্তা। তার এই দৃষ্টিভঙ্গি বা চেতনা প্রবণতা-আপাত-তুচ্ছ জীবনের তাৎপর্য সন্ধান, সাধারণ মানুষের বেদনা-বঞ্চনা এবং তা থেকে উত্তীর্ণ হওয়ার প্রবণতা, স্নেহ-মমতা-মাটির তৃষ্ণা বা নস্টালজিয়া, প্রেম ও রোমান্স-চেতনা, মৃত্যুর পটভূমি-জীবনের চেতনা, কালপ্রবাহের চেতনা, অতিপ্রাকৃত চেতনা, আধ্যাত্ম-প্রবণতা, প্রকৃতি-চেতনা ও অন্যান্য। 

তার গল্পগুলো পড়লে অনেক সময়েই এদের আদৌ কোনো সচেতন শিল্পসৃষ্টি বলে মনে হয় না। কিন্তু জীবন ও জগতের উপেক্ষিত বর্ণহীন উপকরণ একপাশে পড়েছিল, তা অন্য কোনো লেখকের চোখে পড়েনি। তার সার্থক গল্পগুলো জীবনের যে গূঢ় পরিচয় বা রসসৌন্দর্য সংকেত বহন করুক না কেন, তাদের বাস্তবতা, ঘটনা, চরিত্র, সংলাপ, পরিবেশ পাঠকের পুরোপুরি প্রত্যয়সিদ্ধ। পুঁইমাচা, মৌরিফুল, আহ্বান, মণ্ডুলমামার বাড়ী ইত্যাদি গল্প স্মরণীয়। ‘মৌরীফুল’ গল্পের স্বামীপ্রেমবঞ্চিতা সুশীলা, ‘পুঁইমাচা’র অকালমৃতা ভাগ্যহীনা মেয়েটি, ‘সংসার’ গল্পের নিতান্ত গরিব ঘরের অসহায় বধূ তারা, ‘ডাকগাড়ী’ গল্পের দুঃখিনী বাল্যবিধবা রাধা, ‘বিপদ’ গল্পের পতিতা হাজু- এরকম অসংখ্য নারী চরিত্র বিভূতিভূষণের গল্পের জগতে স্থান পেয়েছে ; যাদের জীবনের একটি দিকই লেখককে বিশেষভাবে নাড়া দিয়ে গেছে। সেটি তাদের বেদনার ও বঞ্চনার দিক। সাংসারিক জীবনে ব্যর্থ, দুঃখ-যন্ত্রণায় বিড়ম্বিতা অসহায় গ্রাম্য নারী চরিত্রই বিভূতিভূষণের গল্পের একটি প্রধান অংশজুড়ে আছে। নারীকে দেখেছেন তিনি গ্রামীণ জীবনের নানাস্তরে, নানারূপে। বালিকা, অবিবাহিতা তরুণী, গৃহস্থ বধূ, প্রবীণা গৃহিণী, জরাগ্রস্ত বৃদ্ধা, কন্যা, জননী, পতিতা, নানা ধরনের নারীর দুঃখ-ব্যথায় ভারাক্রান্ত অসহায় রূপের একান্ত বাস্তব প্রতিলিপি ফুটে উঠেছে বিভূতিভূষণের রচনায়। 

শুধু নারীজীবনের মর্মস্পর্শী ছবি-ই নয়, গ্রামবাংলার অজস্র পুরুষচরিত্র সমাজের নানাস্তর থেকে এসে তার গল্পের জগতে ভিড় করেছে। বিভিন্ন তাদের শিক্ষাদীক্ষা, ধর্মবিশ্বাস, জীবিকা, আর্থিক ও সামাজিক প্রতিষ্ঠা-ভূমি। এদের সবাইকে বিভূতিভূষণ ঐকান্তিক সংবেদনা ও বাস্তবনিষ্ঠা নিয়ে চিত্রিত করেছেন। এদের মধ্যে আছে মুসলমান দিনমজুর ফকির, হাটের জুয়াড়ি, দরিদ্র হাতুড়ে চিকিৎসক (মনি ডাক্তার), বৃদ্ধ পুরোহিত (সংসার), পাঠশালার পণ্ডিত, কবি (শাবলতলার মাঠ) প্রভৃতি অতি নগণ্য মানুষের দল। এরা সবাই কোনো-না কোনোভাবে বঞ্চিত, ব্যর্থ। এদের অধিকাংশের আর্থিক দুর্গতির অন্ত নেই, সামাজিক কোনো প্রতিষ্ঠা নেই।

বিভূতিভূষণের গল্পেও নরনারীর প্রেমের আনন্দ-বেদনা লেখকের আপন ব্যক্তিত্বের আলোয় উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। ব্যক্তিত্বের সেই বিশিষ্ট দিকটি হলো দেহচেতনা ও যৌনতার বর্জন। তার আধ্যাত্মমুখী মন কোনো কোনো গল্পে নারীর ব্যর্থ প্রেমকে মহত্তর দিব্য সাধনার পথে উত্তীর্ণ করে দিতে চেয়েছে- ‘অভিমানী’ (কুশল পাহাড়ি) গল্পের রাখনি চরিত্র এদিক থেকে একটি অনুপম সৃষ্টি। আবার দাম্পত্য প্রেমমূলক গল্পগুলোও দুটি নরনারীকে- দুজন ব্যক্তিকে আশ্রয় করেই রূপলাভ করেছে। সেই প্রেমের সঙ্গে পারিবারিক বা সামাজিক জীবনের অন্য কোনো সমস্যাকে জড়িত করেননি লেখক। 

কেবল ব্যক্তিহৃদয়ের বিচিত্র ঐকান্তিক অনুভূতি-ব্যর্থতা, বিষণ্ণতা ও আত্মত্যাগের নিঃশব্দ ব্যঞ্জনা গল্পের মধ্যে মর্মরিত হয়েছে। এ ছাড়া অতিপ্রাকৃত বিষয় নিয়ে গল্প লিখেছেন তিনি। ছোটগল্পের দর্পণে প্রতিফলিত বিভূতিভূষণের শিল্পীব্যক্তিত্বের স্বরূপ। প্রকরণের দিক থেকেও ছোটগল্পের কেন্দ্রীয় সংহতি বিষয় ও ভাবের একমুখীনতা, অবয়বের দৃঢ়বদ্ধতা ইত্যাদি যথেষ্ট পরিস্ফুট। সব মিলিয়ে বলা চলে যে, গল্প-শরীর গঠনের দিক থেকে বিভূতিভূষণ ত্রুটিহীন নিশ্চয় নন, কিন্তু নিঃসন্দেহে তুলনাহীন। তার ভাষা এত সহজ ও ভারহীন, একই সঙ্গে আশ্চর্য স্বচ্ছ, যেন স্ফটিক-স্বচ্ছ জলধারার মতো। এই ভাষার মধ্যদিয়ে লেখকের চিত্তকে অতি সহজেই প্রত্যক্ষ করা যায়। লেখকচিত্তের সঙ্গে পাঠক-মনের যোগ এর ফলেই একান্ত সহজ ও অবাধ হয়। জয়তু বিভূতিভূষণ!

সাহিত্য আমার রক্তে-মাংসে মিশে গেছে

প্রকাশ: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:১০ পিএম
আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:০৮ পিএম
সাহিত্য আমার রক্তে-মাংসে মিশে গেছে
সাদাত উল্লাহ খান

সাদাত উল্লাহ খান স্বাধীন লেখকের জীবন বেছে নেন। লিখেছেন গল্প, প্রবন্ধ ও সমালোচনা। তিনি ১৯৯৮ সাল থেকে নিয়মিতভাবে গবেষণা পত্রিকা ‘প্রতিবুদ্ধিজীবী’ সম্পাদনা করছেন।

আপনার পত্রিকা ‘প্রতিবুদ্ধিজীবী’র ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে গিয়ে কতটা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছেন? 
পারিবারিকভাবেই অর্থের চাইতে জ্ঞানের দিকে আমাদের মোহ বেশি। আমি স্কুল বয়স থেকেই পারিবারিক পাঠাগার থেকে অনেক বই পড়েছি। তলস্টয়, দস্তয়েভস্কি ও গোর্কিসহ বিভিন্ন বই পড়েই সাহিত্যের প্রতি আমার ভালোলাগা তৈরি হয়েছে। সাহিত্য আমার রক্তে-মাংসে মিশে গেছে। ‘প্রতি বুদ্ধিজীবী’ চালাতে গিয়ে নানামুখী চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছি। পত্রিকাটি নিয়মিতভাবে বের করার জন্য আমার ভাই সলিমুল্লাহ খান যথেষ্ট সহযোগিতা করেছেন। প্রয়োজনে জমি বিক্রি করে হলেও পত্রিকাটি বের করার অভয় আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। আমাদের পরিবারের অনেকেই লেখক। যার কারণে সহজেই পত্রিকাটি চালাতে পারছি।   

আপনার পত্রিকাটির ‘প্রতিবুদ্ধিজীবী’ নাম দেওয়ার কারণ কী? 
বুদ্ধিজীবীরা যা বলতেন তা শুনলে বাংলাদেশ স্বাধীন হতো না। বুদ্ধিজীবীরা পরিস্থিতি বুঝতে চায় না। বুদ্ধিজীবীরা ফুটওভার ব্রিজের মতো, মানুষ যেদিকে যায় তার থেকে তারা ১০০ গজ দূরে থাকে। সমাজের গতিবিধি তারা বোঝে না। তারা নিজেদের স্বার্থ বোঝে। অনেক বড় বড় সংকটে বুদ্ধিজীবীরা আন্দাজ করতে পারেন না। ২০২৪ সালে এমন একটি বিপ্লব হবে কোনো বুদ্ধিজীবী ধারণাই করতে পারেননি। ১৯৭১ সালেও একই ঘটনা। এজন্য ‘প্রতিবুদ্ধিজীবী’র অর্থ হলো প্রকৃত প্রতিবাদী বুদ্ধিজীবী। প্রতিবুদ্ধিজীবীরা অরগানিক ইনট্যালেকচুয়াল। এরা প্রথাগত বুদ্ধিজীবী নন। যারা ব্যতিক্রমী, অত্যন্ত সাহসী এবং অনেক চ্যালেঞ্জ নিয়ে দেশের ও মানুষের জন্য কথা বলেন তারাই হলেন প্রতিবুদ্ধিজীবী। এখন বুদ্ধিজীবীরা বেশির ভাগই সুবিধাবাদী। প্রতিবুদ্ধিজীবী বলতে আহমদ শরীফ, সলিমুল্লাহ খান, আহমদ ছফার মতো মানুষদের বোঝায়, যারা কখনই রাষ্ট্র বা সরকারের বিন্দুমাত্র সাহায্য গ্রহণ করেননি। কোনো বুদ্ধিজীবী যদি সরকারের সাহায্য নিয়ে থাকেন তাহলে তার মুখ বন্ধ হয়ে যায়। যারা প্রতিবাদী চিন্তাবিদ তারাই প্রতিবুদ্ধিজীবী। 

আপনি নিজে ব্যবসায়ী হয়েও কীভাবে সাহিত্যের প্রতি অনুরাগী হয়ে উঠলেন?
আমরা চিন্তাকে ভালোবাসি, দেশকে ভালোবাসি। মানুষের ভেতরে আলো জ্বালাতে গেলে জ্ঞান ছাড়া পারবেন না। আমি জাপান স্টাডিজ নিয়ে পড়াশোনা করেছি। মানুষকে আলোকিত করার একমাত্র উপায় বইয়ের মাধ্যমে জ্ঞান ছড়িয়ে দেওয়া। আমাদের দেশে লেখাপড়া একদমই নেই। শুধু নোট বই পড়ে, পরীক্ষা দেয়, পাস করে। কোনো কবিতার বই প্রকাশকরা ছাপাতে চান না। কারণ, কবিতার বই মানুষ কিনতে চায় না। অথচ সবচেয়ে উচ্চ শিল্প হলো কবিতা। ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর মতো অবস্থা হলো লিটল ম্যাগাজিন। লিটল ম্যাগাজিন সব সময় নতুন চিন্তার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। 

আপনার জন্ম মহেশখালীতে, প্রকৃতির সান্নিধ্যেই বড় হয়েছেন। মহেশখালীর প্রকৃতি আপনার লেখায় কীভাবে প্রভাব ফেলেছে? 
মহেশখালী দ্বীপের মানুষের কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। মহেশখালীর মানুষ এই দ্বীপের বাইরে আত্মীয়তার সম্পর্ক খুব কম করে। মহেশখালী দুর্যোগপূর্ণ এলাকা হওয়ায় লেখাপড়ায় অনেক পিছিয়ে আছে। অথচ অনেক জ্ঞানী ও শ্রেষ্ঠ মানুষের জন্ম হয়েছে এই মহেশখালীতে। ভৌগোলিকভাবেই এখানে জ্ঞানী মানুষের জন্ম হয়। এই দ্বীপের মানুষ হয়ে আমার ভাই সলিমুল্লাহ খান প্রথম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হন। এখনো আমাদের দ্বীপের মানুষ সচিব হতে পারেনি। এমনকি সেনাবাহিনীর উচ্চ পদ বা জেনারেল হতে পারেনি। একজন বিচারপতি নেই। এখানকার বেশির ভাগ মানুষ পান চাষ ও মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে। এই দ্বীপে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় নেই। তবে আমি আমার লেখায় মহেশখালীর জীবনচিত্র ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি।

সলিমুল্লাহ খান আপনার লেখায় কীভাবে প্রভাব বিস্তার করেছেন? 
আমার ভাই সলিমুল্লাহ খান সবসময় লেখাপড়ার প্রতি উৎসাহ দেন। তিনি উপদেশ দিতেন বড় লেখক  হওয়ার জন্য। আমার জ্ঞান অর্জনের ক্ষেত্রে তিনি যতটুকু সহযোগিতা করেছেন ততটুকু আমার বাবাও করেননি। তিনি আমেরিকায় থাকতে আমি যেসব বই চেয়েছি, তিনি মাটির নিচ থেকে হলেও সেই বই আমাকে খুঁজে বের করে দিয়েছেন। তিনি আমাকে জ্ঞানের আলোয় আলোকিত করেছেন। 

অনুলিখন: সানজিদ সকাল

মন্ত্রীর অসুখ

প্রকাশ: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৫৫ পিএম
আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৫৫ পিএম
মন্ত্রীর অসুখ
অলংকরণ : নিয়াজ চৌধুরী তুলি

দক্ষিণ এশিয়ার কোনো একটা দেশের (ভারত নয়) স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কয়েকদিন ধরে বুক ব্যথা করছে।
তিনি ঠিকমতো অফিস করতে পারছেন না। অফিসে বসেই তিনি কোঁত কোঁত শব্দ করেন! বুকব্যথায় যে কেউ কোঁত কোঁত শব্দ করতে পারে, এটা কারও জানা ছিল না। তবে শব্দটা সব সময় হয় না, মাঝে মাঝে হয়।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী তার ব্যক্তিগত ডাক্তারকে ডেকে পাঠালেন। ডাক্তার এসে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করলেন, এক বস্তা ফাইল বানালেন, কোনো রোগ বের করতে পারলেন না।
মন্ত্রী বলে কথা! 
দেশের সব বড়ো বড়ো ডাক্তারের সমন্বয়ে বোর্ড মিটিং বসেছে। কী করে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কোঁত কোঁত শব্দ বন্ধ করা যায়! 
বোর্ডপ্রধান স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে বললেন, স্যার, আপনার উচিত ইমিডিয়েট বিদেশে চলে যাওয়া। আপনার হার্ট বোধহয় নষ্ট হয়ে গেছে! 
স্বাস্থ্যমন্ত্রী রেগে গিয়ে বললেন, কী বলছেন এসব? আমি এখনো আমার বউকে ভালোবাসি। হার্ট নষ্ট হলে বউকে ভালোবাসতে পারতাম? ভালোবাসা যে হার্টে থাকে, এইটা আপনারা জানেন না? কোন চুলের ডাক্তার হইছেন? তাছাড়া আমাদের দেশের চিকিৎসাসেবা তো আন্তর্জাতিক মানের। পিরোজপুর থেকেও আমাদের চিকিৎসাসেবা উন্নত। আমি এই দেশের একজন মহান নেতা। আমি কেন বিদেশে যাব?
স্বাস্থ্যসচিব মন্ত্রীর কানে কানে বললেন, স্যার, ওটা পিরোজপুর হবে না, সিঙ্গাপুর হবে। পিরোজপুর তো স্যার বাংলাদেশের একটা জেলার নাম!
স্বাস্থ্যমন্ত্রী চিৎকার করে বললেন, পিরোজপুর হোক আর সিঙ্গাপুর হোক, আমি বিদেশে চিকিৎসা করাব না। আমি দেশপ্রেমিক নেতা। মরলে দেশের মাটিতেই মরব। কী করতে হবে বলেন!
স্বাস্থ্যসচিব বললেন, স্যার, বুকের এক্স-রে করা লাগবে। কিন্তু আমাদের সরকারি হাসপাতালগুলোর বেশির ভাগ এক্স-রে মেশিন তো নষ্ট! 
এক্স-রে মেশিন খালি নষ্ট হয় কেন? কী করেন আপনারা? 
সরকারি হাসপাতালের এক্স-রে মেশিন নষ্ট হলেই ডাক্তারদের লাভ। তারা তখন বাইরে রোগী পাঠিয়ে ভালো টু-পাইস কামাতে পারে। এটা তো আর মন্ত্রীকে বলা যায় না, তাই তিনি বললেন, স্যার, আমরা আসলে মেইড ইন চায়না নামের যে মেশিনগুলো কিনি, ওগুলো মেইড ইন জিঞ্জিরা। আসমানে এবং জমিনে এমন কোনো জিনিস পয়দা হয়নি, যার নকল বাংলাদেশের জিঞ্জিরায় পাওয়া যায় না। ব্যাটারা ওপরে চায়না লিখে ভিতরে জিঞ্জিরার রদ্দি মাল গছিয়ে দেয়। 
স্বাস্থ্যমন্ত্রী ধমকের সুরে বললেন, যেভাবে হোক, এক্স-রে মেশিন ঠিক করেন। আমি সরকারি হাসপাতালেই চিকিৎসা করাব। প্রয়োজন হলে বাংলাদেশের ধোলাই খাল থেকে পার্টস নিয়ে আসেন। শুনেছি ওখানে পুরাতন ভালো ভালো পার্টস পাওয়া যায়। ইমিডিয়েট এক্স-রে করানোর ব্যবস্থা করেন। যদি ধোলাই খালে না পান, তবে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ‘জবাই দেন’-এর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। শুনছি এবারের নির্বাচনে উনি জয়লাভ করেছেন! 
স্যার, ঠিকই শুনেছেন, তবে উনার নাম জবাই দেন নয়, জো বাইডেন!
ওই হলো আর কি! তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা করেন। ও মাই গড! এতো আধুনিক দেশ আমাদের, আমাদের দেশ ‘শিঙাড়াপুর’ থেকেও উন্নত, অথচ এক্স-রে মেশিন নেই! এইটা একটা কথা! আজই সবার চাকরি নট করব…
সব ডাক্তার মন্ত্রীর এক্স-রে নিয়ে দৌড়াদৌড়ি শুরু করল। দেশের সব চিকিৎসাসেবা এক সপ্তাহের জন্য বন্ধ রইল। মন্ত্রীর চিকিৎসা বলে কথা!
এক সপ্তাহ পর আবার বোর্ড মিটিং বসেছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বললেন, খবর কী? এক্স-রে মেশিন কি ঠিক হয়েছে? 
স্বাস্থ্যসচিব বললেন, আমরা এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর কাছে দিক-নির্দেশনা চেয়েছি। ফাইল চালাচালি হচ্ছে স্যার। মাসখানেকের মধ্যে সমাধান এসে যাবে। 
স্বাস্থ্যমন্ত্রী কোঁত করে শব্দ করে বললেন, এক মাসের মধ্যে মেশিনের সমাধান আসবে? ততদিন কি আমি বাঁচব বলে মনে হয়? 
বোর্ডপ্রধান বললেন, আমাদের কিছুই করার নেই, স্যার। এটাই এই দেশের সিস্টেম। আমরা দোয়া-দুরুদ পড়ছি স্যার, আপনিও পড়ুন। আপনার পরিচিত কোনো পীর-ফকির থাকলে পানি পড়া এনেও খেতে পারেন। কোনো মাদ্রাসায় গিয়ে কোরআন মজিদ খতম করাতেও পারেন।
অনেক দেন-দরবার করে এক্স-রে মেশিন ঠিক করা হয়েছে। মন্ত্রীর বুক এক্স-রে করা হয়েছে।
আবার বোর্ড মিটিং বসেছে। বোর্ডপ্রধান বললেন, একটা সমস্যা ধরা পড়েছে, স্যার।
মন্ত্রী অবাক হয়ে বললেন, কেন? কী হয়েছে? 
তেমন কিছু না, স্যার। আপনার এক্স-রে রিপোর্টে তেলাপোকা পাওয়া গেছে। আপনার বুকে তেলাপোকা দৌড়াদৌড়ি করছে, এ জন্যই আপনার মুখ দিয়ে কোঁত কোঁত শব্দ হয়।
অসম্ভব! মন্ত্রী চিৎকার করে বললেন। আমার বুকে তেলাপোকা থাকতে পারে না। তেলাপোকা দেখলেই আমার বউ অজ্ঞান হয়ে যায়। আমার বুকে তেলাপোকা থাকলে বউ অজ্ঞান হয় না কেন?
সত্যি বলছি স্যার। আপনার বুকে তেলাপোকা দৌড়াদৌড়ি করছে। টিকটিক টিকটিক আওয়াজ করে।
মন্ত্রী অসহায় গলায় বললেন, ওরে আল্লাহ রে! তেলাপোকা টিকটিক আওয়াজ করে? ব্যাটা গাধার গাধা! 
সচিব বললেন, স্যার অন্য দেশের তেলাপোকা টিকটিক আওয়াজ করে না, আপনার বুকে কেন করছে বুঝতে পারছি না। এই নিয়ে গবেষণা চালাতে হবে। তবে এই গবেষণার ফল পেতে কয়েক দশক লেগে যেতে পারে। এই তেলাপোকা আপনার হার্ট খেয়ে ফেলছে। তেলাপোকা মেরে ফেললেই আপনি সুস্থ হয়ে উঠবেন। সমস্যা হচ্ছে, এই তেলাপোকা কীভাবে মারতে হয়, আমরা জানি না। আমরা মনে করছি, কোনো পীর-ফকিরের পানি পড়া খেলেই কাজ হয়ে যাবে। আমাদের চিকিৎসাবিজ্ঞানে এই রোগের চিকিৎসার কথা জানা নেই স্যার। রোগটা একেবারে নতুন! এমন জটিল রোগের কথা পৃথিবীর মানুষ আগে কখনো শোনেনি। 
তেলাপোকার কথা শুনে মন্ত্রী অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলেন। কিছুক্ষণ চোখেমুখে পানি দেওয়ার পর তার জ্ঞান ফিরল। তিনি আকুল গলায় বললেন, আমার কি বাঁচার কোনো আশা নেই? 
স্বাস্থ্যসচিব কাচুমাচু মুখে বললেন, এই তেলাপোকা রোগের চিকিৎসা এখনো বের হয়নি স্যার। তবে চিন্তা করবেন না, বিজ্ঞানীরা একদিন ঠিকই এর চিকিৎসা বের করে ফেলবে, তবে ততদিন আপনি বেঁচে থাকবেন কিনা তা বুঝতে পারছি না! 
স্বাস্থ্যমন্ত্রী অসহায় ভঙ্গিতে চিৎকার করে বললেন, আমাদের চিকিৎসাসেবা আন্তর্জাতিক মানের। যেভাবেই হোক একটা বুদ্ধি বের করেন। নইলে সবার চাকরি নট!
মন্ত্রীর ব্যক্তিগত ডাক্তার মাথা চুলকাতে চুলকাতে বললেন, একটা চিকিৎসা আছে স্যার, এটা প্রয়োগ করলে নিশ্চিত তেলাপোকা মারা পড়বে! 
মন্ত্রী চেয়ার ছেড়ে লাফিয়ে উঠে বললেন, এতক্ষণ বলেননি কেন? কোন ঘোড়ার আন্ডা ভাজছিলেন? এক্ষুনি চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন। এই চিকিৎসাপদ্ধতি নিয়ে একটা ফিচার লিখে আন্তর্জাতিক জার্নালে পাঠিয়ে দেন। বিশ্ববাসীর উপকার হোক। পদ্ধতিটা কী?
কিছু না স্যার, আপনাকে বিষ খেতে হবে। বিষ খেলে আমি নিশ্চিত তেলাপোকা মারা পড়বে, তবে আপনি বেঁচে থাকবেন কিনা তা বুঝতে পারছি না! 
মন্ত্রী আবার ধপাস করে চেয়ারে বসে পড়লেন। কিছুক্ষণ কোঁত কোঁত শব্দ করলেন। কোঁত কোঁত করতে করতেই বললেন, আমাদের চিকিৎসাসেবা আন্তর্জাতিক মানের হলেও আমাদের দেশের বিষ আন্তর্জাতিক মানের না। বাজারের বেশির ভাগ বিষ নকল। আমি নাও মরতে পারি। ছাত্রজীবনে একবার আমার প্রেমিকার বিয়ে হয়ে যাওয়ায় আমি বিষ খেয়েছিলাম। মরিনি। বিষ খাওয়ার ব্যবস্থা করেন।
স্বাস্থ্যের ডিজি বললেন, সে ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি লাগবে, স্যার। যেহেতু আপনি মন্ত্রী পরিষদে আছেন, প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন ছাড়া আপনার বিষ খাওয়া উচিত হবে না। 
মন্ত্রী বললেন, আপনাদের কারও বিষ খাওয়ার অভিজ্ঞতা আছে? আমি সারা জীবন করে এসেছি আলু-পটোলের ব্যবসা, বিষ খাওয়ার ব্যাপারে আমার অভিজ্ঞতা কম। তার পরও একবার খেয়ে দেখেছি। আপনারা খেয়েছেন? আছে কারও অভিজ্ঞতা?
লজ্জিত মুখে সবাই স্বীকার করল, এর আগে বিষ খাওয়ার অভিজ্ঞতা কারও নেই। তবে অভিজ্ঞতার দরকার ছিল! 
এক সপ্তাহ পর মন্ত্রী পরিষদের মিটিং বসেছে। প্রধানমন্ত্রীকে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বিষয়টা জানানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এই উপমহাদেশের সেরা হার্ট বিশেষজ্ঞ হচ্ছেন ভারতের দেবী শেঠি। তার সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত। 
প্রধানমন্ত্রীর কথা শুনে এক শ এক সদস্যবিশিষ্ট কমিটির দল ভারত গেল দেবী শেঠির পরামর্শ নিতে!
সব শুনে দেবী শেঠি বললেন, আমি নিজ চোখে রোগী দেখতে চাই।
বিশেষ বিমানে করে সেই দেশে দেবী শেঠিকে উড়িয়ে নেওয়া হলো। 
দেবী শেঠি এসে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাগজপত্র সব দেখলেন, এক্স-রে রিপোর্ট দেখে ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ছাড়লেন। তার পর স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বললেন, মাননীয় মন্ত্রী, আপনার দেশ কাগজে-কলমে সিঙ্গাপুর থেকে উন্নত হলেও বাস্তবে বাঙ্গিপুর থেকেও পিছিয়ে আছে। 
দেবী শেঠির কথা শুনে মন্ত্রী মুখ কালো করে ফেললেন। তার কথাটা পছন্দ হয়নি। কিন্তু কী আর করা! ব্যাটা তার তেলাপোকার চিকিৎসা করতে এসেছে বলে কিছু বলা গেল না। নইলে তিনি দেখিয়ে দিতেন, তারা দেশকে কোথায় নিয়ে গেছেন। 
দেবী শেঠি মন্ত্রীর মনোভাব বুঝেও পাত্তা না দিয়ে বললেন, আসলে আপনার কিছুই হয়নি। আপনার বুকের ব্যথাটা হচ্ছে গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা। কয়েকদিন গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ খেলে ঠিক হয়ে যাবে। আর, আপনার বুকে তেলাপোকা দৌড়াদৌড়ি করছে না, এক্স-রে করার সময় ওটা এক্স-রে মেশিনের ওপর দৌড়াদৌড়ি করেছিল!
স্বাস্থ্যমন্ত্রী তার দেশের ডাক্তারদের ডেকে বললেন, আমি না হয় আলু-পটোলের ব্যবসায়ী। আপনারা? আপনাদের সবার চাকরি নট করা হলো।
ডাক্তার সাহেবরা মন্ত্রীর কথায় গ্রাহ্য করে না। মুখ টিপে হাসে। তারা জানে, তারা নট হলে তার আগে মন্ত্রী নিজেই নট হয়ে যাবে। 
সচিব সাহেব মাথা চুলকায় আর ভাবে, দেবী শেঠি এইটা কী বলল? শালার এই বাঙ্গিপুরটা কই?
বাংলাদেশের বরিশাল নয় তো? ওখানে তো শুনেছি ভালো বাঙ্গি চাষ হয়।

সাক্ষাৎকারে মাহরুখ মহিউদ্দীন মেলার অবয়বে নতুন বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি দেখতে চাই

প্রকাশ: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৫০ পিএম
আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৫০ পিএম
মেলার অবয়বে নতুন বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি দেখতে চাই
মাহরুখ মহিউদ্দীন

আগামী বইমেলা নিয়ে আপনার মতামত কী?
বাংলাদেশের মানুষের জন্য অমর একুশে গ্রন্থমেলা জাতি হিসেবে আমাদের পরিচয় ও আত্মমর্যাদার একটা গুরুত্বপূর্ণ স্মারক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। ২০২৪-এর জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আমরা যেভাবে আমাদের হৃত মর্যাদা পুনরুদ্ধার করেছি, আমি মনে করি আগামী বইমেলায় এর পরিষ্কার প্রতিফলন থাকা প্রয়োজন। আমাদের বাকস্বাধীনতা রুদ্ধ থাকা থেকে শুরু করে অন্যায্যতার যে সংস্কৃতি তৈরি হয়েছিল, আমি মনে করি এবারের বইমেলা সেই চর্চা থেকে মুক্ত হয়ে একটি ন্যায্য প্রক্রিয়ায় প্রকাশক ও লেখকদের জন্য সুযোগ করে দেবে এবং আয়োজনে পাঠকরা সেই ন্যায্যতার প্রতিফলন দেখতে পারবেন। এবারের মেলা হওয়া উচিত অন্য আর সব বছরের চেয়ে বেশি প্রাণবন্ত, সব মত ও পথের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার মাধ্যমে যেসব ভেদাভেদ সমাজে তৈরি হয়েছে তার বিপরীত স্রোতে গিয়ে একটা ইতিবাচক ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা দেওয়ার মতো একটি অভূতপূর্ব আয়োজন এবার আমরা পাব বলে আশা করতে চাই।

এবারের বইমেলায় আপনার প্রকাশনী থেকে কয়টি এবং কী ধরনের বই প্রকাশ করছেন?
ইউপিএল সাধারণত বাংলা এবং ইংরেজি ভাষায় গবেষণাধর্মী, সমাজ, ইতিহাস, রাজনীতি বিষয়ক গ্রন্থ, স্মৃতিকথা, অনুবাদ ইত্যাদি প্রকাশ করে থাকে। এবার সেই সঙ্গে কিছু সাহিত্যগ্রন্থ ও সাহিত্য সমালোচনামূলক গ্রন্থও থাকবে বলে আমরা আশা করছি।
এবারে আমাদের প্রকাশনার তালিকায় উল্লেখযোগ্য বইগুলোর মধ্যে থাকবে জাতীয় অধ্যাপক জ্ঞানতাপস আব্দুর রাজ্জাকের ভারতের রাজনৈতিক দল (Political Parties in India-এর অনুবাদ), বিখ্যাত বাংলাদেশ বিশেষজ্ঞ নৃতত্ত্ববিদ ভেলাম ভান সেন্দেলের বাংলাদেশ জনপদের ইতিহাস ও সংস্কৃতি (A history of Bangladesh-এর অনুবাদ), ক্লিনটন বি সিলির বই Barisal and Beyond Essays on Bangla Literature, অধ্যাপক সৈয়দ জামিল আহমেদের নীল বিদ্রোহ নিয়ে বই Revisiting the Indigo Rebellion, রিচার্ড ইটনের ইসলামের উত্থান ও বাংলা সীমান্ত (রাইজ অব ইসলামের অনুবাদ), সমারি চাকমার কাপ্তাই বাঁধ: বর-পরং ডুবুরিদের আত্মকথন, রঞ্জন সাহা পার্থ, ওবায়দুল্লাহ আল মারজুক, মাসাহিকো তোগাওয়ার সম্পাদিত শরণার্থীর সঙ্গে বসবাস: রোহিঙ্গা ও স্থানীয় বাঙালির প্রাত্যহিক অভিজ্ঞতা, সারোয়ার তুষারের ফিলিস্তিন: একুশ শতকের উপনিবেশের ইতিহাস, সাবরিনা নার্গিস প্রণীত দুর্নীতি সম্পর্কিত আইন ও সচরাচর জিজ্ঞাসা, অধ্যাপক আবদুস সেলিম অনূদিত বিশ্বসাহিত্যের সাতটি নারীবাদী নাটক এবং আরও কিছু বই।

মেলাপ্রাঙ্গণ বা অবয়ব নিয়ে আপনার কোনো বক্তব্য আছে কি?
প্রথমে যেমনটি বলেছি, মেলার বিন্যাস ও অবয়বে আমরা নতুন বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষার প্রতিচ্ছবি দেখতে চাই, দেখতে চাই জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার, আর বাংলাদেশের জনগোষ্ঠী হিসেবে আমাদের আত্মপরিচয়ের নতুন অভিব্যক্তির প্রকাশ। এই ভাবনা বা চাওয়াটা হয়তো অনেকখানিই বিমূর্ত, কিন্তু আয়োজনের নেতৃত্বে যারা থাকবেন তারা আন্তরিকভাবে চাইলে এর রূপায়ণ সম্ভব বলে আমি মনে করি।

আগের তুলনায় বই বিক্রয় কি কম?
আমাদের দেশের পাঠক নানান মাধ্যমে বই পড়েন, তাই মুদ্রিত বইয়ের বিক্রি হয়তো খানিকটা কমে গেছে। এ ছাড়া দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি করোনা মহামারির পর থেকে এখন পর্যন্ত স্বাভাবিক হয়নি। এখনো আমাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য আকাশচুম্বী। সবকিছু মিলিয়েই হয়তো বই বিক্রিতে কিছু প্রভাব পড়ছে।

আপনি কি বর্তমানে মানসম্মত পাণ্ডুলিপির অভাব বোধ করছেন?
ভালো পাণ্ডুলিপি সবসময়ই সংখ্যায় কম। তবে আমরা বেশ কিছু ভালো কাজ প্রতি বছরই পাই এবং নিজেরা উদ্যোগ নিয়ে সংগ্রহের চেষ্টায় থাকি। ভালো পাণ্ডুলিপি যেমন আমরা ভালো লেখকদের কাছ থেকে প্রত্যাশা করি, তেমনি একটা সম্ভাবনাময় পাণ্ডুলিপি তৈরির দায় অনেকটা প্রকাশকের ওপরও বর্তায়।

বইমেলায় কী ধরনের বই বেশি বিক্রয় হয়?
বইমেলায় সব ধরনের বই-ই বিক্রি হয়। ছোটদের বই ও সাহিত্যের পাশাপাশি ধীরে ধীরে ইতিহাস, রাজনীতি ও অন্যান্য মোটিভেশনাল ননফিকশন বইয়ের চাহিদা বাড়ছে। মেলায় কী ধরনের বই বিক্রি হচ্ছে তার সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া গেলে নির্দিষ্ট করে বলা যেত।
ধন্যবাদ।
আপনাকেও ধন্যবাদ।

প্রকাশক: দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড (ইউপিএল)

কবি

প্রকাশ: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৪৪ পিএম
কবি

বৃষ্টির ফোঁটার আহ্বানে মিশে
কথাগুলো ভিজে যায় অগোচরে,
হারিয়ে যায় সোনামুখী রোদ 
নিয়মের রুটিন মেনে,
আকাশের রঙ-রূপ মুছে গিয়ে 
মায়াবী এক রাতের শুরু,
জেগে থাকে রাত চাঁদের আলোয় 
জেগে থাকে ঘর জানালা খুলে
চলে কবিতাপাঠের আসর
আর লেখার উন্মাদনা,
ভুল ঘরে জন্ম নেওয়া কবির কলম
অনবরত লিখে যায়, 
লিখতে লিখতে থেমে যায়
যখন ঘুমিয়ে যায় রাত
যখন জেগে ওঠে ভোর।

চিত্রকল্প

প্রকাশ: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৪৩ পিএম
চিত্রকল্প

কল্পনায় ছবি লিখি শব্দের বিন্যাসে
বাস্তবতা কিছু যদি উহ্য থেকে যায়
ব্যপ্তির বিচিত্র ঘ্রাণ আত্ম প্রয়োজনে
অব্যক্ত অনুভবে তা দেখে যেতে হয়
ভাবনার চিত্রভাষা দূরত্বের পথে
স্পর্শও উপচে পড়ে তেজস্বী ছোঁয়ায়
প্রেমের সংযোগ ঘটে হৃদয়-প্রবাহে
শ্লথক্লান্তি অবিবেচ্য থাকে- থেকে যায়

হারালে দ্বিত্বের মোহ বিচ্ছেদ প্রকাশে
বিভ্রান্ত আলোক-ভাষ্য যথেষ্ট অচল
তখনি মুহূর্ত শুরু। ভালোবাসা এসে
ভাসিয়ে রাঙিয়ে দেয় দগ্ধ চরাচর
মনের সকল বাঁক, অভিসারপ্রীতি
শরীরে শরীর মিশে চিত্রকল্প হয়