ঢাকা ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪
English

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ শতবর্ষের নিরিখে

প্রকাশ: ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:০৫ পিএম
আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:১৮ পিএম
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ শতবর্ষের নিরিখে

সুবিদিত যে, ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা পূর্ব বাংলার ইতিহাসের বাঁক বদলের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণ হিসেবে বিবেচিত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার শুরুতে স্বল্পসংখ্যক বিভাগের একটি ছিল ইতিহাস বিভাগ। প্রয়াত অধ্যাপক আর সি মজুমদার, আহমেদ হাসান দানী কিংবা আবদুল করিমের মতো বিদগ্ধ পণ্ডিত ইতিহাস বিভাগে শিক্ষকতা করেছেন। ১০০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ইতিহাস বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মারক হিসেবে প্রকাশিত হয়েছে, ‘শতবর্ষে ইতিহাস বিভাগ অতীতের আলোয় বর্তমান ও ভবিষ্যৎ’। এটি যৌথভাবে সম্পাদনা করেছেন আশফাক হোসেন এবং আশা ইসলাম। গ্রন্থটি ১১টি অধ্যয়ে বিভক্ত। একই সঙ্গে থিম অনুযায়ী তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে।

যা নিম্নরূপ:
প্রথম ভাগ- পরিচিতি ও জাতি গঠনে ইতিহাস বিভাগ, 
দ্বিতীয় ভাগ- পাঠ্যক্রম ও গবেষণা, তৃতীয় ভাগ সহশিক্ষাক্রমিক ও অ্যালামনাইদের কার্যক্রম।

ইতিহাস বিভাগ: আলোচিত অতীত থেকে ভবিষ্যতের পথে যৌথভাবে লিখেছেন সুরমা জাকারিয়া চৌধুরী এবং ফাইরুজ জাহান। লেখাটির ধারাবাহিকতা প্রশংসনীয়। এটি একটি সুলিখিত নিবন্ধ। সাম্প্রতিক সময়ে ইতিহাস বিভাগে স্বেচ্ছায় পড়তে আসা শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে বলে লেখকদ্বয় আক্ষেপ করেছেন। এর পেছনে বেশকিছু ভুল ও অজ্ঞতাপ্রসূত ধারণা রয়েছে। এটি দুঃখজনক যে, রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকরা ইতিহাস বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না। পাশ্চাত্য এবং উন্নত রাষ্ট্রে ইতিহাস বিভাগের যে সমাদর, আমাদের দেশে সেটি না থাকার কারণে ইতিহাস সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা একটি বড় কারণ হিসেবে বিবেচিত। একই সঙ্গে আমাদের দরবারি ইতিহাস লেখার প্রবণতা এ জন্য দায়ী। লেখকদ্বয় বিষয়টি উপলব্ধি করতে পারেননি।

‘ইতিহাস বিভাগের স্নাতক শ্রেণির পাঠ্যক্রম: ইতিহাসের দৃষ্টিতে ভবিষ্যৎ’ নিবন্ধটি যৌথভাবে লিখেছেন মাহমুদা আক্তার পলি এবং আশফাক হোসেন। এটি একটি তথ্যসমৃদ্ধ নিবন্ধ। বিশেষ করে কারিকুলামের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের সুলিখিত উপস্থাপনা এবং এর বিষয়বিন্যাস ইতিহাস অন্বেষী পাঠকের ভালো লাগবে। তবে লেখাটির টীকা ও তথ্য সূত্রের ত্রুটি রয়েছে। বিশেষ করে ইতিহাসবিদ দীপেশ চক্রবর্তীর গ্রন্থ Provincializing Europe: Postcolonial Thought and Historical Difference-এর প্রকাশনা সংস্থা Princeton University Press-এর নামের উল্লেখ করা উচিত ছিল।

আশফাক হোসেন এবং আনন্দ বিকাশ চাকমার লেখা গবেষণা কার্যক্রম: শতবর্ষের অর্জন ও ভবিষ্যতের রেখাচিত্র তত্ত্ব ও তথ্যসমৃদ্ধ। লেখকদ্বয় যথার্থই উল্লেখ করেছেন বিগত সাত-আট দশকে ইতিহাসচর্চা, গবেষণার ধারা ও পদ্ধতিতে এসেছে নানা পরিবর্তন। বাংলাদেশে আবিষ্কৃত হয়েছে নতুন নতুন উপকরণ ও প্রত্নক্ষেত্র। এসব দিক বিবেচনা করে বাংলার প্রাচীন যুগের ইতিহাস পুনর্লিখন করা হয়ে ওঠে গবেষকদের জন্য একটি পরম আরাধ্য কাজ (পৃ. ২৮৩)।

অর্থনৈতিক ইতিহাস গবেষণায় এম মোফাখখারুল ইসলামের কাজকে বিশেষভাবে মূল্যায়ন করে লেখকদ্বয় উদারতার পরিচয় দিয়েছেন। Bengal Agriculture 1920-1946: A Quantitative Study বিষয়ে তার মৌলিক কাজ উপস্থাপন করায় পাঠক উপকৃত হয়েছে। তবে চট্টগ্রাম বন্দরের ইতিহাসের লেখকের নাম হবে মিসবাহ উদ্দিন খান। ভবিষ্যতে লেখকদ্বয় নামটি শুধরে নেবেন।

পরিশিষ্ট অংশে এ টি এম যায়েদ হোসেনের লেখা অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের ইতিহাস বিভাগ একটি দুর্বল নিবন্ধ। ভবিষ্যতে লেখাটিকে আরও পরিমার্জন করলে পাঠক উপকৃত হবে। ইতিহাস বিভাগ: এমফিল ও পিএইচডি (১৯২১-২০২২)-এর একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা উপস্থাপন করা হয়েছে, যা গুরুত্বপূর্ণ। ভবিষ্যতে যারা ইতিহাস বিষয়ে গবেষণা করবেন তারা এ থেকে উপকৃত হবেন।

গ্রন্থটির মুদ্রণ, ভাষা শৈলী ও বিষয় বিন্যাস চমৎকার। আমি গ্রন্থটির বহুল প্রচার প্রত্যাশা করছি।

শতবর্ষে ইতিহাস বিভাগ অতীতের আলোয় বর্তমান ও ভবিষ্যৎ, আশফাক হোসেন এবং আশা ইসলাম সম্পাদিত। প্রকাশকাল-২০২২। প্রকাশক-ইতিহাস বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

ধারাবাহিক উপন্যাস গোপনীয়

প্রকাশ: ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৫১ পিএম
আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৫১ পিএম
গোপনীয়
গ্রাফিকস: নাজমুল মাসুম

পর্ব-১৪

এরকম একটি অংশ একেবারে সামনে বসা সুন্দরীদের, আরও বলা ভালো, এক বিশেষ সুন্দরীর ওপর বিশেষ নজর রাখছিল। তারা জীবনে অনেক সৌন্দর্যরের সন্দর্শন পেয়েছে, কিন্তু এমন জগৎ ভোলানো সুন্দর কে কবে দেখেছে! মানুষ এমনও সুন্দর হয়!   
বিরামপুরের ইতিহাসে যখন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্ত ছাত্র একযোগে একজনের প্রেমে ‘পড়িতেছিল’, তখন ভরা বক্তৃতার আসরে নেতার বক্তব্য হঠাৎ স্তব্ধ হয়ে গেল। ছাত্ররা দেখল, নেতার উত্থিত তর্জনী তাদের দিকে তাক করে আছে।  
তার পর তাদের আর কিছুই মনে নেই। হঠাৎ থেমে যাওয়া বক্তব্যের পর চারদিকের গুঞ্জরণের মাঝে কখন নিজেরা হারিয়ে গেল, হারিয়ে গেল সেই সুন্দরের প্রতিমা টেরই পেল না কেউ।  
এদিকে মঞ্চের পেছনে গ্রিনরুমে তখন নেতাকে নিয়ে আসা হয়েছে। এখানে রিয়াজুল্লার মা বসে আছেন। আরও আছেন নেতার ঘনিষ্ঠ বন্ধু জরুল্লা। পার্টির ডাক্তার নেতাকে পরীক্ষা করে বলেছেন, সবকিছু ঠিক আছে। কিন্তু মায়ের প্রশ্ন, সব ঠিক থাকলে ছেলের জবান বন্ধ কেন! ডাক্তার সাহেব এ প্রশ্নের কোনো উত্তর খুঁজে পাচ্ছেন না।  
ইজি চেয়ারে ছেলের হাত ধরে মা বসে আছেন। ওপরে একটি প্রাচীনকালের ফ্যান ঘুরে চলেছে। নামে গ্রিনরুম হলেও গোলাপি আলোতে আচ্ছন্ন ছোট্ট ঘরটি। সেখানে বাইরের ভেঙে যাওয়া সভার ভেসে আসা শব্দ ছাড়া জগতের বাকি সব কিছু স্তব্ধ হয়ে গেছে।  
জরুল্লাকে মা বলছেন-  
-কতবার তোমাদের বললাম, আমার ছেলের একটি বউ চাই। না, তোমরা তাকে নেতা বানাতে চাও, নিজেরা সংসারী হয়েছ কিন্তু আমার ছেলেকে নেতা বানাতে চাও। এখন এই অবস্থায় ওর কিছু হলে, ওর ভিটেয় বাতি জ্বালাবে কে, বলো!  
জরুল্লা কী বলবে ভেবে পাচ্ছে না। সে গুরুকে গুরুর মতোই মানে, মানে গুরুমাতাকেও। আবার গুরু তথা রিয়াজ্জুল্লা তার বন্ধুও বটে। তাই নিজের প্রচেষ্টায় বেশ কয়েকবার পাত্রী দর্শন তথা বিয়ে দেওয়ার জন্য চেষ্টা করেছে। এখনো হাল ছাড়েনি; কিন্তু গুরু যে অন্য কিছুর ভক্ত, তার চাই শহরের সেরা মেয়েটি এবং তা বিয়ে ছাড়াই! তার সেই ভক্তি গুরুর সহকারী আলিমুল্লা পূরণ করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত, সেকথা কি গুরুমাতাকে বলা যায়!  
জরুল্লার চিন্তার সূত্র ছিন্ন হয় মায়ের কথায়-
-আজকের মিটিংয়েও তো কত ভালো, চোখজুড়ানো মেয়ে দেখলাম। এদের মধ্য থেকে একটি মেয়েও কি আমার ছেলের জন্য পাওয়া যায় না; না কি তোমরা ইচ্ছে করে তাকে আইবুড়ো রাখতে চাও!  
জরুল্লা প্রথমে ভাবল এড়িয়ে যায়, পরে মনে হলো, এ প্রশ্ন তাকেই করা, কারণ তার ছেলে 
অর্থাৎ নেতার জবান এখনো বন্ধ। তাই কৌশলে উত্তর দেয় সে;  
-খালাম্মা চেষ্টা তো করে যাচ্ছি, আগামী মাসেও আর একজন মেয়ে দেখব, আপনিসহ থাকবেন।  
খালাম্মাকে খুব উৎসাহী মনে হলো না। তিনি নিজেও অনেক মেয়ে দেখেছেন, ছেলে এই-সেই বলে এড়িয়ে যায়; ছেলের কোনো পছন্দ আছে কিনা কে জানে, নাকি তার শারীরিক সমস্যা আছে- মা হয়ে তো এসব ছেলেকে বলা যায় না, তবে বন্ধুবান্ধবদের তো জানার কথা। কিন্তু ছেলের গোপণীয়তা বন্ধুদের বলার মতো বুদ্ধিহীনা তিনি নন। তার পিতা ব্রিটিশ আমলে রামগড় থানার দফাদার ছিলেন। থানার একজন ‘ঊর্ধ্বতন’ কর্মকর্তার মেয়ে হিসেবে এতটুকু বুদ্ধি তার আছে।
ছোট্ট গ্রিনরুমের পরিবেশ হঠাৎ গুমোট হয়ে যায়। না খালাম্মা, না জরুল্লা কেউ কোনো কথা বলে না অথবা বলতে পারে না। আর যাকে নিয়ে এত কিছু সেই নেতা এখনো নির্বাক। মঞ্চকর্মীদের দেওয়া যে চায়ের কাপে এতক্ষণ ধোঁয়া উঠছিল, তা ঠাণ্ডা হয়ে গেছে। সবাই নিস্তব্ধ; শুধু বাইরে থেকে শ্রাবণ আকাশের মন্দ্র ডাকের মতো থেকে থেকে ডোরাকাটা পার্টির স্লোগান ভেসে আসছে- রিয়াজুল্লা ভাইয়ের কিছু হলে, জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে।  
খালাম্মা হঠাৎ শঙ্কিত হন- স্নেহের হাত রাখেন ছেলের কপালে, গণ্ডে, গলায়। এসময় আলিমুল্লা ঝটিতি গ্রিনরুমে প্রবেশ করে। তার হাতে নেতার বক্তৃতার লাইভ ভিডিও। বলে, এ ভিডিও চালালে বোঝা যাবে, কী দেখে বা কাকে দেখে নেতার কণ্ঠ হঠাৎ নিস্পন্দ হয়ে যায়।   
তার পর গলা নামিয়ে জরুল্লার কানে কানে বলে, মিছিলের জন্য পল্লি থেকে খাসা কিছু জিনিস এনেছিলাম, আমার মনে হয় তাদের কাউকে দেখে নেতার জবান বন্ধ হয়ে গেছিল, যদি সেরকম হয় ধরে নাও নেতার অসুখের টোটকা আমার হাতে।   
জরুল্লা- কী বলতে চাও?  
আলিমুল্লা- বলতে চাইছি, সে যেই হোক, তাকে নেতার জন্য আমি জোগার করতে পারব; যাকে মিটিংয়ে আনতে পেরেছি, তাকে নেতার খাসরুমে আনাও আমার জন্য কিছুই না।  
জরুল্লা- তোমার কথার আগামাথা কিছুই বুঝছি না, ভিডিও চালাও।  
নৈঃশব্দের নীরবতার মধ্যে ভিডিও চালু হলো। এখন নেতার বক্তব্য শোনা যাচ্ছে, মাঝে মাঝে ডোরাকাটা পার্টির উত্তুঙ্গ স্লোগানে গ্রিনরুমের নীরবতা ভেঙে চৌচির হচ্ছে। কিন্তু চারটি প্রাণীর নীরবতার দেয়ালে ভিডিওর কথামালা দ্বিগুণে ত্রিগুণে প্রতিবিম্বিত হচ্ছে কেবল- তাদের নিমগ্রতায় তা কোনো চির ধরাতে পারছে না।   
এখন ভিডিও দর্শকদের ওপর জুম করে আসছে। স্পষ্ট হচ্ছে আলিমুল্লার নিয়ে আসা সেই বিশেষ মুখগুলো। একসময় তা এসে স্থির হলো একটি বিশেষ মুখের ওপর। আর তখনি খালাম্মা এবং বিস্ময়কর হলেও সত্য, জবান বন্ধ হয়ে যাওয়া নেতা দুজনই হঠাৎ আঙুল তুলে ভিডিওর দিকে তাক করলেন আর একযোগে বললেন- এই সে!  


পর্ব-০৭
জরুল্লা নেতার জবান ফিরে আসায় খুশি, কিন্তু ঘটনা কিছুই বুঝতে পারল না।   
আলিমুল্লা বলল, আ রে, আঙুলি দিয়ে দেখিয়ে দেওয়া নেতার ওই মেয়েটিকে আমি চিনি; ও তো ‘আমাদের’ চারু! ঘটনা তাহলে এই!!  
আলিমুল্লা তার কথা রেখেছে। তিন দিনের মাথায় নেতার অফিসে চারুকে হাজির করাতে পেরেছে সে।  
সভার পরদিন। আলিমুল্লা ভেবেছিল বেলাবেলি চারুপল্লিতে এসে হাজির হবে। কিন্তু তা যে ঢাকা শহর থেকে এত দূরে কে জানত। ঢাকা শহরের মাঝখানে কিন্তু চারুপল্লিতে যেতে হবে নৌকায় চড়ে- এমন আজব বাত পৃথিবীতে কে কবে শুনেছে! আলিমুল্লাও শোনেনি, তবে ও আজ শুধু শোনেইনি, নিজে এক্ষণে চড়ে বসেছে একটি নৌকায়।  নৌকার মাঝি নিতান্তই বালক। তার মুখে গোঁফের রেখা দেখা দিয়েছে কেবল। মুখে মুচকি হাসি।  
আলিমুল্লা মুখে কিছুই বলল না; কিন্তু বালক মাঝি নিজেই মুখ খুলল,
-সাহেব বুঝি প্রথমবার পল্লিতে যাচ্ছেন!  
আলিমুল্লার একবার মনে হলো, বলবে মাঝির বাচ্চা তুই আমারে চিনিস? জানিস আমি হবু প্রধানমন্ত্রীর ডান হাত? আবার কী ভেবে নিজের রাগ সংবরণ করল সে।  
শ্রাবণ দুপুরে মেঘভাঙা রোদ উঠেছে। জলের বুকে কয়েকটি পাতি হাঁসের সন্তরণ। লেকের অনুচ্চ ঢেউগুলো ভেঙে পড়ছে তাদের পেলব দেহের বঙ্কিম বিভঙ্গে। আলিমুল্লা কোনোদিন কবিতার ভক্ত পাঠক নয়, কিন্তু এই মুহূর্তে সে আবিষ্কার করল হাঁসগুলোর চোখ মচকা ফুলের মতো লাল।  
দীর্ঘক্ষণ উত্তর না পেয়ে বালক মাঝি আবার প্রশ্ন করল-
-সাহেব কি প্রথমবার পল্লিতে যাচ্ছেন?  
-এবার আলিমুল্লা মুখ খুলল-
-হ্যাঁ। এতে কি তোমার কোনো সমস্যা?
- না। পল্লিতে তো অনেক ঘাট, ভাবছিলাম পুরাণ হলে তো কোন ঘাটে নামবেন জানেন, কিন্তু নতুন হলে কোন ঘাটে নেব সেটাই সমস্যা। 
এইবার আলিমুল্লা চিন্তিত হলো। কোন ঘাটে যাবে সে, কোন ঘাটে নামলেই বা চারুর দেখা হবে। চারু আর চারুপল্লির মেয়েদের নিয়ে যাওয়া স্থানীয় ছেলেটা থাকলে ভালো হতো! কিন্তু এ তো গোপন মিশন- শুধু চারুকে চাই নেতার নৈবেদ্য হিসেবে নিবেদনের জন্য; একাকী এবং গোপনে।
শ্রাবণ সূর্য রশ্মি বিকিরণে অকৃপণ। সেই কিরণধারা জলের বুকে বিম্বিত হচ্ছে চারদিকে, নৌকার পাশজুড়ে কয়েকটি জলময়ূরী উড়ছে। তাদের পাখায় পাখায় রবির রশ্মি এক অজানিত মায়া ‘বুলাইয়া’ দিয়াছে।  
কিন্তু ভাবালুতার সময় নয় এটি। আলিমুল্লা ভালো করেই জানে মাঝিকে বলতে হবে, ‘কোন ঘাটে ভিড়বে তাহার তরণী’। কিন্তু কোন সে ঘাট!  
 এসময় আলিমুল্লার সাহায্যে এগিয়ে এল সেই বালক মাঝি।  
-চলুন, আমরা প্রথম ঘাট থেকেই শুরু করি। প্রতি ঘাটের ধারে ওই অংশের সব মেয়েকে দেখতে পাবেন; তার পর যে ঘাটে বলবেন, নামিয়ে দেব।
আলিমুল্লা অনেক্ষণ কথা বলল না অথবা বলতে পারল না।  
ব্যাপার তাহলে এই! শহরের বা বিদেশের রেড লাইট এরিয়ার মতো মেয়েরা দাঁড়িয়ে থাকবে সাজুগুজু করে আর খদ্দের পছন্দ করবে! কী আর করা!  
প্রথম ঘাটে নৌকা ভেড়াল মাঝি।  
শূন্য ঘাটে শূন্য তরণী। কোথাও কেউ নেই। শানবাঁধানো বিরানা ঘাটের নিচে আলিমুল্লা। একটি নিঃসঙ্গ গাঙচিল উড়ে গেল কোথায়। দূরে-বহু দূরে ঢাকা শহরের নাগরিক আয়োজন।  
এসময় আচমকা লিলুয়া বাতাসের মতো কেউ একজন ঘাটে এল, এসে বসল আলতো পায়ে। তার নূপুরের নিক্কনে বাঙ্‌ময় হলো নদীতীর। তীরে স্নানরত একটি পানকৌড়ি উড়াল দিল দক্ষিণে। 
সেদিকে পল্লির বাগানে অশোক গাছে বহু দিন পরে ‘খয়েরী রঙের ফুল ধরিয়াছে’।  
আলিমুল্লা একবার খইরঙা অশোক গাছের দিকে তাকাল।  
কিন্তু মুহূর্তেই তার দৃষ্টি কেড়ে নিল ঘাটে বসা রমণী। লাল রঙের দোপট্টা পড়েছে সে। কিন্তু ছোট্ট দোপাট্টা তার ভরা যৌবন গোপন করতে হিমসিম খাচ্ছে বারবার। তার চোখে কামনার আমন্ত্রণ প্রত্যক্ষ করল আলিমুল্লা। কিন্তু যখন আলিমুল্লার চোখ মেয়েটির চোখের গহনে ডুবুডুবু, সে খেয়ালই করল না কখন ঘাটে তার পাশে একের পর এক অনেকে এসে বসেছে। তাদের মুখে মদিরা, চোখে মাদকতার কাজল লেপ্টে আছে। কিন্তু আলিমুল্লা বহু খুঁজেও কাঙ্ক্ষিত মুখটি খুঁজে পেল না। কোথায় চারু!  
দ্বিতীয় ঘাট গাঙের ভেতর অনেক দূরে ঢুকে পড়েছে। এখানে প্রাচীন বৃক্ষতলে ছায়া করে আছে। আর সে ছায়া আলো করে বসেছিল কয়েকজন। তারা গাইছিল হাল আমলের একটি জনপ্রিয় গান-  
অসময়ে বাঁশী বাজায় কে রে   
কাঙ্খের কলসী টলমল টলমল করে।   
একজন প্রথম কলি ভাজে তো সবাই সমস্বরে শেষের কলি ফুটিয়ে তোলে-  
আমি জলকে আসি যমুনার পাড়   
দেখা হলো সেই সে কালার  
ছলকে উঠে ভরা কলসী অঙ্গ ভেজায় রে।

চলবে...

সাহিত্য আমার রক্তে-মাংসে মিশে গেছে

প্রকাশ: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:১০ পিএম
আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:০৮ পিএম
সাহিত্য আমার রক্তে-মাংসে মিশে গেছে
সাদাত উল্লাহ খান

সাদাত উল্লাহ খান স্বাধীন লেখকের জীবন বেছে নেন। লিখেছেন গল্প, প্রবন্ধ ও সমালোচনা। তিনি ১৯৯৮ সাল থেকে নিয়মিতভাবে গবেষণা পত্রিকা ‘প্রতিবুদ্ধিজীবী’ সম্পাদনা করছেন।

আপনার পত্রিকা ‘প্রতিবুদ্ধিজীবী’র ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে গিয়ে কতটা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছেন? 
পারিবারিকভাবেই অর্থের চাইতে জ্ঞানের দিকে আমাদের মোহ বেশি। আমি স্কুল বয়স থেকেই পারিবারিক পাঠাগার থেকে অনেক বই পড়েছি। তলস্টয়, দস্তয়েভস্কি ও গোর্কিসহ বিভিন্ন বই পড়েই সাহিত্যের প্রতি আমার ভালোলাগা তৈরি হয়েছে। সাহিত্য আমার রক্তে-মাংসে মিশে গেছে। ‘প্রতি বুদ্ধিজীবী’ চালাতে গিয়ে নানামুখী চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছি। পত্রিকাটি নিয়মিতভাবে বের করার জন্য আমার ভাই সলিমুল্লাহ খান যথেষ্ট সহযোগিতা করেছেন। প্রয়োজনে জমি বিক্রি করে হলেও পত্রিকাটি বের করার অভয় আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। আমাদের পরিবারের অনেকেই লেখক। যার কারণে সহজেই পত্রিকাটি চালাতে পারছি।   

আপনার পত্রিকাটির ‘প্রতিবুদ্ধিজীবী’ নাম দেওয়ার কারণ কী? 
বুদ্ধিজীবীরা যা বলতেন তা শুনলে বাংলাদেশ স্বাধীন হতো না। বুদ্ধিজীবীরা পরিস্থিতি বুঝতে চায় না। বুদ্ধিজীবীরা ফুটওভার ব্রিজের মতো, মানুষ যেদিকে যায় তার থেকে তারা ১০০ গজ দূরে থাকে। সমাজের গতিবিধি তারা বোঝে না। তারা নিজেদের স্বার্থ বোঝে। অনেক বড় বড় সংকটে বুদ্ধিজীবীরা আন্দাজ করতে পারেন না। ২০২৪ সালে এমন একটি বিপ্লব হবে কোনো বুদ্ধিজীবী ধারণাই করতে পারেননি। ১৯৭১ সালেও একই ঘটনা। এজন্য ‘প্রতিবুদ্ধিজীবী’র অর্থ হলো প্রকৃত প্রতিবাদী বুদ্ধিজীবী। প্রতিবুদ্ধিজীবীরা অরগানিক ইনট্যালেকচুয়াল। এরা প্রথাগত বুদ্ধিজীবী নন। যারা ব্যতিক্রমী, অত্যন্ত সাহসী এবং অনেক চ্যালেঞ্জ নিয়ে দেশের ও মানুষের জন্য কথা বলেন তারাই হলেন প্রতিবুদ্ধিজীবী। এখন বুদ্ধিজীবীরা বেশির ভাগই সুবিধাবাদী। প্রতিবুদ্ধিজীবী বলতে আহমদ শরীফ, সলিমুল্লাহ খান, আহমদ ছফার মতো মানুষদের বোঝায়, যারা কখনই রাষ্ট্র বা সরকারের বিন্দুমাত্র সাহায্য গ্রহণ করেননি। কোনো বুদ্ধিজীবী যদি সরকারের সাহায্য নিয়ে থাকেন তাহলে তার মুখ বন্ধ হয়ে যায়। যারা প্রতিবাদী চিন্তাবিদ তারাই প্রতিবুদ্ধিজীবী। 

আপনি নিজে ব্যবসায়ী হয়েও কীভাবে সাহিত্যের প্রতি অনুরাগী হয়ে উঠলেন?
আমরা চিন্তাকে ভালোবাসি, দেশকে ভালোবাসি। মানুষের ভেতরে আলো জ্বালাতে গেলে জ্ঞান ছাড়া পারবেন না। আমি জাপান স্টাডিজ নিয়ে পড়াশোনা করেছি। মানুষকে আলোকিত করার একমাত্র উপায় বইয়ের মাধ্যমে জ্ঞান ছড়িয়ে দেওয়া। আমাদের দেশে লেখাপড়া একদমই নেই। শুধু নোট বই পড়ে, পরীক্ষা দেয়, পাস করে। কোনো কবিতার বই প্রকাশকরা ছাপাতে চান না। কারণ, কবিতার বই মানুষ কিনতে চায় না। অথচ সবচেয়ে উচ্চ শিল্প হলো কবিতা। ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর মতো অবস্থা হলো লিটল ম্যাগাজিন। লিটল ম্যাগাজিন সব সময় নতুন চিন্তার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। 

আপনার জন্ম মহেশখালীতে, প্রকৃতির সান্নিধ্যেই বড় হয়েছেন। মহেশখালীর প্রকৃতি আপনার লেখায় কীভাবে প্রভাব ফেলেছে? 
মহেশখালী দ্বীপের মানুষের কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। মহেশখালীর মানুষ এই দ্বীপের বাইরে আত্মীয়তার সম্পর্ক খুব কম করে। মহেশখালী দুর্যোগপূর্ণ এলাকা হওয়ায় লেখাপড়ায় অনেক পিছিয়ে আছে। অথচ অনেক জ্ঞানী ও শ্রেষ্ঠ মানুষের জন্ম হয়েছে এই মহেশখালীতে। ভৌগোলিকভাবেই এখানে জ্ঞানী মানুষের জন্ম হয়। এই দ্বীপের মানুষ হয়ে আমার ভাই সলিমুল্লাহ খান প্রথম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হন। এখনো আমাদের দ্বীপের মানুষ সচিব হতে পারেনি। এমনকি সেনাবাহিনীর উচ্চ পদ বা জেনারেল হতে পারেনি। একজন বিচারপতি নেই। এখানকার বেশির ভাগ মানুষ পান চাষ ও মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে। এই দ্বীপে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় নেই। তবে আমি আমার লেখায় মহেশখালীর জীবনচিত্র ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি।

সলিমুল্লাহ খান আপনার লেখায় কীভাবে প্রভাব বিস্তার করেছেন? 
আমার ভাই সলিমুল্লাহ খান সবসময় লেখাপড়ার প্রতি উৎসাহ দেন। তিনি উপদেশ দিতেন বড় লেখক  হওয়ার জন্য। আমার জ্ঞান অর্জনের ক্ষেত্রে তিনি যতটুকু সহযোগিতা করেছেন ততটুকু আমার বাবাও করেননি। তিনি আমেরিকায় থাকতে আমি যেসব বই চেয়েছি, তিনি মাটির নিচ থেকে হলেও সেই বই আমাকে খুঁজে বের করে দিয়েছেন। তিনি আমাকে জ্ঞানের আলোয় আলোকিত করেছেন। 

অনুলিখন: সানজিদ সকাল

মন্ত্রীর অসুখ

প্রকাশ: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৫৫ পিএম
আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৫৫ পিএম
মন্ত্রীর অসুখ
অলংকরণ : নিয়াজ চৌধুরী তুলি

দক্ষিণ এশিয়ার কোনো একটা দেশের (ভারত নয়) স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কয়েকদিন ধরে বুক ব্যথা করছে।
তিনি ঠিকমতো অফিস করতে পারছেন না। অফিসে বসেই তিনি কোঁত কোঁত শব্দ করেন! বুকব্যথায় যে কেউ কোঁত কোঁত শব্দ করতে পারে, এটা কারও জানা ছিল না। তবে শব্দটা সব সময় হয় না, মাঝে মাঝে হয়।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী তার ব্যক্তিগত ডাক্তারকে ডেকে পাঠালেন। ডাক্তার এসে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করলেন, এক বস্তা ফাইল বানালেন, কোনো রোগ বের করতে পারলেন না।
মন্ত্রী বলে কথা! 
দেশের সব বড়ো বড়ো ডাক্তারের সমন্বয়ে বোর্ড মিটিং বসেছে। কী করে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কোঁত কোঁত শব্দ বন্ধ করা যায়! 
বোর্ডপ্রধান স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে বললেন, স্যার, আপনার উচিত ইমিডিয়েট বিদেশে চলে যাওয়া। আপনার হার্ট বোধহয় নষ্ট হয়ে গেছে! 
স্বাস্থ্যমন্ত্রী রেগে গিয়ে বললেন, কী বলছেন এসব? আমি এখনো আমার বউকে ভালোবাসি। হার্ট নষ্ট হলে বউকে ভালোবাসতে পারতাম? ভালোবাসা যে হার্টে থাকে, এইটা আপনারা জানেন না? কোন চুলের ডাক্তার হইছেন? তাছাড়া আমাদের দেশের চিকিৎসাসেবা তো আন্তর্জাতিক মানের। পিরোজপুর থেকেও আমাদের চিকিৎসাসেবা উন্নত। আমি এই দেশের একজন মহান নেতা। আমি কেন বিদেশে যাব?
স্বাস্থ্যসচিব মন্ত্রীর কানে কানে বললেন, স্যার, ওটা পিরোজপুর হবে না, সিঙ্গাপুর হবে। পিরোজপুর তো স্যার বাংলাদেশের একটা জেলার নাম!
স্বাস্থ্যমন্ত্রী চিৎকার করে বললেন, পিরোজপুর হোক আর সিঙ্গাপুর হোক, আমি বিদেশে চিকিৎসা করাব না। আমি দেশপ্রেমিক নেতা। মরলে দেশের মাটিতেই মরব। কী করতে হবে বলেন!
স্বাস্থ্যসচিব বললেন, স্যার, বুকের এক্স-রে করা লাগবে। কিন্তু আমাদের সরকারি হাসপাতালগুলোর বেশির ভাগ এক্স-রে মেশিন তো নষ্ট! 
এক্স-রে মেশিন খালি নষ্ট হয় কেন? কী করেন আপনারা? 
সরকারি হাসপাতালের এক্স-রে মেশিন নষ্ট হলেই ডাক্তারদের লাভ। তারা তখন বাইরে রোগী পাঠিয়ে ভালো টু-পাইস কামাতে পারে। এটা তো আর মন্ত্রীকে বলা যায় না, তাই তিনি বললেন, স্যার, আমরা আসলে মেইড ইন চায়না নামের যে মেশিনগুলো কিনি, ওগুলো মেইড ইন জিঞ্জিরা। আসমানে এবং জমিনে এমন কোনো জিনিস পয়দা হয়নি, যার নকল বাংলাদেশের জিঞ্জিরায় পাওয়া যায় না। ব্যাটারা ওপরে চায়না লিখে ভিতরে জিঞ্জিরার রদ্দি মাল গছিয়ে দেয়। 
স্বাস্থ্যমন্ত্রী ধমকের সুরে বললেন, যেভাবে হোক, এক্স-রে মেশিন ঠিক করেন। আমি সরকারি হাসপাতালেই চিকিৎসা করাব। প্রয়োজন হলে বাংলাদেশের ধোলাই খাল থেকে পার্টস নিয়ে আসেন। শুনেছি ওখানে পুরাতন ভালো ভালো পার্টস পাওয়া যায়। ইমিডিয়েট এক্স-রে করানোর ব্যবস্থা করেন। যদি ধোলাই খালে না পান, তবে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ‘জবাই দেন’-এর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। শুনছি এবারের নির্বাচনে উনি জয়লাভ করেছেন! 
স্যার, ঠিকই শুনেছেন, তবে উনার নাম জবাই দেন নয়, জো বাইডেন!
ওই হলো আর কি! তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা করেন। ও মাই গড! এতো আধুনিক দেশ আমাদের, আমাদের দেশ ‘শিঙাড়াপুর’ থেকেও উন্নত, অথচ এক্স-রে মেশিন নেই! এইটা একটা কথা! আজই সবার চাকরি নট করব…
সব ডাক্তার মন্ত্রীর এক্স-রে নিয়ে দৌড়াদৌড়ি শুরু করল। দেশের সব চিকিৎসাসেবা এক সপ্তাহের জন্য বন্ধ রইল। মন্ত্রীর চিকিৎসা বলে কথা!
এক সপ্তাহ পর আবার বোর্ড মিটিং বসেছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বললেন, খবর কী? এক্স-রে মেশিন কি ঠিক হয়েছে? 
স্বাস্থ্যসচিব বললেন, আমরা এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর কাছে দিক-নির্দেশনা চেয়েছি। ফাইল চালাচালি হচ্ছে স্যার। মাসখানেকের মধ্যে সমাধান এসে যাবে। 
স্বাস্থ্যমন্ত্রী কোঁত করে শব্দ করে বললেন, এক মাসের মধ্যে মেশিনের সমাধান আসবে? ততদিন কি আমি বাঁচব বলে মনে হয়? 
বোর্ডপ্রধান বললেন, আমাদের কিছুই করার নেই, স্যার। এটাই এই দেশের সিস্টেম। আমরা দোয়া-দুরুদ পড়ছি স্যার, আপনিও পড়ুন। আপনার পরিচিত কোনো পীর-ফকির থাকলে পানি পড়া এনেও খেতে পারেন। কোনো মাদ্রাসায় গিয়ে কোরআন মজিদ খতম করাতেও পারেন।
অনেক দেন-দরবার করে এক্স-রে মেশিন ঠিক করা হয়েছে। মন্ত্রীর বুক এক্স-রে করা হয়েছে।
আবার বোর্ড মিটিং বসেছে। বোর্ডপ্রধান বললেন, একটা সমস্যা ধরা পড়েছে, স্যার।
মন্ত্রী অবাক হয়ে বললেন, কেন? কী হয়েছে? 
তেমন কিছু না, স্যার। আপনার এক্স-রে রিপোর্টে তেলাপোকা পাওয়া গেছে। আপনার বুকে তেলাপোকা দৌড়াদৌড়ি করছে, এ জন্যই আপনার মুখ দিয়ে কোঁত কোঁত শব্দ হয়।
অসম্ভব! মন্ত্রী চিৎকার করে বললেন। আমার বুকে তেলাপোকা থাকতে পারে না। তেলাপোকা দেখলেই আমার বউ অজ্ঞান হয়ে যায়। আমার বুকে তেলাপোকা থাকলে বউ অজ্ঞান হয় না কেন?
সত্যি বলছি স্যার। আপনার বুকে তেলাপোকা দৌড়াদৌড়ি করছে। টিকটিক টিকটিক আওয়াজ করে।
মন্ত্রী অসহায় গলায় বললেন, ওরে আল্লাহ রে! তেলাপোকা টিকটিক আওয়াজ করে? ব্যাটা গাধার গাধা! 
সচিব বললেন, স্যার অন্য দেশের তেলাপোকা টিকটিক আওয়াজ করে না, আপনার বুকে কেন করছে বুঝতে পারছি না। এই নিয়ে গবেষণা চালাতে হবে। তবে এই গবেষণার ফল পেতে কয়েক দশক লেগে যেতে পারে। এই তেলাপোকা আপনার হার্ট খেয়ে ফেলছে। তেলাপোকা মেরে ফেললেই আপনি সুস্থ হয়ে উঠবেন। সমস্যা হচ্ছে, এই তেলাপোকা কীভাবে মারতে হয়, আমরা জানি না। আমরা মনে করছি, কোনো পীর-ফকিরের পানি পড়া খেলেই কাজ হয়ে যাবে। আমাদের চিকিৎসাবিজ্ঞানে এই রোগের চিকিৎসার কথা জানা নেই স্যার। রোগটা একেবারে নতুন! এমন জটিল রোগের কথা পৃথিবীর মানুষ আগে কখনো শোনেনি। 
তেলাপোকার কথা শুনে মন্ত্রী অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলেন। কিছুক্ষণ চোখেমুখে পানি দেওয়ার পর তার জ্ঞান ফিরল। তিনি আকুল গলায় বললেন, আমার কি বাঁচার কোনো আশা নেই? 
স্বাস্থ্যসচিব কাচুমাচু মুখে বললেন, এই তেলাপোকা রোগের চিকিৎসা এখনো বের হয়নি স্যার। তবে চিন্তা করবেন না, বিজ্ঞানীরা একদিন ঠিকই এর চিকিৎসা বের করে ফেলবে, তবে ততদিন আপনি বেঁচে থাকবেন কিনা তা বুঝতে পারছি না! 
স্বাস্থ্যমন্ত্রী অসহায় ভঙ্গিতে চিৎকার করে বললেন, আমাদের চিকিৎসাসেবা আন্তর্জাতিক মানের। যেভাবেই হোক একটা বুদ্ধি বের করেন। নইলে সবার চাকরি নট!
মন্ত্রীর ব্যক্তিগত ডাক্তার মাথা চুলকাতে চুলকাতে বললেন, একটা চিকিৎসা আছে স্যার, এটা প্রয়োগ করলে নিশ্চিত তেলাপোকা মারা পড়বে! 
মন্ত্রী চেয়ার ছেড়ে লাফিয়ে উঠে বললেন, এতক্ষণ বলেননি কেন? কোন ঘোড়ার আন্ডা ভাজছিলেন? এক্ষুনি চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন। এই চিকিৎসাপদ্ধতি নিয়ে একটা ফিচার লিখে আন্তর্জাতিক জার্নালে পাঠিয়ে দেন। বিশ্ববাসীর উপকার হোক। পদ্ধতিটা কী?
কিছু না স্যার, আপনাকে বিষ খেতে হবে। বিষ খেলে আমি নিশ্চিত তেলাপোকা মারা পড়বে, তবে আপনি বেঁচে থাকবেন কিনা তা বুঝতে পারছি না! 
মন্ত্রী আবার ধপাস করে চেয়ারে বসে পড়লেন। কিছুক্ষণ কোঁত কোঁত শব্দ করলেন। কোঁত কোঁত করতে করতেই বললেন, আমাদের চিকিৎসাসেবা আন্তর্জাতিক মানের হলেও আমাদের দেশের বিষ আন্তর্জাতিক মানের না। বাজারের বেশির ভাগ বিষ নকল। আমি নাও মরতে পারি। ছাত্রজীবনে একবার আমার প্রেমিকার বিয়ে হয়ে যাওয়ায় আমি বিষ খেয়েছিলাম। মরিনি। বিষ খাওয়ার ব্যবস্থা করেন।
স্বাস্থ্যের ডিজি বললেন, সে ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি লাগবে, স্যার। যেহেতু আপনি মন্ত্রী পরিষদে আছেন, প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন ছাড়া আপনার বিষ খাওয়া উচিত হবে না। 
মন্ত্রী বললেন, আপনাদের কারও বিষ খাওয়ার অভিজ্ঞতা আছে? আমি সারা জীবন করে এসেছি আলু-পটোলের ব্যবসা, বিষ খাওয়ার ব্যাপারে আমার অভিজ্ঞতা কম। তার পরও একবার খেয়ে দেখেছি। আপনারা খেয়েছেন? আছে কারও অভিজ্ঞতা?
লজ্জিত মুখে সবাই স্বীকার করল, এর আগে বিষ খাওয়ার অভিজ্ঞতা কারও নেই। তবে অভিজ্ঞতার দরকার ছিল! 
এক সপ্তাহ পর মন্ত্রী পরিষদের মিটিং বসেছে। প্রধানমন্ত্রীকে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বিষয়টা জানানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এই উপমহাদেশের সেরা হার্ট বিশেষজ্ঞ হচ্ছেন ভারতের দেবী শেঠি। তার সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত। 
প্রধানমন্ত্রীর কথা শুনে এক শ এক সদস্যবিশিষ্ট কমিটির দল ভারত গেল দেবী শেঠির পরামর্শ নিতে!
সব শুনে দেবী শেঠি বললেন, আমি নিজ চোখে রোগী দেখতে চাই।
বিশেষ বিমানে করে সেই দেশে দেবী শেঠিকে উড়িয়ে নেওয়া হলো। 
দেবী শেঠি এসে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাগজপত্র সব দেখলেন, এক্স-রে রিপোর্ট দেখে ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ছাড়লেন। তার পর স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বললেন, মাননীয় মন্ত্রী, আপনার দেশ কাগজে-কলমে সিঙ্গাপুর থেকে উন্নত হলেও বাস্তবে বাঙ্গিপুর থেকেও পিছিয়ে আছে। 
দেবী শেঠির কথা শুনে মন্ত্রী মুখ কালো করে ফেললেন। তার কথাটা পছন্দ হয়নি। কিন্তু কী আর করা! ব্যাটা তার তেলাপোকার চিকিৎসা করতে এসেছে বলে কিছু বলা গেল না। নইলে তিনি দেখিয়ে দিতেন, তারা দেশকে কোথায় নিয়ে গেছেন। 
দেবী শেঠি মন্ত্রীর মনোভাব বুঝেও পাত্তা না দিয়ে বললেন, আসলে আপনার কিছুই হয়নি। আপনার বুকের ব্যথাটা হচ্ছে গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা। কয়েকদিন গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ খেলে ঠিক হয়ে যাবে। আর, আপনার বুকে তেলাপোকা দৌড়াদৌড়ি করছে না, এক্স-রে করার সময় ওটা এক্স-রে মেশিনের ওপর দৌড়াদৌড়ি করেছিল!
স্বাস্থ্যমন্ত্রী তার দেশের ডাক্তারদের ডেকে বললেন, আমি না হয় আলু-পটোলের ব্যবসায়ী। আপনারা? আপনাদের সবার চাকরি নট করা হলো।
ডাক্তার সাহেবরা মন্ত্রীর কথায় গ্রাহ্য করে না। মুখ টিপে হাসে। তারা জানে, তারা নট হলে তার আগে মন্ত্রী নিজেই নট হয়ে যাবে। 
সচিব সাহেব মাথা চুলকায় আর ভাবে, দেবী শেঠি এইটা কী বলল? শালার এই বাঙ্গিপুরটা কই?
বাংলাদেশের বরিশাল নয় তো? ওখানে তো শুনেছি ভালো বাঙ্গি চাষ হয়।

সাক্ষাৎকারে মাহরুখ মহিউদ্দীন মেলার অবয়বে নতুন বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি দেখতে চাই

প্রকাশ: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৫০ পিএম
আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৫০ পিএম
মেলার অবয়বে নতুন বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি দেখতে চাই
মাহরুখ মহিউদ্দীন

আগামী বইমেলা নিয়ে আপনার মতামত কী?
বাংলাদেশের মানুষের জন্য অমর একুশে গ্রন্থমেলা জাতি হিসেবে আমাদের পরিচয় ও আত্মমর্যাদার একটা গুরুত্বপূর্ণ স্মারক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। ২০২৪-এর জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আমরা যেভাবে আমাদের হৃত মর্যাদা পুনরুদ্ধার করেছি, আমি মনে করি আগামী বইমেলায় এর পরিষ্কার প্রতিফলন থাকা প্রয়োজন। আমাদের বাকস্বাধীনতা রুদ্ধ থাকা থেকে শুরু করে অন্যায্যতার যে সংস্কৃতি তৈরি হয়েছিল, আমি মনে করি এবারের বইমেলা সেই চর্চা থেকে মুক্ত হয়ে একটি ন্যায্য প্রক্রিয়ায় প্রকাশক ও লেখকদের জন্য সুযোগ করে দেবে এবং আয়োজনে পাঠকরা সেই ন্যায্যতার প্রতিফলন দেখতে পারবেন। এবারের মেলা হওয়া উচিত অন্য আর সব বছরের চেয়ে বেশি প্রাণবন্ত, সব মত ও পথের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার মাধ্যমে যেসব ভেদাভেদ সমাজে তৈরি হয়েছে তার বিপরীত স্রোতে গিয়ে একটা ইতিবাচক ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা দেওয়ার মতো একটি অভূতপূর্ব আয়োজন এবার আমরা পাব বলে আশা করতে চাই।

এবারের বইমেলায় আপনার প্রকাশনী থেকে কয়টি এবং কী ধরনের বই প্রকাশ করছেন?
ইউপিএল সাধারণত বাংলা এবং ইংরেজি ভাষায় গবেষণাধর্মী, সমাজ, ইতিহাস, রাজনীতি বিষয়ক গ্রন্থ, স্মৃতিকথা, অনুবাদ ইত্যাদি প্রকাশ করে থাকে। এবার সেই সঙ্গে কিছু সাহিত্যগ্রন্থ ও সাহিত্য সমালোচনামূলক গ্রন্থও থাকবে বলে আমরা আশা করছি।
এবারে আমাদের প্রকাশনার তালিকায় উল্লেখযোগ্য বইগুলোর মধ্যে থাকবে জাতীয় অধ্যাপক জ্ঞানতাপস আব্দুর রাজ্জাকের ভারতের রাজনৈতিক দল (Political Parties in India-এর অনুবাদ), বিখ্যাত বাংলাদেশ বিশেষজ্ঞ নৃতত্ত্ববিদ ভেলাম ভান সেন্দেলের বাংলাদেশ জনপদের ইতিহাস ও সংস্কৃতি (A history of Bangladesh-এর অনুবাদ), ক্লিনটন বি সিলির বই Barisal and Beyond Essays on Bangla Literature, অধ্যাপক সৈয়দ জামিল আহমেদের নীল বিদ্রোহ নিয়ে বই Revisiting the Indigo Rebellion, রিচার্ড ইটনের ইসলামের উত্থান ও বাংলা সীমান্ত (রাইজ অব ইসলামের অনুবাদ), সমারি চাকমার কাপ্তাই বাঁধ: বর-পরং ডুবুরিদের আত্মকথন, রঞ্জন সাহা পার্থ, ওবায়দুল্লাহ আল মারজুক, মাসাহিকো তোগাওয়ার সম্পাদিত শরণার্থীর সঙ্গে বসবাস: রোহিঙ্গা ও স্থানীয় বাঙালির প্রাত্যহিক অভিজ্ঞতা, সারোয়ার তুষারের ফিলিস্তিন: একুশ শতকের উপনিবেশের ইতিহাস, সাবরিনা নার্গিস প্রণীত দুর্নীতি সম্পর্কিত আইন ও সচরাচর জিজ্ঞাসা, অধ্যাপক আবদুস সেলিম অনূদিত বিশ্বসাহিত্যের সাতটি নারীবাদী নাটক এবং আরও কিছু বই।

মেলাপ্রাঙ্গণ বা অবয়ব নিয়ে আপনার কোনো বক্তব্য আছে কি?
প্রথমে যেমনটি বলেছি, মেলার বিন্যাস ও অবয়বে আমরা নতুন বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষার প্রতিচ্ছবি দেখতে চাই, দেখতে চাই জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার, আর বাংলাদেশের জনগোষ্ঠী হিসেবে আমাদের আত্মপরিচয়ের নতুন অভিব্যক্তির প্রকাশ। এই ভাবনা বা চাওয়াটা হয়তো অনেকখানিই বিমূর্ত, কিন্তু আয়োজনের নেতৃত্বে যারা থাকবেন তারা আন্তরিকভাবে চাইলে এর রূপায়ণ সম্ভব বলে আমি মনে করি।

আগের তুলনায় বই বিক্রয় কি কম?
আমাদের দেশের পাঠক নানান মাধ্যমে বই পড়েন, তাই মুদ্রিত বইয়ের বিক্রি হয়তো খানিকটা কমে গেছে। এ ছাড়া দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি করোনা মহামারির পর থেকে এখন পর্যন্ত স্বাভাবিক হয়নি। এখনো আমাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য আকাশচুম্বী। সবকিছু মিলিয়েই হয়তো বই বিক্রিতে কিছু প্রভাব পড়ছে।

আপনি কি বর্তমানে মানসম্মত পাণ্ডুলিপির অভাব বোধ করছেন?
ভালো পাণ্ডুলিপি সবসময়ই সংখ্যায় কম। তবে আমরা বেশ কিছু ভালো কাজ প্রতি বছরই পাই এবং নিজেরা উদ্যোগ নিয়ে সংগ্রহের চেষ্টায় থাকি। ভালো পাণ্ডুলিপি যেমন আমরা ভালো লেখকদের কাছ থেকে প্রত্যাশা করি, তেমনি একটা সম্ভাবনাময় পাণ্ডুলিপি তৈরির দায় অনেকটা প্রকাশকের ওপরও বর্তায়।

বইমেলায় কী ধরনের বই বেশি বিক্রয় হয়?
বইমেলায় সব ধরনের বই-ই বিক্রি হয়। ছোটদের বই ও সাহিত্যের পাশাপাশি ধীরে ধীরে ইতিহাস, রাজনীতি ও অন্যান্য মোটিভেশনাল ননফিকশন বইয়ের চাহিদা বাড়ছে। মেলায় কী ধরনের বই বিক্রি হচ্ছে তার সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া গেলে নির্দিষ্ট করে বলা যেত।
ধন্যবাদ।
আপনাকেও ধন্যবাদ।

প্রকাশক: দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড (ইউপিএল)

কবি

প্রকাশ: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৪৪ পিএম
কবি

বৃষ্টির ফোঁটার আহ্বানে মিশে
কথাগুলো ভিজে যায় অগোচরে,
হারিয়ে যায় সোনামুখী রোদ 
নিয়মের রুটিন মেনে,
আকাশের রঙ-রূপ মুছে গিয়ে 
মায়াবী এক রাতের শুরু,
জেগে থাকে রাত চাঁদের আলোয় 
জেগে থাকে ঘর জানালা খুলে
চলে কবিতাপাঠের আসর
আর লেখার উন্মাদনা,
ভুল ঘরে জন্ম নেওয়া কবির কলম
অনবরত লিখে যায়, 
লিখতে লিখতে থেমে যায়
যখন ঘুমিয়ে যায় রাত
যখন জেগে ওঠে ভোর।

'), descriptionParas[2].nextSibling); } if (descriptionParas.length > 6 && bannerData[arrayKeyTwo] != null) { if (bannerData[arrayKeyTwo].type == 'image') { descriptionParas[0].parentNode.insertBefore(insertImageAd(bannerData[arrayKeyTwo].url, ('./uploads/ad/' + bannerData[arrayKeyTwo].file)), descriptionParas[5].nextSibling); } else { descriptionParas[0].parentNode.insertBefore(insertDfpCodeAd(bannerData[arrayKeyTwo].custom_code), descriptionParas[5].nextSibling); } } if (descriptionParas.length > 9 && bannerData[arrayKeyThree] != null) { if (bannerData[arrayKeyThree].type == 'image') { descriptionParas[0].parentNode.insertBefore(insertImageAd(bannerData[arrayKeyThree].url, ('./uploads/ad/' + bannerData[arrayKeyThree].file)), descriptionParas[8].nextSibling); } else { descriptionParas[0].parentNode.insertBefore(insertDfpCodeAd(bannerData[arrayKeyThree].custom_code), descriptionParas[8].nextSibling); } } });