মুক্তিযুদ্ধকালের যে চালচিত্র উপনাস্যের পাতায় ফুটে উঠেছে, তা আজ মানুষের স্মৃতি ও শ্রুতির অন্তর্গত। সেই বিপন্ন সময়ের ভয়াল অভিজ্ঞতা, পাশবিক নিগ্রহ, শরণার্থী জীবনের কষ্ট-দুঃখ, মুক্তিসেনার চোখের ঝিলিক, বিজয়ের উল্লাস, প্রত্যাবর্তনের আনন্দ ও বিশ্বাস, ধ্বংসস্তূপে নতুন জীবনের প্রত্যাশার ভেতর দিয়ে বাংলার ইতিহাসের যে মহান অধ্যায় রচিত হয়েছে তা আমাদের স্বাধীনতা। যুদ্ধ মানুষের ক্ষয় করে, কিন্তু কোনো কোনো যুদ্ধ সৃষ্টির আনন্দে ভাস্বর।…
বাঙালির সুদীর্ঘ ইতিহাসের বোধ করি সবচেয়ে উজ্জ্বল অধ্যায় হচ্ছে তার সংগ্রামের কালগুলো। এবং এ ক্ষেত্রে উজ্জ্বলতম ঘটনা হচ্ছে ১৯৭১-এ পাকিস্তান বাহিনীর বিরুদ্ধে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের অসাধারণ লড়াই। এ ছিল সমগ্র জাতির একতাবদ্ধ দৃঢ়প্রতিজ্ঞ সংগ্রাম। আমাদের পূর্বপুরুষের ঐতিহ্য, আমাদের বর্তমানের গৌরব এবং আমাদের ভবিষ্যতের প্রেরণা বাঙালির এ সংগ্রামের ইতিহাস। শঙ্কিত চিত্তে দেখতে পাই, আমরা এটাকে যেন ভুলে যেতে বসেছি। যে আবেগ এবং অনুভূতি চক্রান্তের ধূর্তচক্রে আচ্ছন্ন হচ্ছে, তাকে উজ্জীবিত করার জন্যই দরকার সংগ্রামকালের মানুষের মহান ত্যাগ এবং নিষ্ঠাকে বারংবার স্মরণ করা। আমাদের চিত্তের পবিত্রতা রক্ষা করা। এই উপন্যাসটি একদিক দিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে বসে একজনের প্রতিটি মুহূর্তের কাহিনি। আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের মধ্যে সৃষ্ট এ শিল্পকর্ম কতটা সত্যনিষ্ঠ, লেখকের জীবনের পরিণতিই তার মহান সাক্ষ্য হয়ে থাকবে। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, ‘জীবনে জীবন যোগ করা না হলে, কৃত্রিম পণ্যে ব্যর্থ হয় গানের পসরা’।
গ্রন্থের নাম: রাইফেল, রোটি, আওরাত; লেখক: আনোয়ার পাশা; প্রকাশন: স্টুডেন্ট ওয়েজ, ঢাকা; প্রকাশকাল: প্রথম প্রকাশ, জুন ১৯৭৯; পৃষ্ঠা: ১৮২ এবং মূল্য: ২৫০ টাকা।
বিবেকের তীক্ষ্ণ দংশন সহ্য করতে না পেরেই তারাশঙ্করের ১৯৭১ বইটি লেখা, পড়তে শুরু করলে শেষ না করে থামা যায় না। ১৯৭১-এর মর্মান্তিক ঘটনাবলি তাকে রোগশয্যাতেও অশান্ত ও উদ্বিগ্ন করে রেখেছিল। এই উপনাসের মধ্যেও সে অস্থিরতা ও দুঃসহ বেদনার প্রকাশ আছে প্রায় ছত্রে ছত্রে। পশ্চিমবঙ্গের অনিশ্চিত পরিস্থিতি, দিশেহারা সময়ের অস্থিরতা, তারুণ্যের শক্তিকে বাধা, দেশের ওপরে মর্মান্তিক আঘাত, এই আঘাত থেকে সমাজের প্রতি দায়বদ্ধ লেখক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় দুটি স্বল্পদীর্ঘ উপন্যাস রচনা করেন ১৯৬৫ সালের পর থেকে সমগ্র পশ্চিম বাংলায় বিস্তৃত গোপন রাজনৈতিক তৎপরতাকে উপজীব্য করে। লেখক তৎকালীন চিত্র তথা সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষপট বর্ণনা করেছেন নিরেট অবস্থান থেকে সহজ ও সাবলির ভাষায়। মুক্তিযুদ্ধে ঝরছে এই বাংলার মানুষের রক্ত। পশ্চিম বাংলাতেও ঘটছে তা-ই। কিন্তু তার পটচিত্র আলাদা। রক্ত ঝরছে মানুষের। এতে প্রকাশ পেয়েছে বাংলাদেশের মানুষের ত্যাগ ও সংগ্রামের অনন্যতা।
গ্রন্থের নাম: ১৯৭১; লেখক: তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়; প্রকাশন: ডেইলি স্টার বুকস, ঢাকা; প্রকাশকাল: প্রথম প্রকাশ, ১ নভেম্বর ২০১৫; পৃষ্ঠা: ১৬৩ এবং মূল্য: ৩৫০ টাকা।
যাত্রা মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের ভয়াল কালরাতে পাকিস্তানি বর্বর হানাদার বাহিনীর পৈশাচিক আক্রমণ থেকে প্রাণ রক্ষার জন্য ঢাকাবাসীর অনিশ্চিত গন্তব্যের দিকে ছুটে চলার কাহিনিই যাত্রা। প্রাত্যহিক দিনপঞ্জি বা ডায়েরির আদলে লেখা যাত্রা উপন্যাসের কাহিনি, মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত সময়কালের ঘটনার শিল্পরূপ। যাত্রা উপন্যাস মূলত যুদ্ধে আক্রান্ত নগরবাসীর আত্মরক্ষার্থে পলায়ন এবং আশ্রয়ের শেষ গন্তব্যে পৌঁছানোর আগেই তারা প্রতিরোধের চেতনায় উজ্জীবিত। এই প্রতিরোধী পরিবেশ অঙ্কনে শতকত আলী সিদ্ধহস্ত। আখ্যানবিন্যাস, পরিবেশ-কল্পনা ও ভাষা ব্যবহারে মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে রচিত যাত্রা একটি শিল্পসফল উপন্যাস। উপন্যাসের কিছু অংশে লেখা আছে, ‘হুড়োহুড়ি পাড়াপাড়ি করে নৌকোয় ওঠে- আস্তে আস্তে, ভিড় কইরো না, আর উইঠেন না- নাও ডুববো কইলাম। কিন্তু কেউ কারও কথা শোনে না। এই মাঝি, এদিকে আনো- ধমকে উঠল কেউ। ওদিকে আরেকটা নৌকা আসছে, ওদিকে যান না ভাই- ধীরে সুস্থে কাজ করুন।...’
গ্রন্থের নাম: যাত্রা; লেখক: শওকত আলী; প্রকাশন: ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ, ঢাকা; প্রকাশকাল: প্রথম প্রকাশ, ২০১৯; পৃষ্ঠা: ১১২ এবং মূল্য: ২০০ টাকা।
শওকত ওসমান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন। তীক্ষ্ণ সংলাপের ব্যবহার উপন্যাসকে বাস্তবে পরিপাক-বাহিনীরা নারী নির্যাতনের যে অদ্বিতীয় উদাহরণ রেখে গেছে তার বর্ণিত লেখ্যরূপ হচ্ছে নেকড়ে অরণ্য। উপন্যাসে নেকড়ে অর্থাৎ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীরা একটি গোডাউনের মধ্যে প্রায় এক শ জন নারীকে উলঙ্গ করে আটকে রাখে। কখনো তারা ধর্ষিত হতো হানাদার বাহিনীর ক্যাপ্টেন রেজা খান, আলী খানদের দ্বারা, আবার কখনো সাধারণ সৈনিক দ্বারা। তানিমা, জায়েদা, রশিদাদের ধর্ষিত হওয়ার চিৎকার, আর্তনাদ, বেদনা-বিপর্যয়ের নির্মম রূপটি উপন্যাস আকারে তুলে আনেন লেখক। তাদের সংলাপে বীভৎসতা আর অসহায়ত্বের ছাপ পাঠকদেরও নাড়া দেবে। কিন্তু তাও থেমে থাকেনি প্রতিবাদ। তানিমা বুক পেতে নেয় ক্যাপ্টেনের গুলি। এ যেন মৃত্যু নয় বরং মুক্তি। তারা আর এখান থেকে মুক্তি আশা করে না, জীবনের মায়া ততদিনে জীর্ণ। এক পর্যায়ে, আত্মহত্যা করে এই বন্দিদশা থেকে মুক্তি পায় এই সাহসী নারীরা, গর্বিত বীরাঙ্গনারা।
গ্রন্থের নাম: নেকড়ে অরণ্য; লেখক: শওকত ওসমান; প্রকাশন: স্টুডেন্ট ওয়েজ, ঢাকা; প্রকাশকাল: প্রথম প্রকাশ, ১ জানুয়ারি ১৯৭৩; পৃষ্ঠা: ৫৮ এবং মূল্য: ১০০ টাকা।
অন্ধকারে হঠাৎ গুলীর শব্দে নৌকাটা দুলে উঠল। যাত্রীরা উবুড় হয়ে পড়ল এ-ওর গায়ের ওপর। নৌকার পেটের ভেতর থেকে ময়লা পানির ঝাপটা এসে আমার মুখটা সম্পূর্ণ ভিজিয়ে দিল। সার্ট ও গেঞ্জির ভেতর ছলছলানো পানি ঢুকে ঝুলতে লাগল। আর ফোঁটা ফোঁটা চুইয়ে পড়তে লাগল পাটাতনে। ততক্ষণে বুড়ো মাঝি ও তার ছোটো ছেলেটা বৈঠা গুটিয়ে নিয়ে পাটাতনে লম্বা হয়ে শুয়ে পড়েছে। কে একজন ছিটকে এসে আমাকে দুহাতে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠেছে। কান্না ও শরীরের ছোঁয়াতেই আমার বুঝতে বাকি রইল না, একটা মেয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁপাচ্ছে। আমার অস্তিতের সমর্থন পেয়েই কিনা জানি না, মেয়েটার কানা আরও শব্দ করে একট রোদন বা বিলাপের মতো হয়ে উঠল। আর সাথে সাথেই আখাউড়ার দিক থেকে সারিবাধা পটকা ফাটানোর মতো গর্জন করে বইতে লাগল গুলীর শব্দ। সীসার বাতাস কেটে চলে যাওয়ার শিস উঠছে। এর মধ্যেই আমাদের গাইড আনিসের বাজখাই গলা শোনা গেল, ‘কে কাদছে? এই হারামজাদি একদম চুপ করে থাক।’
গ্রন্থের নাম: উপমহাদেশ; লেখক: আল মাহমুদ; প্রকাশন: অনন্যা, ঢাকা; প্রকাশকাল: প্রথম প্রকাশ, ১ জানুয়ারি ১৯৯৩; পৃষ্ঠা: ১৯২ এবং মূল্য: ৩৫০ টাকা।
মুহূর্তের ভেতর ব্যস্ত হয়ে পড়ে দুজন। নিঃশব্দে একের পর এক লাশগুলো টেনে এনে তারা জড়ো করতে থাকে। সময় অতিক্রান্ত হতে থাকে। চাঁদ আরও সরে আসে। আকাশে আজ মেঘ নেই। চত্বরের ওপর বীভৎস শ্বেতীর মতো ছেঁড়া আলো পড়ে থাকে। অস্ত্রবিহীন যুদ্ধের গল্প এই রচনা। এতে মুক্তিযুদ্ধের সামগ্রিকতা উঠে না এলেও যুদ্ধের ভয়াবহতার খণ্ডচিত্র দেখা যায়। এই যুদ্ধ বিলকিস এবং সিরাজের, তাকে মুক্তির যুদ্ধ না বলে, স্বজনহীন দুটি অসহায় মানুষের দ্রোহ ও যুদ্ধের নির্মম বাস্তবতায় জড়িয়ে নেওয়ার দৃশ্যপট বলা শ্রেয়। ‘জলেশ্বরী জনপদটি যেন যুদ্ধাক্রান্ত রণক্ষেত্র, বিলকিস জননী বাংলাদেশ, যে তার মৃত সন্তানকে বুকে টেনে নেবার আয়োজন করে।’ ১৯৭৯ সালের দিকে রচনা বলে এই গল্পগুলো এখন চিরায়িত হয়ে গেছে। তবে এটা বলতে পারি সব্যসাচী লেখক মুক্তিযুদ্ধের শব্দ-দৃশ্যগুলো আমাদের মাথায় কখনো প্রাসঙ্গিকভাবে আবার কখনো অপ্রাসঙ্গিকভাবে ঢুকিয়ে দিয়েছেন।
গ্রন্থের নাম: নিষিদ্ধ লোবান; লেখক: সৈয়দ শামসুল হক; প্রকাশন: অনন্যা, ঢাকা; প্রকাশকাল: প্রথম প্রকাশ, ১ এপ্রিল ১৯৮১; পৃষ্ঠা: ৭১ এবং মূল্য: ২০০ টাকা।
হলদিগাঁ গ্রামের এক দুরন্ত কিশোরী বুড়ি। কৈশোর থেকে সে চঞ্চলতায় উচ্ছল, কৌতূহলপ্রবণ, উৎসুক দৃষ্টি, নিবিড়ভাবে দেখা, চমৎকারভাবে মেশা, উচ্ছলতায় ভরপুর। কম বয়সেই বিয়ে হয় তার থেকে বয়সে অনেক বড় বিপত্মীক গফুরের সঙ্গে। সংসারজীবন ভালোই লাগে বুড়ির। কিছুদিন পর গফুর মারা যায়। যুদ্ধের ঢেউ আসে হলদিগাঁয়ে। সেই ঢেউয়ে উথালপাথাল হয়ে যায় বুড়ির সাজানো সংসার। হলদিগাঁয়ের মাটিতে রচিত হয় মর্মন্তুদ এক দৃশ্য। যে দৃশ্যের রচনাকার একজন মা। বুড়ি যার নাম। হাফেজ ও কাদের দুই মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধ করতে করতে শত্রুপক্ষের চোখ ফাঁকি দিয়ে আশ্রয় নেয় বুড়ির ঘরে। পাকসেনারাও বাড়িতে আসে। দেশপ্রেমের অগ্নিপরীক্ষায় একজন মা, মুক্তিযোদ্ধাদের বাঁচাতে তার নিজের সন্তানকে তুলে দেয় পাকসেনাদের বন্দুকের নলের মুখে। এভাবেই ‘হাঙর নদী গ্রেনেড’ মহাকাব্যের আখ্যান হয়ে ওঠে। বুড়ি হয়ে যায় ইতিহাস-কন্যা। আর হলদিগাঁ, বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি।
গ্রন্থের নাম: হাঙর নদী গ্রেনেড; লেখক: সেলিনা হোসেন; প্রকাশন: অনন্যা, ঢাকা; প্রকাশকাল: প্রথম প্রকাশ, ১৫ জুন ২০০৩; পৃষ্ঠা: ১১১ এবং মূল্য: ২৫০ টাকা।
জোছনা ও জননীর গল্প বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ওপর ভিত্তি করে হুমায়ূন আহমেদ রচিত একটি উপন্যাস। মুক্তির মন্দির সোপানতলে কত প্রাণ হলো বলিদান, লেখা আছে অশ্রুজলে। কত বিপ্লবী বন্ধুর রাঙা, বন্দিশালার ঐ শিকলভাঙা তারা কি ফিরিবে আর সুপ্রভাতে? যত তরুণ অরুণ গেছে অস্তাচলে যারা স্বর্গগত তারা এখনো জানে, স্বর্গের চেয়ে প্রিয় জন্মভূমি এসো স্বদেশ ব্রতের মহাদীক্ষা লভি, সেই মৃত্যুঞ্জয়ীদের চরণ চুমি। যারা জীর্ণ জাতির বুকে জাগালো আশা, মৌন মলিন মুখে জাগালো ভাষা। সেই রক্তকমলে গাঁথা মাল্যখানি, বিজয়লক্ষ্মী দেব তাদেরই গলে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সংঘটিত তাঁর নিজ জীবনের এবং নিকট সম্পর্কিত ঘনিষ্ঠ বিভিন্ন ব্যক্তির বাস্তব অভিজ্ঞতার কথা তিনি উপন্যাসিক আঙ্গিকে এতে ফুটিয়ে তুলেছেন।
গ্রন্থের নাম: জোছনা ও জননীর গল্প; লেখক: হুমায়ূন আহমেদ; প্রকাশন: অন্যপ্রকাশ, ঢাকা; প্রকাশকাল: প্রথম সংস্করণ, ২০০৪; পৃষ্ঠা: ৫২৮ এবং মূল্য: ৮০০ টাকা।
‘মা’ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বাস্তবকাহিনি অবলম্বনে রচিত একটি উপন্যাস। আজাদ ছিল তার মায়ের একমাত্র সন্তান। এই সময় দেশে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। আজাদের বন্ধুরা যোগ দেয় ঢাকার আরবান গেরিলা দলে। আজাদ মাকে বলে, আমিও যুদ্ধে যাব। মা তাকে অনুমতি দেন। ছেলে যুদ্ধে যায়। ১৯৭১ সালের ৩০ আগস্ট একরাতে ঢাকার অনেক ক’টা মুক্তিযোদ্ধা-নিবাসে হামলা চালায় পাকিস্তানি সৈন্যরা, আরও অনেকের সঙ্গে ধরা পড়ে রুমী, বদি, আলতাফ মাহমুদ, জুয়েল এবং আজাদ।... আজাদ বলে, মা দুদিন ভাত খাই না, ভাত নিয়ে এসো। মা পরের দিন ভাত নিয়ে হাজির হন বন্দিশিবিরে কিন্তু ছেলের দেখা আর মেলে না। আর কোনোদিনও ছেলে তার ফিরে আসেনি। আর এই মা কোনোদিনও জীবনে ভাত খাননি। যুদ্ধের ১৪ বছর পরে মা মারা যান, নিঃস্ব, রিক্তবেশে। মুক্তিযোদ্ধারা তাকে কবরে শায়িত করলে আকাশ থেকে ঝিরঝির করে ঝরতে থাকে বৃষ্টি। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে, যতদিন স্বাধীনতা থাকবে, এই অমর মাকে ততদিন শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করতে হবে আমাদের।
গ্রন্থের নাম: মা; লেখক: আনিসুল হক; প্রকাশন: সময় প্রকাশন, ঢাকা; প্রকাশকাল: প্রথম প্রকাশ, ১ ফেব্রুয়ারি ২০০৩; পৃষ্ঠা: ১৫৪ এবং মূল্য: ৫০০ টাকা।
উপন্যাসের শুরুতে লেখা, নূরজাহার আলেয়া বেগম বাকরূদ্ধ। তাঁর চিৎকার দিয়ে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু তিনি কাঁদতে পারছেন না। বুকের মধ্যে কষ্টটা হঠাৎ করেই যেন বরফের মতো জমাট বেঁধে গেল। তিনি থর-থর করে কাঁপছেন। কাঁপতে কাঁপতে তিনি খাটিয়ার ওপর বসে পড়লেন। অনেকক্ষণ বসে থাকলেন। তার পর আবার আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়ালেন। এক-পা দু-পা করে সদর দরজার সামনে এসে দাঁড়ালেন। বাড়ির চারদিকটায় চোখ ফেরালেন। রাজ্যের নীরবতা বাড়িটিকে পেয়ে বসছে। তিনি মনে মনে ভাবলেন, ‘কী ব্যাপার, বাড়িতে কোনো লোক নেই নাকি! কোথায় গেল সবাই।’ আবার তিনি ঘরের মধ্যে এসে খাটিয়ার ওপর বসলেন। তিনি চোখে চোখে দেখেন, তাঁর স্বামী আবু সোলায়মান মণ্ডলের চোখ দুটো কালো কাপড় দিয়ে বাঁধা। তার হাত দুটো পেছন থেকে কষিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। উর্দি পরা দুজন লোক তাঁকে টনেহিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে।...
গ্রন্থের নাম: জনক জননীর গল্প; লেখক: মোস্তফা কামাল; প্রকাশন: সময় প্রকাশন, ঢাকা; প্রকাশকাল: প্রথম প্রকাশ, ফেব্রুয়ারি ২০১১; পৃষ্ঠা: ২৭২ এবং মূল্য: ৩৫০ টাকা।