ঢাকা ৫ মাঘ ১৪৩১, রোববার, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫

মুক্তিযুদ্ধের গল্প পাংখা-পুলার

প্রকাশ: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:০৭ পিএম
পাংখা-পুলার
অলংকরণ: নিয়াজ চৌধুরী তুলি

দিনাজপুরের চকেরদিঘি যুদ্ধে হাবিলদার আমানউল্লাহ শহিদ হয়েছিলেন। পাকিস্তান সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেওয়ার পরপরই আমানউল্লাহ কেমন করে মুক্তিযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিলেন তা কারোরই জানা নেই। তবে তিনি পানিঘাটায় ভারতীয় সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট বি এস সাঙ্গিরার অধীনে দুজন প্রশিক্ষক, হাবিলদার আবু বকর এবং সঞ্জিত চন্দ্রের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণে ওস্তাদ হিসেবে কাজ করেছেন।

দুর্ধর্ষ মুক্তিযোদ্ধা সাবসেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন ইদ্রিসের নেতৃত্বে এবং ভারতীয় সেনাবাহিনীর মেজর চ্যাটার্জির তত্ত্বাবধানে মুক্তিযোদ্ধারা সীমান্ত অতিক্রম করে রামসাগরের উত্তর-পশ্চিমে চকেরদিঘিতে যে রাতে পাকিস্তানিদের ঘাঁটি আক্রমণের পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যায়, সেই রাতের সম্মুখযুদ্ধে আমানউল্লাহসহ শহিদ হয়েছিলেন বারোজন মুক্তিযোদ্ধা। শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানিরা আত্মসমর্পণ করলে আটক পাঁচজন সৈনিকের হাত বেঁধে পশ্চিমবাংলায় হামজাপুর ক্যাম্পে নিয়ে গুলি করে মারার প্রস্তুতি হিসেবে তাদের লাইনে দাঁড় করানো হয়েছিল। হাবিলদার আমানউল্লাহর শিষ্যরা যখন পাকিস্তানিদের দিকে এসএলআর তাক করেছে, ঠিক সেই মুহূর্তে মেজর চ্যাটার্জি স্পষ্ট বাংলায় মুক্তিযোদ্ধাদের বুঝিয়ে বলেছিলেন, ‘বন্ধুরা, তোমাদের মনে রাখতে হবে বন্দিদের হত্যা করা যায় না। এটা সরাসরি জেনেভা কনভেনশনের লঙ্ঘন। ধৈর্য ধরো, বিজয় আমাদের সুনিশ্চিত।’ 

অনাকাঙ্ক্ষিত বাধার কারণে ওস্তাদের প্রতিকারহীন মৃত্যু মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিশোধস্পৃহা বহু গুণ বাড়িয়ে দিয়েছিল। ফলে তারা চকেরদিঘির পরে রামসাগরে পাকিস্তানি ঘাঁটি দখল করে আরও সামনে এগিয়ে যায়। এর পর এক্সপ্লোসিভ দিয়ে পুনর্ভবা নদীর কাঞ্চন রেলওয়ে ব্রিজ ধ্বংস করে ১৪ ডিসেম্বরে বিরল শহরের কেন্দ্রে বাংলাদেশের সোনালি মানচিত্র আঁকা লাল-সবুজ পতাকা উড়িয়ে দেয়। পাকিস্তানিরা ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটে পালাতে থাকে বগুড়া ক্যান্টনমেন্টের দিকে। 

মৃত্যুর তেপ্পান্ন বছর পর আমানউল্লাহ যখন সচিবালয়ের ওসমানী উদ্যানের দিকের প্রধান ফটক পেরিয়ে সোজা ভূমি মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি সেক্রেটারি গোলাম কুদ্দুসের দরজার সামনে এসে দাঁড়ালেন তখন উপসচিব মহোদয় সবেমাত্র দ্বিপ্রাহরিক আহার সম্পন্ন করে একটি ইজিচেয়ারে শুয়ে একটু বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। তার চোখ দুটো বন্ধ থাকায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত হাবিলদার যে নিঃশব্দে তার ঘরে ঢুকে পড়েছেন তা তিনি বুঝতেই পারেননি। আমানউল্লাহ কিছুক্ষণ এদিক-সেদিক তাকিয়ে কী করা উচিত ভাবতে ভাবতেই এক সময় আস্তে করে বলে ওঠেন, ‘স্যার... ঘুমিয়েছেন নাকি?’

গোলাম কুদ্দুস চোখ মেলে তাকিয়ে যতটা বিরক্ত হন, বিস্মিত হন তার চেয়ে বেশি। তার ভ্রু কুঁচকে যায়, ইজিচেয়ারে আধাশোয়া অবস্থায় তিনি জিজ্ঞেস করেন, ‘আপনি কে? এখানে ঢুকে পড়েছেন কেমন করে!’ 

‘আমি স্যার হাবিলদার আমানউল্লাহ, মেইন গেট দিয়ে ঢুকে খুঁজতে খুঁজতে সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠে এসেছি।’
‘কেমন করে এসেছেন বুঝলাম। কিন্তু আপনি আমার কাছে কেন?’ এবারে গোলাম কুদ্দুস স্পটতই বিরক্ত।

‘আমার বাড়ি স্যার... নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ থানায়। পাঁচ শতক জমি আর ভিটাবাড়ি ছাড়া কিছু নেই। সেই জমিটুকুও দখল করে নিয়েছে এক রাজাকারের বাচ্চা! আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা...’ আমানউল্লাহ তার নিবেদন শেষ করতে পারেন না। তার আগেই খেঁকিয়ে ওঠেন গোলাম কুদ্দুস, ‘ওহ! মুক্তিযোদ্ধা! সেই কবে কোন মুক্তিযুদ্ধ করে আপনারা কি আমাদের মাথা কিনে নিয়েছেন?’ 

‘কিনতে তো পারিনি। মাথাটা কিনে নিলে এতো বড় কথা বলার সাহস আপনার হতো না।’ 
‘আপনিও বেশ বড় বড় কথা বলছেন। জমি দখলের সমস্যাটার সমাধান আপনি বেগমগঞ্জে বসেই তো করতে পারতেন। বিশেষ করে আপনি যখন একজন মুক্তিযোদ্ধা!’ শেষের কথাটিতে উপসচিব মহোদয়ের কণ্ঠে একটু শ্লেষ ঝরে পড়ে।

‘আমার ছেলেমেয়েরা সাবরেজিস্ট্রার অফিসে বিস্তর ঘোরাঘুরি করেছে, ইউএনও-অ্যাসিল্যান্ড সাহেবের সঙ্গে দেখা করেছে, কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। এমনকি আমার মুক্তিযোদ্ধা ভাইয়েরা পর্যন্ত কোনো পাত্তা দেয়নি।’
‘আপনি নিজে কেন যোগাযোগ করছেন না?’

‘কেমন করে যোগাযোগ করব স্যার? আমি তো একজন শহিদ মুক্তিযোদ্ধা!’ 

‘কী বললেন? শহিদ মুক্তিযোদ্ধা! হাঃ হাঃ হাঃ...’ প্রথমে একটা কৌতুকের হাসি ছড়িয়ে পড়ে গোলাম কুদ্দুসের মুখে। তার পরই তিনি অট্টহাসিতে ফেটে পড়েন। হাসতে হাসতেই আমানউল্লাহর দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দেন, ‘চমৎকার বলেছেন, শহিদ মুক্তিযোদ্ধা! আরে মিয়া শহিদ কথাটার মানে জানেন?’ 
‘জানব না কেন! আমি নিজেই তো একাত্তর সালের এগারোই নভেম্বর দিনাজপুরের চকেরদিঘি যুদ্ধে ক্যাপ্টেন ইদ্রিসের নেতৃত্বে যুদ্ধ করেছি। আমরা যখন উত্তর-পশ্চিম দিকের দুটা বাংকার দখল করে ক্যাম্পের ভেতরে প্রায় ঢুকে পড়েছি সেই সময় এক পাকিস্তানি শয়তানের বাচ্চা পুব দিকের চৌকি থেকে আমাকে পয়েন্ট ব্ল্যাংক গুলি করে ফেলে দিয়েছিল। সাত নম্বর সেক্টরের শহিদের তালিকায় আমার নাম আছে স্যার।’ 

‘গল্প আপনি ভালোই বানাতে পারেন। তা মুক্তিযোদ্ধা সাহেব, আপনারা তো বহু বছর ধরে নানা ফন্দি-ফিকির করে লুটপাট চালিয়ে যাচ্ছেন। এবার একটু ক্ষ্যান্ত দিলে হয় না? চুক্তিযোদ্ধা মুক্তিবোদ্ধা এইসব ধান্দাবাজি করে আর কতকাল চালাবেন?’ 

‘আমি আপনার কাছে একটা কাজের আর্জি নিয়ে এসেছিলাম, নসিহত শুনতে আসিনি।’ সরাসরি উষ্মা প্রকাশ করেন আমানউল্লাহ। ডেপুটি সেক্রেটারি নিজেও এবারে উত্তেজিত হয়ে পড়েন। তিনি চিৎকার করে ডাকেন, ‘সুকুমার... সুকুমার...’

উপসচিবের প্রশাসনিক কর্মকর্তা বসের কণ্ঠস্বর শুনেই পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝতে পেরেছিলেন। ছুটতে ছুটতে ঘরে ঢোকেন সুকুমার সাহা।
‘এই পাগলটাকে এখানে কে ঢুকতে দিয়েছে?’ 

সুকুমার আমানউল্লাহর দিকে ভালো করে তাকিয়ে দেখে অবাক হয়ে বলে, ‘আমি তো উনারে ঢুকতে দিইনি। আসলে স্যার আমি কাউরেই ঢুকতে দেখিনি।’

‘দেখেননি ভালো কথা। এবারে এটাকে বের করার ব্যবস্থা করেন। যতসব পাগল-ছাগল কোথায় থেকে যে চলে আসে!’
‘বের করে দিতে হবে না, আমি নিজেই চলে যাচ্ছি।’ শান্ত গলায় সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেন আমানউল্লাহ। 

‘তাই যান।’ বলে গোলাম কুদ্দুস তার নিজের চেয়ারে বসে পড়লে সুকুমার সাহা আমানউল্লাহর দিকে তাকিয়ে বলে ওঠেন, ‘স্যাররে বিরক্ত কইরেন না। যান জলদি কাইটা পড়েন।’ ইঙ্গিতে আমানউল্লাহকে দরজা দেখিয়ে দিয়ে তিনিও কক্ষ থেকে বেরিয়ে যান। 

আমানউল্লাহ মুখে একটা অপার্থিব হাসি ফুটিয়ে তুলে জিজ্ঞেস করেন, ‘স্যার কি কখনো পাংখা-পুলার শব্দটা শুনেছেন?’
‘পাংখা-পুলার? জিনিসটা কী?’ ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করেন গোলাম কুদ্দুস।

‘ব্রিটিশ আমলে, এমনকি পাকিস্তান আমলেও আদালতের এজলাসে, ডিসি-এসপিসহ প্রশাসনের সব অফিসেই বড় বড় কর্মকর্তার ঘরের সিলিংয়ে লালশালু কাপড় দিয়ে চারপাশ বাঁধানো পাটির টানা পাখা ঝোলানো থাকত। তখন এয়ারকন্ডিশন দূরের কথা, ফ্যানেরও প্রচলন ছিল না। পাংখা-পুলার বাইরে টুলে বসে স্যারদের মাথার ওপরে ঝোলানো বিশাল টানাপাখা একটা দড়ির সাহায্যে টেনে হাওয়া দিত। পাখা টানায় ছেদ পড়লে ঘরের বাতাস যতটা গরম হতো, তার চেয়ে বেশি গরম হতো স্যারের মাথা!’ 
‘আপনি এই গল্প আমাকে শোনাচ্ছেন কেন?’ 

‘উনিশ শ একাত্তর সালে আমরা যদি মুক্তিযুদ্ধ না করতাম তাহলে আপনি হয়তো আজ একজন পাকিস্তানি ডিএসএর পাংখা-পুলারের চাকরি করতেন।’

উপসচিব মহোদয়কে আর কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে হাবিলদার আমানউল্লাহ যেমন এসেছিলেন তেমনি করে হঠাৎ যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গেলেন। বিষয়টা বেশ কিছুটা সময় মনের ভেতরে খচখচ করছিল বলে সেদিন নতুন করে কোনো কাজে মন বসাতে পারলেন না গোলাম কুদ্দুস। ছুটির অনেক আগে বের হয়ে মেট্রোতে চেপে নির্বিঘ্নে বাড়ি পৌঁছাতে না পৌঁছাতেই দুপুরের ব্যাপারটার তিনি বেমালুম ভুলে গেলেন। স্ত্রী এবং পুত্র-কন্যা পরিবেষ্টিত হয়ে রাতে পঞ্চব্যঞ্জন ও দধি-মিষ্টান্নে ভোজন সম্পন্ন করে কিছুক্ষণ টেলিভিশনের বিভিন্ন চ্যানেলে ঘোরাঘুরি করে তিনি যখন ঘুমাতে গেলেন তখন রাত সাড়ে ১১টা। মাঝরাতে শুধু একবার হাত বাড়িয়ে রিমোট কন্ট্রোল চেপে এসি বন্ধ করা ছাড়া তার সুখনিদ্রায় কোনো ব্যাঘাত ঘটেনি। 

পরদিন সকালে অফিসে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে রাস্তায় বের হয়েই বিস্ময়ে গোলাম কুদ্দুসের দুই চোখ ঠিকরে বেরিয়ে আসতে চায়। রাতারাতি চারদিকের দৃশ্যপট বদলে গেছে। মিরপুর-১০ নম্বর গোলচক্করের উড়াল সড়কসহ আশপাশের বহুতল ভবনগুলো উধাও হয়ে গেছে। আধাকাঁচা-আধাপাকা রাস্তায় তেমন কোনো যানবাহন নেই, ফলে নিত্যদিনের যানজটও নেই। ভাবতে ভাবতেই গোলাম কুদ্দুস মেট্রো স্টেশনের দিকে হাঁটতে শুরু করেন। মফস্বল শহরে জেলা প্রশাসক হিসেবে থাকার সময় বসবাসের জন্য বিশাল বাড়ি এবং ইচ্ছেমতো ঘোরাঘুরির জন্য গাড়ি ব্যবহারের যে সুযোগ ছিল, ঢাকায় আসার পরে সবই সীমিত হয়ে গেছে। বিভিন্ন উৎস থেকে জ্ঞাতসারে এবং অজ্ঞাত উপায়ে আসা বাড়তি টাকা-পয়সা দিয়ে একটা গাড়ি কিনেছেন বটে, তবে তা বেশির ভাগ সময় স্ত্রী এবং কন্যাদের দখলে থাকে। 

মেট্রোরেল চালু হওয়ার পর থেকে গোলাম কুদ্দুস প্রায় নিয়মিতই মিরপুর-১০ নম্বর স্টেশন থেকে উঠে সচিবালয় স্টপেজে নেমে হেঁটেই অফিসে চলে যান। কিন্তু হঠাৎ করে সেই মেট্রোরেল খুঁজে না পেয়ে তিনি বিস্মিত এবং বিরক্ত হয়ে কী করা যায় ভাবছেন, সেই সময় বড় সাদা হরফে ইপিআরটিসি লেখা লাল রঙের একটা দোতলা বাস তার কাছাকাছি এসে দাঁড়িয়ে পড়ে। তিনি একটু দ্বিধান্বিত থাকলেও কন্ডাক্টার তাকে মুহূর্তের মধ্যে হাত ধরে টেনে বাসে তুলে নেয়। বেশ কিছু আসন খালি থাকায় তিনি পছন্দমতো একটি সিটে বসেও পড়তে পারেন। দুই পাশের প্রায় জনবিরল রাস্তাঘাট এবং আধুনিক অবকাঠামোবিহীন ঢাকা শহরের অপরিচিত দৃশ্য দেখতে দেখতে তিনি প্রেস ক্লাবে এসে নেমে যান। 

বাস থেকে নেমে হেঁটে সেক্রেটারিয়েটে ঢুকে প্রায় সবক্ষেত্রেই নানা ধরনের অসঙ্গতি এবং অব্যবস্থা চোখে পড়তে থাকে গোলাম কুদ্দুসের। হাঁটতে হাঁটতেই এক সময় তিনি তার নিজের দপ্তরে যাওয়ার জন্য লিফটের কাছে এসে দাঁড়ান। এখানে কোনো লিফট দেখতে না পেয়ে সিঁড়ি বেয়ে তিনতলায় নিজের কক্ষের সামনে এসে ভীষণভাবে চমকে ওঠেন তিনি। তার দরজার সামনে ইংরেজিতে লেখা বোর্ডে ঝুলছে ‘খাজা জিয়াউদ্দিন আনসারী, ডেপুটি সেক্রেটারি।’ 

গোলাম কুদ্দুস যখন দীর্ঘ করিডরের মাঝখানে কিংকর্তব্য বিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন, তখন কোথাও থেকে ছুটে আসে তার প্রশাসনিক কর্মকর্তা সুকুমার সাহা। 

‘এসব কী দেখছি সুকুমার? এখানে হচ্ছেটা কী?’ বসের প্রশ্নের প্রায় দুর্বোধ্য কাঁদো কাঁদো গলায় সে যা বলতে শুরু করেছিল তার অর্থ হলো, ‘স্যার আমি বিক্রমপুরের সম্ভ্রান্ত সাহাবাড়ির পোলা, আছিলাম এও আর আমারে দিছে স্যুইপারের চাকরি।’ কথা বলতে শুরু করে শেষ পর্যন্ত কেঁদেই ফেলে সুকুমার।
‘তার মানে?’

‘কথা মিছা না স্যার। আপনারে তাও একখান ভালো কাজ দিছে, টুলে বইসা থ্যিকা খালি পাংখা টানবেন। আপনার পোস্ট হইল গিয়ে পাংখা-পুলার।’ 
‘পাংখা পুলার! কী আশ্চর্য। মাত্র গতকালই এই শব্দটির সঙ্গে পরিচয় ঘটেছিল, আর একদিন পরে সেই পোস্টেই চাকরি করতে হবে!’ সাবেক উপসচিব গোলাম কুদ্দুস যখন অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিলেন, তখন তার সাবেক প্রশাসনিক কর্মকর্তা সুকুমার সাহার কথায় বাস্তবে ফিরে আসেন তিনি।

‘স্যার কী আর করবেন। আল্লার নাম লইয়া দড়ি ধইরা বইসা পড়েন।’ এখনই দড়ি ধরে টুলে বসে পড়বেন কিনা ভাবছিলেন গোলাম কুদ্দুস, সেই সময় এক দশাসই পাঠান চাপরাশি তাকে টুলে বসিয়ে টানাপাখার দড়িটা হাতে দিয়ে বলে, ‘পাকড়ো।’ 

গোলাম কুদ্দুস তার দুর্বল হাতে দড়ি ধরে দু-একটা টান দিতে দিতেই ভাবেন, ‘এটা কী করে সম্ভব! আমি স্বপ্ন দেখছি না তো?’ অন্যমনস্ক হয়ে দড়িতে টান দিতেই ভুলে যান। ঠিক তখনই তিনি বাজখাঁই গলায় একটা আওয়াজ শুনতে পান, ‘আবে গুলাম! খানা নেহি খায়া? দিল লাগাকে তেজ সে টানো।’

মনি হায়দারের ‘কিংবদন্তির ভাগীরথী’ উপন্যাসের পাঠ প্রতিক্রিয়া

প্রকাশ: ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০২:১৪ পিএম
আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০২:১৬ পিএম
মনি হায়দারের ‘কিংবদন্তির ভাগীরথী’ উপন্যাসের পাঠ প্রতিক্রিয়া
কিংবদন্তির ভাগীরথী

শিরোনামে যাকে কথাসাহিত্যিক হিসেবে আখ্যায়িত করেছি, তিনি এ বিষয়ে, মানে কথাসাহিত্যে আর পাঁচজনের মতো নন, বরং বেশ ব্যতিক্রমী এক মেধা। বিগত চার দশকে তিনি বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় নিয়মিত সৃষ্টিশীল প্রকাশসহ, গল্প, উপন্যাস ও শিশুসাহিত্যে একের পর এক যে অবদান রেখে চলেছেন। 

ভাষার অধিকার নিয়ে জাতির আন্দোলনে যেমন নারী তার সব সুখ বিসর্জন দিয়ে দৃঢ় অবস্থান নেয়, তেমনি দেশমাতৃকাকে শত্রুর কবল থেকে মুক্ত করতে গিয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধে ১৯৭১ সালে নারীর ওপর নির্যাতন, শেষে চরম আত্মত্যাগের মধ্যদিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো নারীদের এক অসামান্য উদাহরণ হয়ে থাকবে কথাসাহিত্যিক মনি হায়দারের কলমের আঁচড়ে ফুটে ওঠা আরেক নারী চরিত্র, ভাগীরথী। কিংবদন্তির ভাগীরথী সত্যি ঘটনা অবলম্বনে সৃষ্ট উপন্যাস। 

রাতের অন্ধকারে রাজাকার সুলতান মাহমুদের সহায়তায় পাকিস্তানি পিশাচ সৈন্যরা পিরোজপুর শহরের বাড়িঘর থেকে তুলে নিয়ে যায় বিভিন্ন বয়সী মেয়েদের। বিশেষ করে সনাতন ধর্মের নারীদের কী এক অজানা বিকৃত চিন্তায় বেশি করে টার্গেট করা হয়। ভাগীরথী তেমনি এক অল্প বয়েসী, পাঁচ বছর বয়সের এক পুত্রসন্তান, লালশ্যামের মা। ঘনশ্যাম তার স্বামী একজন মুচি। ক্যাপ্টেন আলী মোহাম্মদ হাত বাড়ায় ভাগীরথীর দিকে। ভাগীরথীর চওড়া কাঁধের ওপর আলী মোহাম্মদ কঠোর হাত রাখে। ঘাড় ফিরে দেখে ভাগীরথী নিজের কাঁধটা দখল হয়ে গেছে (পৃ: ১৫, কিংবদন্তির ভাগীরথী)। এতক্ষণ নির্জীব ঘনশ্যাম দৌড়ে এসে সুলতান মাহমুদের দুই পা জড়িয়ে ধরে- সুলতান দাদা, আমার বৌরে ছাইড়া দ্যান। আপনেগো সব জোতা মুই সেলাই কইরা দিমু। আপনেগো সব জোতা কালি কইরা দিমু। আমার বৌরে ছাইড়া দ্যান (পৃ: ১৫-১৬, কিংবদন্তির ভাগীরথী)। কিন্তু রাজাকার সুলতান মাহমুদ আর পাকিস্তানি ক্যাপ্টেন তো একথা শোনার মানুষ নয়। পিরোজপুরের পাকিস্তানি ক্যাম্পে মেজর ইসকান্দার হায়াৎ খানের যৌন লালসার শিকার আরও অগুনিত নারীর পরিণতি হয় ভাগীরথীরও পরিণতি। 

একদিন সুযোগ আসে। ক্যাপ্টেন দিলদার হোসেন বেগের হৃদয় গলিয়ে ক্যাম্পে ফিরে আসার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ছেলেকে দেখার জন্য বাড়ি যাওয়ার অনুমতি পেয়ে যায় ভাগীরথী। কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয় না। বরং স্বামী ও প্রতিবেশীরা তাকে ধর্মের দোহাই দিয়ে ফিরিয়ে দেয়। ভাগীরথী আবিষ্কার করে, সে আর কোনোদিন তার পুরনো স্বাভাবিক সংসারে ফিরে যেতে পারবে না।

ক্যাম্পের দুঃসহ জীবনে ফিরে যাওয়ার পথে দেখা হয়ে যায় একদল মুক্তিসেনার সঙ্গে। তাদের সমবেদনা ভাগীরথীকে অনুপ্রেরণা জোগায় দেশের মুক্তির জন্য পাকিস্তানি আর্মির বিরুদ্ধে তথ্য সরবরাহ করার কাজে। নিজের জীবনের সব ঝুঁকি নিয়ে ভাগীরথী যে তথ্য দেয়, মুক্তিসেনারা তাতে কয়েকটি সফল অপারেশন করতে পারে। এতে পাকিস্তান আর্মির ক্যাপ্টেন দিলদার হোসেন বেগসহ পঞ্চাশজন সৈন্য নিহত হয় মুক্তিবাহিনীর হাতে। 

উপন্যাস কিংবদন্তির ভাগীরথী জাদুকরী কথাসাহিত্যিক, অথবা বলা যায় কথাসাহিত্যের জাদুকর রঙের তুলিতে নয়, শব্দচিত্র দিয়ে নির্মাণ করেছেন। বইটি প্রকাশ করেছে বেহুলাবাংলা। বাজারে চলছে বইটির চতুর্থ মুদ্রণ। 

লেখক: ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক, কথাশিল্পী, কবি, অনুবাদক 

মানসম্মত পাণ্ডুলিপির সংকট কাটাতে এখনই কিছু করতে হবে

প্রকাশ: ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০২:০৭ পিএম
আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০২:০৮ পিএম
মানসম্মত পাণ্ডুলিপির সংকট কাটাতে এখনই কিছু করতে হবে
মাজহারুল ইসলাম

কেমন হতে পারে এবারের মেলা? 

এবারের বইমেলা ভালো হবে। পাঠক বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে প্রতিদিন মেলায় আসবেন। পছন্দের লেখকের বই কিনবেন- এমনটাই প্রত্যাশা। এই মেলার জন্য সারা বছর তারা অপেক্ষায় থাকেন। সেমিনার ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করবেন। প্রিয় লেখকদের অটোগ্রাফ সংগ্রহ করবেন, সেলফি তুলবেন। সর্বোপরি পাঠক-লেখক-প্রকাশক সবার অংশগ্রহণে একটি বইবান্ধব মেলা হবে। 

এবারের বইমেলায় আপনার প্রকাশনী থেকে কয়টি বই প্রকাশ করছেন? 
এবার অন্যপ্রকাশ থেকে প্রায় অর্ধ শত বই প্রকাশিত হবে। 

উল্লেখযোগ্য বই কী কী? 

উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে আল মাহমুদের ‘নির্বাচিত ১০০ কবিতা’, ‘সেরা পাঁচ উপন্যাস’, ড. মোহাম্মদ হাননানের ইতিহাসগ্রন্থ ‘ভাষার সংগ্রাম ১৯১৭-১৯৯৯ [হাজার বছর ধরে বাংলা ভাষার সংগ্রামের ঐতিহাসিক আলেখ্য], এম আবুল কাসেমের ব্যতিক্রমী গবেষণাগ্রন্থ ‘চা-অর্থনীতি’, এম আবদুল আলীমের প্রবন্ধগ্রন্থ ‘ভাষা আন্দোলনে নিম্নবর্গ ও অন্যান্য প্রসঙ্গ’। এ ছাড়া ফরিদুর রেজা সাগরের জনপ্রিয় ছোটকাকু সিরিজের ৪০টি বইয়ের সংকলন ‘ছোটকাকু চল্লিশ’। ৮০০ পৃষ্ঠার এই বইটি নিছকই একটি সংকলন নয়, এর আকারে যেমন অভিনবত্ব থাকবে, তেমনি প্রোডাকশনটি হবে ভিন্নমাত্রার। সব মিলে একটা সংগ্রহে রাখার মতো প্রকাশনা হবে এটি।

মেলাপ্রাঙ্গণ বা অবয়ব নিয়ে আপনার কোনো বক্তব্য আছে কি? 

মেলাপ্রাঙ্গণ হবে এমন, যেন ক্রেতা-পাঠক স্বচ্ছন্দ বোধ করেন, সহজে চলাফেরা করতে পারেন। মেলার স্টল ও প্যাভিলিয়নগুলোর বিন্যাস এমনভাবে করতে হবে যেন তা পাঠক ও প্রকাশকবান্ধব হয়। কেউ যেন কোনো সমস্যা বোধ না করেন। ধুলার সমস্যা দীর্ঘদিনের, একই সঙ্গে আলোর স্বল্পতা। আশা করি, এই বিষয় দুটি গুরুত্বের সঙ্গে মেলা পরিচালনা কমিটি সমাধানের চেষ্টা করবে। 

মানসম্মত পাণ্ডুলিপির অভাব বোধ করছেন কি? 

মানসম্মত পাণ্ডুলিপির অভাব নতুন কিছু নয়। এই সংকট আগে যেমন ছিল, এখনো আছে। দুঃখজনক সত্য হলো, ন্যূনতম মানহীন কিছু পাণ্ডুলিপিও বই আকারে বেরিয়ে যাচ্ছে। এটা আসলে সামগ্রিক দুর্বলতারই অংশ। অনেক ক্ষেত্রে  আমরা এগিয়েছি, এটা যেমন সত্য, তেমনি নতুন লেখক সৃষ্টিতে কিংবা মানসম্মত পাণ্ডুলিপির সংকট কাটাতে আমাদের এখনো অনেক কিছু করা বাকি। সাহিত্যের চর্চা, এর পঠনপাঠন বাড়ানো গেলে, সংস্কৃতিমনস্কতার উন্নতি হলে এ ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে বলে আমি মনে করি।

মেলায় কী ধরনের বই বেশি বেচা হয়? 

গল্প-উপন্যাস, থ্রিলার, ভ্রমণকাহিনি। ইদানীং ননফিকশনাল বইও বেশ বেচা হচ্ছে। এ ছাড়া আত্মউন্নয়নমূলক বইয়েরও চাহিদা রয়েছে।

ধন্যবাদ।
আপনাকেও ধন্যবাদ।

সাক্ষাৎকার: সানজিদুল ইসলাম সকাল

মাজহারুল ইসলাম 
প্রধান নির্বাহী, অন্যপ্রকাশ, ঢাকা

ফেরার পথ নেই

প্রকাশ: ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০১:৫৯ পিএম
আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০১:৫৯ পিএম
ফেরার পথ নেই
অলংকরণ: নিয়াজ চৌধুরী তুলি

এই শহরে আগেও অনেকবার এসেছে জারা। এখানে প্রায়ই বড় বড় আয়োজনের বিয়ে, গায়ে হলুদ অনুষ্ঠানের পাশাপাশি জন্মদিন, বিবাহবার্ষিকীর জমকালো অনুষ্ঠান থাকে। আবার দীর্ঘদিন লন্ডন, আমেরিকা, কানাডায় থাকার পর দেশে ফেরা উপলক্ষে আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে গেট-টুগেদার আয়োজন করে কেউ কেউ। এবারও তেমন একটি অনুষ্ঠানে পারফর্ম করতে নিজের টিম নিয়ে এসেছে জারা। এ ধরনের অনুষ্ঠানে খানাপিনার সঙ্গে ডিজে পার্টি, মিউজিক্যাল নাইটের আয়োজন থাকে। বেশ কয়েক মাস আগেই শিডিউল ঠিক করা ছিল। শহর থেকে কিছুটা দূরে গোলাপগঞ্জে লন্ডন প্রবাসীর বাড়িতে জমকালো গেট-টুগেদার অনুষ্ঠান। শহরের বাইরে হলেও জায়গাটা অনেক উন্নত। এবার প্রোগ্রাম করতে এলেও ভেতরে ভেতরে অনেক অস্থিরতার মধ্যে রয়েছে জারা। এক ধরনের অস্বস্তি বুকের মধ্যে চেপে বসে আছে। প্লেনে চড়ে ঢাকা থেকে সিলেট আসতে কোনো কষ্ট হয়নি। ক্লান্তির প্রশ্নই ওঠে না। তার পরও নিজেকে বেশ ক্লান্ত মনে হচ্ছে তার।

ঢাকায় থাকতেই জারা জেনেছে, উত্তরার ব্লু শাইন রেস্টুরেন্টে ডিজে পার্টিতে মাদক আর বিষাক্ত ভেজাল মদ খেয়ে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির একজন ছাত্র ও একজন ছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনা দেশজুড়ে দারুণ চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। এ ঘটনার জন্য দায়ীদের আটক করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে জাতীয় সংসদে সবাই একমত হয়ে বক্তব্য দিয়েছেন। শাহবাগ, টিএসসি ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মিছিল, মানববন্ধন ও প্রতিবাদী সমাবেশ হয়েছে। ফলে এ ইস্যুটি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। দেশজুড়ে মাদককারবারি, চোরাচালানি, সরবরাহকারীদের ধরতে শক্ত অভিযান চলছে। কেউ ছাড়া পাচ্ছে না। আটক করে জেলখানায় পাঠানো হচ্ছে তাদের। এর মধ্যে কয়েকটি ক্রসফায়ারের ঘটনা এসব কাজে জড়িতদের মনে রীতিমতো আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। ব্লু শাইন রেস্টুরেন্টে সে রাতের ডিজে পার্টি আয়োজনের নেপথ্যে ও প্রকাশ্যে থাকা সবার নাম পুলিশ ও সিআইডি এর মধ্যেই পেয়ে গেছে। তালিকা ধরে তাদের খোঁজ চলছে। ঢাকা ছেড়ে অন্য শহরে কিংবা গ্রামে পালিয়ে আত্মগোপনে থাকলেও তাদের খুঁজে বের করে আটক করা হচ্ছে। সেই তালিকার প্রথমদিকেই ব্লু শাইন রেস্টুরেন্টে ডিজে পার্টির আয়োজক বিখ্যাত ডিজে গার্ল জারা শাহরিন খানের নামটি রয়েছে। 

প্রভাবশালী কয়েকজন হোমরাচোমরা মানুষের সঙ্গে পরিচয় ও সখ্যের কারণে সে নানাভাবে বিপদ-আপদে সাহায্য-সহযোগিতা-প্রশ্রয় পেয়ে এসেছে এতদিন। বেশ কয়েকবার কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে গেলেও সেই হোমরাচোমরাদের বদান্যতায় উদ্ধার পেয়েছে জারা। কিন্তু এবার ব্লু শাইন রেস্টুরেন্টের ঘটনাটিতে জল ঘোলা হয়েছে অনেক। সরকারের উচ্চপর্যায়ে এ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। তালিকা থেকে তার নামটি যেকোনোভাবে বাদ দেওয়ার অনুরোধ জানানোর পর কেউ কোনো সাহায্য-সহযোগিতার আশ্বাস দিতে পারেনি। সবাই একটাই কথা বলেছে, এ কেসটি অন্য সব কেস থেকে আলাদা। সরকারের বিভিন্ন মহল থেকে চাপ রয়েছে- অভিযুক্তরা যাতে কোনোভাবে পার পেয়ে না যেতে পারে। সবাইকে কঠিন শাস্তির আওতায় আনতে হবে। যেকোনো মূল্যে তাদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এখানে কারও জন্য তদবির, সুপারিশ করার একদম সুযোগ নেই। তেমন পরিস্থিতিতে কখন যে কী ঘটে যায়- এ নিয়ে দুশ্চিন্তা চেপে বসেছে। 

বুকের মধ্যে অনেক অস্বস্তি চেপে বসেছে। কিছুতেই সেটাকে সরাতে পারছে না। সারাক্ষণ একটা ভয়, আতঙ্কভাব তাড়া করে ফিরছে তাকে। গত কয়েক দিন ধরে এক ধরনের ট্রমার মধ্যে ছিল সে। ঘুমের ওষুধ খেয়েও দুচোখে ঘুম আসছিল না। হঠাৎ একটু তন্দ্রাভাব এলেও পরক্ষণেই তা ছুটে পালিয়ে যাচ্ছিল। এ রকম একটি অবস্থা থেকে নিজেকে মুক্ত করার সুযোগ খুঁজছিল জারা। 

আরও কয়েক মাস আগেই সিলেটে একটি প্রোগ্রামের কথাবার্তা ফাইন্যাল হয়েছিল। প্রোগ্রামটা ক্যানসেল করে দিতে পারত সে। কিন্তু একটুখানি প্রশান্তির আশায় ঢাকার বাইরে দূরে কোথাও চলে যেতে মনটা কেমন অস্থির হয়ে উঠেছিল। এ কারণেই প্লেনে চড়ে সোজা সিলেট চলে এসেছে। এখানে যাদের বাড়িতে প্রোগ্রাম, তারাই এয়ারপোর্ট থেকে রিসিভ করে তাদের নিজস্ব গাড়িতে হোটেলে এনেছে। দামি বিলাসবহুল লাক্সারি স্যুটে জারার

থাকার ব্যবস্থা হয়েছে। 
নিজেকে আরও রিফ্রেশ করতে বাথটাবে হালকা গরম-ঠাণ্ডা পানিতে কিছুক্ষণ শরীরটা ডুবিয়ে রেখেছে। এতে কিছুটা কাজ হয়েছে। হালকা গরম-ঠাণ্ডা পানিতে বেশ কিছুক্ষণ চুপচাপ থেকে শরীরটা ডুবিয়ে রাখার পর কিছুটা প্রশান্তিবোধ করায় আয়োজকদের ফোন করে গাড়ি পাঠাতে বলেছে জারা। আজ রাতে যে বাড়িতে অনুষ্ঠান হবে সেখানে গিয়ে সবকিছু দেখতে চায় সে।

ছবির মতো চমৎকার সুন্দর বিলেতি ডিজাইনের একটি বাড়ির সামনে এসে গাড়িটি থামে। এই বাড়িতেই আজ অনুষ্ঠান। দীর্ঘদিন লন্ডন, কানাডায় থাকা কয়েকটি পরিবার দেশে বেড়াতে এসেছে। দেশে এসে আত্মীয়স্বজন-বন্ধুবান্ধব, পাড়া-প্রতিবেশী সবাইকে নিয়ে একটি গেট-টুগেদারের আয়োজন করেছে। খাওয়াদাওয়ার পাশাপাশি গানবাজনা, ডিজে পার্টির ব্যবস্থা করেছেন তারা। 

গাড়ি থেকে নেমে বাড়ির সামনে তৈরি করা স্টেজের দিকে এগোতে গিয়ে হোঁচট খেয়ে মাটিতে পড়ে যাওয়ার উপক্রম হয় জারার। পাশাপাশি হাঁটতে থাকা একজন সঙ্গে সঙ্গে তাকে ধরে না ফেললে মাটিতে পড়ে একটা দুর্ঘটনা ঘটত নিশ্চিত। হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ সে কিছুটা অমনোযোগী হয়ে পড়েছিল। কিন্তু তাই বলে হোঁচট খেয়ে পড়ে যাওয়ার মতো অবস্থা হওয়ার কথা নয়। মনের মধ্যে অজানা আশঙ্কা উঁকি দেয়। তাহলে কি এখানে তার জন্য কোনো বিপদ অপেক্ষা করছে? যার আগাম সংকেত হলো হঠাৎ এই হোঁচট খাওয়া! সাধারণভাবে হাঁটতে গিয়ে হঠাৎ হোঁচট খেলে অনেকেই এ ধরনের আশঙ্কা করে মনে মনে। কুসংস্কার হলেও তেমন বিপদের আশঙ্কা উড়িয়ে দিতে পারে না সে। মায়ের কথা মনে পড়ে যায়। ছোটবেলা থেকে এ রকম কিছু ঘটলে কাছাকাছি মা থাকলে দোয়া পড়ে ফুঁ দিয়ে মাথায়-পিঠে হাত বুলিয়ে দিতেন। বলতেন, মায়ের দোয়া সঙ্গে থাকলে কোনো বালা-মুসিবত, বিপদাপদ কাছে আসতে পারবে না। সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। গত কদিন ধরে এক ধরনের অস্থিরতা তাড়া করে ফিরছে তাকে। এক ধরনের অনিশ্চয়তার দোলাচলে তার সময় কাটছে।

স্টেজে উঠে চারপাশে তাকাতেই জারা দেখতে পায়, বাড়ির সামনে একটি সাদা মাইক্রোবাস এসে থেমেছে। এ রকম গাড়ি তো আজ অনেক আসছে এ বাড়িতে। অতিথিরা যে যার মতো গাড়ি নিয়ে আসছেন। কিন্তু সাদা মাইক্রোবাস থেকে নামতে থাকা মানুষগুলো সাধারণ শার্টপ্যান্ট পরা হলেও তাদের কয়েক জনের গায়ে বিশেষ ধরনের জ্যাকেট দেখে ভয়ে, আশঙ্কায় তার সারা শরীরে হালকা কাঁপুনি দিয়ে ওঠে। দেখেই বোঝা যায়, এই লোকগুলো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। গাড়ি থেকে নেমে তারা এ বাড়ির কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলছে। কী বলছে- এতদূর থেকে শোনা না গেলেও এ বাড়ির মানুষজন লোকগুলোর সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে স্টেজের দিকে হাতের ইশারা করছে, দেখতে পায় সে। তাদের কথোপকথনের ধরন দেখে এখানে থাকা কারও কথা আলোচনা করছে বোঝা যায়। একপর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোকগুলোর হাতে অস্ত্র দেখা যায়। তারা সবাই এদিকেই এগিয়ে আসছে দৃঢ় পদক্ষেপে। 

ব্যাপারটা এত দ্রুত এভাবে ঘটবে ভাবতে পারেনি জারা। এ রকম একটা মুহূর্ত আসবে তার জীবনে, যেখানে কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ নেই। এতদিন নানা চড়াই-উতরাই পাড়ি দিয়ে এলেও আজকের মতো পরিস্থিতিতে পড়তে হয়নি আগে কখনো। এ অবস্থায় যাতে পড়তে না হয়, তার জন্য নানাভাবে চেষ্টা চালিয়েও শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছে সে।


জারাকে নিয়ে মাইক্রোবাসটা সিলেট থেকে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করেছে আরও এক ঘণ্টা আগে। 
সন্ধ্যা পেরিয়ে গেছে সেই কবে। রাস্তাজুড়ে রাতের অন্ধকার জেঁকে বসেছে। সেই অন্ধকার ভেদ করে হেডলাইটের তীব্র আলো ছড়িয়ে হাইওয়ে ধরে ছুটছে গাড়িটা। গাড়িতে তার দুপাশে দুজন শক্তসমর্থ গড়নের নারী। তাদের পরনেও প্যান্টশার্ট। দেখেই বোঝা যায়, তারাও একই বাহিনীর সদস্য। এখন কোনো নারীকে আটক করতে গেলে সেই অভিযানে নারী সদস্য রাখা হয়। এটা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটা নিয়ম হয়ে গেছে এখন। একসময় এমনটা ছিল না।

ঢাকার উত্তরার ব্লু শাইন রেস্টুরেন্টের ঘটনায় জারা শাহরিন খানকে আটক করেছে ডিবি পুলিশ। আরও আগে থেকেই তাকে আইনের আওতায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার প্রচেষ্টা চালানো হলেও সেটা নানাভাবে বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে। কিন্তু সব বাধা অতিক্রম করে শেষ পর্যন্ত তারা সফল হয়েছে। জারাকে আটকের ব্যাপারে শুরু থেকে তৎপর ছিল পুলিশ। তবে এতদিন তার প্রতি সহানুভূতিশীল একটি প্রভাবশালী মহল নানাভাবে চেষ্টা করে গেছে, যাতে সে আটক না হয়। কিন্তু দেশজুড়ে প্রতিবাদ মিছিল, মানববন্ধন, আন্দোলন দানা বেঁধে উঠতেই অনেকটা চাপে পড়ে পিছু হটে এসেছে সেই প্রভাবশালী মহলটি।

গাড়িতে জারা ছাড়াও আরও কয়েকজন যাত্রী থাকলেও তারা কেউ তেমন কথা বলছে না। এক ধরনের অসহ্যকর নিস্তব্ধতা জেঁকে বসেছে এখানে। এসি গাড়ির সব জানালা বন্ধ রয়েছে। বাইরে কোনো শব্দ আসছে না। আশপাশে ছুটে চলা অন্যান্য গাড়ি, বাস, ট্রাক ইত্যাদির হর্নের ক্ষীণ শব্দ কানে এলেও সেটা জেঁকে বসা নীরবতাকে যেন দূর করতে পারছে না।

অনেক স্বপ্ন নিয়ে ঢাকা শহরে পড়াশোনা করতে এসেছিল জারা। লেখাপড়া শেষে নিজেকে যোগ্য করে তোলার পর ভালো একটি চাকরিতে ঢোকার স্বপ্ন ছিল; যা তাকে সুন্দরভাবে বাঁচার নিশ্চয়তা দেবে। সমাজে মাথা উঁচু করে সম্মান-মর্যাদা নিয়ে চলার চমৎকার সুযোগ সৃষ্টি করবে। কিন্তু বাস্তবতা জারাকে সেই অবস্থা থেকে যোজন যোজন দূরে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। মফস্বল শহর থেকে আসা মেধাবী, স্বপ্নবাজ, ভালো মেয়েটি মোহনা থেকে জারায় পরিণত হয়েছে। অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু ঘটনা তাকে স্বপ্ন দেখা সেই পথ থেকে সরিয়ে ভিন্ন আরেক জগতে নিয়ে এসেছে। যেখানে স্বপ্ন নেই, আছে দুঃস্বপ্ন। ভোগ-বিলাস, আনন্দ, অর্থবিত্তের বাসনা, লোভ-লালসা ইত্যাদি কেবল মরীচিকার মতো চারদিকে ছুটে বেড়ায়, মোহজাল সৃষ্টি করে। যার পেছনে ছুটতে গিয়ে পদে পদে অবক্ষয়, বিকৃতি, বীভৎস লালসার শিকার হতে হয়, নিজের বিবেক, মূল্যবোধ, নৈতিকতাকে জলাঞ্জলি দিতে হয়। গত কয়েকটি বছর সেই অন্ধকার একটি জগতে বিচরণ করতে গিয়ে কুৎসিত একটি পৃথিবীকে দেখে দেখে নিজের প্রতি চরম ঘেন্না ধরে গেছে। তার অপরাধ আর পাপের বোঝা অনেক ভারী হয়ে উঠেছে। যা বইতে গিয়ে সে হাঁপিয়ে উঠছিল বারবার। 

ব্লু শাইন রেস্টুরেন্টে ডিজে পার্টির আয়োজক হিসেবে তাকে আটক করা হয়েছে, কিছু কাগজপত্র দেখিয়ে ডিবির লোকগুলো বলেছে। এটা তো স্রেফ একটি কেস। এ রকম আরও বহু ঘটনার সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা রয়েছে। যার প্রমাণ পুলিশ ও র‌্যাবের কাছে রয়েছে। যা এতদিন নানা উপায়ে পাথরচাপা দিয়ে রাখা হয়েছিল। একটি কেসে ধরা পড়লে বাকিগুলো এমনিতেই আস্তে আস্তে বেরিয়ে আসে। এ রকম একটি পরিণতির অপেক্ষায় ছিল সে এতদিন। যদিও এ রকম কিছু তার কাম্য ছিল না। এই পৃথিবীতে কাম্য না হলেও, না চাইলেও অনেক কিছু ঘটে যায়। নানাভাবে চেষ্টা করলেও যা ঠেকানো সম্ভব হয় না। 

জারা নিজের পরিণতির কথা ভাবতে ভাবতে মনে মনে কেমন যেন দার্শনিক হয়ে ওঠে। এমন একটি পরিস্থিতিতেও তার হাসি পায় ভীষণ। মন খুলে হাসতে ইচ্ছে করে। কিন্তু গাড়িতে থাকা ডিবির নারী-পুরুষগুলো কী মনে করে, ভেবে নিজের হাসিটা চেপে রাখে। আগামীকালের দৈনিক পত্রিকায় তাকে আটক করার ছবি ও রিপোর্ট ছাপা হবে। টিভি চ্যানেলের, অনলাইন পোর্টালের ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতে হবে অপরাধী হিসেবে। তার পর তা টিভি পর্দায়, ইউটিউবে দেখানো হবে। আজকাল সাধারণত এমনই হয়। তার বেলাতেও তাই হবে। এ আর নতুন কী? 

রাস্তার দুপাশের বাড়িঘর, সবুজ বনবনানী, ধান খেত, নদী, খাল-বিল পেছনে ফেলে জারাকে বহনকারী সাদা মাইক্রোবাসটি তীব্র গতিতে ছুটছে গন্তব্যের দিকে। কতক্ষণে ঢাকা শহরের ডিবি কার্যালয়ে গিয়ে নিরাপদে পৌঁছবে, তেমন ভাবনা মধ্যবয়সী গাড়িচালকের। পথে কোনোরকম দুর্ঘটনায় যাতে পড়তে না হয়- তাই খুবই সাবধানী হাতে স্টিয়ারিং ধরে বসে আছে মানুষটা। সবদিক সতর্ক হয়েই গাড়ি চালাতে হচ্ছে তাকে। 

এতদিন ঢাকা শহরটাকে এক মায়ার শহর ভেবে এসেছে জারা। এখানে যারা পা রাখে, তারা কেমন যেন মায়ায় জড়িয়ে যায়। একসময় মোহগ্রস্ত হয়ে পড়ে। সেই মোহে জড়িয়ে পড়ে নিজের সবকিছু বিসর্জন দেয়। মায়ানগরীর সেই মোহ ধ্বংসের মুখে নিয়ে দাঁড় করানোর আগে উপলব্ধি হলেও তখন আবার শিকড়ে ফেরার তীব্র ইচ্ছে জাগে। ইচ্ছে কিংবা সাধ জাগলেও আর ফেরার উপায় বা সুযোগ থাকে না সে সময়। সেই নরকেই পুড়ে মরতে হয়। শেষ পরিণতিকে মেনে নিতে হয় বাধ্য হয়েই।

নতুন ধানের ঘ্রাণ

প্রকাশ: ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০১:৫৫ পিএম
নতুন ধানের ঘ্রাণ
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

ভাবনার ভিতর একমুঠু ভাত
মগ্নরাতে কৃষকের হাহাকার।

রাত্রি ডোবে কালোর গভীরে
বিঘা বিঘা জমিতে সোনালি ধান।

ক্ষুধার্ত শরীর ঘামে জবজব 
মাঠে কৃষক হৃদয়ে প্রতিবাদ। 

একজোড়া পায়ে কী অসীম শক্তি
বুকজুড়ে নতুন ধানের ঘ্রাণ। 

লাঙল কাঁধে কৃষক হাঁটে 
ধানি জমিজুড়ে ভাটিয়ালি গান।

ওহ্‌ হৃদয়

প্রকাশ: ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০১:৫২ পিএম
আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০১:৫৩ পিএম
ওহ্‌ হৃদয়
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

ঝড়ের স্মৃতিতে অবাঞ্ছিত প্রাঙ্গণে
বিষাদের কফিন খুলে সঙ্গোপনে 
বিগতবেলার যে ঘ্রাণ নিচ্ছ 
তাতে বিষাক্ত কীট, বিক্ষত পরাগরেণু
ঝরে যাচ্ছে গোলাপ পাপড়ি।

আহত পাখির পালকে বিরচিত সৌধে
পরাজিত মুহূর্তরা স্তরে স্তরে,
নদীর ভালোবাসা ছেড়ে পতিত মাছ
তীব্র তৃষ্ণায়, তবু জলের দ্রাঘিমায়
সমাপ্তি টেনে আশ্রয় নেয় মধ্যাহ্নে। 
 
এতটা কার্বন অভ্যন্তরীণ প্রকোষ্ঠে
রুগ্নদিন শেষে অন্ধকারে নোঙর ফেলে
বুকের উত্তাপে পুড়ছে আত্মহনন নেশায়।


ওহ্‌ হৃদয়! কেন খরাক্রান্ত নগর ঘুরে
তৃষ্ণা পুষে রাখো বুকের করিডোরে।

দখলি দিগন্তে রক্তজবার পাণ্ডুলিপি
ক্ষরণের গোধূলি চুয়ে পড়ে পড়ন্ত সূর্যে।
অনিদ্রার নিশানা উড়িয়ে
দীর্ঘ করা রাতে যখন নক্ষত্র কাঁদে 
বেদনা আছড়ে পড়ে আঙিনাজুড়ে। 

ওহ্ হৃদয়! কেন ধূমায়িত হয়ে থাকো
অনেক শূন্যতার আকাশ হয়ে।