দিনাজপুরের চকেরদিঘি যুদ্ধে হাবিলদার আমানউল্লাহ শহিদ হয়েছিলেন। পাকিস্তান সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেওয়ার পরপরই আমানউল্লাহ কেমন করে মুক্তিযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিলেন তা কারোরই জানা নেই। তবে তিনি পানিঘাটায় ভারতীয় সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট বি এস সাঙ্গিরার অধীনে দুজন প্রশিক্ষক, হাবিলদার আবু বকর এবং সঞ্জিত চন্দ্রের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণে ওস্তাদ হিসেবে কাজ করেছেন।
দুর্ধর্ষ মুক্তিযোদ্ধা সাবসেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন ইদ্রিসের নেতৃত্বে এবং ভারতীয় সেনাবাহিনীর মেজর চ্যাটার্জির তত্ত্বাবধানে মুক্তিযোদ্ধারা সীমান্ত অতিক্রম করে রামসাগরের উত্তর-পশ্চিমে চকেরদিঘিতে যে রাতে পাকিস্তানিদের ঘাঁটি আক্রমণের পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যায়, সেই রাতের সম্মুখযুদ্ধে আমানউল্লাহসহ শহিদ হয়েছিলেন বারোজন মুক্তিযোদ্ধা। শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানিরা আত্মসমর্পণ করলে আটক পাঁচজন সৈনিকের হাত বেঁধে পশ্চিমবাংলায় হামজাপুর ক্যাম্পে নিয়ে গুলি করে মারার প্রস্তুতি হিসেবে তাদের লাইনে দাঁড় করানো হয়েছিল। হাবিলদার আমানউল্লাহর শিষ্যরা যখন পাকিস্তানিদের দিকে এসএলআর তাক করেছে, ঠিক সেই মুহূর্তে মেজর চ্যাটার্জি স্পষ্ট বাংলায় মুক্তিযোদ্ধাদের বুঝিয়ে বলেছিলেন, ‘বন্ধুরা, তোমাদের মনে রাখতে হবে বন্দিদের হত্যা করা যায় না। এটা সরাসরি জেনেভা কনভেনশনের লঙ্ঘন। ধৈর্য ধরো, বিজয় আমাদের সুনিশ্চিত।’
অনাকাঙ্ক্ষিত বাধার কারণে ওস্তাদের প্রতিকারহীন মৃত্যু মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিশোধস্পৃহা বহু গুণ বাড়িয়ে দিয়েছিল। ফলে তারা চকেরদিঘির পরে রামসাগরে পাকিস্তানি ঘাঁটি দখল করে আরও সামনে এগিয়ে যায়। এর পর এক্সপ্লোসিভ দিয়ে পুনর্ভবা নদীর কাঞ্চন রেলওয়ে ব্রিজ ধ্বংস করে ১৪ ডিসেম্বরে বিরল শহরের কেন্দ্রে বাংলাদেশের সোনালি মানচিত্র আঁকা লাল-সবুজ পতাকা উড়িয়ে দেয়। পাকিস্তানিরা ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটে পালাতে থাকে বগুড়া ক্যান্টনমেন্টের দিকে।
মৃত্যুর তেপ্পান্ন বছর পর আমানউল্লাহ যখন সচিবালয়ের ওসমানী উদ্যানের দিকের প্রধান ফটক পেরিয়ে সোজা ভূমি মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি সেক্রেটারি গোলাম কুদ্দুসের দরজার সামনে এসে দাঁড়ালেন তখন উপসচিব মহোদয় সবেমাত্র দ্বিপ্রাহরিক আহার সম্পন্ন করে একটি ইজিচেয়ারে শুয়ে একটু বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। তার চোখ দুটো বন্ধ থাকায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত হাবিলদার যে নিঃশব্দে তার ঘরে ঢুকে পড়েছেন তা তিনি বুঝতেই পারেননি। আমানউল্লাহ কিছুক্ষণ এদিক-সেদিক তাকিয়ে কী করা উচিত ভাবতে ভাবতেই এক সময় আস্তে করে বলে ওঠেন, ‘স্যার... ঘুমিয়েছেন নাকি?’
গোলাম কুদ্দুস চোখ মেলে তাকিয়ে যতটা বিরক্ত হন, বিস্মিত হন তার চেয়ে বেশি। তার ভ্রু কুঁচকে যায়, ইজিচেয়ারে আধাশোয়া অবস্থায় তিনি জিজ্ঞেস করেন, ‘আপনি কে? এখানে ঢুকে পড়েছেন কেমন করে!’
‘আমি স্যার হাবিলদার আমানউল্লাহ, মেইন গেট দিয়ে ঢুকে খুঁজতে খুঁজতে সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠে এসেছি।’
‘কেমন করে এসেছেন বুঝলাম। কিন্তু আপনি আমার কাছে কেন?’ এবারে গোলাম কুদ্দুস স্পটতই বিরক্ত।
‘আমার বাড়ি স্যার... নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ থানায়। পাঁচ শতক জমি আর ভিটাবাড়ি ছাড়া কিছু নেই। সেই জমিটুকুও দখল করে নিয়েছে এক রাজাকারের বাচ্চা! আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা...’ আমানউল্লাহ তার নিবেদন শেষ করতে পারেন না। তার আগেই খেঁকিয়ে ওঠেন গোলাম কুদ্দুস, ‘ওহ! মুক্তিযোদ্ধা! সেই কবে কোন মুক্তিযুদ্ধ করে আপনারা কি আমাদের মাথা কিনে নিয়েছেন?’
‘কিনতে তো পারিনি। মাথাটা কিনে নিলে এতো বড় কথা বলার সাহস আপনার হতো না।’
‘আপনিও বেশ বড় বড় কথা বলছেন। জমি দখলের সমস্যাটার সমাধান আপনি বেগমগঞ্জে বসেই তো করতে পারতেন। বিশেষ করে আপনি যখন একজন মুক্তিযোদ্ধা!’ শেষের কথাটিতে উপসচিব মহোদয়ের কণ্ঠে একটু শ্লেষ ঝরে পড়ে।
‘আমার ছেলেমেয়েরা সাবরেজিস্ট্রার অফিসে বিস্তর ঘোরাঘুরি করেছে, ইউএনও-অ্যাসিল্যান্ড সাহেবের সঙ্গে দেখা করেছে, কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। এমনকি আমার মুক্তিযোদ্ধা ভাইয়েরা পর্যন্ত কোনো পাত্তা দেয়নি।’
‘আপনি নিজে কেন যোগাযোগ করছেন না?’
‘কেমন করে যোগাযোগ করব স্যার? আমি তো একজন শহিদ মুক্তিযোদ্ধা!’
‘কী বললেন? শহিদ মুক্তিযোদ্ধা! হাঃ হাঃ হাঃ...’ প্রথমে একটা কৌতুকের হাসি ছড়িয়ে পড়ে গোলাম কুদ্দুসের মুখে। তার পরই তিনি অট্টহাসিতে ফেটে পড়েন। হাসতে হাসতেই আমানউল্লাহর দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দেন, ‘চমৎকার বলেছেন, শহিদ মুক্তিযোদ্ধা! আরে মিয়া শহিদ কথাটার মানে জানেন?’
‘জানব না কেন! আমি নিজেই তো একাত্তর সালের এগারোই নভেম্বর দিনাজপুরের চকেরদিঘি যুদ্ধে ক্যাপ্টেন ইদ্রিসের নেতৃত্বে যুদ্ধ করেছি। আমরা যখন উত্তর-পশ্চিম দিকের দুটা বাংকার দখল করে ক্যাম্পের ভেতরে প্রায় ঢুকে পড়েছি সেই সময় এক পাকিস্তানি শয়তানের বাচ্চা পুব দিকের চৌকি থেকে আমাকে পয়েন্ট ব্ল্যাংক গুলি করে ফেলে দিয়েছিল। সাত নম্বর সেক্টরের শহিদের তালিকায় আমার নাম আছে স্যার।’
‘গল্প আপনি ভালোই বানাতে পারেন। তা মুক্তিযোদ্ধা সাহেব, আপনারা তো বহু বছর ধরে নানা ফন্দি-ফিকির করে লুটপাট চালিয়ে যাচ্ছেন। এবার একটু ক্ষ্যান্ত দিলে হয় না? চুক্তিযোদ্ধা মুক্তিবোদ্ধা এইসব ধান্দাবাজি করে আর কতকাল চালাবেন?’
‘আমি আপনার কাছে একটা কাজের আর্জি নিয়ে এসেছিলাম, নসিহত শুনতে আসিনি।’ সরাসরি উষ্মা প্রকাশ করেন আমানউল্লাহ। ডেপুটি সেক্রেটারি নিজেও এবারে উত্তেজিত হয়ে পড়েন। তিনি চিৎকার করে ডাকেন, ‘সুকুমার... সুকুমার...’
উপসচিবের প্রশাসনিক কর্মকর্তা বসের কণ্ঠস্বর শুনেই পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝতে পেরেছিলেন। ছুটতে ছুটতে ঘরে ঢোকেন সুকুমার সাহা।
‘এই পাগলটাকে এখানে কে ঢুকতে দিয়েছে?’
সুকুমার আমানউল্লাহর দিকে ভালো করে তাকিয়ে দেখে অবাক হয়ে বলে, ‘আমি তো উনারে ঢুকতে দিইনি। আসলে স্যার আমি কাউরেই ঢুকতে দেখিনি।’
‘দেখেননি ভালো কথা। এবারে এটাকে বের করার ব্যবস্থা করেন। যতসব পাগল-ছাগল কোথায় থেকে যে চলে আসে!’
‘বের করে দিতে হবে না, আমি নিজেই চলে যাচ্ছি।’ শান্ত গলায় সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেন আমানউল্লাহ।
‘তাই যান।’ বলে গোলাম কুদ্দুস তার নিজের চেয়ারে বসে পড়লে সুকুমার সাহা আমানউল্লাহর দিকে তাকিয়ে বলে ওঠেন, ‘স্যাররে বিরক্ত কইরেন না। যান জলদি কাইটা পড়েন।’ ইঙ্গিতে আমানউল্লাহকে দরজা দেখিয়ে দিয়ে তিনিও কক্ষ থেকে বেরিয়ে যান।
আমানউল্লাহ মুখে একটা অপার্থিব হাসি ফুটিয়ে তুলে জিজ্ঞেস করেন, ‘স্যার কি কখনো পাংখা-পুলার শব্দটা শুনেছেন?’
‘পাংখা-পুলার? জিনিসটা কী?’ ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করেন গোলাম কুদ্দুস।
‘ব্রিটিশ আমলে, এমনকি পাকিস্তান আমলেও আদালতের এজলাসে, ডিসি-এসপিসহ প্রশাসনের সব অফিসেই বড় বড় কর্মকর্তার ঘরের সিলিংয়ে লালশালু কাপড় দিয়ে চারপাশ বাঁধানো পাটির টানা পাখা ঝোলানো থাকত। তখন এয়ারকন্ডিশন দূরের কথা, ফ্যানেরও প্রচলন ছিল না। পাংখা-পুলার বাইরে টুলে বসে স্যারদের মাথার ওপরে ঝোলানো বিশাল টানাপাখা একটা দড়ির সাহায্যে টেনে হাওয়া দিত। পাখা টানায় ছেদ পড়লে ঘরের বাতাস যতটা গরম হতো, তার চেয়ে বেশি গরম হতো স্যারের মাথা!’
‘আপনি এই গল্প আমাকে শোনাচ্ছেন কেন?’
‘উনিশ শ একাত্তর সালে আমরা যদি মুক্তিযুদ্ধ না করতাম তাহলে আপনি হয়তো আজ একজন পাকিস্তানি ডিএসএর পাংখা-পুলারের চাকরি করতেন।’
উপসচিব মহোদয়কে আর কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে হাবিলদার আমানউল্লাহ যেমন এসেছিলেন তেমনি করে হঠাৎ যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গেলেন। বিষয়টা বেশ কিছুটা সময় মনের ভেতরে খচখচ করছিল বলে সেদিন নতুন করে কোনো কাজে মন বসাতে পারলেন না গোলাম কুদ্দুস। ছুটির অনেক আগে বের হয়ে মেট্রোতে চেপে নির্বিঘ্নে বাড়ি পৌঁছাতে না পৌঁছাতেই দুপুরের ব্যাপারটার তিনি বেমালুম ভুলে গেলেন। স্ত্রী এবং পুত্র-কন্যা পরিবেষ্টিত হয়ে রাতে পঞ্চব্যঞ্জন ও দধি-মিষ্টান্নে ভোজন সম্পন্ন করে কিছুক্ষণ টেলিভিশনের বিভিন্ন চ্যানেলে ঘোরাঘুরি করে তিনি যখন ঘুমাতে গেলেন তখন রাত সাড়ে ১১টা। মাঝরাতে শুধু একবার হাত বাড়িয়ে রিমোট কন্ট্রোল চেপে এসি বন্ধ করা ছাড়া তার সুখনিদ্রায় কোনো ব্যাঘাত ঘটেনি।
পরদিন সকালে অফিসে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে রাস্তায় বের হয়েই বিস্ময়ে গোলাম কুদ্দুসের দুই চোখ ঠিকরে বেরিয়ে আসতে চায়। রাতারাতি চারদিকের দৃশ্যপট বদলে গেছে। মিরপুর-১০ নম্বর গোলচক্করের উড়াল সড়কসহ আশপাশের বহুতল ভবনগুলো উধাও হয়ে গেছে। আধাকাঁচা-আধাপাকা রাস্তায় তেমন কোনো যানবাহন নেই, ফলে নিত্যদিনের যানজটও নেই। ভাবতে ভাবতেই গোলাম কুদ্দুস মেট্রো স্টেশনের দিকে হাঁটতে শুরু করেন। মফস্বল শহরে জেলা প্রশাসক হিসেবে থাকার সময় বসবাসের জন্য বিশাল বাড়ি এবং ইচ্ছেমতো ঘোরাঘুরির জন্য গাড়ি ব্যবহারের যে সুযোগ ছিল, ঢাকায় আসার পরে সবই সীমিত হয়ে গেছে। বিভিন্ন উৎস থেকে জ্ঞাতসারে এবং অজ্ঞাত উপায়ে আসা বাড়তি টাকা-পয়সা দিয়ে একটা গাড়ি কিনেছেন বটে, তবে তা বেশির ভাগ সময় স্ত্রী এবং কন্যাদের দখলে থাকে।
মেট্রোরেল চালু হওয়ার পর থেকে গোলাম কুদ্দুস প্রায় নিয়মিতই মিরপুর-১০ নম্বর স্টেশন থেকে উঠে সচিবালয় স্টপেজে নেমে হেঁটেই অফিসে চলে যান। কিন্তু হঠাৎ করে সেই মেট্রোরেল খুঁজে না পেয়ে তিনি বিস্মিত এবং বিরক্ত হয়ে কী করা যায় ভাবছেন, সেই সময় বড় সাদা হরফে ইপিআরটিসি লেখা লাল রঙের একটা দোতলা বাস তার কাছাকাছি এসে দাঁড়িয়ে পড়ে। তিনি একটু দ্বিধান্বিত থাকলেও কন্ডাক্টার তাকে মুহূর্তের মধ্যে হাত ধরে টেনে বাসে তুলে নেয়। বেশ কিছু আসন খালি থাকায় তিনি পছন্দমতো একটি সিটে বসেও পড়তে পারেন। দুই পাশের প্রায় জনবিরল রাস্তাঘাট এবং আধুনিক অবকাঠামোবিহীন ঢাকা শহরের অপরিচিত দৃশ্য দেখতে দেখতে তিনি প্রেস ক্লাবে এসে নেমে যান।
বাস থেকে নেমে হেঁটে সেক্রেটারিয়েটে ঢুকে প্রায় সবক্ষেত্রেই নানা ধরনের অসঙ্গতি এবং অব্যবস্থা চোখে পড়তে থাকে গোলাম কুদ্দুসের। হাঁটতে হাঁটতেই এক সময় তিনি তার নিজের দপ্তরে যাওয়ার জন্য লিফটের কাছে এসে দাঁড়ান। এখানে কোনো লিফট দেখতে না পেয়ে সিঁড়ি বেয়ে তিনতলায় নিজের কক্ষের সামনে এসে ভীষণভাবে চমকে ওঠেন তিনি। তার দরজার সামনে ইংরেজিতে লেখা বোর্ডে ঝুলছে ‘খাজা জিয়াউদ্দিন আনসারী, ডেপুটি সেক্রেটারি।’
গোলাম কুদ্দুস যখন দীর্ঘ করিডরের মাঝখানে কিংকর্তব্য বিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন, তখন কোথাও থেকে ছুটে আসে তার প্রশাসনিক কর্মকর্তা সুকুমার সাহা।
‘এসব কী দেখছি সুকুমার? এখানে হচ্ছেটা কী?’ বসের প্রশ্নের প্রায় দুর্বোধ্য কাঁদো কাঁদো গলায় সে যা বলতে শুরু করেছিল তার অর্থ হলো, ‘স্যার আমি বিক্রমপুরের সম্ভ্রান্ত সাহাবাড়ির পোলা, আছিলাম এও আর আমারে দিছে স্যুইপারের চাকরি।’ কথা বলতে শুরু করে শেষ পর্যন্ত কেঁদেই ফেলে সুকুমার।
‘তার মানে?’
‘কথা মিছা না স্যার। আপনারে তাও একখান ভালো কাজ দিছে, টুলে বইসা থ্যিকা খালি পাংখা টানবেন। আপনার পোস্ট হইল গিয়ে পাংখা-পুলার।’
‘পাংখা পুলার! কী আশ্চর্য। মাত্র গতকালই এই শব্দটির সঙ্গে পরিচয় ঘটেছিল, আর একদিন পরে সেই পোস্টেই চাকরি করতে হবে!’ সাবেক উপসচিব গোলাম কুদ্দুস যখন অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিলেন, তখন তার সাবেক প্রশাসনিক কর্মকর্তা সুকুমার সাহার কথায় বাস্তবে ফিরে আসেন তিনি।
‘স্যার কী আর করবেন। আল্লার নাম লইয়া দড়ি ধইরা বইসা পড়েন।’ এখনই দড়ি ধরে টুলে বসে পড়বেন কিনা ভাবছিলেন গোলাম কুদ্দুস, সেই সময় এক দশাসই পাঠান চাপরাশি তাকে টুলে বসিয়ে টানাপাখার দড়িটা হাতে দিয়ে বলে, ‘পাকড়ো।’
গোলাম কুদ্দুস তার দুর্বল হাতে দড়ি ধরে দু-একটা টান দিতে দিতেই ভাবেন, ‘এটা কী করে সম্ভব! আমি স্বপ্ন দেখছি না তো?’ অন্যমনস্ক হয়ে দড়িতে টান দিতেই ভুলে যান। ঠিক তখনই তিনি বাজখাঁই গলায় একটা আওয়াজ শুনতে পান, ‘আবে গুলাম! খানা নেহি খায়া? দিল লাগাকে তেজ সে টানো।’