ঢাকা ৯ চৈত্র ১৪৩১, রোববার, ২৩ মার্চ ২০২৫
English

ধারাবাহিক উপন্যাস মোহিনী

প্রকাশ: ০৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:১৩ পিএম
আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০২:৩৮ পিএম
মোহিনী
অলংকরণ: নিয়াজ চৌধুরী তুলি

করোনাকাল নিয়ে মোস্তফা কামালের দীর্ঘ উপন্যাস ‘বিষাদ বসুধা’র দ্বিতীয়খণ্ড ‘মোহিনী’। মোহিনীকে ঘিরেই উপন্যাসের কাহিনি আবর্তিত হয়েছে। উপন্যাসটি ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হচ্ছে...

নীলিমা হঠাৎ আবদুর রহমানকে ডেকে পাঠালেন। 

আবদুর রহমান শাহবাজ খানের নিরাপত্তাকর্মী। নীলিমার ডাক পেয়ে সে থরথর করে কাঁপছে। সে কোনো ভুল করেছে কি না, তা নিয়ে ভাবে। আর দোয়া-দরুদ পড়ে বুকে ফুঁ দেয়। বিড়বিড় করে বলে, খোদা আমার চাকরিডা রাইখো! চাকরি না থাকলে যে না খাইয়া মরতে হইব!

আবদুর রহমান বাড়ির বাইরের ঘরে বসে আছে। সে অপেক্ষা করছে। মনে মনে আল্লাহকে ডাকছে। আর কোথাও কোনো ভুল করেছে কি না, তা নিয়ে ভাবছে। কিছুই মনে পড়ে না তার। সে যখন টেনশনে থাকে তখন তার মাথা খালি হয়ে যায়। কোনো কিছুই মনে করতে পারে না। কিছুক্ষণ আগের কথাও সে ভুলে যায়। এ রকম কি অন্য কোনো মানুষের হয়? নিজেকেই নিজে প্রশ্ন করে আবদুর রহমান। 

এর মধ্যেই নীলিমার সহকারী পুতুল আবদুর রহমানের কাছে আসে। তাকে ডাকে। আবদুর রহমান অন্যমনস্ক। তার ডাক সে শুনতে পায়নি। সে কখন এসে তার সামনে দাঁড়িয়েছে, তাও খেয়াল করেনি। হঠাৎ থতমত খেয়ে বলে, আ আ আমাকে ব ব বলছেন?

তো কাকে বলব? এখানে আর কেউ আছে? 
না মানে! আমি আসলে খেয়াল করি নাই!
তা খেয়াল করবেন কেন? থাকেন তো শুধু ধান্দায়। 

পুতুলের কথা শুনে আবদুর রহমান আরও ঘাবড়ে যায়। সে ভাবে, নিশ্চয়ই তাকে সান্টিং দেওয়ার জন্য ডেকেছেন। তা না হলে পুতুল এমন আচরণ কেন করবে? ও নিশ্চয়ই জানে বিষয়টা। 

আবদুর রহমান এবার পুতুলকেও সমীহ করতে শুরু করল। সে কাচুমাচু করে বলল, ম্যাম কেন আমাকে ডাকছেন তা আপনি নিশ্চয়ই জানেন! 

আবদুর রহমানের সমীহ অবস্থা দেখে পুতুলের ভাব যেন বহুগুণে বেড়ে গেল। এমনিতেই মেম-সাহেবার সহকারী হিসেবে তার ভাবের কোনো সীমা-পরিসীমা নেই। সেই ভাবের ওপর সমীহ যোগ হলে তো কথাই নেই। গরম ভাতে ঘি পড়ার মতো অবস্থা। পুতুল হামবড়া ভাব নিয়ে বলল, ঠিকঠাক মতো কাজ-কাম করেন? নাকি শুধু ঘোরাফেরা সার!

পুতুলের কথায় আবদুর রহমান আরও ভয় পেয়ে যায়। সে কম্পিত কণ্ঠে বলল, এই চাকরির ওপর আমার সংসার। কাজ না করলে চাকরি থাকব? কাজের ব্যাপারে আমার কোনো গাফিলতি নাই।

ঠিক আছে। আপনি অপেক্ষা করেন। ম্যাম নাশতা করছেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই ডাকব আপনাকে। 

আবদুর রহমান মাথা নেড়ে সায় দেয়। পুতুল বিদ্যুতের বেগে আবার ঘরের ভেতরে ছুটে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই আবার আবদুর রহমানের কাছে ফিরে আসে। তাকে ডেকে নিয়ে যায় ভেতরের ঘরে। সে এক পা আগায়, দুই পা পেছায়, এরকম অবস্থা। পুতুল তাকে তাড়া দিয়ে বলে, কী হলো? দেরি করছেন কেন? কোনো সমস্যা?

আবদুর রহমান মুখে কিছু বলল না। সে না-সূচক মাথা নাড়ে। এক রকম টলতে টলতেই নীলিমার সামনে গিয়ে হাজির হয়। নীলিমা সোফায় হেলান দিয়ে বসে আছেন। আবদুর রহমান তার সামনে গিয়ে কুর্নিশের ভঙ্গিতে সালাম করল। তার পর সামনের দিকি ঝুঁকে দাঁড়িয়ে রইল। নীলিমা তাকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত একবার দেখলেন। তাকে রিড করার চেষ্টা করলেন। তার পর বললেন, আবদুর রহমান তুমি তোমার স্যারের সঙ্গে কতক্ষণ থাক?

আবদুর রহমান নরম গলায় বলল, স্যার যতক্ষণ বাসার বাইরে থাকেন। 
তাতে তোমার অসুবিধা হয় না? 

জি হয়। কিন্তু আমি তো স্যারের নিরাপত্তার দায়িত্বে। তাই...
আচ্ছা তোমার বাসা কই?
কাছাকাছিই। 
তোমার পরিবার আছে?
জি। 
ছেলেমেয়ে?
এক ছেলে। 
বউ কিছু করেন?
জি না। 
তোমার বেতন কত?
ত্রিশ হাজার। আর স্যার মাঝে-মধ্যে খুশি হয়ে বকশিশ টকশিশ দেন। 
হুম। 
তা দিয়ে ঠিকমতো সংসার চলে?
যে মাসে ভালো বকশিশ পাই, সে মাসে ঠিকমতো চলে। যে মাসে কম পাই সে মাসে টানাটানি হয়। 
গত কিছুদিন যে দেরি করে বাসায় আসে। তোমরা কোথায় যাও?

আবদুর রহমান বলবে কী বলবে না, তা নিয়ে ভাবে। নীলিমা তাকে অভয় দিয়ে বলেন, ভয় পেও না। তোমার চাকরি যাবে না। তুমি নির্ভয়ে বলো। না বললে বরং চাকরি যাবে। আমি তো সবই জানি। যাচাই করার জন্য তোমাকে ডেকেছি। 

আবদুর রহমান ভয়ে ভয়ে বলল, স্যার কয়েকদিন ধরে ওয়েস্টিন হোটেলে যাচ্ছেন। 
দিনের বেলা গুলশানে কোথায় যায়?
কয়েকদিন আগে একটা অফিসে গেছিল। 
কার অফিস?

আবদুর রহমান মাথা নিচু করে চুপ করে আছে। কোনো কথা বলছে না। এবারও সে বলবে কী বলবে না, তা নিয়ে ভাবে। নীলিমা আবারও তাকে অভয় দিয়ে বললেন, বললাম তো তোমার কোনো অসুবিধা হবে না। তবে মিথ্যা তথ্য দিলে অবশ্যই তোমার সমস্যা হবে। আমি না জেনে তো তোমাকে এত প্রশ্ন করছি না। কোথায় গিয়েছিল বলো?
আবদুর রহমান কম্পিত কণ্ঠে বলল, এক ম্যাডামের অফিসে। 

কী নাম তার?
নাম মনে করার চেষ্টা করে আবদুর রহমান। এর মধ্যেই নীলিমা বলল, মোহিনী ম্যামের অফিসে?
জি জি। 

নাম কি মনে ছিল না? নাকি ইচ্ছা করে বলনি?
আবদুর রহমান শুকনো গলায় বলল, সরি মনে ছিল না। 

নীলিমা ১০ হাজার টাকার একটি প্যাকেট আবদুর রহমানের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, এটা রাখো। এর পর সবকিছু লিখে রাখবে। আমায় প্রতিদিন জানাবে তোমার স্যার কোথায় যায়। তা না হলে তোমার চাকরি থাকবে না। 

আবদুর রহমান চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। সে কোনো কথা বলছে না। কী করবে তাও বুঝতে পারছে না। নীলিমা তাগাদা দিয়ে বললেন, টাকাটা পকেটে ঢোকাও। আমি যে তোমাকে ডেকেছি এ কথা কেউ জানবে না। কাকপক্ষিও না। 

আবদুর রহমান কাচুমাচু করে টাকার প্যাকেট পকেটে ভরতে ভরতে মাথা নেড়ে নীলিমার কথায় সায় দেয়। নীলিমা দরাজ গলায় পুতুলকে ডাকেন। পুতুল পুতুল!

পুতুল হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসে তার কাছে। নীলিমা তাকে বললেন, ওর কাছ থেকে ফোন নম্বরটা রাখো। আমি যখন ওকে আসতে বলব তুমি ফোনে ওর সঙ্গে কথা বলে সময় ঠিক করে নেবে। 
জি ম্যাম। 

পুতুল ফোন নম্বর রাখল। তার পর আবদুর রহমান চলে গেল। নীলিমা সোফায় হেলান দিয়ে বসেই আছে। মোহিনী নামক পোকা এখন তার মাথায়। 

আবদুর রহমান প্রতি সপ্তাহেই নীলিমার সঙ্গে দেখা করে। তাকে শাহবাজ খানের বিষয়ে তথ্য দেয়। নীলিমা খুশি হয়ে তাকে বকশিশ দেন। প্রতিবারই সে ১০ হাজার টাকা বকশিশ পায়। ফলে বেতন-বকশিশ মিলিয়ে প্রায় লাখ টাকা সে আয় করে। হঠাৎ বদলে যায় আবদুর রহমান। টাকার গরম বলে একটা কথা আছে না! বিশ হাজার টাকা বেতনের চাকরিতে যদি লাখ টাকা আয় হয় তাহলে মাথা তো বিগড়াবেই। আর সেটা সবার আগে স্ত্রীর কাছেই ধরা পড়বে। বাস্তবে তাই ঘটেছে। স্ত্রী আয়শা বেগম আবদুর রহমানের অতিরিক্ত টাকার উৎস জানতে চায়। আবদুর রহমান কিছুতেই মুখ খুলতে রাজি নয়। সে শুধু বলে, বিশ্বাস করো, বাড়তি টাকাটা আমি বকশিশ পাই। 

আয়শা বেগম বলল, বকশিশ তো তুমি আগেও পেতে। তখন তো এত টাকা দেখিনি! হঠাৎ এত টাকা কোথা থেকে এল! তুমি ভালোয় ভালোয় বলো তো ভালো! নইলে আমি কিন্তু তুলকালাম করব। 

আবদুর রহমান স্ত্রীর কাছে সব কথা খুলে বলল। সব শুনে আয়শা বেগম বলল, তুমি কিন্তু বড় ধরনের একটা বিপদে পড়বে। তোমার চাকরির দরকার নেই। তুমি চাকরি ছাড়ো। 

কি বল! চাকরি ছাড়লে আমরা চলব কী করে?

চলো গ্রামে চলে যাই। এখানে থাকা মোটেই নিরাপদ না। 

কেন, আমি কি অসৎ পথে আয় করছি। আমি বকশিশ পাচ্ছি। 

শোন, বকশিশ তুমি কী করে পাচ্ছ? স্যারের কথা ম্যাডামকে লাগাচ্ছ। এটা অন্যায়। ভয়ংকরও বটে। তুমি স্যারের চাকরি করে তার সঙ্গে নিমকহারামি করছ। 

আমি কী করব? ম্যাডাম জানতে চান। তাকে না বললেও তো চাকরি যাবে। 

চলবে...

কবিতার কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়

প্রকাশ: ২১ মার্চ ২০২৫, ০৪:২১ পিএম
কবিতার কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়
শক্তি চট্টোপাধ্যায়

জীবনানন্দোত্তর বাংলা কবিতার প্রধান কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়। জন্ম ১৯৩৩ সালের ২৫ নভেম্বর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার জয়নগরে। পিতা রামনারায়ণ চট্টোপাধ্যায় এবং মাতা কমলা দেবী। কর্মজীবনে কবি বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত থাকলেও কোনো পেশায় দীর্ঘস্থায়ী ছিলেন না। একসময় ব্যবসা, পরবর্তীতে শিক্ষকতা, তার পর মোটর কোম্পানিতে চাকরি এবং শেষবার ১৯৭০ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকায় কাজ করেছেন। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘হে প্রেম, হে নৈশব্দ’ (১৯৬১); প্রথম উপন্যাস ‘কুয়োতলা’ (১৯৬১)। স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছেন ‘আনন্দ পুরস্কার’ (১৯৭৫), ‘সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার’ (১৯৮৩)-সহ একাধিক পুরস্কার। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় লিখেছিলেন, শুধু কবিতার জন্য এই জন্ম- এরকম লাইন আমি লিখেছি, কিন্তু নিজের কাছে এ প্রতিশ্রুতি রক্ষা করিনি, অন্য দিকে চলে গেছি। এই লাইনটি বরং শক্তির ক্ষেত্রে সত্যি। ভয়ংকর খাদের কিনারা ধরে হেঁটে যাওয়া।…

ভাষা ও স্বাধীনতা হলো জাতির অস্তিত্ব ও মুক্তি

প্রকাশ: ২১ মার্চ ২০২৫, ০৩:৩৩ পিএম
ভাষা ও স্বাধীনতা হলো জাতির অস্তিত্ব ও মুক্তি

‘ভাষা’ ও ‘স্বাধীনতা’ কবিতার অন্ত্যমিলের মতোই পাশাপাশি দুটি অন্তর্নিহিত শক্তিশালী শব্দ। ভাষা হলো একটি জাতির অস্তিত্ব আর স্বাধীনতা হলো জাতির মুক্তি। বাঙালিরা এই দুটি শব্দের জন্য সংগ্রাম করেছে এবং জীবন দিয়ে। প্রথমেই আসা যাক, কীভাবে ভাষা একটি জাতির অস্তিত্ব বা পরিচয়? ধরুন একটি নদী, কলস্রোতা নদী, ধীরে ধীরে সেই নদীটি পানি হারাচ্ছে, একসময় সেই নদীটি মরে গেল। আসলে পানি ছাড়া নদী বাঁচে না, ভাষাও পানির মতো, জাতির ভাষা হারিয়ে গেলে, সেই জাতি আস্তে আস্তে বিলুপ্ত হয়ে যায়। কীভাবে হারিয়ে যায়? চলুন সেদিকে একটু নজর দেওয়া যাক। আমরা জানি, বর্তমানে পৃথিবীতে ১৯৫টি দেশে ৭ হাজার ৯৯টি ভাষা প্রচলিত আছে। অর্থাৎ কোনো কোনো দেশে একাধিক ভাষা আছে, খুব কাছে থেকে উদাহরণ দিচ্ছি- আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের বর্তমান জনসংখ্যা ১৪০ কোটি ৭৫ লাখ ৬৩ হাজার ৮৪২ জন এবং তাদের ২৮টি অঙ্গরাজ্যে সাংবিধানিক স্বীকৃত ২২টি ভাষা রয়েছে (তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া)। 

১৯৯৪ সালে লেখক অন্নদাশঙ্কর রায় তার কলকাতার বাসায় আমার সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘দেখো পৃথিবীতে তোমরাই একমাত্র সংগ্রামী ও গৌরবান্বিত জাতি, যারা মাতৃভাষা প্রতিষ্ঠার জন্য প্রাণ দিয়েছ, সুতরাং ভাষার মর্যাদা যে জাতি দেয়, সে জাতি পৃথিবীতে ভাস্বর হয়ে থাকে’ কথাটি বলছিলেন পশ্চিমবঙ্গে ৫০ বছর পর বাংলা ভাষার প্রচলন থাকবে কি না, এই প্রসঙ্গে। কারণ হিসেবে বলেছেন যে, ‘কখনো কখনো একটি ভাষা অন্য একটি ভাষাকে ধীরে ধীরে গ্রাস করে ফেলে। যেমন হিন্দির যে প্রভাব ও বিস্তার ঘটছে পশ্চিমবঙ্গে, তাতে আশঙ্কা করছি এখানে বাংলা ভাষা ৫০ বছর বিলুপ্ত হয়ে যায় কি না।’ এই যে বাংলা ভাষার কথা তিনি বললেন, সেটির ত্যাগ ও মহিমার কথা একবার চিন্তা করুন সবাই। 

আমরা সবাই জানি, ‘১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে এ আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ ধারণ করলেও বস্তুত এর বীজ রোপিত হয়েছিল বহু আগে; অন্যদিকে এর প্রতিক্রিয়া এবং ফলাফল ছিল সুদূরপ্রসারী। ১৯৪৭ সালে দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ব্রিটিশ ভারত ভাগ হয়ে পাকিস্তান অধিরাজ্য ও ভারত অধিরাজ্য নামক দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের উদ্ভব হয়। পাকিস্তানের ছিল দুটি অংশ: পূর্ব বাংলা ও পশ্চিম পাকিস্তান। ১৯৪৮ সালে পাকিস্তান অধিরাজ্য সরকার পূর্বপাকিস্তান তথা পূর্ব বাংলাকে ইসলামীকরণ তথা আরবীকরণের অংশ হিসেবে ঘোষণা করে যে, উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা, পাশাপাশি বিকল্প হিসেবে আরবি হরফে বাংলা লিখন অথবা সমগ্র পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা আরবি করারও প্রস্তাব দেওয়া হয়। আবার পুরো পাকিস্তানের সব ভাষা লাতিন হরফে লেখার মাধ্যমে বাংলার রোমানীকরণের প্রস্তাবও করা হয়। এসব ঘটনার প্রেক্ষাপটে পূর্ব বাংলায় অবস্থানকারী বাংলাভাষী সাধারণ জনগণের মধ্যে গভীর ক্ষোভ জন্ম হয় ও বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। কার্যত পূর্ব বাংলার বাংলাভাষী মানুষ আকস্মিক ও অন্যায্য এ সিদ্ধান্তকে মেনে নিতে পারেনি। ফলস্বরূপ মাতৃভাষা বাংলার সমমর্যাদার দাবিতে পূর্ব বাংলায় আন্দোলন দ্রুত দানা বেঁধে ওঠে। আন্দোলন দমনে পুলিশ ১৪৪ ধারা জারি করে ঢাকা শহরে মিছিল, সমাবেশ ইত্যাদি বেআইনি ও নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি (৮ ফাল্গুন ১৩৫৮) এ আদেশ অমান্য করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু সংখ্যক ছাত্র ও প্রগতিশীল কিছু রাজনৈতিক কর্মী মিলে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন। মিছিলটি ঢাকা মেডিকেল কলেজের কাছাকাছি এলে পুলিশ ১৪৪ ধারা অবমাননার অজুহাতে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলিবর্ষণ করে। গুলিতে নিহত হন বাদামতলী কমার্শিয়াল প্রেসের মালিকের ছেলে রফিক, সালাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের এমএ ক্লাসের ছাত্র বরকত ও আব্দুল জব্বারসহ আরও অনেকে। শহিদদের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হয়ে ওঠে। শোকাবহ এ ঘটনার অভিঘাতে সমগ্র পূর্ব বাংলায় তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ২১ ফেব্রুয়ারির ছাত্র হত্যার প্রতিবাদে সারা দেশে বিদ্রোহের আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে। ২২ ও ২৩ ফেব্রুয়ারি ছাত্র, শ্রমিক, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক ও সাধারণ জনতা পূর্ণ হরতাল পালন করে। ২২ ফেব্রুয়ারি পুলিশের গুলিতে শহিদ হন শফিউর রহমান শফিক, রিকশাচালক আউয়াল এবং অলিউল্লাহ নামের এক কিশোর। ২৩ ফেব্রুয়ারি ফুলবাড়িয়ায় ছাত্র-জনতার মিছিলেও পুলিশ অত্যাচার-নিপীড়ন চালায়। এ নির্লজ্জ, পাশবিক, পুলিশি হামলার প্রতিবাদে মুসলিম লীগ সংসদীয় দল থেকে সেদিনই পদত্যাগ করেন। ভাষা আন্দোলনের শহিদ স্মৃতিকে অম্লান করে রাখার জন্য মেডিকেল কলেজ হোস্টেল প্রাঙ্গণে রাতারাতি ছাত্রদের দ্বারা গড়ে ওঠে শহিদ মিনার, যা ২৪ ফেব্রুয়ারি উদ্বোধন করেন, শহিদ শফিউর রহমানের পিতা। ২৬ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে শহিদ মিনারের উদ্বোধন করেন, দৈনিক আজাদ পত্রিকার সম্পাদক আবুল কালাম শামসুদ্দীন। ক্রমবর্ধমান গণ-আন্দোলনের মুখে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার শেষ পর্যন্ত নতি স্বীকার করতে বাধ্য হয় এবং ১৯৫৪ সালের ৭ মে পাকিস্তান গণপরিষদে বাংলা অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গৃহীত হয়। ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের প্রথম সংবিধান প্রণীত হলে ২১৪নং অনুচ্ছেদে বাংলা ও উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে উল্লেখিত হয়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হলে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলা প্রবর্তিত হয়’। 

এখন আমাদের করণীয় কী? করণীয় হলো- সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালু করা। শুদ্ধ বাংলা চর্চা করা, কথনে, পঠনে ও লিখনে বাংলাকে সুন্দর করে যত্ন করা। এই যত্নে অবহেলা করা যাবে না। কারণ মনে রাখতে দুটি কথা- ১. এই ভাষা প্রতিষ্ঠা হয়েছে রক্তের বিনিময়ে ও ২. ভাষার মর্যাদা না দিলে, চর্চা না করলে, মায়ের মলিন মুখের মতোই হয়ে যাবে, জলবিহীন নদীর মতোই ধীরে ধীরে মরে যাবে। মনে রাখতে হবে ভাষা জাতির আত্মা। আমরা নিশ্চয়ই আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ইংরেজি কিংবা অন্যান্য প্রয়োজনীয় ভাষা ব্যবহার করব, তবে তা মাতৃভাষা বাংলাকে বাদ দিয়ে বা পাশ কাটিয়ে বা অপমান করে নয়। হাজার বছরের লালিত নিজস্ব পরিচয়ের শক্তি ভাষাকে পাশ কাটালে, নিজেকেই ঠকানো হবে। শিশুরা যেমন দুধ খেতে মায়ের কাছে গিয়ে আবদার করে, তেমনি ভাষাও শিশুর মতো, তাকে হাতে হাতে পরম্পরায় না রাখলে, সে অভিমান করে, পালিয়ে অগোচরে। ভাষা প্রাণ, ভাষা প্রাণ। তাকে জীবিত রাখতে হয়। ভাষার এই জীবনের নাম আদর। তাই আসুন ভাষাকে আদর করি- ভাষা ও দেশ, মায়ের নন্দিত মুখ। ভালোবাসি দেশ, স্বাধীনতা যুদ্ধে অর্জিত বাংলাদেশ।

পুরোনো রণক্ষেত্র

প্রকাশ: ২১ মার্চ ২০২৫, ০৩:২৪ পিএম
আপডেট: ২১ মার্চ ২০২৫, ০৩:২৫ পিএম
পুরোনো রণক্ষেত্র
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

ধুলোবালি মাখা বাতাস বইছে। চোখ মেলে তাকানো যায় না। পেছনের রিকশা থেকে গলা বাড়িয়ে শিউলি জিজ্ঞেস করে- আর কয় মাইল হবে আলম ভাই?
মাইল চারেক, কষ্ট হচ্ছে খুব?
না, ঠিক আছে।

শাহ আলম মাথা ঘুরিয়ে পেছনের রিকশাটার দিকে তাকায়। পুরোনো ব্রহ্মপুত্রের শরীরটা আগের মতো নেই বলে সহজেই পাড়ি দেওয়া গেছে। অমসৃণ মেঠো পথের ঝাঁকুনি সত্ত্বেও অনেকদূর আসা গেছে। কংক্রিটের সড়ক হলেও দেশ স্বাধীনের পর খুব একটা মেরামত হয়নি। এমন সড়কে হাঁটা তবু ভালো, রিকশায় চাপলে জান বেরোবার জোগাড় হয়।

শেরপুর পেরোতেই সড়কের চেহারা আরও সঙ্গিন মনে হয়। যত্রতত্র ইঁদুরের গর্ত। ট্রাক ও মহাজনি মোষের গাড়ি চলে খাদ-খন্দকে বেহাল বানিয়েছে সড়ক। অতএব দুজন নারী সহযাত্রীর অবস্থা সহজেই অনুমান করতে পারে শাহ আলম। বৃদ্ধ ভদ্রমহিলা অনেকটা পথ শক্তি সঞ্চয় করে টিকেছিলেন। ভেবেছিলেন- কষ্ট তো হবেই। কিন্তু আরও মাইল কয়েক চলার পর শরীরটাকে আর সামলে রাখতে পারলেন না তিনি। মেয়ে শিউলির বুকে মাথা রেখে বললেন- আমাকে একটু ধরবি, মা।

ঢাকা থেকে বাসে জামালপুর পৌঁছাতেই পাঁচ ঘণ্টার বেশি লেগেছে। বৃদ্ধার শরীর ভেঙে গেছে তখনি। তবু কিছু বলেননি। কিন্তু খেয়াঘাট পেরিয়ে রিকশাটা চলতেই তিনি কাঁপতে থাকলেন। তার মতো একজনের এরকম ধকল সইবার কথা নয়। কিন্তু শরীর আজ তার কাছে বড় নয়, যে করেই হোক তিনি গন্তব্যে পৌঁছতে চান।

আরও ঘণ্টা খানেক পর সড়কের পাশে বড় একটা আমগাছ দেখতে পায় শাহ আলম। গাছটাকে বেশ চেনা মনে হয়। শাহ আলম রিকশা থেকে নামে। পা দুটো জমে গেছে, রগগুলো টনটন করছে। যতদূর মনে পড়ে, এই গাছটার নিচে অনেকবারই তারা বিশ্রাম নিয়েছে যুদ্ধের সময়। 

গাছটাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে থাকে মুক্তিযোদ্ধা শাহ আলম। অনেক বছরের ব্যবধানে অনেক বদলে গেছে। আগের শরীর নেই। তবু চেনা যায়। পাশের পুলটি আজও সে রকম, তেমন মেরামত হয়নি। দক্ষিণের বিলটা প্রায় জলশূন্য। মুক্তিযোদ্ধা শাহ আলম চিনতে পারে এলাকাটি।

পেছনের রিকশাটা ইতোমধ্যে কাছে আসে। শাহ আলম এগিয়ে গিয়ে বলে, মা, নামুন, একটু বিশ্রাম নিন।

বৃদ্ধাকে হাত ধরে রিকশা থেকে নামিয়ে দেয় শাহ আলম। পা ফেলতেই ধপাস করে হাঁটু ভেঙে বসে পড়েন বৃদ্ধ মহিলা। জিরজিরে শরীরে এমন ধকল সইবার কথা নয়।

ওরা যখন আমগাছের নিচে বসে খানিকটা জিরিয়ে নেওয়ার কথা ভাবছিল, ঠিক তখনই গাছটার পাতা কাঁপিয়ে, ডালপালা বেয়ে এক পশলা ঠাণ্ডা বাতাস বয়ে যায়। শিউলি সঙ্গে সঙ্গেই বলে ওঠে- ইশ কী ঠাণ্ডা, বৃষ্টি হবে নাকি আলম ভাই?
হবে হয়তো, এ সময় তো বৃষ্টি হয়, যা গরম।

ব্যাগ থেকে রুমাল বের করে শিউলি মুখের ঘাম মুছতে থাকে। ইতোমধ্যে গাছের গোড়ালিতে শরীর ঠেকিয়ে বসে পড়েন বৃদ্ধা। চোখ ঘুরিয়ে জায়গাটা দেখতে থাকেন। আগে কখনো আসা হয়নি এখানে। কোনোদিন আসতে হবে তাও ভাবেননি, অথচ এসেছেন। কেন, কীসের টানে, অজানা-অচেনা এলাকাটি এত বছর পর এলেন তিনি? সবার অগোচরে আঁচলে চোখ মুছলেন বৃদ্ধা। 

গারো পাহাড়ঘেঁষা জামালপুর - শেরপুর অঞ্চল। ব্রহ্মপুত্র নদ ও বেশ কয়েকটি স্রোতস্বিনী বয়ে গেছে উত্তর জনপদের এলাকাটার মাঝ দিয়ে। পূব দিকে যমুনা, পশ্চিমে পুরোনো ব্রহ্মপুত্র। অনেক বছর হয়ে গেলেও চিনতে খুব একটা অসুবিধা হয়নি শাহ আলমের। আরও মাইল কয়েক গেলেই তার স্মৃতির রণাঙ্গন। সামনের একটা কংক্রিটের পুল দেখে শিউরে ওঠে মুক্তিযোদ্ধা। মনে পড়ে - এই পুলটায় অ্যাম্বুশ বসিয়ে একবার সেনা ও রসদ বোঝাই তিনটি পাকিস্তানি ট্রাক উড়িয়ে দিয়েছিল ওদের প্লাটুন। 

অক্টোবরের শেষ। পাকিস্তানি সেনারা প্রায় সব রণাঙ্গনে কোণঠাসা হয়ে পড়ছে। একদিন ভোর হতে না হতেই সেনাভর্তি জিপ ও ট্রাক আসতে থাকে জেলা শহর থেকে। দুপাশের জঙ্গলে সারা রাত লুকিয়ে থাকে ১৫ জনের একটি গেরিলা দল। নির্ধারিত সময়ে শাহ আলমের হাতে মেশিনগানের ব্যারেল কেঁপে ওঠে। পুলের ওপর গাড়িগুলো উঠতেই বিকট শব্দে মাইন ফাটে। ভোর রাতের বাতাস তোলপাড় হতে থাকে। খেতের ফসল কেঁপে ওঠে। জয় বাংলা বলে একসঙ্গে চিৎকার দিয়ে ওঠে সবাই। 
তারপর?

পরের ঘটনাটা মনে করার চেষ্টা করেন শাহ আলম। নস্টালজিয়া থেকে তাকে বর্তমানে ফিরিয়ে আনে শিউলি। বলে, জায়গাটা আপনার খুব চেনা - ভাইয়া কি এখানেই? 

শিউলির সহজ প্রশ্ন শাহ আলমকে কাঁপিয়ে তোলে। এত সহজে এ রকম কোনো প্রশ্ন কি করা যায়! কিন্তু সে শান্ত থাকে। বলে, ঠিক বলেছো, এলাকাটা আমার বেশ চেনা - অনেক স্মৃতি আছে এখানে।
আর ভাইয়া? 

না, সে জায়গাটা এখানে নয় - কামালপুরে - আরও বেশ খানিকটা যেতে হবে আমাদের। 

১৯৭১ সালে শিউলির বয়স অনেক কম। চোখের সামনে মুক্তিযুদ্ধের মতো বিশাল ঘটনা ঘটে গেলেও ওর মনে তেমন দাগ কাটেনি। শিউলিদের নতুন নতুন জেনারেশন তৈরি হয়েছে। পলাতক সময় অতীত ভুলিয়ে দিচ্ছে। শাহ আলম এবং শিউলির আবেগের মাঝে তাই বিস্তর ফারাক।

বুড়ো ভদ্র মহিলা ইতোমধ্যে সামনের একটি বাড়ি থেকে ফিরে এলেন। বহুমূত্র রোগ তার। ফিরেই বললেন - কামালপুরটা আর কদ্দুর রে বাবা? 

এইতো মা, সামনেই। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই পৌঁছে যাব। আপনার খুব কষ্ট হচ্ছে বুঝতে পাচ্ছি, কিন্তু করার যে কিছু নেই মা। রাস্তাঘাট খুবই খারাপ।

কীসের কষ্ট রে - এসেই তো গেলাম। তুই যা উপকার করলি বাবা, কাজকর্ম ফেলে ছুটলি আমাদের সঙ্গে। তুই বাঁচালি, বাবা, বাঁচালি আমাকে। 

এই বৃদ্ধাকে কী এমন উপকার করেছে শাহ আলম? সন্তানের বধ্যভূমি দেখতে যাবেন মা। গোটা দেশটাই আশা-আকাঙ্ক্ষার আরেক বধ্যভূমি হতে বসেছে। একজন সহযোদ্ধার মাকে না হয় কিছুটা সময়ই দিয়েছে সে - আর বেশি কী! প্রথম দিকে শাহ আলম চেষ্টা করেছিল সহযোদ্ধার মাকে ফেরাতে। বোঝাবার চেষ্টা করেছিল - এত বছর পর হয়তো কোনো চিহ্নই থাকবে না সেখানে - শুধু শুধু কষ্ট বাড়িয়ে লাভ কী? বলেছিল - মা, একটা কথা বলি, শুধু শুধু মনটা খারাপ করে কী লাভ?
কী লাভ জানিনে বাবা, একটি বার তুই নিয়ে চল - শুধু একবার।

ভারত সীমান্তঘেঁষা এলাকাটা শাহ আলমের চেনা। বর্ডারের সামান্য ভেতরে ইপিআরের ক্যাম্প, তাকে ঘিরে শক্ত ঘাটি বানিয়েছে পাকিস্তানি সেনারা। বহু সহযোদ্ধার রক্তে রঞ্জিত এলাকা। অনেক স্মৃতি তার এখানে। সেই পুরোনো রণক্ষেত্রের স্মৃতি বুকে ধারণ করে মুক্তিযোদ্ধা শাহ আলম ফিরে যাচ্ছে আজ সেখানে। কেন যেন তার মনে হতে থাকে - এমন এক স্বপ্নরাজ্যে প্রবেশ করছে সে - যেখানে সে ছিল জননন্দিত রাজদ্রোহী - প্রজার রক্ত শোষণ করা রাজাধিরাজের সিংহাসন ভেঙে টুকরো টুকরো করে দিতে হাজারো-লাখো রাজবিদ্রোহী হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছিল তখন! সে এক বিস্ময়কর অনুভূতি! শত্রুকে পরাস্ত করে স্বাধীনতার প্রত্যাশায় মহান এক রণযাত্রা! রক্ত নদীতে স্নান করে বাঙালির বাঙালি হয়ে বসবাসের মহোৎসব!

কিন্তু আজ কে শত্রু কে মিত্র বোঝা যায় না। সবকিছু পাল্টে গেছে। স্বাধীনতার পতাকা নামিয়ে দিতে আসছে অচেনা মানুষ। শাহ আলমের হাতে আজ রাইফেল নেই। সেদিনের বন্ধুরা কে কোথায় সে খোঁজও জানে না সে। 

রিকশা এগিয়ে চলছে। কড়কড়ে রোদে চালক দুজন ঘেমে অস্থির। একজন বেশ বৃদ্ধ - শরীরে অপুষ্টির চিহ্ন। তবে চোখ দুটো বেশ উজ্জ্বল মনে হয়। শাহ আলম ওদের ঘর্মাক্ত দেহের দিকে তাকিয়ে থাকে। জিজ্ঞেস করে - পরিবার আর আছে ভাই ?
আল্লায় দিলে আছে কয়েকজন। 
ছেলেমেয়ে?
তাও আছে।

হঠাৎ শাহ আলমের চোখ যায় লোকটার বাঁ হাতের দিকে। লক্ষ করলেই বোঝা যায় শক্ত কোনো আঘাতে গভীর ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছিল কখনো। 

হাতে কী হয়েছিল?
রেজাকারে ধইর‌্যা পাক-বাহিনীর ক্যাম্পে দিছিল। বাইনট দিয়া খুঁচাইছে, জানে মরি নাই খোদার রহমে।

রিকশাওয়ালার কথায় শাহ আলমের চোখে ৭১ সাল ভেসে ওঠে। প্রাচীন দেখার আরশিতে চোখ রাখে সে। শেরপুর-জামালপুরের মধ্যবর্তী এলাকাটা হঠাৎ সবাক চলচ্চিত্র হয়ে ওঠে। স্বচ্ছ মন্ত্র পড়া আয়নায় নাকি দূর অতীতের ছবি দেখা যায়। অনেক জাদুকর নাকি পারেন এমন অসম্ভব সাধন করতে।
তুমি মুক্তিযোদ্ধা ছিলে?

না স্যার, ছোট ছিলাম, মুক্তিগর ক্যাম্পে যাতায়াত করতাম, খবরাখবর দিতাম।
ওরা তো তোমাকে মেরেও ফেলতে পারত? 

কত মানুষই তো মরল বাবা, সব্বনাসী একাত্তর কত মানুষের জান নিল, কত মানুষ শহিদ হইল। কিন্তু আল্লাহ তো শেষ পর্যন্ত বাঁচাইয়া রাখল আমারে। 

পড়ন্ত বিকেলে রণক্ষেত্র কামালপুরের সীমানায় এসে দাঁড়ায় রিকশা দুটি। পুরোনো রণক্ষেত্রে পা রাখতেই দেহটা কেঁপে উঠে শাহ আলমের। না, এখানে আজ কোনো বাংকার নেই। যত্রতত্র পড়ে নেই বুলেট ও মর্টারের খোসা। সেই কামালপুরকে চেনার কোনো উপায় নেই। নতুন ফসলের মাঠ। যত্রতত্র ঘরবাড়ি। ইপিআর ক্যাম্পটির নাম বদলে হয়েছে বিডিআর ক্যাম্প। নবীন বৃক্ষরাজি বেড়ে ওঠে ইতিহাসের কামালপুরকে এক অচেনা জনপদ বানিয়েছে। একাত্তরের ৯ মাসে অসংখ্য জনযোদ্ধা এই মাটিতে প্রাণত্যাগ করেছে, এখানেই স্বাধীনতার জন্য আত্মবলি দিয়েছে অগণিত বাঙালি যুবক। এসবের কিছুই অবশিষ্ট নেই আজ!

শহিদ সাদেক আহমদের মাকে ধরে রিকশা থেকে নামায় শাহ আলম। মাটিতে পা রেখেই বৃদ্ধা বললেন, একটু পানি পাওয়া যাবে, বাবা, তেষ্টা পেয়েছে।
নিশ্চয়ই মা, আমি পানি আনছি।

বলেই শাহ আলম পানির খোঁজে বেরিয়ে যায়। কিন্তু কোথায় যাবে? দুর্ধর্ষ গেরিলা কমান্ডার শাহ আলম এবং সাদেক আহমদকে একদিন এ অঞ্চলের প্রতিটি মানুষ চিনত। ভালোবাসা উজাড় করে দিত। কিন্তু সবকিছুই বদলেছে। গাছ, ঘরবাড়ি, দোকানপাট সব বদল হয়েছে। শাহ আলম তবু হাঁটতে থাকে। 

ব্যস্ত মানুষ যার যার কাজে চলেছে। স্কুল থেকে দলবেঁধে ফিরছে একদল বালিকা। ভারত সীমান্তের উঁচু বাঁধটা দেখা যাচ্ছে। ধানুয়া গ্রামটা দাঁড়িয়ে আছে সেই আগের মতো। এক থেকে সাত নম্বর পর্যন্ত বাংকার ছিল এই গ্রামে। উঁচু একটি তালগাছ দাঁড়িয়ে থাকত ভারত-বাংলাদেশের সীমান্তঘেঁষে। শাহ আলম দেখল সে গাছটি নেই।

চোখ ছল ছল করে ওঠে মুক্তিযোদ্ধা শাহ আলমের। মনে আক্রোশ জমে ওঠে। কেন এই রণক্ষেত্রের সব নরনারী, গাছপালা, পাখি, কীটপতঙ্গ সবাই আজ ছুটে আসছে না? প্রতিটি দোকানপাট, প্রতিটি বাড়ি, প্রতিটি ফসলের খেত থেকে কেন ছুটে আসছে না হাজার কৃতজ্ঞ মানুষ বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদ সাদেক আহমদের মায়ের তৃষ্ণা নিবারণ করতে?

কিন্তু সে আশা পূরণ হয় না। কেউ তাকে চিনতে পারে না। কেউ এগিয়ে আসে না। মুক্তিযোদ্ধা শাহ আলমের চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে হয় - তোমরা কেউ কি মনে করতে পারো - আমি সেই কমান্ডার শাহ আলম, আর ওই তো সেই মা, যার সন্তান সাদেক আহমদ রক্ত তোমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছে।

বেশ খানিকক্ষণ পর একটি চা দোকান থেকে এক গ্লাস পানি হাতে ফিরে আসে শাহ আলম। শহিদ মুক্তিযোদ্ধা সাদেক আহমদের মা তখন বিডিআর ক্যাম্পের উপরে জাতীয় পতাকার দিকে অপলক তাকিয়ে আছে। ওই তো সেই পতাকা- যার গায়ে তার সন্তানের রক্তের দাগ!
মা, এই যে পানি।

কোনো কথা না বলে স্পষ্ট, সোজাসুজি তাকালেন বৃদ্ধা। হঠাৎ বদলে গেল পরিস্থিতি। শাহ আলম মাথা নিচু করে বলল, মা, এই যে পানি এনেছি আপনার জন্য। 

শিউলি ঠিক তখনি এগিয়ে গেল মায়ের কাছে। বলল - পানি খেতে চাইলেন না আপনি? নিচ্ছেন না যে?

হঠাৎ আকাশ ফাটা আর্তনাদ করে শহিদ সাদেক আহমদের মা ডুকরে উঠলেন। দুই হাত বাড়িয়ে শাহ আলমকে জাপটে ধরলেন। - আমি পানি চাই না বাবা, তুই শুধু বল - কোন জায়গায়, ঠিক কোন জায়গায় আমার বাবাকে ফেলে গেছিস তোরা? একবার বল - কোন জায়গায় - কোন জায়গায়?

উন্মাদের মতো বিলাপ করতে থাকলেন শহিদ জননী। বারবার করে ডুকরে উঠলেন - বাবা-বাবারে, জাদুমণি রে। আয় বাবা, আয়। একবার, শুধু একবার বুকে আয়।

কিছুতেই থামালেন না বৃদ্ধা। সে রোদনে গাছের ডালে বসা পাখিরা গান থামিয়ে দিল। গরু-ছাগলগুলো সকরুণ চোখে তাকিয়ে থাকল। শহিদ সাদেক আহমদের মায়ের হাতের ঝাঁকুনিতে গ্লাসের পানি পুরোনো রণক্ষেত্রের মাটিতে ছড়িয়ে পড়ল। পানির রং গাঢ় লাল হয়ে শাহ আলম ও শিউলির শরীর, কাপড় রাঙিয়ে দিল। 

মাটিতে আছড়ে পড়তে থাকলেন শহিদ জননী। কেবলই বলতে থাকলেন - শুধু একবার জায়গাটা দেখিয়ে দে বাবা। বল, আমার সাদেক কোথায় শুয়ে আছে? আমি আমার বাবার কাছে শুয়ে থাকব।

মায়ের রোদনে চোখ ভিজে ওঠে শিউলির। শিশু বয়সের স্মৃতি মনে না পড়লেও চোখের সামনে নিজের ভাইয়ের রক্তাক্ত শরীর ভেসে ওঠে। দ্রুত খুলে যায় ঢেকে রাখা বিস্মৃতির চাদর। রণক্ষেত্র কামালপুরের মাটি ওর কাছে তীর্থভূমি মনে হয়। চোখ দিয়ে অবিরল ধারায় পানি গড়িয়ে পড়তে থাকে। 

লোকজন জমে যায় ইতোমধ্যে। কেউ কেউ প্রশ্ন করে - কে এই বৃদ্ধা, কেন কাঁদছেন তিনি? এমন প্রশ্নে বোবা হয়ে যায় শাহ আলম। জড়ো হওয়া মানুষগুলোর ওপর আক্রোশ বাড়তে থাকে। শহিদের মাকে সে থামাতে চেষ্টা করে না, কাঁদুক, যত পারে কাঁদুক শহিদ সহযোদ্ধার মা।

শাহ আলমের কানে তখন রাইফেল, মর্টার এবং এলএমজির গর্জন ছাড়া কিছুই পৌঁছে না। ১৪ দিন অবরুদ্ধ কামালপুরের শত্রুঘাঁটি। মুক্তিবাহিনী ঘিরে রেখেছে দুর্ভেদ্য পাকিস্তানি ক্যাম্প। অবিরত গোলাবর্ষণ চলছে কামালপুর বিওপির ওপর। কোম্পানি কমান্ডার সাদেক আহমদ সহযোদ্ধাদের নিয়ে ঢুকে গেছে শত্রুঘাঁটিতে। রক্তে ভিজে গেছে ভারত-বাংলাদেশের সীমান্তভূমি। হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণের পতাকা উড়িয়েছে। জয়বাংলার বিজয় উৎসব চলছে। বাংকার থেকে বেরিয়ে হাত ওপরে তুলে বেরিয়ে আসছে পরাজিত সেনারা। চোখে-মুখে ওদের পরাজয়ের গ্লানি। 

পাকিস্তানি সেনাদের পরিত্যক্ত অস্ত্র- গোলাবারুদ এক জায়গায় এনে জড়ো করা হচ্ছে। চোখে আনন্দাশ্রু নিয়ে অনেকেই তখন গান ধরেছে, ..আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি...।

বিশাল বিজয়ের পর দুই বন্ধু জড়িয়ে ধরে দুজনকে। চোখ দিয়ে দুজনের নোনা পানি গড়িয়ে পড়তে থাকে। সদ্য শত্রুমুক্ত ঘাটিতে জড়ো হতে থাকে অজস্র মানুষ। জয় বাংলা এবং জয় মুক্তিবাহিনীর স্লোগানে বাতাস আন্দোলিত হয়ে উঠছে। বিজয়ের অবিস্মরণীয় মুহূর্ত। শাহ আলমের সব মনে পড়ে এখনো।

ঠিক সেই মুহূর্তে বিকট এক বিস্ফোরণের শব্দে কেঁপে ওঠে রণক্ষেত্র। প্রথমে কেউই বুঝতে পারে না কী ঘটল। শাহ আলম দ্রুত ক্যাম্পের ভেতর প্রবেশ করে। দেখে, সাদেক আহমদের বিক্ষত শরীর পড়ে আছে। পাশে পড়ে আছে কাঠিতে বাঁধা একটি জাতীয় পতাকা এবং কমান্ডারের পরিত্যক্ত স্টেনগান। ছিন্নভিন্ন শরীরের নিচের অংশটি উড়ে গেছে পাকিস্তানিদের পুঁতে রাখা মাইনে।

অনেক বছর আগের কথা - শাহ আলম নিজেও ভুলতে বসেছিল। কিন্তু রণক্ষেত্র কামালপুরের মাটিতে দাঁড়িয়ে রক্তমাখা স্মৃতি তাকে কঠিন করে তোলে। নতুন ক্রোধ, নতুন ঘৃণা, নতুন এক প্রত্যয় দ্রুত থেকে দ্রুততর ছড়িয়ে পড়তে থাকে শরীরে। এক প্রচণ্ড অস্থিরতা বোধ করতে থাকে শাহ আলম। সে প্রচণ্ড বেগে ছুটতে চায়, একটি ঝড় কামনা করে, নতুন একটি ঝড়। 

শিউলির ডাকে বর্তমানে ফিরে আসে শাহ আলম। শহিদ জননীর বিলাপ কিছুটা স্তিমিত হয়ে এসেছে। উৎসুক মানুষের ভিড় কমতে শুরু করেছে। বেলা গড়িয়ে যাচ্ছে। সন্ধ্যার আগেই এ এলাকা ছাড়তে হবে। অচেনা গ্রাম - কে কাকে চিনবে, কে কাকে কোথায় আশ্রয় দেবে। 

আলম ভাই, মাকে জায়গাটা দেখিয়ে দিন তো, সন্ধ্যা হচ্ছে। এক হাতে মাকে আগলে রেখে অনুরোধ করে শিউলি।

এরপর নবীন গজানো গাছপালা, বৃক্ষরাজি, নতুন-পুরোনো ঘরবাড়ি, দোকানপাট, স্কুল, অফিসঘর পেরিয়ে একটা জায়গায় এসে দাঁড়ায় ওরা। শাহ আলম জায়গাটাকে চিনতে চেষ্টা করে। না, আগের কিছু নেই, নেই সারি সারি বাংকার, নেই বোমা ও গ্রেনেডের আগুনে পোড়া খয়েরি রঙের মাটি। এখন কোনো ভারী সামরিক ট্রাক চলে না এখানে, নতুন ঘাস গজিয়েছে। শহিদের রক্তের দাগ ঢেকে দিয়েছে নতুন মাটি ও দূর্বাঘাসে।

অনেকক্ষণ ঘুরে শাহ আলম সহযোদ্ধাকে হারাবার জায়গাটা ঠিক চিনতে পারে। ওই তো আকাশমুখী সেই দেবদারু গাছটা আজও দাঁড়িয়ে আছে। সে নিশ্চিত হয় - ওই তো, ওখানেই তো ঢলে পড়েছিল মুক্তিযোদ্ধা সাদেক আহমদ। 

না, সেই বধ্যভূমিতে কোনো স্মৃতিসৌধ গড়ে উঠেনি। বরং গাছটার নিচে, দেখা গেল, নিশ্চিন্তে শুয়ে আছে দুটি নেড়ে কুকুর - কড়কড় শব্দে হাড্ডি ভাঙছিল তারা। মুক্তিযোদ্ধা শাহ আলম এ দৃশ্য মেনে নিতে পারে না। ঘামে শরীর ভিজে ওঠে - এ হয় না, এ হতে পারে না!

ভদ্র মহিলা ইতোমধ্যে কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে উঠেছেন। বললেন, কোথায় রে বাবা - কোন জায়গাটায়? একটু থেমে আবারও বলেন, বেশি দেরি হবে না বাবা, এক মুঠ মাটি নিয়েই চলে যাব আমি, কেবল এক মুঠ মাটি। 
মা, একটু অপেক্ষা করুন। 

বলেই শিউলির চোখের দিকে তাকায় শাহ আলম। শিউলি বুঝতে পারে তার ভাইয়ের বন্ধুর চোয়ালগুলো টানটান হয়ে উঠছে। চোখ দুটি সিদ্ধান্ত নিতে প্রস্তুত হচ্ছে। সে দু হাতে মাকে জাপটে ধরে। 

তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে হাতে দুটি ইটের টুকরো তুলে নেয় শাহ আলম। শরীরের সবটুকু শক্তি দিয়ে ইট দুটিকে কুকুরগুলোর দিকে ছুড়ে মারে। ঘেউ ঘেউ শব্দে কুকুরগুলো স্থান ত্যাগ করতেই পরিবেশটা হালকা হয়। শাহ আলমের কাছে যেন আজ আবারও একাত্তর।

এরপর সহযোদ্ধার মায়ের কাছে এগিয়ে যায় শাহ আলম। বলে, মা, এবার আপনি আসুন। ওই তো সেই জায়গা, সেই পবিত্র জায়গা।

হো হো করে কেঁদে ওঠে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন শহিদ জননী। মাটি খাবলে কিছু মাটি-ধুলোবালি হাতে নিয়ে নিজের শাড়ির আঁচলে পেঁচিয়ে রাখেন তিনি। শিউলির চোখ দিয়ে তখন অঝোরে পানি গড়িয়ে পড়ছে। শাহ আলম এগিয়ে গিয়ে ওর পিঠে হাত রেখে বলে - চল, আমরা দুজনেই মাকে সাহায্য করি। 

ক্রমশ অদৃশ্য হতে থাকে

প্রকাশ: ২১ মার্চ ২০২৫, ০৩:১০ পিএম
আপডেট: ২১ মার্চ ২০২৫, ০৩:১০ পিএম
ক্রমশ অদৃশ্য হতে থাকে
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

সন্ধ্যার নির্জনতায় আমি যখন বা‌ড়ি ফির‌ছিলাম 
‌বিপণি‌বিতা‌নের মৃদু আলোয় চারপা‌শের মানুষ ও
যানবাহ‌নের ধূসরতা রহস্যময় হ‌য়ে আব‌র্তিত হ‌তে
থা‌কে। মানু‌ষের স্বভাবজাত ইতিহাস বড় বেদনার 
বড় বিষা‌দের। ক্রমশ অদৃশ্য হ‌তে থা‌কে সম্প‌র্কের
অমল বিন্যাস। আজকাল মানুষের সা‌থে মানু‌ষের
দূরত্ব বৃ‌ষ্টির জ‌লের ম‌তো গ‌ড়ি‌য়ে গ‌ড়িয়ে যায়।
জ্ঞানীরা নির্ঘণ্ট ছুঁয়ে গ্র‌ন্থের আয়ুষ্কাল ‌নির্ণয় ক‌রে
ফু‌লের সৌগ‌ন্ধের সা‌থে স্মৃ‌তির দর্প‌ণে ভা‌সে 
‌নিরব‌ধিকাল। সূচক ধ‌রে ধ‌রে যে মান‌চিত্র গি‌লে
খায় সে দেশ‌দ্রোহী।

এই পতাকা গর্বিত আজ

প্রকাশ: ২১ মার্চ ২০২৫, ০২:২৯ পিএম
আপডেট: ২১ মার্চ ২০২৫, ০২:৩০ পিএম
এই পতাকা গর্বিত আজ
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

আবহমান এই বাংলা
প্রকৃতির অবদান
ঝিরিঝিরি বাতাস শোনায়
শান্তির শুভ গান-

হাওয়ায় হাওয়ায়
আসা-যাওয়ায়
মেঘের নানা খেলা
বৃষ্টি এলে রিমঝিম ঝিম
সকাল-সন্ধ্যা বেলা
জীবন জয়ের মেলা-

স্বপ্নের এই দেশ
কৃষক-শ্রমিক-জেলে-তাঁতির
মুগ্ধতার আবেশ
সুজলা-সুফলা-শস্য-শ্যামলা
সোনার বাংলাদেশ-

মাঠে-ঘাটে সময় কাটে
পাখির গানে গানে
এই বাঙালি বিশ্বে অমর
মহৎ অবদানে
এই পতাকা গর্বিত আজ
কীর্তি ও সম্মানে।