ডায়াবেটিসের ঝুঁকি জানুন, প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিন, নিজেকে রক্ষা করুন- এ প্রতিপাদ্য নিয়ে বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস-২০২৩ উদযাপিত হয়েছে দেশে দেশে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোয় আফ্রিকার দেশগুলোর পর সবচেয়ে বেশি ডায়াবেটিসের রোগী বাড়ছে। আইডিএফের ২০২১ সালের সমীক্ষা মোতাবেক, পাকিস্তানের পর বাংলাদেশেই ডায়াবেটিস রোগীর প্রাবল্য সবচেয়ে বেশি। টাইপ-২ ডায়াবেটিস এবং জটিলতাগুলো প্রতিরোধ করা সম্ভব। তিনটি ধাপে এই প্রতিরোধ করা যায়।
প্রাথমিক প্রতিরোধ
ডায়াবেটিস হতে না দেওয়াই প্রাথমিক প্রতিরোধের লক্ষ্য। এ কাজে যাদের ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি বেশি সেগুলো চিহ্নিত করে প্রতিরোধের চেষ্টা করা। স্বাভাবিক ওজন ধরে রাখা এবং প্রতিদিন কিছু শারীরিক পরিশ্রমের লক্ষ্যে জীবনযাত্রার পরিবর্তনের মাধ্যমে টাইপ-২ ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা সম্ভব।
দুটি ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে প্রাথমিক প্রতিরোধ করা সম্ভব। একটি বিশেষ জনগোষ্ঠীকে সামনে রেখে তাদের স্বাস্থ্য পরিচর্যায় কিছু পরিবর্তন আনার চেষ্টা করা হয়, যা ডায়াবেটিসের পাশাপাশি উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ এবং অন্যান্য অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে সমান সহায়ক।
যাদের ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি খুব বেশি তাদের ডায়াবেটিস প্রতিরোধ মূলত তিনটি ধাপে করা হয়ে থাকে। যেমন ১. উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী চিহ্নিত করণ। এই ধাপে সাধারণ জনগোষ্ঠী থেকে ব্যবহারিক, স্বল্প ব্যয়ে করা সম্ভব এমন সহজ কিছু বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী চিহ্নিত করা হয়। ২. ঝুঁকির মাত্রা নির্ধারণ। এই ধাপে চিহ্নিত উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর সকলের গ্লুকোজ খাইয়ে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রার পরীক্ষা করা হয়। ৩. ডায়াবেটিস প্রতিরোধের চেষ্টা। এই ধাপে জীবনযাত্রার পরিবর্তনের মাধ্যমে ওজন স্বাভাবিক রাখা ও প্রতিদিন ব্যায়াম করার ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করা হয়, যা ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সাহায্য করে। কিন্তু যারা জীবনযাত্রার যথেষ্ট পরিবর্তন করতে পারে না তাদের ক্ষেত্রে কখনো কখনো ওষুধ (মেটফরমিন, গ্লিটাজোন) ব্যবহার করা হয়।
দ্বিতীয় ধাপের প্রতিরোধ
ডায়াবেটিস দ্রুত নির্ণয় এবং এর জটিলতা প্রতিরোধ করা দ্বিতীয় ধাপের প্রতিরোধের অন্তর্ভুক্ত। দ্রুত নির্ণয় করার জন্য উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর একটি নির্দিষ্ট বিরতিতে ডায়াবেটিস আছে কি না তা পরীক্ষা করে দেখা উচিত। তাছাড়া কম ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে ৩৫ বছর বয়সের পর ডায়াবেটিস নির্ণয়ের পরীক্ষা করে দেখা উচিত। দ্রুত নির্ণয়ের পাশাপাশি ডায়াবেটিসের সঠিক নিয়ন্ত্রণ ডায়াবেটিস জনিত জটিলতা প্রতিরোধে সাহায্য করে। এ ব্যাপারে রক্তের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণ ছাড়াও রক্তের চর্বি, ওজন, রক্তচাপ নির্দিষ্ট মাত্রার ভেতর রাখা জরুরি।
তৃতীয় ধাপের প্রতিরোধে
ডায়াবেটিক ব্যক্তির জটিলতা প্রতিরোধ করে অথবা কমিয়ে রেখে জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন তৃতীয় ধাপের এর উদ্দেশ্য। একই সঙ্গে ডায়াবেটিক ব্যক্তিদের কর্মক্ষম ও স্বাবলম্বী রাখার চেষ্টা করাও এর অংশ। আর তাই, তৃতীয় ধাপের রোগের চিকিৎসার সঙ্গে সরাসরি জড়িত এবং এ ব্যাপারে চিকিৎসকই মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। তৃতীয় ধাপের জন্য রক্তের গ্লুকোজের সঠিক নিয়ন্ত্রণ, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ এবং ওজন স্বাভাবিক রাখার পাশাপাশি জটিলতা অনুসারে বিশেষ বিশেষ পদক্ষেপ নেয়া জরুরি।
ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ আস্থাশীল যে, যথাযথ পদক্ষেপ নিতে সমর্থ হলে, নিদেন পক্ষে ৫০ শতাংশ ডায়াবেটিসের ঝুঁকিপূর্ণ মানুষকে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের হাত থেকে আজীবনের জন্য রক্ষা করা সম্ভব। তাই এ ডায়াবেটিস সেবা দিবসে সবাইকে ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সচেষ্ট হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক,এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
কলি