ঢাকা ২৫ ভাদ্র ১৪৩১, সোমবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

পুষ্টওষুধ ছাড়া উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ

প্রকাশ: ০৮ আগস্ট ২০২৪, ০৫:১২ পিএম
পুষ্টওষুধ ছাড়া উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ

হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ খুব সাধারণ সমস্যা হলেও কখনো কখনো তা জীবনহানির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস, অতিরিক্ত ওজন, মানসিক চাপ, শরীরচর্চার অভাব, ধূমপান ইত্যাদি উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশনের অন্যতম কারণ। এটা নিয়ন্ত্রণের জন্য ওষুধ রয়েছে। কিন্তু ওষুধ ছাড়াও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা যায় খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রায় পরিবর্তন ঘটিয়ে, কিছু নিয়ম মেনে। লিখেছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যাপক, মেডিসিন বিভাগ অধ্যাপক ডা. ফয়জুল ইসলাম চৌধুরী

উচ্চ রক্তচাপ কী?

রক্ত চলাচলের সময় দেহের শিরার গায়ে যে চাপ দেয় তা রক্তচাপ। এই পার্শ্বচাপ যখন স্বাভাবিকের থেকে বেশি হয় বা বেড়ে যায় তখন তাকে উচ্চ রক্তচাপ বলা হয়। দুটি মানের মাধ্যমে এই রক্তচাপ রেকর্ড করা হয়। যেটার সংখ্যা বেশি সেটাকে বলা হয় সিস্টোলিক, আর যেটার সংখ্যা কম সেটা ডায়াস্টোলিক।

প্রতিটি হৃৎস্পন্দন অর্থাৎ হৃৎপিণ্ডের সংকোচন ও সম্প্রসারণের সময় একবার সিস্টোলিক এবং একবার ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ হয়। একজন প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষের রক্তচাপ থাকে ১২০/৮০ মিলিমিটার মার্কারি। কারও রক্তচাপের মাত্রা যদি ১৪০/৯০ মিলিমিটার মার্কারি বা এর চেয়েও বেশি হয়, তখন বুঝতে হবে তার উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে।

কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকুক বা না থাকুক—পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে উচ্চ রক্তচাপ নিশ্চিত হলে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শে সারা জীবন ওষুধ খেতে হবে।

সমস্যা যা হয়

অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ থেকে হৃদযন্ত্রের পেশি দুর্বল হতে পারে। ফলে দুর্বল হৃদযন্ত্র রক্ত পাম্প করতে না পেরে হৃৎপিণ্ডের স্বাভাবিক কাজকর্ম বন্ধ করতে বা হার্টফেল করতে পারে। এ ছাড়া রক্তনালির দেয়াল সংকুচিত হয়ে হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কাও বাড়াতে পারে। উচ্চ রক্তচাপের কারণে কিডনি নষ্ট হওয়া, মস্তিষ্কে স্ট্রোক বা রক্তক্ষরণও হতে পারে। এ রকম ক্ষেত্রে রোগীর মৃত্যুর আশঙ্কা থাকে। বিশেষ ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপের কারণে চোখের রেটিনায় রক্তক্ষরণ হয়ে চোখে মারাত্মক জটিলতা তৈরি হতে পারে।

চাই জীবনধারার পরিবর্তন

বর্তমান জীবনযাত্রা উচ্চ রক্তচাপের পক্ষে সহায়ক। আমরা এখন যা খুশি খেয়ে চলি। অন্যদিকে নড়াচড়া খুব কম করি। শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম করতে চাই না। পাশাপাশি স্ট্রেসফুল বা চিন্তাযুক্ত জীবন অতিবাহিত করে থাকি। একটি চমৎকার সূত্র রয়েছে, যা পালন করতে পারলে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আনা যেতে পারে। আর এই সূত্র হলো DESH। এখানে D মানে ডায়েট বা খাদ্যাভ্যাস, E মানে এক্সারসাইজ বা ব্যায়াম, S মানে স্মোকিং বা ধূমপান নয়, H মানে হ্যাবিট চেঞ্জ বা অভ্যাসের পরিবর্তন।

খাদ্যাভ্যাস

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে খাবারের ভূমিকা রয়েছে। খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করে রক্তচাপ ৮ থেকে ১৪ মিলিমিটার মার্কারি কমানো সম্ভব। অর্থাৎ কারও রক্তচাপ যদি ১৩০/৯০ মিলিমিটার মার্কারি থাকে, তাহলে তা কমে ১২০/৮০ মিলিমিটার মার্কারিতে আসতে পারে।

সমস্যা হলো, আমরা তেমন হিসাব করে খাই না। ফ্যাটজাতীয় খাবার, জাংক ফুড, রিচ ফুডে আমরা বেশি অভ্যস্ত। অথচ এসব খাবারের কারণে উচ্চ রক্তচাপ বেড়ে যায়। এজন্য খাদ্যতালিকায় কিছু খাবার যোগ করা উচিত আর কিছু খাবার বাদ দেওয়া উচিত।

যা খেতে মানা: উচ্চ রক্তচাপের রোগীকে ফ্যাটজাতীয় খাবার, যেমন- গরু বা খাসির মাংস, রিচ ফুড কোর্মা-পোলাও, জাংক ফুড বার্গার, পিৎজা ইত্যাদি বর্জন করতে হবে বা কমিয়ে দিতে হবে। একই সঙ্গে কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার কম খেতে হবে। লবণ খাওয়া কমাতে হবে। কেননা অতিরিক্ত লবণ রক্তে মিশে শরীরে সোডিয়ামের ভারসাম্য নষ্ট করে। ফলে রক্তচাপ অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে থাকে। শুধু তাই নয়, শরীরে সোডিয়ামের ভারসাম্য বিঘ্নিত হলে বাড়তে পারে কিডনির সমস্যাও। তাই রান্না ছাড়া খাবার পাতে কাঁচা লবণ যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন। সম্ভব হলে রান্নাতেও কম লবণ দিন। উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের প্রতিদিন এক চামচের বেশি লবণ নয়। কম লবণ খেলে পাঁচ থেকে ছয় মিলিমিটার মার্কারি রক্তচাপ কমে যায়।

যা বেশি খাবেন : ভিটামিন সি-জাতীয় খাবার, টাটকা শাকসবজি ও ফলমূল বেশি খেতে হবে। মনে রাখতে হবে-

Less carb more herb

Slim and superb

More move less eat

Make your body fit

More fruits less fat

Make you reset.

এই সূত্র অনুযায়ী বেশি খেতে পারেন সবুজ শাকসবজির পাশাপাশি লেবু, কমলা, মাল্টা, শসা, রসুন, কলা, পালংশাক ইত্যাদি। সেদ্ধ বা সামান্য তেলে রান্না করা সবজি শরীরে ক্যালরির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। ফাইবারসমৃদ্ধ সবুজ সবজিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফোলেট, যা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। এভাবে খাদ্যাভ্যাস চলতে থাকলে দেহের ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকবে, অতিরিক্ত চর্বি বা ফ্যাট কমে যাবে। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

ব্যায়াম বা কায়িক শ্রম

নানা গবেষণায় দেখা গেছে, কায়িক শ্রম অথবা নিয়মিত ব্যায়াম করলে উচ্চ রক্তচাপ বেশ নিয়ন্ত্রণে থাকে। ব্যায়াম করে বা কায়িক শ্রম করে বয়স ও উচ্চতা হিসেবে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। অতিরিক্ত ওজন কমালে সিস্টোলিক রক্তচাপ ৫ থেকে ২০ মিলিমিটার মার্কারি ও ডায়াস্টোলিক ১০ মিলিমিটার মার্কারি কমতে পারে।

শুধু তাই নয়, কায়িক শ্রম অন্যান্য রোগের ক্ষেত্রেও যথেষ্ট উপকারী। এ ক্ষেত্রে কেউ চাইলে সরাসরি বা কঠিন ব্যায়াম না করে হেঁটেও ব্যায়াম করতে পারেন। হাঁটাহাঁটিতে সিস্টোলিক ব্লাড প্রেশার ৪ থেকে ৯ মিলিমিটার কমে যাবে। তবে ৪০ বছরের কম বয়সীরা ইচ্ছা করলে দৌড়াতে পারেন। আবার ৪০-এর বেশি বয়স হলে না দৌড়ানোই শ্রেয়। সে ক্ষেত্রে ভালো নিয়ম হলো-

- আস্তেও না, জোরেও না- এমনভাবে হাঁটতে হবে। যাতে শরীরের ঘাম বের হয়। মিনিটে ১০০ কদম হাঁটতে পারলে ভালো। 

- কমপক্ষে ৩০ মিনিট হাঁটতে হবে।

- সপ্তাহের সাত দিনই হাঁটা যাবে, তবে পাঁচ দিনের কম নয়।

- দিনের যেকোনো সময় হাঁটা যায়, তবে ভোরের সময় হাঁটাহাঁটি করা ভালো। ওই সময় আবহাওয়া থাকে অনেক ভালো।

-ঘুম থেকে উঠেই হাঁটা নয়, বরং অন্য কিছু কাজকর্ম করে এরপর হাঁটা শুরু করা উচিত।

ধূমপান নয়

উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের অবশ্যই ধূমপান ও মদ্যপান বন্ধ করতে হবে। ধূমপান রক্তনালিকে সংকীর্ণ করে রাখে। রক্তে খারাপ চর্বির পরিমাণ বেড়ে যায়; ভালো চর্বির পরিমাণ কমে যায়। ফলে রোগীর রক্তচাপ বেড়ে যায়।

অভ্যাসের পরিবর্তন

কিছু বদভ্যাস রয়েছে, যা মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে দিতে ভূমিকা রাখে। যেমন- দুশ্চিন্তা করা, অধিক রাত পর্যন্ত জেগে থাকা ইত্যাদি। এসব বদভ্যাস উচ্চ রক্তচাপের জন্য দায়ী। বিশেষ করে দুশ্চিন্তা এবং অতিরিক্ত টেনশন এড়িয়ে চলতে হবে। অতিরিক্ত দুশ্চিন্তায় মস্তিষ্কের সিমপ্যাথিটিক সিস্টেম অ্যাকটিভেটেড হয়, রক্তনালিগুলোকে সংকুচিত করে ফেলে। তখন রক্তচাপ বেড়ে যায়। তাই এসব বদভ্যাস ত্যাগ করতে হবে।

কত দিন করবেন?

জীবনযাত্রায় এসব পরিবর্তন বা লাইফস্টাইল মডিফিকেশন করলে বডি ফিটনেস চলে আসে, অন্যান্য রোগবালাই কমে যায়, রক্তে চর্বি কমে যায়, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে চলে আসে, ওবিসিটি বা ওজনাধিক্যের সমস্যার সমাধান হয় ইত্যাদি।

কিন্তু কথা হলো কত দিন এই জীবনধারা বজায় রাখতে হবে। এর উত্তর হলো সারা জীবন বজায় রাখতে পারলে ভালো। তবে প্রাথমিকভাবে এই লাইফস্টাইল মডিফিকেশন। তিন মাসের মতো করে দেখা যেতে পারে। তিন মাসের মধ্যে জীবনযাত্রা পরিবর্তন করে যদি দেখা যায়, উচ্চ রক্তচাপ কমছে না বা নিয়ন্ত্রণে আসছে না- তখন চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ গ্রহণ করতে হবে। তবে এ কথা সত্য, জীবনধারা পরিবর্তন করতে হলে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে। 

অনুলিখন: হৃদয় জাহান

কলি

ফলিক অ্যাসিডের অভাব

প্রকাশ: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:৪০ পিএম
ফলিক অ্যাসিডের অভাব

ফলিক অ্যাসিড বা ফলেট বা ভিটামিন বি-৯ শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এই ভিটামিন পানিতে মিশে যায়, ফলে শরীর এই ভিটামিনটি ধরে রাখতে পারে না। তাই প্রতিদিন খাবারের মাধ্যমে শরীরের এই ভিটামিন প্রয়োজন হয়। ফলিক অ্যাসিড লাল রক্ত কোষ (আরবিসি) উৎপাদনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যার মধ্যে হিমোগ্লোবিন রয়েছে এবং এটি ডিএনএ (ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিইক অ্যাসিড) তৈরি ও মেরামত করে। ফলিক অ্যাসিডের অভাবের ফলে মেগালোব্ল্যাস্টিক অ্যানিমিয়া হয়, যা গর্ভাবস্থায় হলে ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

এটির প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গগুলো কী কী?
ফলিক অ্যাসিডের অভাবের প্রধান লক্ষণ এবং উপসর্গগুলো হলো কম হিমোগ্লোবিনের জন্য দুর্বলতা এবং ক্লান্তিভাব। এ ছাড়া শ্বাসের ঘাটতি, মুখের বা জিভের ঘা, মাথা যন্ত্রণা, বিরক্তিভাব, ক্ষুধামান্দ্য এবং মনোযোগে অসুবিধা। গর্ভাবস্থায় ফলেটের অভাবের ফলে শিশুর মধ্যে জন্মগত ত্রুটি হতে পারে। কারণ এটি শিশুর স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশের জন্য খুবই জরুরি।

এটির প্রধান কারণ কী কী?
খারাপ বা কম পরিমাণে খাবার গ্রহণ করার ফলে ফলেটের অভাব হয়। ম্যালঅ্যাবসরপসন রোগ যেমন- কোয়েলিয়াক রোগ খাবার থেকে রক্তে ফলেট শোষণকে আটকায়, যার ফলে ফলেটের অভাব হয়। দীর্ঘস্থায়ী সময়ের জন্য কিডনি ব্যর্থতার জন্য ডায়ালিসিস এবং দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতির ফলে লিভারের ঘাটতি হতে পারে। মেথোট্রেকসেট, সালফাস্যালাজাইনের মতো ওষুধ এবং খিঁচুনি নিয়ন্ত্রণ করার ওষুধের ফলেও ফলিক অ্যাসিডের অভাব হতে পারে।

এটি কীভাবে নির্ণয় ও চিকিৎসা করা হয়?
এ অবস্থার নির্ণয়ের জন্য চিকিৎসক উপসর্গগুলোর সঠিক ইতিহাস নেবেন এবং কিছু ল্যাবরেটরি পরীক্ষার পরামর্শ দেবেন। যেসব রোগীর মধ্যে পুষ্টির অভাব রয়েছে তাদের মধ্যে অ্যানিমিয়া আছে কি না, তা জানার জন্য কমপ্লিট ব্লাড কাউন্টের পরামর্শ দেওয়া হয়।

ফলিক অ্যাসিডের অভাবের কারণে মেগালোব্ল্যাস্টিক অ্যানিমিয়া হয়, যার মধ্যে আরবিসিগুলো সাধারণের থেকে বড় হয় এবং অপরিণত হয়। রক্তে ফলিক অ্যাসিডের কম মাত্রা ফলিক অ্যাসিডের অভাবকে ইঙ্গিত করে। যে ওষুধগুলো রোগী গ্রহণ করে চিকিৎসক তারও একটি ইতিহাস নিতে পারেন এটা জানার জন্য যে, অন্য কোনো ওষুধের কারণে ফলিক অ্যাসিডের ম্যালঅ্যাবসরপসন হচ্ছে কি না।

চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে ফলিক অ্যাসিডের পরিপূরক খাওয়া। ওষুধের দোকানে ফলিক অ্যাসিড ট্যাবলেট পাওয়া যায়। ফলিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার যেমন ডিম, শেলফিশ, বিটরুট, ডাল, মটরশুঁটি, সবুজ পাতা সমেত শাকসবজি সমগ্র স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।

 কলি

 

বাত, ব্যথা ও প্যারালাইসিসের চিকিৎসায় আকুপাংচার

প্রকাশ: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৪ পিএম
বাত, ব্যথা ও প্যারালাইসিসের চিকিৎসায় আকুপাংচার

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আকুপাংচারের মাধ্যমে যে ১০১টি রোগের চিকিৎসার সুপারিশ করেছে তার মধ্যে অন্যতম হলো বাত, ব্যথা ও প্যারালাইসিসের চিকিৎসা। এ ছাড়া হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল ও ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) আকুপাংচারের প্রমাণভিত্তিক সুপারিশ করে। আকুপাংচার সারা বিশ্বে সমাদৃত ও গ্রহণযোগ্যতা পেলেও আমাদের দেশে অনেকের কাছে আকুপাংচার নতুন শব্দ বা নতুন চিকিৎসা পদ্ধতি হিসেবে পরিগণিত হয়। লিখেছেন শশী হাসপাতালের পাইওনিয়ার আকুপাংচার বিশেষজ্ঞ ও চিফ কনসালটেন্ট ডা. এস এম শহীদুল ইসলাম

গবেষণায় দেখা গেছে, সাধারণ মানুষ বাত-ব্যথাকে একই ভাবেন বা সংজ্ঞায়িত করেন। বাত-ব্যথা বহুল প্রচলিত শব্দ হলেও বাত হলো প্রগ্রেসিভ রোগ, শরীরে প্রবাহমান থাকে। অন্যদিকে ব্যথা রোগের উপসর্গ মাত্র। শরীরে নানা কারণে ব্যথা অনুভব হতে পারে। প্রথমে বাত শরীরের গিরাগুলোকে আক্রমণ করে নষ্ট করে ফেলে, ফলে প্রচণ্ড ব্যথা হয়। পরে ক্রমান্বয়ে গিরা বাঁকা হওয়া বা গিরাগুলো নড়াচড়া করতে না পারায় রোগীর স্বাভাবিক জীবনযাপন ব্যাহত হয়। বাত রোগ শুধু গিরার ক্ষতি করে না, অন্য অঙ্গগুলোকেও আক্রান্ত করে। 
প্রথমেই বলেছি, ব্যথা রোগের উপসর্গ মাত্র। শরীরের বিভিন্ন হাড়, জয়েন্টে ব্যথা বা বিভিন্ন অংশ তথা মাথা, হাত, ঘাড়, কোমর, হাঁটু, কনুই, কব্জি, শিরা, মাংসপেশি ইত্যাদিতে ব্যথা পরিলক্ষিত হয়। দেশের প্রায় ১০ থেকে ১৫ শতাংশ মানুষ ব্যথা রোগে ভোগেন বলে অনেকেই ব্যথা সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখেন।
আকুপাংচার চিকিৎসাব্যবস্থা
ট্র্যাডিশনাল চাইনিজ মেডিসিন বা টিসিএম হলো একটি চিকিৎসাব্যবস্থা, যা প্রাচীন চীনা দর্শন ও সংস্কৃতির মূল্যবোধ নিয়ে তৈরি হয়েছে। আকুপাংচার ট্র্যাডিশন চাইনিজ মেডিসিনের অপরিহার্য উপাদান হিসেবে অনেক রোগ এবং চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ফলে আকুপাংচার স্বাস্থ্যসেবার গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে স্বীকৃত ও মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এর অবদান অনস্বীকার্য। দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় আকুপাংচার চিকিৎসার উৎপত্তির ইতিহাসের পৃষ্ঠায় চীনের নাম উজ্জ্বল হয়ে আছে। তথ্য-উপাত্ত বলছে, আনুমানিক ৫ হাজার বছর পুরোনো চীনা এই চিকিৎসা পদ্ধতি। সময়ের পরিবর্তন ও আধুনিক প্রযুক্তির উৎকর্ষের সঙ্গে সঙ্গে আকুপাংচার চিকিৎসারও প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়েছে। ফলে সেবা গ্রহীতাদের কাছে তা দিনদিন গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠছে।

আকুপাংচার সম্পর্কে অনুসন্ধান করলে জানা যায়, শরীরের নির্ধারিত আকু পয়েন্টগুলোয় রোগের প্রকারভেদ অনুযায়ী অভিজ্ঞ আকুপাংচার বিশেষজ্ঞ আকুপাংচার সুঁচ প্রবেশ করিয়ে এর যথাযথ প্রয়োগ ঘটান এবং এর সঙ্গে বিভিন্ন আকুপাংচার সমন্বিত থেরাপি যোগ করে আকুপাংচার চিকিৎসা প্রদান করেন। লক্ষণীয় যে, আধুনিক আকুপাংচারের ক্ষেত্রে আকুপয়েন্টে সূক্ষ্ম সুঁচ প্রবেশ করিয়ে কিউই শক্তির প্রবাহ পরিবর্তন করা হয়। আকুপাংচারের সাধারণ তত্ত্বটি এই ধারণার ওপর প্রতিষ্ঠিত যে, শরীরজুড়ে শক্তি প্রবাহের বা কিউই নির্দেশন রয়েছে, যা সুস্থতার জন্য প্রয়োজনীয়। কিন্তু এই প্রবাহের ব্যাঘাত ঘটলে প্রভৃতি রোগ তৈরি হয়। আকুপাংচার চিকিৎসা কিউই বা উজ্জীবনী শক্তিতে পুনরায় ফিরিয়ে এনে রোগীকে সুস্থ করে তোলে।

আকুপাংচার চিকিৎসার প্রয়োগ
প্রচলিত ওষুধ নির্ভর চিকিৎসায় যারা সুস্থ হয়েছেন, তারা ছাড়া সেবা নিতে আসা অনেক রোগীর অভিজ্ঞতা শেয়ার থেকে জানা যায়, বাতের চিকিৎসার জন্য প্রাথমিক অবস্থায় ব্যথানাশক ওষুধ সেবন করেছেন। পাশাপাশি ডিজিজ মডিফাইং অ্যান্টিরিউমেটিক ড্রাগ নিয়েছেন বা অনেকেই স্টেরয়েডজাতীয় ওষুধ গ্রহণ করেছেন। আবার অনেকে এসব ওষুধে ভালো ফলাফল না পেয়ে বাতের আধুনিক ওষুধ বায়োলজিকালি মেডিসিন গ্রহণ করেও সুস্থ হননি। এর কারণ হলো, শরীরের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা কখনো কখনো আমাদের বিরুদ্ধেই কাজ করে। তাই ওষুধ নির্ভরতার বাইরে বাতের চিকিৎসায় আকুপাংচার খুবই কার্যকরী ভূমিকা রাখছে। বাতের চিকিৎসা প্রটোকলে আকুপাংচার, বাত রোগের ধরন বা প্রকারভেদ অনুযায়ী আকুপাংচার চায়নিজ থেরাপির পাশাপাশি লাইফস্টাইল মডিফিকেশনকে সংযুক্ত করা হয়। এতে রোগীরা সুস্থ হয়ে উঠছেন।

আকুপাংচার চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হওয়ার পর অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও বার্তায় নিজেদের সুখকর অনুভূতি প্রকাশ করেছেন। 
বিভিন্ন ধরনের ব্যথা নিয়ে যে আলোচনা করেছি, সেসব ব্যাথার উৎপত্তি ও প্রকৃত কারণ নির্ণয় করে আকুপাংচার চিকিৎসা দেওয়া হয়। সাধারণত বাতের মতোই ওষুধ ছাড়াই বিভিন্ন ধরনের ব্যথার রোগীকে আকুপাংচার চিকিৎসা দেওয়া হয়। আকুপাংচার, চায়নিজ মেডিসিন থেরাপিসহ ইমিউনিটি সিস্টেম বৃদ্ধির প্রক্রিয়া সংযুক্ত থাকে। সাধারণ মনে প্রশ্ন থাকে আকুপাংচার কোথায় করা হয়, উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, কারও কোমরে ব্যথা হলে কোমরে, হাঁটুতে ব্যথা হলে হাঁটুতে।

প্যারালাইসিসের ক্ষেত্রে প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতিতে ওষুধ ঝুঁকিমুক্ত করলেও শরীরের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা ফিরিয়ে আনতে পারে না। প্যারালাইসিস পরবর্তী সমস্যাগুলো দূর করে শরীরের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা ফিরিয়ে আনার জন্য আকুপাংচার ও চাইনিজ ফিজিওথেরাপি কার্যকরী ভূমিকা পালন করছে।

আকুপাংচার সেশন: আকুপাংচার চিকিৎসাসেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে সেশন ভাগ করা। প্রাথমিক অবস্থায় ১৫টি বা ৩০টি সেশন বা প্রয়োজন সাপেক্ষে হ্রাস-বৃদ্ধি করা হয়।

 কলি

ম্যালেরিয়া জ্বরের লক্ষণ চিকিৎসা ও প্রতিকার

প্রকাশ: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০২ পিএম
ম্যালেরিয়া জ্বরের লক্ষণ চিকিৎসা ও প্রতিকার

মশাবাহিত ভয়াবহ রোগগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ম্যালেরিয়া। এটি অনেক সময় প্রাণঘাতীও হতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যানুযায়ী, ২০ কোটির বেশি মানুষ প্রতি বছর ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়। বাংলাদেশে প্রায় ২ কোটি মানুষ ম্যালেরিয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এর মধ্যে পার্বত্য জেলাগুলোয় ম্যালেরিয়ার প্রকোপ বেশি। তবে ঢাকা বা অন্যান্য জেলাও এই ঝুঁকির বাইরে নয়। ম্যালেরিয়া সারা বছরই হতে পারে, তবে বর্ষাকালে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। অনলাইন থেকে তথ্য নিয়ে লিখেছেন মো. রাকিব

ম্যালেরিয়া মশাবাহিত প্লাজমোডিয়াম পরজীবী দ্বারা সৃষ্ট একটি রোগ। তবে এটি শুধু সংক্রমিত স্ত্রী অ্যানোফেলিস মশার কামড়েই হয়ে থাকে। একইভাবে, মশার কামড়েই এই রোগ ছড়ায়।

ম্যালেরিয়ার লক্ষণ
এই রোগের প্রধান লক্ষণ নির্দিষ্ট সময় পরপর কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসা। এ সময় জ্বর ১০৪-১০৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত ওঠানামা করতে পারে। নির্দিষ্ট বিরতিতেও জ্বর আসা-যাওয়া করে। হতে পারে, এক দিন পরপর জ্বর আসছে এবং তা তিন চার দিন দীর্ঘ হওয়ার পর ঘাম দিয়ে কমে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে জ্বর ছেড়ে গেলে শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়েও কমে যেতে পারে। জ্বর ছাড়াও এই রোগের অন্য লক্ষণগুলোর মধ্যে আছে গায়ে প্রচণ্ড ব্যথা, মাথাব্যথা, খিঁচুনি, মাঝারি থেকে তীব্র কাঁপুনি বা শীত, শীত অনুভব করা, অনিদ্রা, অত্যধিক ঘাম হওয়া, ক্লান্তি বা অবসাদ অনুভব করা এবং অ্যানিমিয়া বা রক্তশূন্যতা দেখা দেওয়া।

‘ম্যালিগন্যান্ট ম্যালেরিয়া’ ম্যালেরিয়া রোগের একটি জটিলতম ধরন। এতে আক্রান্ত হলে সাধারণ ম্যালেরিয়ার মতো উপসর্গ দেখা দেওয়ার পাশাপাশি কিডনি বৈকল্য, শ্বাসকষ্ট হওয়া, রক্তশূন্যতা, জন্ডিস, খিঁচুনি এবং রক্তে গ্লুকোজ কমে যাওয়াসহ বিভিন্ন ধরনের জটিলতা দেখা দিতে পারে। এসব ক্ষেত্রে, জরুরি চিকিৎসা না পেলে রোগী অজ্ঞান হয়ে যেতে পারেন। এমনকি কারও কারও মৃত্যুও হতে পারে।

ম্যালেরিয়ার প্রধান কারণ কী এবং কীভাবে ছড়ায়
মশাবাহিত প্লাজমোডিয়াম পরজীবীর মাধ্যমে ম্যালেরিয়া রোগ হয়। স্ত্রী অ্যানোফিলিস মশার কামড়ে মানুষের দেহে এটি ছড়ায়। সংক্রমিত মশা কোনো ব্যক্তিকে কামড়ালে, ওই ব্যক্তির রক্তে ম্যালেরিয়ার জীবাণু প্রবেশ করে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত করে। এ ছাড়া ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তি কোনো সুস্থ মানুষকে রক্ত দান করলে তার দেহেও এই জীবাণু প্রবেশ করে। ম্যালেরিয়াবাহিত মশা সাধারণত সন্ধ্যা থেকে ভোরের মধ্যে কামড়ে থাকে।
প্লাজমোডিয়াম ভাইভাক্স, ফ্যালসিপ্যারাম, ম্যালেরি, ওভাল এবং নলেসি নামের ৫টি প্রজাতি, মানুষের শরীরে ম্যালেরিয়া সংক্রমণের কারণ। এদের মধ্যে যেকোনো একটি জীবাণু বহনকারী মশার কামড়ে ম্যালেরিয়া হয়। ফ্যালসিপ্যারাম সবচেয়ে ভয়াবহ ধরনের ম্যালেরিয়া। এতে আক্রান্ত হলে মস্তিষ্কে মারাত্মক ক্ষতি হয়।

ম্যালেরিয়া হলে করণীয় ও চিকিৎসা
ম্যালেরিয়া হয়েছে সন্দেহ হলে প্রথমেই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমেই কেবল ম্যালেরিয়া হয়েছে কি না, তা নিশ্চিত হওয়া যায়। এ ছাড়া বর্তমান সময়ে দ্রুত এক বিন্দু রক্ত নিয়েই ম্যালেরিয়ার অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করা যায়।
ম্যালেরিয়ার উপসর্গ দেখা দিলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে দ্রুতই টেস্ট করিয়ে ফেলা উচিত। তবে তা অবশ্যই ওষুধ শুরু করার আগে করতে হবে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ম্যালেরিয়ার রোগী সপ্তাহ খানিকের মধ্যেই সুস্থ হয়ে যান।

ম্যালেরিয়া শনাক্ত হলে এর ধরন এবং সংক্রমণের তীব্রতার ওপর এই রোগের চিকিৎসা নির্ভর করে। সাধারণত তীব্রতা কম হলে চিকিৎসকরা মুখে খাওয়ার ওষুধ দিয়ে থাকেন। সেরিব্রাল ম্যালেরিয়ার ক্ষেত্রে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করে ইনজেকশনের মাধ্যমে চিকিৎসা করার পরামর্শ থাকে ডাক্তারদের। মনে রাখতে হবে, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কখনোই কোনো ওষুধ খাওয়া যাবে না।

ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে সচেতনতা
এখন পর্যন্ত ম্যালেরিয়া প্রতিরোধের জন্য কার্যকর কোনো টিকা আবিষ্কৃত হয়নি। তবে একটু সতর্ক থাকলেই এ রোগ সম্পূর্ণ প্রতিকার ও প্রতিরোধ করা সম্ভব। ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে যেসব সচেতনতা মেনে চলা উচিত, তার মধ্যে আছে ম্যালেরিয়ার মৌসুমে বা ম্যালেরিয়া প্রবণ এলাকায় লম্বা হাতার জামা-কাপড় পরা। এ ছাড়া সন্ধ্যার আগে ঘরের জানালা বন্ধ করা। দিনে-রাতে, যেকোনো সময় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি বা কয়েল ব্যবহার করা। দরজা-জানালায় মশা নিরোধক নেট লাগানো। মশা প্রতিরোধক ক্রিম এবং স্প্রে ব্যবহার করা। ম্যালেরিয়াপ্রবণ এলাকায় ঘুরতে যাওয়ার ক্ষেত্রে অধিক সতর্কতা অবলম্বন করা। ঘরের আশপাশে, বাগানে বা ছাদের কোথাও যেন পানি জমে মশা বংশবিস্তার না করতে পারে, সেদিকে খেয়াল রাখা।

ম্যালেরিয়া কি নিরাময়যোগ্য?
প্রাথমিক অবস্থায় রোগ শনাক্ত এবং দ্রুত চিকিৎসা শুরু করলে ম্যালেরিয়া অবশ্যই একটি নিরাময়যোগ্য রোগ। তবে চিকিৎসা নিতে অবহেলা অথবা দেরি করলে অনেক সময় রোগীর অবস্থা জটিল হতে পারে।

কারা বেশি ঝুঁকিতে থাকে?
শিশু ও অল্প বয়স্কদের ক্ষেত্রে এ রোগ মারাত্মক হতে পারে। গর্ভাবস্থায় কোনো নারী ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হলে গর্ভস্থ শিশুরও ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তি সুস্থ কোনো ব্যক্তিকে রক্ত দিলে তারও এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। যারা ম্যালেরিয়াপ্রবণ এলাকায় থাকে কিংবা বেড়াতে যায়, তাদের এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

ম্যালেরিয়া থেকে সেরে ওঠার পর যা খাবেন
ম্যালেরিয়ার ফলে শরীর ভেঙে যায়। সেরে ওঠার সময় পেশি পুনর্গঠন খুবই জরুরি। তাই এ সময় প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া দরকার। ডিম, দুধ, দই, লাচ্ছির সঙ্গে সঙ্গে তেল মসলা ছাড়া সিদ্ধ করা মাছ, মাংসের স্যুপ খাওয়া যেতে পারে। তবে অতিরিক্ত ফ্যাটসমৃদ্ধ দুগ্ধজাত খাদ্য ও প্রক্রিয়াজাত মাংস এ সময় খাওয়া ঠিক না।

ম্যালেরিয়া থেকে সেরে উঠতে ভিটামিন এ এবং ভিটামিন সি অত্যন্ত জরুরি। পেঁপে, বিট, গাজরের মতো সবজিতে মেলে ভিটামিন এ। আর বিভিন্ন ধরনের লেবুতে পাওয়া যায় ভিটামিন সি। অনেকেই পথ্য হিসেবে ওষুধের মতো করেই বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন খান। বিটের রস ম্যালেরিয়া রোগীদের জন্য বিশেষ উপযোগী।

 কলি

‘ডেঙ্গু প্রাকৃতিকভাবেই নিরাময় হয়’

প্রকাশ: ২৯ আগস্ট ২০২৪, ০৪:২৬ পিএম
‘ডেঙ্গু প্রাকৃতিকভাবেই নিরাময় হয়’

ডেঙ্গু সম্পর্কে নানা প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মে‌ডি‌সিন বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. খান আবুল কালাম আজাদ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন হৃদয় জাহান

প্রশ্ন: ডেঙ্গুতে প্লাটিলেট কমে যাওয়া নিয়ে অনেকে বেশ উদ্বিগ্ন।
ডা. খান আবুল কালাম আজাদ: মানুষের দেহে প্লাটিলেট বা অণুচক্রিকার স্বাভাবিক মাত্রা হলো দেড় লাখ থেকে চার লাখ। রক্তক্ষরণ বন্ধে এই প্লাটিলেটের ভূমিকা রয়েছে। ডেঙ্গুতে প্লাটিলেট আক্রান্ত হয় এবং বেশির ভাগ রোগীর প্লাটিলেট কাউন্ট কমে যায়। কখনো বিপজ্জনক পর্যায়ে চলে যায় কিন্তু জানতে হবে সেই বিপজ্জনক পর্যায়টা কত।

একজন মানুষের আগে হয়তো প্লাটিলেট স্বাভাবিক ছিল। ডেঙ্গু হওয়ার পর এটা কমে হয়তো ১ লাখ হলো, পরের দিন ৮০ হাজার হলো। এরপর কমে ৬০ হাজার হলো। এ রকম হতে পারে। প্লাটিলেট তো আর একেকটা করে গণনা করা হয় না, গুচ্ছ ধরে গণনা করা হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ল্যাবরেটরির কম্পিউটারে এর মাত্রা ১০ থেকে ২০ হাজার বা এদিক-সেদিক হতে পারে।

তাই যদি কারও প্লাটিলেট ৫০ হাজারের মধ্যে থাকে, তবে টেনশন করার কোনো দরকার নেই। প্লাটিলেট ২০ হাজারে নেমে এলেও কিন্তু রক্তক্ষরণ হয় না। তবে ৫০ হাজারের নিচে প্লাটিলেট নেমে গেলে তখন হাসপাতালে ভর্তি করা যেতে পারে।

প্রশ্ন: ইদানীং দেখা যাচ্ছে, ডেঙ্গু হলে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায়ও রক্তের প্লাটিলেট কমে যাচ্ছে।
ডা. খান আবুল কালাম আজাদ: যদি দেখা যায়, কেউ রক্তশূন্যতায় আক্রান্ত হয়েছে, দ্রুত প্লাটিলেটের মাত্রা কমে যাচ্ছে, চামড়ায় রক্তবিন্দুর পরিমাণ বেশি দেখা যাচ্ছে, মাসিকের সময় বেশি রক্ত যাচ্ছে, দাঁতের গোড়া বা মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়ছে, খাদ্যনালি থেকে রক্ত পড়ছে, তখন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ব্লাড ট্রান্সফিউশন বা রক্তদানের সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন নিয়োজিত চিকিৎসকরা। রোগী বা রোগীর লোকজনের উচিত প্লাটিলেটের বিষয়টি না ভেবে চিকিৎসকদের ওপর আস্থা রাখা।

প্রশ্ন: এখন জ্বরের সঙ্গে অনেকের বমিও হচ্ছে। এটা কী খারাপ কোনো লক্ষণ?
ডা. খান আবুল কালাম আজাদ: বমি মানুষের একটা প্রটেক্টিভ ম্যাকানিজম। কারও দেহে যখন একটা রোগ প্রবেশ করে, তখন সেখানে কতগুলো নন-স্পেসিফিক সিম্পটম হয়। কারও বমি, মাথাব্যথা, মাংসপেশির ব্যথা, চামড়ায় অস্বস্তি হতে পারে, ক্ষুধামান্দ্য হতে পারে- এসবই নন-স্পেসিফিক সিম্পটম। তবে ডেঙ্গু হলে কারও কারও ক্ষেত্রে পেটের অভ্যন্তরে কোনো অর্গানকে অ্যাফেক্ট করতে পারে, সেটা হেপাটাইটিস হতে পারে, লিভারের এনজাইম বেড়ে যেতে পারে।

প্রশ্ন: এই সময় ভিটামিন ‘সি’ বেশি খাওয়ার কথা বলা হয় কেন?
ডা. খান আবুল কালাম আজাদ: ভিটামিন ‘সি’ আমরা খুব পছন্দ করি। এটা রক্তনালিকে শক্তিশালী করে। কিছুটা হলেও ক্ষুধামান্দ্য থেকে রক্ষা করে। কিছু কিছু হিলিংয়ের ক্ষেত্রে ভিটামিন ‘সি’ খাওয়া যেতে পারে। এর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রোল রয়েছে। অর্থাৎ শরীরে যখন বিক্রিয়া হয় বা সেলগুলো ওলটপালট হয়, তখন ভিটামিন ‘সি’ অনেকটাই উপকার করতে পারে।

প্রশ্ন: ডেঙ্গু এনএস১ পজিটিভ মানে কী?
ডা. খান আবুল কালাম আজাদ: এনএস১ হলো একিট অ্যান্টিজেন। নন-স্ট্রাকচারাল অ্যান্টিজেন। এই অ্যান্টিজেন ডেঙ্গু বা ডেঙ্গু ভাইরাসের উপস্থিতিকে প্রমাণ করে। এ জন্য ডেঙ্গু শনাক্ত করতে আমরা ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই এনএস১ অ্যান্টিজেন রক্ত পরীক্ষা করাতে বলি। সংক্রমণের পর সাধারণত এক থেকে তিন দিনের মধ্যে এর ফলাফল পাওয়া যায়।

প্রশ্ন: ডেঙ্গু রোগ আসলে কতটা ভয়াবহ? রোগী কখন জটিলতার দিকে যেতে পারে?
ডা. খান আবুল কালাম আজাদ: রক্ত পরীক্ষায় যদি কারও ডেঙ্গু ধরা পড়ে, তাহলে টেনশনের কারণ নেই। এতে ভয়েরও কিছু নেই। সাপোর্টিভ চিকিৎসা ও সঠিক পরিচর্যা করলে জ্বর ভালো হয়ে যায় ও ঝুঁকিমুক্ত থাকা যায়। তবে কোনো চিকিৎসা না করালে ডেঙ্গু কিন্তু প্রাণঘাতী হতে পারে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ডেঙ্গু জটিলতার দিকে রূপ নিতে পারে। ডেঙ্গু থেকে মারাত্মক সমস্যা হলো প্লাজমা লিকেজ, ডিআইসি, মায়োকার্ডিটিস, রক্তপাত, তরল জমে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট, কোনো অঙ্গের কার্যকারিতা নষ্ট ইত্যাদি।

প্রশ্ন: ডেঙ্গু হেমোরেজিক বোঝার উপায় কী?
ডা. খান আবুল কালাম আজাদ:বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সংজ্ঞা অনুযায়ী, জ্বরের সঙ্গে প্লাটিলেট কাউন্ট ১ লাখের কম এবং রক্তে হেমাটোক্রিট (রক্তের পরিমাণের সঙ্গে লোহিত কণিকার পরিমাণের অনুপাত) ২০ শতাংশ কমবেশি হলে সেটা ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার। এর সঙ্গে রক্তবমি, রক্তনালি লিকের (প্লাজমা লিকেজ) উপসর্গ যেমন প্রোটিন কমা, পেটে বা ফুসফুসে পানি জমার মতো উপসর্গ থাকতে পারে।

প্রশ্ন: দ্বিতীয়বারের মতো ডেঙ্গু হওয়া ঝুঁকিপূর্ণ কেন বা কোন সেরোটাইপটি বেশি বিপজ্জনক?
ডা. খান আবুল কালাম আজাদ: ডেঙ্গুর উদ্বেগজনক বিষয়টি হলো, একবার সংক্রমিত হয়ে যাওয়া মানুষকে আবারও মারাত্মক সংক্রমণের ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। ডেঙ্গু ভাইরাসের চারটি আলাদা সেরোটাইপ থাকে। কেউ একবার একটি সেরোটাইপে আক্রান্ত হলে তার আরও তিনবার ডেঙ্গু হতে পারে এবং পরবর্তী পর্যায়গুলো বেশ বিপজ্জনক হতে পারে। অর্থাৎ একবার কারও ডেন১ হওয়া মানে তার শরীরে কতগুলো অ্যান্টিবডি তৈরি হয়ে যাচ্ছে। এখন ডেন২ হওয়া মানে নতুন করে নতুন অ্যান্টিবডি তৈরি হচ্ছে, যা আগের অ্যান্টিবডির সঙ্গে মারাত্মকভাবে রিঅ্যাকশন করতে পারে। এ কারণে তীব্র ডেঙ্গু বা ডেঙ্গু শক সিনড্রোম হতে পারে। তাই বলা হয়, দ্বিতীয়বারের মতো ডেঙ্গু হওয়া ঝুঁকিপূর্ণ।

প্রশ্ন: এই জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তিদের কি আলাদা থাকা দরকার?
ডা. খান আবুল কালাম আজাদ: মানুষ থেকে মানুষে বা এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তিতে ডেঙ্গু ছড়ায় না। তবে ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তিদের মশা এড়িয়ে চলা উচিত। এই জ্বরে আক্রান্ত রোগী যতক্ষণ পর্যন্ত অসুস্থ থাকবে, তার রক্তের মধ্যে ওই ভাইরাস থাকতে পারে। সে সময় একটি জীবাণুবাহী এডিস মশা কামড় দিয়ে রক্ত শুষে অন্য একজন সুস্থ মানুষকে কামড়ালে তার অবশ্যই ডেঙ্গু হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। এ জন্য কোনো ব্যক্তি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে কমপক্ষে ৯ দিন পর্যন্ত তাকে মশারি টাঙিয়ে সম্পূর্ণ আলাদা করে রাখা উচিত, যত দিন পর্যন্ত তার রক্তে ভাইরাসের অস্তিত্ব না থাকে।

প্রশ্ন: ডেঙ্গু ভাইরাস কি চিরকাল মানবদেহের সিস্টেমে থাকে?
ডা. খান আবুল কালাম আজাদ: না। ডেঙ্গু ভাইরাস মানবদেহে স্থায়ীভাবে থাকে না। শরীরের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার মাধ্যমে একসময় ওই ভাইরাস শরীর থেকে পুরোপুরি বের হয়ে যায়। ডেঙ্গু ভাইরাস চিরকাল মানবদেহের সিস্টেমে থাকে না, কিন্তু ভাইরাসের জন্য যে অ্যান্টিবডি তৈরি হয় সেই অ্যান্টিবডি চিরকাল সুপ্ত অবস্থায় থেকে যায়।

 কলি

ডেঙ্গু জ্বরের কারণ লক্ষণ ও প্রতিকার

প্রকাশ: ২৯ আগস্ট ২০২৪, ০৪:২১ পিএম
আপডেট: ২৯ আগস্ট ২০২৪, ০৪:২১ পিএম
ডেঙ্গু জ্বরের কারণ লক্ষণ ও প্রতিকার

ডেঙ্গু জ্বরকে শুধু ভাইরাল জ্বর ভেবে উপেক্ষা করা ঠিক না। ডেঙ্গু জ্বর ও ভাইরাল জ্বর দুটি একে অপরের থেকে আলাদা এবং ডেঙ্গু তুলনামূলকভাবে ভয়ংকর। প্রাথমিক লক্ষণগুলো একই হওয়ার কারণে রোগী ঠিক কী রোগে ভুগছেন, তা প্রথম অবস্থায় বোঝা কঠিন হতে পারে। আমেরিকার স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইট ক্লেভারল্যান্ড ক্লিনিক অবলম্বনে লিখেছেন ফখরুল ইসলাম

প্রথমে আমাদের জানা প্রয়োজন, এডিস মশা কামড়ালেই মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয় কি না। চিকিৎসকরা কিন্তু ঠিক তেমনটা বলছেন না। বরং তারা বলছেন, পরিবেশে উপস্থিত কোনো ভাইরাস যদি কোনো এডিস মশার মধ্যে সংক্রমিত হয়, শুধু তখনই ওই মশার কামড়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

স্ত্রী এডিস মশা ভাইরাসের বাহক হিসেবে কাজ করে। সংক্রমিত ব্যক্তি থেকে সুস্থ ব্যক্তিতে এরা এই ভাইরাস ছড়াতে থাকে। ডেঙ্গু জ্বরের কারণে প্রচণ্ড জ্বরের মতো উপসর্গ দেখা দেয়। ডেঙ্গু ভাইরাস সাধারণত চার প্রকার। তবে যারা আগে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের পরবর্তী সময়ে এ রোগ আবার দেখা দিলে প্রাণঘাতী হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ বা উপসর্গগুলো কী কী?
তিন থেকে পনেরো দিনের মধ্যে ভাইরাস বহনকারী এডিস মশার কামড়েই যে কারও ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ বা উপসর্গ দেখা দিতে পারে। উপসর্গগুলোর মধ্যে রয়েছে জ্বর। যা ১০২ থেকে ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত হতে পারে। থাকতে পারে মাথাব্যথা। এ ছাড়া বমি, চোখের পেছনে ব্যথা, চামড়ায় লালচে দাগ (র‌্যাশ), শরীরে শীতলতা অনুভব করা, ক্ষুধা কমে যাওয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য, স্বাদের পরিবর্তন, হৃৎস্পন্দনের হার ও রক্তচাপ কমে যাওয়া এবং পেশিতে ও গাঁটে ব্যথার অনুভূতি হতে পারে।

ডেঙ্গু রোগের ধরন
চিকিৎসকদের মতে, সাধারণত দুই ধরনের ডেঙ্গু জ্বর হয়- ক্ল্যাসিকাল এবং হেমোরেজিক। ক্ল্যাসিকালে জ্বর সাধারণত দুই থেকে সাত দিনের মধ্যে ভালো হয়ে যায়। বিপদ ঘটে হেমোরেজিকের ক্ষেত্রে। এই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ব্যক্তির অবস্থা পাঁচ থেকে সাত দিন পর মারাত্মক সংকটাপন্ন হতে পারে।
হেমোরেজিকের ক্ষেত্রে রোগীর রক্তপাত হয়, রক্তে অণুচক্রিকার মাত্রা কমে যায় এবং রক্তের প্লাজমা কমে যায়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আবার দেখা দেয় ডেঙ্গু শক সিনড্রোম। এতে রক্তচাপ বিপজ্জনকভাবে হ্রাস পায়। কিছু সময় আক্রান্ত ব্যক্তির মুখ, দাঁতের মাড়ি এবং নাক থেকে রক্তপাত ঘটে। মলের সঙ্গেও মাঝে মাঝে রক্ত বের হতে পারে।

ডেঙ্গু আক্রান্ত নারীর ক্ষেত্রে পিরিয়ডের সময়ও অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়। এমনকি কারও কারও রক্তের প্লাটিলেট বা অণুচক্রিকা কমে গিয়ে শরীরের চামড়ার নিচে ইন্টারনাল ব্লিডিং হয়। পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে যখন রোগীর হাত-পা দ্রুত ঠাণ্ডা হওয়া শুরু করে এবং রক্তচাপ কমে যায়। আক্রান্ত ব্যক্তি এ সময় মাত্রাতিরিক্ত ঘামতে শুরু করে। এতে তার মধ্যে এক ধরনের ছটফটানিও শুরু হয়। কেউ কেউ বমি করে বা তাদের বমি বমি ভাব হয়। এ সময় কোনো কোনো রোগীর হোয়াইট ব্লাড সেল স্বল্পতা, ইলেক্ট্রোলাইটের অসমতা, লিভারে সমস্যা এবং মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের মতো ঘটনা ঘটে। এতে তাদের শকে চলে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। দুঃখজনক হলো, এর ফলে রোগীর মৃত্যুও হতে পারে।

ডেঙ্গু প্রতিরোধে পদক্ষেপ ও সতর্কতা
যেহেতু এডিস মশা দিনে কামড়ায়, তাই দিনের বেলায় ঘুমাতে গেলে ঘরে মশারি অথবা কয়েল ব্যবহার করতে হবে। ঘরের আনাচে-কানাচে অন্ধকারাচ্ছন্ন জায়গায় মশার ওষুধ স্প্রে করতে হবে। সুরক্ষিত থাকতে দিনে যথাসম্ভব লম্বা পোশাক পরাই ভালো।

এডিস মশা সাধারণত পরিষ্কার পানিতে বংশবিস্তার করে। এ কারণে অফিস, ঘর এবং এর আশপাশে যেন পানি না জমে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কোথাও পানি জমা থাকলে ২-৩ দিন পরপর তা পরিবর্তন করতে হবে। অনেক সময় ফুলের টবে, এসি বা ফ্রিজের ট্রেতে জমা পানিতে মশা ডিম দিতে পারে। তাই ডেঙ্গুর মৌসুমে এসব স্থান পরিষ্কার রাখতে হবে।

ডেঙ্গু হলেই আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক থাকতে হবে। কিছু বিপৎসংকেত জানা থাকলে সতর্ক হতে সুবিধা হবে। অস্বাভাবিক দুর্বলতা, অসংলগ্ন কথা বলা, অনবরত বমি, পেটে তীব্র ব্যথা, গায়ে লাল ছোপ ছোপ দাগ, শ্বাসকষ্ট, হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়া, প্রস্রাবের সঙ্গে রক্তপাত, প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া অথবা রোগীর মুখ, নাক, দাঁতের মাড়ি, পায়ুপথে রক্তক্ষরণ, পিরিয়ডের সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, রক্তবমি হলে দেরি না করে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

কারা বেশি ঝুঁকিতে থাকে
ডেঙ্গুতে সাধারণত বেশি ঝুঁকিতে থাকেন ১ বছরের কম এবং ৬৫ বছরের ওপরে যাদের বয়স, তারা। এ ছাড়া অন্তঃসত্বা, যাদের ওজন বেশি, যারা ডায়াবেটিসে ভুগছেন, যাদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা আছে, যারা হার্টের সমস্যায় আক্রান্ত কিংবা যাদের নিয়মিত ডায়ালাইসিস করতে হয়, তাদের ডেঙ্গু সংক্রমণের শুরু থেকেই হাসপাতালে থাকার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা।

এ ছাড়া ডেঙ্গু থেকে সতর্ক থাকতে এ সময় জ্বরে আক্রান্ত হলেই প্রথমে একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। প্রাথমিক অবস্থাতেই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চললে জটিলতা এড়ানো সম্ভব। সাধারণত জ্বরের শুরুতেই প্রথম পাঁচ দিনের মধ্যে ডেঙ্গু NS1 টেস্ট করার কথা পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা। এর সঙ্গে আরও থাকে CBC, SGPT, SGOT টেস্ট করার পরামর্শ।

ডেঙ্গু হলে করণীয়
যেকোনো রোগের উপসর্গ দেখা দিলেই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। ডাক্তারের নির্দেশনা ছাড়া ওষুধ গ্রহণ করলে অথবা নিজে থেকে কোনো পদক্ষেপ নিতে গেলে অনেক সময় মারাত্মক ক্ষতির মুখোমুখি হতে হয়। নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলেই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী বাসায় প্রাথমিক পরিচর্যা ও চিকিৎসা শুরু করা ভালো।

যেহেতু ডেঙ্গু রোগীরা অধিকাংশ সময়ই ক্লান্ত থাকেন, তাদের পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া জরুরি। লক্ষণ দেখা দেওয়ার ৭ থেকে ১০ দিন পর্যন্ত কোনো ভারী কাজ অথবা মাত্রাতিরিক্ত পরিশ্রম করা যাবে না। তবে তাই বলে শুধু শুয়ে-বসে থাকাটাও ঠিক নয়। স্বাভাবিক হাঁটা-চলা বা দৈনন্দিন কাজ চালিয়ে যেতে হবে। এ সময় বাসার বাইরে না যাওয়াই ভালো।

ডেঙ্গু রোগীর খাবার
ডেঙ্গু রোগীকে প্রচুর পরিমাণে পানি, স্যালাইন, স্যুপ, ডাবের পানি, ফলের রস এবং দুধ জাতীয় তরল পানীয় পান করতে হবে। ডেঙ্গু জ্বর থেকে সেরে ওঠার সময়ও প্রচুর পরিমাণে তরল পান করতে হবে। এ সময় শরীর যেন পানিশূন্যতায় না ভোগে, সে জন্য আড়াই থেকে তিন লিটার পানি প্রতিদিন পান করতে হবে।

এ ছাড়া খেতে হবে প্রচুর প্রোটিন ও আয়রন-সমৃদ্ধ খাবার। মাছ, মুরগির মাংস, চর্বিহীন লাল মাংস, ডিম, দুধ ও দুগ্ধজাত খাদ্যে প্রোটিন বেশি থাকে বলে এ সময় এসব খাবার বেশি করে খাওয়া উচিত। রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এ খাবারগুলো সাহায্য করে।

ডেঙ্গু প্রতিরোধের প্রধান উপায় হচ্ছে সচেতনতা। এডিস মশা যেন বংশবৃদ্ধি করতে না পারে কিংবা দিনের বেলা যেন মশার কামড় এড়ানো যায়, সে বিষয়ে সচেতন থাকা গুরুত্বপূর্ণ। সচেতনতার মাধ্যমেই ডেঙ্গু জ্বরের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব।

 কলি