ঢাকা ৩০ আশ্বিন ১৪৩১, মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৪

ফ্রোজেন শোল্ডার বা কাঁধের জয়েন্টে ব্যথা

প্রকাশ: ১৫ আগস্ট ২০২৪, ০৩:৩৫ পিএম
ফ্রোজেন শোল্ডার বা কাঁধের জয়েন্টে ব্যথা

ফ্রোজেন শোল্ডার এমন একটা রোগ, যাতে ব্যথার মাত্রা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে এবং একসময় তা অসহনীয় হয়ে ওঠে। একপর্যায়ে কাঁধের নড়াচড়াই অসম্ভব হয়ে পড়ে। লিখেছেন অর্থোপেডিক ও অর্থোপ্লাস্টি সেন্টারের হেড এবং চিফ কনসালট্যান্ট অধ্যাপক ডা. এম আমজাদ হোসেন 

ফ্রোজেন শোল্ডারের তেমন কোনো কারণ জানা যায়নি। তবে ডায়াবেটিস, হাইপারলিপিডেমিয়া বা শরীরে অতিরিক্ত মেদ, হাইপার থাইরয়েড, হৃদরোগ ও প্যারালাইসিস রোগীদের মধ্যে ফ্রোজেন শোল্ডারের প্রকোপ বেশি দেখা গেছে। কাঁধের অস্থিসন্ধিতে যে পর্দা থাকে, তার দুটি আবরণ থাকে। একটি ভেতরের দিকে, আরেকটি বাইরের দিকে। এই দুই আবরণের মাঝখানে কিছুটা ফাঁকা জায়গা থাকে, যেখানে এক ধরনের তরল পিচ্ছিল পদার্থ থাকে, যা কাঁধের মসৃণ নড়াচড়ার জন্য জরুরি। এই রোগে ওই দুই পর্দার মাঝখানের জায়গা ও পিচ্ছিল পদার্থ কমে যায়, ফলে কাঁধের নড়াচড়াও মসৃণভাবে হয় না এবং প্রচুর ব্যথার সৃষ্টি করে। ব্যথা দিন দিন বাড়তে থাকে এবং একসময় তা অসহ্য হয়ে পড়ে। সাধারণত মধ্যবয়সেই এই রোগ বেশি দেখা যায়।

উপসর্গ
ফ্রোজেন শোল্ডার রোগীর কাঁধের নড়াচড়া, বিশেষ করে হাত ওপরের দিকে উঠানো এবং হাত ঘুরিয়ে পিঠ চুলকানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। কাঁধের এক্স-রে করলে তা প্রায় স্বাভাবিক পাওয়া যায়। কোনো কোনো রোগীর ক্ষেত্রে সেখানে আগে আঘাত ছিল বলে জানা যায়। কদাচিৎ কাঁধ কিছুটা শুকিয়ে যাওয়ার মতো মনে হতে পারে। এটা হয় ব্যথার কারণে, দীর্ঘদিন আক্রান্ত কাঁধ ব্যবহার না করলে। আবার কিছু রোগীর ক্ষেত্রে হাত ঝিঁঝি করা, শক্তি কম পাওয়া, এমনকি পাশাপাশি হাত একেবারেই উঠাতে না পারার মতো লক্ষণ দেখা যায়। তবে তাদের খুব সতর্কতার সঙ্গে পরীক্ষা করা উচিত যে রোগটি ফ্রোজেন শোল্ডার নাকি স্নায়ুরোগজনিত কোনো সমস্যা বা অতীতের আঘাতের ফলে রোটেটর কাফের ছিঁড়ে যাওয়াজনিত কোনো সমস্যা। সে ক্ষেত্রে চিকিৎসার ধরনও ভিন্ন হয়।

চিকিৎসা
কোনো রকম অপারেশন ছাড়াই এই রোগের চিকিৎসা দেওয়া হয়। প্রথমে রোগীকে আশ্বস্ত করতে হবে যে এটি খুব সাধারণ একটি সমস্যা। পাশাপাশি হালকা কিছু ব্যথানাশক দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে সঠিক ও বিশেষ কিছু ব্যায়ামের মাধ্যমে আপনা থেকে ফ্রোজেন শোল্ডার ভালো হয়ে যায়, যদিও কিছুটা সময় লাগে।

তবে ব্যায়াম বা ব্যথানাশকে কাজ না হলে, অর্থোপেডিক চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে কাঁধের অস্থিসন্ধিতে স্টেরয়েড ইনজেকশন প্রয়োগও করতে হতে পারে। এটার অবশ্য ফল বেশ ভালো এবং রোগীরাও অনেক সময় এটি নেওয়ার জন্য উদগ্রীব থাকেন। তবে স্টেরয়েড ইনজেকশন দিলেও ফ্রোজেন শোল্ডার হলে ব্যায়ামের কোনো বিকল্প নেই, যা সবসময় চালিয়ে যেতে হবে। হবে। তাই ফ্রোজেন শোল্ডার নামক অর্ধপঙ্গুত্ব নিয়ে আর বসবাস নয়। উপযুক্ত চিকিৎসা নিন, সুস্থ থাকুন।

 কলি

কিডনি সুস্থ রাখুন

প্রকাশ: ১২ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৩০ এএম
আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:৫৬ পিএম
কিডনি সুস্থ রাখুন
স্থায়ীভাবে দুটি কিডনিই একসঙ্গে বিকল হওয়া রোগকে বলা হয় প্রগ্রেসিভ ডিজিজ

বিশ্বে ৮৫ কোটি মানুষ কিডনির নানা রোগে আক্রান্ত এবং সে হিসাবে প্রতি ১০ জনে একজন কিডনির রোগে আক্রান্ত। অন্যদিকে আমাদের দেশের ২ কোটি মানুষ কোনো না কোনোভাবে কিডনি রোগে আক্রান্ত। প্রতি বছর ৪ লাখ মানুষ নতুন করে আক্রান্ত হচ্ছে কিডনির নানা রোগে। প্রাণঘাতী এসব রোগ থেকে দূরে থাকতে হলে সচেতন হতে হবে সবাইকে। মায়ো ক্লিনিক অবলম্বনে জানাচ্ছেন ফখরুল ইসলাম


কিডনি কী?
কিডনি হলো রক্ত শোধনাগার, যা রক্ত পরিষ্কার করার কর্মীর মতো কাজ করে। খাদ্য গ্রহণ ও কাজ করার ফলে শরীরের যে অসংখ্য ক্রিয়া-বিক্রিয়া ঘটে, ফলে অনেক ধরনের বর্জ্য পদার্থ শরীরে তৈরি হয়। আর বেঁচে থাকার তাগিদে অপ্রয়োজনীয় অংশ শরীর থেকে বের করে দিতে হয়। মানুষের শরীর থেকে এসব বর্জ্য পদার্থ বের করার মাধ্যম হলো চারটি- কিডনি, রেসপিরেটরি সিস্টেম, চামড়া ও মুখ-খাদ্যনালি-পায়ুপথ।
প্রতিটি কিডনিতে থাকা ১০ লাখ রক্ত ছাঁকনি বা নেফ্রন দিয়ে ছেঁকে প্রয়োজনীয় পদার্থ রেখে দেয় এবং প্রোটিন মেটাবলিজমের কারণে তৈরি নাইট্রোজেনঘটিত বর্জ্য পদার্থ; যেমন- ইউরিয়া, ইউরিক অ্যাসিড, ক্রিয়েটিনিন ও অন্যান্য অপ্রয়োজনীয় পদার্থ প্রস্রাবের সঙ্গে শরীর থেকে বের করে দেয়।


কিডনি রোগ
মানুষ দুই ধরনের রোগ দ্বারা আক্রান্ত হয়। একটি হলো সংক্রামক এবং অপরটি হলো অসংক্রামক। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মানুষ অসংক্রামক রোগ দ্বারাই বেশি আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। কিডনির বিভিন্ন ধরনের রোগ রয়েছে; যেমন- কিডনিতে আঘাত, ক্রনিক কিডনি রোগ (সিকেডি) রেনাল স্টোনস, নেফ্রোটিক সিনড্রোম, গ্লোমারিউলোনেফ্রিটিস, রেনাল সেল কারসিনোমা, মূত্রনালির সংক্রমণ, জন্মগতভাবে বা উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া কিডনি রোগ ইত্যাদি।


কিডনি বিকল হয় কেন?
কিডনি বিকলতার নানা রকম কারণের মধ্যে কিডনি টিস্যুর প্রদাহ, নিয়ন্ত্রণহীন দীর্ঘমেয়াদি ডায়াবেটিস, নিয়ন্ত্রণহীন দীর্ঘমেয়াদি উচ্চ রক্তচাপ, ধূমপান ও মাদকদ্রব্যে আসক্তি, অনিয়ন্ত্রিত লাইফস্টাইল, জন্মগত ত্রুটি, জেনেটিক ও পারিবারিক ধারার অসুখ প্রভৃতি।
ক্রনিক কিডনি ডিজিজ
ক্রনিক কিডনি ডিজিজ একটি স্থায়ী ও প্রগ্রেসিভ ডিজিজ। কিডনিতে একবার ড্যামেজ প্রক্রিয়া শুরু হলে তা ধীরে ধীরে এবং অব্যাহতভাবে আমৃত্যু চলতেই থাকবে। ওষুধ বা অন্য কোনো উপায়ে এই ড্যামেজ প্রক্রিয়া একেবারে বন্ধ করে দেওয়ার কোনো উপায় নেই। তবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের চিকিৎসা-পরামর্শে ড্যামেজ প্রক্রিয়া ধীর করা যায়।


ক্রনিক কিডনি রোগের প্রাথমিক পর্যায়
যখন কিডনি ড্যামেজ প্রক্রিয়া একনাগাড়ে তিন মাসের বেশি অব্যাহত থাকবে।
যখন দেখবেন আপনার জিএফআর বা সিরাম ক্রিয়েটিনিন লেভেল নরমাল; কিন্তু বায়োপসি টেস্টে হিস্টোলজিক অ্যাবনরমালিটি তথা কিডনির ড্যামেজ প্রক্রিয়া ধরা পড়েছে।
যখন দেখবেন জিএফআর লেভেল ৬০ মিলিলিটার/মিনিটের নিচে অব্যাহতভাবে তিন মাস থাকবে অথচ বায়োপসি টেস্টে কোনো হিস্টোলজিক অ্যাবনরমালিটি নেই।


ক্রনিক কিডনি রোগ যখন প্রগ্রেসিভ পর্যায়ে
ক্রনিক কিডনি ডিজিজ একটু ধীরে ধীরে; কিন্তু স্থায়ীভাবে দুটি কিডনিই একসঙ্গে বিকল হওয়া রোগকে বলা হয় প্রগ্রেসিভ ডিজিজ, যার বিকল প্রক্রিয়া একবার শুরু হলে সম্পূর্ণ বিকল না হওয়া পর্যন্ত কোনো ওষুধ দিয়েও তা থামানো যায় না। তবে এ রোগের চিকিৎসায় কিডনি বিকল হওয়ার গতি কমিয়ে আনা যায়; কিন্তু বিকল হওয়া একেবারে থামিয়ে দেওয়া যায় না। এর কারণ হলো আমাদের প্রতি কিডনিতে যে অন্তত ১০ লাখ নেফ্রন তথা ছাঁকনি থাকে, তা একবার স্থায়ী ড্যামেজ প্রক্রিয়ায় মরে গেলে পরে তা আর জীবিত হয় না; বরং এগুলোর পাশে থাকা অন্য নেফ্রনগুলোকেও ক্রমাগতভাবে ধীরে ধীরে ধ্বংসের প্রক্রিয়ায় নিয়ে আসে।


সিকেডি
প্রায়ই প্রাথমিক পর্যায়ে, এমনকি দুটি কিডনির কার্যক্ষমতা ৯০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যাওয়ার পরও মানুষ বুঝতে পারে না যে তার কত বড় সর্বনাশ হয়ে গেছে। লক্ষণ দৃশ্যমান না হওয়ার অন্যতম কারণ হলো কিডনির অভিযোজনক্ষমতা বা রিজার্ভ পাওয়ার অনেক বেশি। সাধারণত কিডনির কার্যক্ষমতা ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ না কমা পর্যন্ত রক্ত পরীক্ষায় সিরাম ক্রিয়েটিনিন লেভেল উচ্চ দেখায় না। আবার সাধারণত সিরাম ক্রিয়েটিনিন লেভেল দুই না হওয়া পর্যন্ত আলট্রাসনোগ্রাফিতেও ভালোমতো বোঝা যায় না যে ব্যক্তির ক্রনিক কিডনি ডিজিজ হয়েছে। পরবর্তী পর্যায়ে কিডনিতে ক্ষতি যখন অপরিবর্তনীয় হয়ে যায়, তখন রোগীও বেশ কয়েকটি লক্ষণ অনুভব করতে পারেন; যেমন- গোড়ালি ও পা ফোলা, ওজন হ্রাস, ক্ষুধামান্দ্য, রক্তশূন্যতা হয়ে ফ্যাকাসে দেখানো, শারীরিক দুর্বলতা, প্রস্রাবে সমস্যা ইত্যাদি।
সুতরাং সিকেডি একটি নীরব ঘাতক রোগ, যা ক্যানসারের চেয়েও ভয়াবহ। কারণ অনেক ক্যানসারই সময়মতো চিকিৎসায় ভালো হয়; কিন্তু সিকেডি রোগটি শুরু হয় অনেকটাই নীরবে এবং যার শেষ রক্ষা হিসেবে করতে হয় ডায়ালিসিস অথবা কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশন এবং পরবর্তী সময়ে শেষ পরিণতি মৃত্যু।
সুতরাং এই প্রাণঘাতী রোগ থেকে বাঁচার মূল চেষ্টা রোগের চিকিৎসা করার চেয়ে রোগ যাতে না হতে পারে সে ব্যবস্থা করা। যদি কেউ এমন কোনো লক্ষণ অনুভব করেন, যা কিডনিতে রোগের ইঙ্গিত দেয়, তবে তাদের তাৎক্ষণিকভাবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

 

মেহেদী আল মাহমুদ

 

দেহের অত্যাবশ্যকীয় খাদ্য উপাদান সম্পর্কে জানুন

প্রকাশ: ১১ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৩০ এএম
আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:৩৮ পিএম
দেহের অত্যাবশ্যকীয় খাদ্য উপাদান সম্পর্কে জানুন
আয়রন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন-ডি, জিংক, কপার এগুলো আমাদের দেহের জন্য অত্যাবশ্যকীয় নিউট্রিয়েন্ট।

আয়রন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন-ডি, জিংক, কপার এগুলো আমাদের দেহের জন্য অত্যাবশ্যকীয় নিউট্রিয়েন্ট। অনেক সময় আমরা এই উপাদানগুলো পর্যাপ্ত পরিমাণে গ্রহণ করলেও আমাদের শরীরে সঠিকভাবে কাজ করে না। দেহে এই উপাদানগুলোর ঘাটতি দেখা দেয়। ফলে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যার পাশাপাশি মানসিক সমস্যারও সম্মুখীন হতে হয়। জানাচ্ছেন নিউট্রিশনিস্ট অ্যান্ড ডায়েট কনসালট্যান্ট শামীমা আহমেদ


ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন-ডির সম্পর্ক
এ দুটি উপাদান আমাদের শরীরের জন্য অত্যাবশ্যক। এই খনিজ উপাদান হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষণাবেক্ষণে কাজ করে। হাড় ও দাঁত শক্ত করে। ক্ষয় রোধ করে। এর অভাবে অস্টিওপরোসিস হতে পারে। কিন্তু পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম গ্রহণের পরও ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দেখা যায়। দেহে যদি পর্যাপ্ত ভিটামিন-ডি না থাকে তাহলে ক্যালসিয়াম শোষণ হবে না। কারণ ভিটামিন-ডি ক্যালসিয়াম শোষণে সহায়তা করে। একটি আরেকটির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। 


আয়রন ও ভিটামিন-সির সম্পর্ক
আয়রন ও ভিটামিন-সি দুটোই দেহের জন্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। আয়রনের অভাবে রক্তস্বল্পতা, দেহে অক্সিজেনের ঘাটতি, শ্বাসকষ্ট, দুর্বলতা, মাথাব্যথা ছাড়াও বিভিন্ন সমস্যা হয়ে থাকে। কিন্তু পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রন গ্রহণ করলেও দেহে আয়রনের ঘাটতি দেখা দেয়। অবশ্যই আয়রন জাতীয় খাবারের পাশাপাশি ভিটামিন-সি জাতীয় খাবার খাদ্যতালিকায় রাখতে হবে। কারণ দেহে আয়রন শোষণ হতে ভিটামিন-সির প্রয়োজন। ভিটামিন-সি ছাড়া আয়রন শোষণ হবে না। এ ছাড়া আয়রনসমৃদ্ধ খাবারের সঙ্গে সঙ্গে অক্সালেট, ট্যানিন ও ক্যাফেইন জাতীয় খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। এই উপাদানগুলো আয়রন শোষণে বাধা দেয়। 


জিংক ও কপারের সম্পর্ক
এগুলো খুব অল্প পরিমাণে প্রয়োজন হলেও দেহের জন্য অত্যাবশ্যকীয় খনিজ উপাদান। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা শিশুদের ডায়রিয়া হলে জিংক গ্রহণ করার সুপারিশ জানায়, যা ডায়রিয়ার মাত্রা কমায়। জিংকের অভাবে স্নায়ুবৈকল্য দেখা দিতে পারে। জিংক হাড়ের গঠন ও ক্ষয় রোধ করে। কিন্তু প্রয়োজনের অতিরিক্ত জিংক গ্রহণ শরীরের জন্য ক্ষতিকর। জিংকের আধিক্য দেহে কপার শোষণে বাধা দেয়। ফলে বমি বমি ভাব, মাথাব্যথা, অরুচি, পেটে ব্যথা এসব লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে এমনকি অ্যানিমিয়াও হতে পারে। 


আয়রন ও ক্যালসিয়ামের সম্পর্ক
আয়রন ও ক্যালসিয়াম দেহের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দুটি খনিজ উপাদান। দেহকে সুস্থ ও সবল রাখতে এর কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু আয়রন ও ক্যালসিয়াম যদি একই সঙ্গে গ্রহণ করা হয় তাহলে একটি আরেকটিকে শোষণ করতে বাধা দেয়। তাই আয়রন ও ক্যালসিয়াম একই সঙ্গে গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকুন। আমাদের দেহের জন্য এসব প্রয়োজনীয় উপাদানগুলো প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রেখে সঠিকভাবে ও সঠিক পরিমাণে গ্রহণ করতে হবে। সুস্থ দেহ ও সুস্থ মন আমাদের সবারই কাম্য।

 

মেহেদী আল মাহমুদ

মানসিক চাপ কমানোর কিছু কার্যকরী উপায়

প্রকাশ: ১০ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:২৯ পিএম
আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:৩২ পিএম
মানসিক চাপ কমানোর কিছু কার্যকরী উপায়
মানসিক চাপ হলো এক ধরনের মানসিক পরিস্থিতি যেখানে ব্যক্তির চাহিদা ও ক্ষমতার মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়।

আজ বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস


মানসিক চাপ, বর্তমান সময়ে গুরুত্ব না দেওয়া সবচেয়ে ভয়ংকর রোগগুলোর একটি। মানসিক চাপে আক্রান্ত ব্যক্তিদের অবস্থা এতটাই ভয়াবহ হতে পারে যে, জীবননাশের চিন্তাভাবনাও করে থাকেন অনেকেই। চলুন জেনে নিই মানসিক চাপ থেকে মুক্তি পাওয়ার কিছু উপায়। মাই উপচার অবলম্বনে জানাচ্ছেন ফারজানা আলম

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) গবেষণামতে, ২০১৯ সালে প্রতি ৮ জনের মধ্যে ১ জন মানসিক রোগে ভুগছে। ২০২০ সাল থেকে কোভিড-১৯ সমস্যার কারণে এই সংখ্যাটা আরও বেড়েছে। অন্যদিকে, বাংলাদেশ মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের ২০২৩ সালের গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রায় ৫০ শতাংশ মানুষ মানসিক চাপে ভুগছে। এদের মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশ মানুষ বিষণ্নতা, উদ্বেগ বা অন্যান্য মানসিক চাপজনিত রোগে আক্রান্ত।
শুধুই কি প্রাপ্তবয়স্করাই? না, এই তালিকায় রয়েছে কিশোর-কিশোরীরাও। বিএমজি সাইকিয়াট্রিতে প্রকাশিত একটি গবেষণা অনুসারে জানা যায়, বাংলাদেশের স্কুলগামী কিশোর-কিশোরীদের ৭৩ দশমিক ৫ শতাংশের মাঝেই মানসিক চাপ সংক্রান্ত লক্ষণ দেখা গেছে। আর মানসিক চাপের উপসর্গ মিলেছে ৬৫ শতাংশ শিক্ষার্থীদের মধ্যে। 


মানসিক চাপ কী?
মানসিক চাপ হলো এক ধরনের মানসিক পরিস্থিতি যেখানে ব্যক্তির চাহিদা ও ক্ষমতার মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়। সাধারণ অর্থে বলা যায়, আমরা যখন কোনো কাজ করতে যাই, তখন সেটার পরিবেশ ও পরিস্থিতির কারণে যখন করতে না পারি তখন মানসিকভাবে চাপ অনুভব করি।
মানসিক চাপের কারণে একজন ব্যক্তির শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এতে করে সে বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়। মানসিক চাপ একেকজনের জন্য একেক রকম হতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, একজন ব্যক্তি তার চাকরি হারানোর কারণে মানসিক চাপের শিকার হতে পারেন। এক্ষেত্রে তার মধ্যে অনিদ্রা, উদ্বেগ এবং হতাশার মতো অনুভূতির ছাপ লক্ষণীয় হবে। অন্যদিকে, একজন মা তার সন্তানের অসুস্থতার কারণে মানসিক চাপের শিকার হতে পারে। এই চাপের ফলে সে নিরাশ, ভীত এবং হতাশ বোধ করতে পারে।
এক্ষেত্রে দেখা যায় একেকজনের পরিস্থিতি অনুযায়ী মানসিক চাপের লক্ষণগুলোয় ভিন্নতা দেখা দিতে পারে। তবে সবার প্রথমেই যেটা বুঝতে হবে তা হলো মানসিক চাপের কারণ। এবার সেটাই জেনে নেওয়া যাক।


মানসিক চাপের কারণ
এই পর্যায়ে জানব ঠিক কী কী কারণে একজন মানুষ মানসিক চাপে ভুগতে পারে। উল্লেখ্য যে, সবার জন্য সবগুলো কারণ একত্রে পরিলক্ষিত হবে বিষয়টা এরকম না। এক্ষেত্রে কারও কম-বেশি হতে পারে। সাধারণত, সব মানসিক চাপ মূলত দুটি কারণে হয়ে থাকে। ১) অভ্যন্তরীণ কারণ ও ২) বাহ্যিক কারণ। সে কারণগুলোর বিস্তারিত জেনে নিন।


অভ্যন্তরীণ কারণ
দুশ্চিন্তা থেকে মানসিক চাপ সৃষ্টি হয়ে থাকে।
হীনম্মন্যতা বা নিজেকে ছোট করে দেখার জন্য হতাশা সৃষ্টি হয়, যা মানসিক চাপের কারণ।
বিষণ্নতা মনকে খারাপ করে ফেলে, যা মানসিক চাপ বাড়ায়।
অন্যান্য শারীরিক কারণ, যেমন- মাথাব্যথা, ঘুমের সমস্যা, ক্ষুধা হ্রাস, ওজন হ্রাস-বৃদ্ধি ইত্যাদি।


বাহ্যিক কারণ
পারিবারিক সম্পর্কের মন্দ অবস্থা ও কলহ।
কর্মক্ষেত্র বা অতিরিক্ত কাজের চাপ।
বেকারত্বের দুশ্চিন্তা।
অর্থনৈতিক অসচ্ছলতা।
সম্পর্কজনিত চাপ (বিচ্ছিন্ন, সম্পর্কের অবনতি, ঝগড়া)।


মানসিক চাপের লক্ষণ
মানসিক চাপ কমানোর উপায় সম্পর্কে জানার আগে এর লক্ষণগুলো ভালোভাবে বুঝতে হবে। এজন্য আমরা তিনটি মাধ্যম লক্ষ করতে পারি। এগুলো হলো- শারীরিক লক্ষণ, মানসিক লক্ষণ ও আচরণগত লক্ষণ। একটু বিস্তারিত জানা যাক।
শারীরিক লক্ষণ: যখন মানসিক চাপ অনুভব করবেন তখন বিভিন্ন লক্ষণ পরিলক্ষিত হতে পারে। এর মধ্যে আছে মাথাব্যথা, মাথা ঘোরা, ঘুমের অসুবিধা, বমি বমি ভাব, বদহজম হওয়া, ওজন বেড়ে যাওয়া অথবা কমে যাওয়া, নিজের মধ্যে অস্বস্তিবোধ করা এবং অসুস্থতায় ভোগা।
মানসিক লক্ষণ: মানসিক চাপ যখন তীব্র হয় তখন সাধারণত এই বিষয়গুলো ঘটতে পারে। যেমন- উদ্বেগ, ভয়, বিরক্তি ভাব, অল্পতেই রাগ, হতাশা, নিঃসঙ্গতা অনুভব, অসহায় বোধ করা, অনিশ্চয়তায় ভোগা, সিদ্ধান্ত নেওয়ার অসুবিধা হওয়া।
আচরণগত লক্ষণ: প্রায় দেখা যায়, মানসিক চাপে আক্রান্ত ব্যক্তির আচরণ এমন হয়ে থাকে। যেমন ধূমপান করা, অ্যালকোহল বা ড্রাগ ব্যবহার, অতিরিক্ত খাওয়া কিংবা খাওয়া কমিয়ে দেওয়া, রাতে ঘুম না হওয়া, সামাজিক বিচ্ছিন্নতা বা সমাজ থেকে নিজেকে আড়াল করা। 
তাছাড়া ব্যক্তির স্বভাব অনুযায়ী অনেক ক্ষেত্রেই এই লক্ষণগুলোর বাইরেও কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায় কিংবা লক্ষণগুলো অল্প কিংবা বেশি পরিলক্ষিত হতে পারে।


মানসিক চাপ কমানোর কার্যকরী উপায়
এই লক্ষণ যদি কারও মধ্যে থাকে কিংবা মানসিক চাপের মধ্য দিয়ে কেউ যায়, সেক্ষেত্রে মানসিক চাপ কমানোর উপায় সম্পর্কে জেনে পদক্ষেপ নেওয়াটাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। আসুন তবে জেনে নিই মানসিক চাপ কমানোর উপায় সম্পর্কে।


ধর্মীয় কাজে মনোনিবেশ করা
আমরা যার যার ধর্ম অনুসরণ করতে পারি। যিনি আমাদের সৃষ্টিকর্তা যাকে আমরা নির্দ্বিধায় নিজের মনের সব কথা বলতে পারি। ধর্মের প্রতি বিশ্বাসের দিক থেকে আমরা প্রার্থনার মাধ্যমে নিজেদের সমস্যার কথা সৃষ্টিকর্তাকে জানানোর মাধ্যমে নিজের ভেতর প্রশান্তি নিয়ে আসতে পারি। যে সমস্যাগুলোর জন্য মানসিক চাপ অনুভব হচ্ছে, প্রার্থনার মাধ্যমে সেগুলো থেকে মুক্তি চাইতে পারি।


কিছুক্ষণের জন্য বিরতি নিন, হাঁটতে বেরিয়ে পড়ুন
অতিরিক্ত কাজের চাপে যখন অবসাদ চলে আসে, মানসিক চাপ অনুভব হয় তখন কিছু সময়ের জন্য সবকিছু থেকে বিরতি নিন। এক্ষেত্রে হাঁটাহাঁটি করা যেতে পারে। ড. মনিক টেলো বলেন, ‘যদি খুব বেশি চাপ অনুভব করেন তবে প্রকৃতির কাছে চলে যান।’ তিনি আরও বলেন, দ্রুত হাঁটা কিংবা একটু বাইরে যাওয়ার মাধ্যমে অক্সিজেন গ্রহণ করা দ্রুত চাপ কমাতে সক্ষম।


রিল্যাক্সিং ব্রেথ ‘৪-৭-৮’ মেথড অনুসরণ করুন
৪-৭-৮ মেথড কিংবা রিল্যাক্সিং ব্রেথ পদ্ধতি অনুসরণ করে দ্রুত ঘুমানো ও মানসিক চাপ থেকে অল্প সময়ের মধ্যে মুক্তি পাওয়া যায়। ড. অ্যান্ড্রু ওলসন ২০১২ সালে তার বই ‘দ্য ওয়ান মিনিট মেড’-এ এই পদ্ধতিটি প্রকাশ করেন।
যেভাবে করবেন: আরামদায়ক অবস্থান নিন। পিঠ সোজা করে চেয়ারে বসুন বা বিছানায় শুয়ে পড়ুন। এবার আপনার জিভের ডগা ওপরের ঠোঁটের ঠিক পেছনে রাখুন। নাক দিয়ে ৪ সেকেন্ডের জন্য গভীর শ্বাস নিন। তারপর ৭ সেকেন্ডের জন্য শ্বাস ধরে রাখুন। মুখ দিয়ে ৮ সেকেন্ডের জন্য ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়ুন। এই চক্রটি চারবার পুনরাবৃত্তি করুন।


পোষা প্রাণীর সঙ্গে সময় কাটান
গবেষণায় দেখা গেছে, প্রাণীদের সঙ্গে সময় কাটানোর মধ্য দিয়ে হিউম্যান বডিতে কর্টিসোল নামক হরমোন নিৎসৃত হয়, যা মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। পোষা প্রাণীর মধ্যে কুকুর ও বিড়ালের সঙ্গে থাকলে মানুষের একাকিত্ব ও অবসাদ কমে বলে ধারণা করা হয়। এক্ষেত্রে যদি আপনার নিজস্ব পোষাপ্রাণী হয় তবে খুব ভালো, তবে যদি না থাকে তবে আশপাশের প্রাণীদের সঙ্গে সময় কাটান, তাদের খাওয়ানোর মাধ্যমে মানসিক চাপ কমবে।


ডিজিটাল ডিভাইস থেকে বিরতি নিন
আধুনিক সময়ে ডিজিটাল ডিভাইসে হারিয়ে যাওয়াও ডিপ্রেশনের অন্যতম কারণ। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে বিভিন্ন সংবাদ ও ভয়াবহ এলগরিদমের কারণে প্রচুর সময় নষ্ট হয়। ফলে নিজের কাজের প্রতি মনোনিবেশ নষ্ট হয় আর মানসিক চাপ বৃদ্ধি পায়।


প্রিয় মানুষদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন
মানসিক চাপ কমানোর উপায় হিসেবে প্রিয় মানুষের সঙ্গে সময় কাটানো খুব কার্যকর হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কেননা, বন্ধুত্ব ও পারিবারিক বন্ধন মানসিক চাপ কমায়। বিশ্বস্ত বন্ধু কিংবা আপন মানুষের সঙ্গে সমস্যার কথা খুলে বললে ধীরে ধীরে মাথা থেকে চাপ কমে আসে। নিজেকে খুব হাল্কা অনুভব করতে পারবেন। তাই আপনার প্রিয় মানুষদের কাছে নিজের অবস্থান তুলে ধরুন, তাদের শরণাপন্ন হোন।


ভ্রমণে বের হন
মানসিক চাপ কমানোর আরেকটি ভীষণ কার্যকরী উপায় হলো ভ্রমণ করা। প্রকৃতির কাছাকাছি থাকলে আমাদের মন সতেজ থাকে, নতুন নতুন মানুষ বিষয় ও মানুষের সঙ্গে পরিচিত হলে আমরা দুশ্চিন্তা থেকে দূরে থাকতে পারি।
যারা ভ্রমণপিপাসু, তাদের অধিকাংশই বিভিন্ন ধরনের মানসিক সমস্যা থেকে মুক্ত। তাই আপনিও যদি মানসিক চাপ কমাতে চান তাহলে সারা দিনের কর্মব্যস্ততা, সাংসারিক কাজের মাঝেও কোথাও ঘুরতে যাওয়ার জন্য সময় বের করুন। যতটা সম্ভব প্রকৃতির কাছাকাছি ঘুরতে যান।


যোগব্যায়াম করুন
শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা রক্ষার জন্য খুব প্রাচীন ও সর্বস্বীকৃত উপায় হলো ইয়োগা বা যোগব্যায়াম। কয়েক ধরনের যোগব্যায়াম রয়েছে। এগুলোর ভূমিকা ভিন্ন হলে তারা একত্রে আপনাকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করবে।
যেমন শ্বাস-প্রশ্বাস ঠিক রাখতে প্রাণায়াম, দুশ্চিন্তা দূর করতে ও আত্মবিশ্বাস বাড়াতে মেডিটেশন, শরীরের রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখতে উত্তরাসন (Standing Forward Pose) করতে পারেন। যোগব্যায়াম করার সবচেয়ে উত্তম সময় হলো সূর্যাস্তের সময়। এ ছাড়া বিকেলে বা সন্ধ্যায়ও এটি করা যেতে পারে।


চুইংগাম চাবান
আপনি কাজের মধ্যে নানানভাবে অন্যমনষ্ক হয়ে যাচ্ছেন? মাথায় বিভিন্ন দুশ্চিন্তা ভর করে? এই সমস্যা এড়ানোর একটা উপায় হলো চুইংগাম চিবানো। চুইংগাম চিবানোর সময় আমাদের মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহ স্বাভাবিক থাকে। ফলে কাজে অধিকতর মনোযোগ দেওয়া যায়। বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের জন্য এটি বেশ কার্যকর। ফলে কোনো বিষয় সহজেই আমাদের ব্রেইনের শর্ট-টার্ম মেমোরিতে সংরক্ষিত হয়।


পছন্দের কাজ করুন
ব্যক্তিভেদে ছোট-বড় এমন অনেক কাজ রয়েছে যেগুলো করলে ভেতর থেকে ভালো লাগা কাজ করে। এটা হতে পারে গান শোনা, বই পড়া, খেলাধুলা করা, মুভি দেখা, ঘুরতে যাওয়া। যখন এই কাজগুলোর মাধ্যমে নিজেকে ব্যস্ত রাখবেন, তখন স্বাভাবিকভাবেই একটা ভালো লাগা কাজ করবে। তাই মানসিক চাপ অনুভব করলেই তাৎক্ষণিক ব্রেক নিন এবং পছন্দের কাজ শুরু করুন।

 

মেহেদী আল মাহমুদ

ডেঙ্গু রোগীর খাদ্যাভ্যাস

প্রকাশ: ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:১৫ এএম
আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ০১:২০ পিএম
ডেঙ্গু রোগীর খাদ্যাভ্যাস
ডেঙ্গু হলে প্রচুর পানি ও তরলজাতীয় খাবার খেতে হয়।

ডেঙ্গু জ্বর যেন না হয়, সে জন্য সাবধান থাকতে হবে আগে থেকেই। তবে যদি জ্বর হয়েই যায়, তাহলে খাদ্যাভ্যাসে কিছু পরিবর্তন আনতে হবে। চলুন জেনে নিই ডেঙ্গু রোগীর খাদ্যাভ্যাস কেমন হওয়া উচিত। মায়ো ক্লিনিক অবলম্বনে জানাচ্ছেন মো. রাকিব

 

পানি ও তরলজাতীয় খাবার

যেহেতু এই অসুখে শরীরের তাপমাত্রা হঠাৎ করেই অনেক বেড়ে যায়; তাই এ সময় শরীরে প্রচুর পানি ও তরলজাতীয় খাবার প্রয়োজন। চিকিৎসকদের মতে, একজন ডেঙ্গু রোগীর দৈনিক ৩ লিটার বা ১২ গ্লাস পানির প্রয়োজন। পানির পাশাপাশি বিভিন্ন ফলের রস যেমন- আম, মাল্টা, লেবু, বেদানা বা আনার, আপেল, আনারস দেওয়া যেতে পারে।

শর্করা ও প্রোটিনসমৃদ্ধ খাদ্য

ক্ষুধামান্দ্য হলেও রোগীকে পর্যাপ্ত পরিমাণে শর্করা ও প্রোটিনসমৃদ্ধ খাদ্য যেমন- নরম ভাত, ডাল, ডিম, মাছ, মাংস খেতে হবে। তবে যেহেতু এ সময় অনেকের বদহজম বা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যাও দেখা দিতে পারে, তাই তারা ডিমের কুসুমের অংশটি বাদ দিতে পারেন।

পাতলা ঝোল

কোনোভাবেই এ সময় অতিরিক্ত তেল, মসলা দিয়ে রান্না করা খাবার বা বাইরের জাংক ফুড খাওয়া যাবে না। মাছ বা মাংসের ভুনা না খেয়ে পাতলা ঝোল করে খেতে হবে।

স্যুপ

মসলা দিয়ে রান্না করা রেড মিটের চেয়ে চিকেনের ঝোল বা স্যুপ বেশি উপকারী। টমেটো স্যুপ, চিকেন স্যুপ, ভেজিটেবল স্যুপ, কর্ন স্যুপ খেলে অনেক সময় অরুচি কেটে যায়। আবার শরীরে পানির চাহিদাও পূরণ হয়।

এ ছাড়া নিয়মিত খাওয়া-দাওয়ার পাশাপাশি রোগীকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে। এ সময় রোগীর শারীরিক দুর্বলতা থাকে। উপসর্গের ৭ থেকে ১০ দিন ভারী কোনো কাজ, মাত্রাতিরিক্ত পরিশ্রম করা যাবে না। রোগী স্বাভাবিক হাঁটা-চলা, দৈনন্দিন কাজ করতে পারবেন। চাকরিজীবী হলে ছুটি নিয়ে বাড়িতে থাকতে হবে এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে।

রক্তের প্লাটিলেট বাড়ায় যে খাবারগুলো

পেঁপে: এই সবজি প্লাটিলেট বাড়াতে সাহায্য করে। এমনকি পেঁপে পাতার রস খেলেও অনেক সময় দ্রুত প্লাটিলেট বাড়ে। তবে গর্ভবতী ও শিশুদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা এটি দিতে নিষেধ করেন। তা ছাড়া এ বিষয়ে অনেক মতবিরোধ রয়েছে।

বেদানা: বেদানায় আছে ভিটামিনস ও মিনারেলস। শরীরে শক্তি ফিরিয়ে আনতে এই ফলটি বেশ উপকারী। আয়রনের খুব ভালো উৎস এই ফল। প্লাটিলেটের সংখ্যা স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে বেদানা।

ব্রকলি: ব্রকলি এমন একটি সবজি, যা রক্তের প্লাটিলেট বাড়ায় খুব দ্রুত। তবে কখনোই বেশি মসলা দিয়ে রান্না করা উচিত নয়। এতে খাদ্যগুণ নষ্ট হয়ে যায়। হালকা স্টিম করে খাওয়া ভালো। এখন আমাদের দেশেই এই সবজির চাষ হচ্ছে।

 

 মেহেদী আল মাহমুদ

ডেঙ্গু হেমোরেজিক থেকে সাবধান

প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:০০ এএম
আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ০১:১৫ পিএম
ডেঙ্গু হেমোরেজিক থেকে সাবধান
ডেঙ্গু ভাইরাসের আক্রমণে রক্তের অণুচক্রিকা বা প্লাটিলেট কমতে শুরু করে।

ধরন

জ্বর, গা-হাত-পা, চোখ-মাথাব্যথা, ক্ষুধামান্দ্য, দুর্বলতা, ত্বকে ছোপ ছোপ দাগ, বমি ইত্যাদি ডেঙ্গুর প্রধান লক্ষণ। এই রোগের চারটি ধরন রয়েছে। তাই একজন মানুষের চারবার ডেঙ্গু হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এসব ধরনের মধ্যে ডেনভি- ডেনভি- বেশ ঝুঁকিপূর্ণ।

গবেষণায় দেখা গেছে, বছর ঢাকা মহানগরে ডেনভি--এর প্রকোপ বেশি। তবে একই সঙ্গে একই স্থানে চারটি ধরনের সহাবস্থান থাকাটাও স্বাভাবিক। কে কোন ধরন দ্বারা সংক্রমিত হচ্ছে, এটা বলা মুশকিল। তবে ডেঙ্গুর যেকোনো একটি ধরন দ্বারা আক্রান্ত হলে সারা জীবনের জন্য সেই ধরনের ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে ইমিউনিটি বা রোগপ্রতিরোধক তৈরি হয়ে যায়।

অন্য ধরনগুলোর বিরুদ্ধে স্বল্প সময়ের জন্য আংশিক প্রতিরোধ গড়ে উঠলেও দীর্ঘস্থায়ী কোনো প্রতিরোধ গড়ে ওঠে না। বরং অন্য ধরন দ্বারা পরে সংক্রমিত হলে সেই ডেঙ্গু হতে পারে তীব্র।

 

তীব্র মাত্রার ডেঙ্গু

ডেঙ্গু শক সিনড্রোম ডেঙ্গুজনিত রক্তক্ষরণকে বলা যায় তীব্র মাত্রার ডেঙ্গু। দুটি দশা মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে। ঠেলে দিতে পারে মৃত্যুর দরজায়। ছাড়া ডেঙ্গুতে লিভারের প্রদাহ হতে পারে। এমনকি ডেঙ্গু হৃদপেশি আক্রমণ করতে পারে। একে বলা হয় মায়োকার্ডাইটিস। রোগে মস্তিষ্কের প্রদাহ বা এনকেফালাইটিস পর্যন্ত হতে পারে। পানি আসতে পারে ফুসফুসে, পেটে। সে জন্য তীব্র ডেঙ্গুর উপসর্গ জানা খুবই জরুরি। উপসর্গগুলো হলো

নাক, দাঁতের গোড়া থেকে রক্তক্ষরণ।

বমি কিংবা পায়খানার সঙ্গে রক্তক্ষরণ।

পেটে ব্যথা।

দিনে তিনবারের বেশি বমি হওয়া।

শ্বাসকষ্ট।

প্রচণ্ড দুর্বলতা, অস্থিরতা কিংবা খিটখিটে ভাব। হঠাৎ করে আচরণগত পরিবর্তন, এলোমেলো ভাব।

তাপমাত্রায় বিশাল তারতম্য। জ্বর থেকে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের নিচে নেমে যাওয়া (হাইপোথারমিয়া)

ফুসফুস কিংবা পেটে পানি জমতে থাকা।

হাত, পা, চামড়া ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়া।

 রক্তের হেমাটোক্রিট ২০ শতাংশ কমে যাওয়া।

 লিভার বড় হয়ে যাওয়া।

এসব জটিলতা দেখা দিলে রোগীকে অবশ্যই হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা নিতে হবে।

 

জটিলতার শুরু

সাধারণত জটিলতা শুরু হয় ডেঙ্গুর তৃতীয় দিন থেকে সপ্তম দিনের মধ্যে অনেকটা আকস্মিকভাবে। জ্বর সেরে যাওয়ার দুই দিন পর পর্যন্ত এসব রোগীর তদারকি করতে হয়। কেননা সময়ই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ভয়ানক জটিলতা দেখা যায়।

 

রক্তক্ষরণ কেন?

ডেঙ্গু ভাইরাসের আক্রমণে রক্তের অণুচক্রিকা বা প্লাটিলেট কমতে শুরু করে। অনেক সময় খুব দ্রুত কমে যায় এই রক্তকণিকা। অণুচক্রিকা হলো রক্তের একটি গুরুত্বপূর্ণ কণিকা, যা রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে। শরীরের কোনো অংশ কেটে গেলে অকুস্থলে দলবেঁধে ছুটে আসে এরা। দেহের আরও অনেক উপাদানের সাহায্য নিয়ে এরা ত্বরিতগতিতে রক্তনালি আটকে দেয়। ডেঙ্গুতে বা অন্য কোনো কারণে অণুচক্রিকা কমে গেলে সৃষ্টি হতে পারে রক্তক্ষরণ। চামড়ার নিচে, দাঁতের গোড়ায়, নাকে, পাকস্থলীর গাত্র থেকে ঝরতে থাকে রক্ত। বমি, প্রস্রাব-পায়খানার সঙ্গে বেরোতে পারে রক্ত। নারীদের রজস্রাবে রক্তের মাত্রা বেড়ে যায়। এমনকি মস্তিষ্কেও শুরু হতে পারে রক্তক্ষরণ। রক্তে অণুচক্রিকার স্বাভাবিক মাত্রা প্রতি ঘন মিলিলিটারে দেড় লাখ থেকে সাড়ে চার লাখ। সাধারণত চতুর্থ দিন থেকে দ্রুত কমতে থাকে এই রক্তকণিকা বা প্লাটিলেট।

 

করণীয়

রক্তের অণুচক্রিকা কমতে থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

 এক লাখের নিচে নেমে গেলে প্রয়োজনে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে।

অণুচক্রিকা ৫০ হাজারের নিচে নেমে গেলে ক্ষেত্রবিশেষে দিনে দুইবার রক্ত পরীক্ষা করে জেনে নিতে হবে অণুচক্রিকা হেমাটোক্রিটের মাত্রা। মনে রাখতে হবে, ডেঙ্গুতে কখনো-সখনো সকাল-বিকেল অণুচক্রিকার মাত্রায় ব্যাপক তারতম্য হয়ে থাকে। সময় শুরু হতে পারে পানিশূন্যতা। এটি যাতে না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। পর্যাপ্ত পানীয়, শরবত, স্যালাইন পানি পান করাতে হবে।

প্রয়োজনে শিরাপথে স্যালাইন দিতে হবে। ডেঙ্গুর চিকিৎসায় অন্যতম প্রধান দিক হলো ফ্লুইডথেরাপি বা পানিচিকিৎসা।

 

কখন রক্ত প্রয়োজন?

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীকে রক্ত দিতে হবে কি না তা নির্ভর করে চিকিৎসকের সিদ্ধান্তের ওপর। কোনো কোনো চিকিৎসক প্লাটিলেট ২০ হাজারের নিচে নেমে গেলে, আবার কেউ কেউ ১০ হাজার বা তারও নিচে নেমে গেলে অণুচক্রিকা প্রদানের সুপারিশ করেন। তবে প্লাটিলেট ২৫ হাজারে নেমে এলে সতর্কতার জন্য রক্তদাতার জোগান রাখা উত্তম। প্রয়োজনে রক্ত লাগলে যাতে দ্রুততার সঙ্গে তা প্রয়োগ করা যায় সেই ব্যবস্থাপনা থাকা জরুরি।

 

মেহেদী আল মাহমুদ