শীতে সাধারণত জ্বর, সর্দি-কাশির মতো বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়ে। যা কয়েকদিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়। যাদের ঠান্ডাজনিত অসুখ রয়েছে তাদের শীতে বাড়তি সতর্কতা না নিলে সমস্যা বেড়ে যায়। এই শীতে চীনে হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস (এইচএমপিভি) সনাক্ত হয়েছে। যা বিশ্বের কয়েকটি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও কয়েকটি শিশুর মধ্যে এই ভাইরাস পাওয়া গেছে। ফলে অনেকটাই আতঙ্ক বিরাজ করছে মানুষের মধ্যে।
অনেকেই এই ভাইরাসকে করোনাভাইরাসের মতো আরেকটি ভাইরাস বলে অনুমান করছেন। আর করাটাই স্বাভাবিক। করোনার মতোই এই এইচএমপিভি ভাইরাস ছড়ায়। তবে অনেকেই জানেন না যে করোনা ভাইরাসের আগেই এইচএমপিভি ভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জ্বর, সর্দি বা কাশি হলেই যে এইচএমপিভি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন এটা ভাবার কোনো কারণ নেই। এমনটি অন্য ভাইরাস বা ফ্লু থেকেও হতে পারে। তাছাড়া বহুকাল ধরে শীতজনিত যেসব রোগ রয়েছে তাও হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) বলছে, ২০০১ সালে প্রথম এই ভাইরাস শনাক্ত হয়। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হয়তো আরও অনেক যুগ আগে থেকেই পৃথিবীতে এই ভাইরাসের অস্তিত্ব ছিল।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনই ঘাবড়ানোর কিছু নেই। কেন না, চীন সরকার বা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) কেউই এখনও এই ভাইরাস নিয়ে আনুষ্ঠানিক সতর্কতা জারি করেনি বা এই ভাইরাস ভয়াবহ আকার ধারণ করবে কি-না সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞরাও কোনো সতর্কবার্তা দেননি। তবে, রোগটি যাতে না হয় সে বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
এইচএমপিভি সংক্রমিত হলে সাধারণ জ্বর বা ফ্লুর মতো উপসর্গ দেখা যায়। এর সঙ্গে কাশি, জ্বর, নাক বন্ধ এবং শ্বাসকষ্ট পর্যন্ত হতে পারে। তাছাড়া চামড়ায় র্যাশ বা দানা দানা দেখা দিতে পারে।
সিডিসি বলছে, এ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে যে কোন বয়সের মানুষের ব্রংকাইটিস বা নিউমোনিয়ার মতো অসুখ হতে পারে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এটি শিশু, বয়স্ক মানুষ এবং যাদের ইমিউিটি সিস্টেম দুর্বল তাদের মধ্যেই বেশি দেখা গেছে।
এইচএমপিভি ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ প্রকাশ পেতে তিন থেকে ছয় দিন সময় লেগে যায়। কিন্তু আক্রান্ত হলে ঠিক কতদিন ভুগবেন তা নির্ভর করে সংক্রমণের তীব্রতা ও আক্রান্ত ব্যক্তির শারীরিক সক্ষমতার ওপর।
বাংলাদেশের ভাইরোলজিস্টরাও জানিয়েছেন, এইচএমপিভি নিয়ে এখনই আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। এর বড় কারণ হচ্ছে, এটি কোভিডের মতো নতুন কোনো ভাইরাস নয়। ২০০১ সালে প্রথম এই ভাইরাস শনাক্ত হয়, এবং বাংলাদেশে ২০১৬ বা ২০১৭ সালের দিকে এই ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছিল। ভারত, চীনসহ বিভিন্ন দেশে ইনফ্লুয়েঞ্জা ধাঁচের এই ভাইরাসে আগেও মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। সুতরাং কেউ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলেও তার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা একে মোকাবিলা করতে পারবে বলে আশা করা যায়।
জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের ভাইরোলজিস্ট মাহবুবা জামিল বিবিসিকে জানান, কোভিড ফুসফুসের যতটা ক্ষতিগ্রস্ত করে, এইচএমপিভিতে ততটা ক্ষতি হয় না। তবে শিশু, বয়স্ক, গর্ভবতী বা কঠিন কোনো রোগে আক্রান্তদের মধ্যে এই ভাইরাসের সংক্রমণ তীব্র হতে পারে।
এইচএমপিভি ভাইরাস ও করোনা ভাইরাসের মধ্যে মিল কতটুকু?
চীনের সেন্ট্রার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) ওয়েবসাইটের তথ্যমতে, এইচএমপিভি কোভিড-১৯এর মতোই একটি আরএনএ ভাইরাস। অর্থাৎ এর জিনের গঠন একই। এই ভাইরাসও শ্বাসযন্ত্রে আক্রমণ করে। তবে এরা একই পরিবারের ভাইরাস নয়। অর্থাৎ কোভিডের টিকা নেওয়া থাকলে বা আগে কখনো কোভিড হলেও আপনার এইচএমপিভির সংক্রমণ হতে পারে।
সিডিসি জানায়, ভাইরাসটি অন্তত ৬০ বছর আগেই ছড়িয়েছে।
এই ভাইরাস প্রতিরোধে করোনা মোকাবিলায় যেসব সতর্কতা নেওয়া হয়েছিল, একই ধরনের পদক্ষেপে এই ভাইরাস প্রতিরোধ করা সম্ভব।
অমিয়/