ভাষা আন্দোলনের ৭২ বছর পেরিয়ে গেলেও ভোলার দেড় হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নির্মাণ করা হয়নি শহিদ মিনার। ফলে ভাষাশহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পারছেন না এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। দেশের সর্ব দক্ষিণের একমাত্র দ্বীপজেলা ভোলার সাত উপজেলার প্রায় ১ হাজার ৫১২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নেই শহিদ মিনার।
এসব প্রতিষ্ঠানে প্রতিবছর কলাগাছ, বাঁশ ও সাদা কাগজ দিয়ে অস্থায়ী শহিদ মিনার নির্মাণ করে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা একুশে ফেব্রুয়ারি মহান আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও শহিদ দিবসে শ্রদ্ধা জানান। অনেক প্রতিষ্ঠানে শহিদ মিনার না থাকায় ও বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চলের অনেক প্রতিষ্ঠানে পালনই করা হয় না মাতৃভাষা দিবস ও শহিদ দিবস। প্রত্যন্ত এলাকার মানুষ জানেনই না ভাষা আন্দোলন ও শহিদ দিবস আসলে কী।
জেলার সাত উপজেলায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মোট সংখ্যা ১ হাজার ৬১৭। এর মধ্যে কলেজ ৪৩টি, মাধ্যমিক ও নিম্নমাধ্যমিক ২৬৪টি, মাদ্রাসা ২৪৬টি ও প্রাথমিক বিদ্যালয় ১ হাজার ৪৭টি। ভোলা সদর উপজেলায় শহিদ মিনার রয়েছে ২০টি, দৌলতখানে ১২টি, বোরহানউদ্দিনে ১৪টি, তজুমদ্দিনে ৯টি, লালমোহনে ১৭টি, চরফ্যাশনে ২৪টি, মনপুরা উপজেলায় ৯টিসহ ছোট-বড় মিলে মোট ১০৫টি বিদ্যালয়ে শহিদ মিনার রয়েছে। অবশিষ্ট ১ হাজার ৫১২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহিদ মিনার না থাকায় ছাত্রছাত্রীরা ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
ভোলা সদর উপজেলার ১৫ নম্বর দক্ষিণ চরপাতা সেলিনা সুলতানা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩০০। শিক্ষার্থীরা জানায়, তাদের বিদ্যালয়ে শহিদ মিনার নেই। পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী রাব্বি বলে, একুশে ফেব্রুয়ারির দিন তারা বিদ্যালয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে। কিন্তু বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে শহিদ মিনার না থাকায় ফুল দিয়ে ভাষাশহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয় না। ভাষাশহিদদের তারা ভালোভাবে চেনে না।
একই অবস্থা সদর উপজেলার ২২ নম্বর টগবী চরছিফলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। এই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী ২৫০ জন। বিদ্যালয়ে নেই শহিদ মিনার। জায়গা না থাকায় শহিদ মিনার তৈরি করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন এই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নির্মল কৃষ্ণ। এ চিত্র শুধু সেলিনা সুলতানা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েই নয়। জেলার ১ হাজার ১২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সবগুলোর।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র ও শিক্ষকরা জানান, অর্থ বরাদ্দ না থাকাসহ নানা কারণে এসব প্রতিষ্ঠানে শহিদ মিনার নির্মাণ করা যায়নি।
ভোলার সচেতন মহল মনে করে, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, শহিদ দিবস ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে পরবর্তী প্রজন্মের সামনে তুলে ধরা প্রয়োজন। তা হলে দেশের প্রতি তাদের প্রেম সৃষ্টি হবে। এ জন্য প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই শহিদ মিনার নির্মাণ করা প্রয়োজন।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম জানান, যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহিদ মিনার নেই, সেসব প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের বলা হয়েছে নিজেদের উদ্যোগে ও এলাকাবাসীর সহযোগিতায় শহিদ মিনার নির্মাণের জন্য। যাদের নির্মাণের সামর্থ্য নেই, তারা যেন আশপাশে যেখানে শহিদ মিনার আছে সেখানে গিয়ে সম্মান জানান।
ভোলার জেলা প্রশাসক আরিফুজ্জামান জানান, যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহিদ মিনার নেই, সেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহিদ মিনার গড়ে তোলার জন্য শিক্ষা দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করে উদ্যোগ নেওয়া হবে।