কিশোরগঞ্জের হাওর অঞ্চলের একটি গ্রামে কুটুম বাড়িতে গেলে মিষ্টির বদলে মুরালি নিয়ে যাওয়া হয়। ৭৫ বছর ধরে মিষ্টির বদলে এই গ্রামটিতে এমন নিয়মে মেহমানদারি চলছে। বলতে গেলে সেখানকার মানুষ মিষ্টির স্বাদ পেয়ে থাকেন মুরালিতে। তাইতো সব সময় মুরালির দোকানে ভিড় লেগেই থাকে।
তবে এই মুরালি যেই-সেই মুরালি নয়। দৈর্ঘ্য ১২ ইঞ্চি। দেখতে যেমন লম্বা কাঠির মতো, তেমনি সুস্বাদু। এই মুরালি খেতে আপনাকে যেতে হবে ইকুরদিয়া গ্রামে। কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম উপজেলার ৮ নং পূর্ব অষ্টগ্রাম ইউনিয়নের ইকুরদিয়া ইসলামপুর বাজারে তৈরি হয় এই খাদ্যপণ্য।
ছোট-বড় সব বয়সী মানুষের প্রিয় লম্বা মুরালি। ইসলামপুর বাজারে বাসি মুরালি বিক্রি হয় না। প্রতিদিন দেড় থেকে দুই মণ মুরালি তৈরি করা হয় এখানে। তৈরি হওয়ার পরেই শুরু হয় বিক্রি। প্রতিদিন সকাল ১০টায় ভাই ভাই রেস্টুরেন্টের চুলায় জ্বলে আগুন। ১০ কেজি ময়দায় এক কেজি সয়াবিন তেল দিয়ে প্রথমে ডো বানাতে হয়। লবণ, পানি, তেল, ময়দা দিয়ে মাখিয়ে রাখা হয়। এরপর মাপমতো মুরালি কেটে ভাজা হয় তেলে। তেলে ভাজার পর বড় পাত্রে গলানো পাতলা গুড়ের শিরায় রেখে চুবাতে হয়। ঘণ্টাখানেক পাতলা শিরার গুড়ে চুবিয়ে রাখার পর শুকিয়ে গেলেই মুরালি খাওয়ার উপযুক্ত হয়ে ওঠে। মুখরোচক সুস্বাদু লম্বা মিষ্টি মুরালি স্বাদে অনন্য। মনোলোভা আকার দেখে একবার হলেও স্বাদ নিতে ইচ্ছে করবে।
মচমচে সুস্বাদু এই মুরালি যাচ্ছে বিদেশে। গ্রাম থেকে মানুষ অন্য কোথাও বেড়াতে গেলেও লম্বাকৃতির মুরালি কিনে নিয়ে যান। ৮ নং পূর্ব অষ্টগ্রাম ইউনিয়নের ইকুরদিয়া ৯ নং ওয়ার্ডের মো. শহীদ মিয়ার দুই ছেলে ভাই ভাই রেস্টুরেন্টের মালিক। মো. সালাউদ্দিন ও মো. আসাদুজ্জামান দুই ভাইয়ের তদারকিতে চলে এই দোকান। বর্ষা মৌসুমে দূর-দূরান্ত থেকে ভ্রমণপিপাসুরা ঘুরতে আসেন অষ্টগ্রামে। অষ্টগ্রামের এই মুরালি তৈরি হচ্ছে ৭৫ বছর ধরে। দাদার আমল থেকে তারা এই মুরালির ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন।
মো. আসাদুজ্জামান খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমি প্রায় ১২ বছর দেশের বাইরে ছিলাম। তিন বছর আগে বিদেশ থেকে বাংলাদেশে এসে বেকার ছিলাম। এখন দোকানে টুকটাক কাজ করি। আমাদের পরিবারের সবাই এই মুরালি বানাতে পারেন। দাদার আমল থেকেই আমাদের এই ব্যবসা চলছে। এখানে আমার ছোট ভাই সালাউদ্দিন দোকানে সব সময় থাকে। এ ছাড়া কারিগর আছেন কয়েকজন। ইতালি, সৌদি, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরে যারা এই এলাকার মানুষ আছেন সবাই ছুটিতে দেশে এলে চার-পাঁচ কেজি করে নিয়ে যান। এ ছাড়া হাওরে ঘুরতে এসে অনেক পর্যটক এই মুরালি বেশি পরিমাণে নিয়ে যান।’
ক্রেতারা বলেন, ‘আমাদের এই এলাকায় মিষ্টি তৈরি হয় না। মিষ্টির বদলে মুরালি খান সবাই। বেড়াতে গেলে প্রায়ই এখান থেকে এগুলো নিয়ে যাই আমরা।’