শুক্রবার (১৫ মার্চ) ছিল রমজান মাসের প্রথম সাপ্তাহিক ছুটির দিন। সে কারণে রাজধানীর বাসাবাড়িগুলোতে ছিল ইফতারের বিশেষ আয়োজন। যার আঁচও স্পষ্ট ছিল ইফতারের বাজারে। সরেজমিনে রাজধানীর অন্যতম অভিজাত এলাকা ধানমন্ডিতে গতকাল জুমার নামাজের পর থেকেই শুরু হয়ে যায় ইফতারের টুকটাক কেনাকাটা। ইফতারের সময় ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে জমজমাট হতে থাকে।
রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালের কাছে ফুটওভার ব্রিজের পশ্চিম প্রান্তসংলগ্ন ইউসুফ বেকারিতে ইফতারসামগ্রী দেখছিলেন আসাদ কাজী।
গতকাল শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে দৈনিক খবরের কাগজের সঙ্গে কথা হয় তার। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন তিনি। ধানমন্ডি থানার কাছেই বাসা।
বললেন, ‘রোজার প্রথম কয়েক দিন তো পরিবারের সঙ্গে ইফতার করার সুযোগ হয়নি, কারণ অফিস সেরে আসতে পারিনি। আজ সাপ্তাহিক ছুটির দিন। প্রথম সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় নিশ্চিন্ত। কারণ পরের সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে সামাজিক, অফিশিয়াল, সাংগঠনিক বিভিন্ন প্রোগ্রাম পড়ে যেতে পারে। তাই প্রথম ছুটির দিনেই পরিবারের সঙ্গে ইফতারটা ভালোভাবে করতে চাই।’
কাছেই শিহাব ফ্রুটস স্টোরে দেশি-বিদেশি ফল ঝুড়িতে সাজিয়ে নিচ্ছিলেন এহসানুর রহমান এহসান। বললেন, ‘পরের ছুটির দিনগুলোতে আর সময় পাব কি না জানি না। তাই আজই মা-বাবার সঙ্গে ইফতার করব। ওনারা ধানমন্ডিতেই শংকরে থাকেন, আমার বড় ভাইসহ একসঙ্গে। বাবা খুব শৌখিন মানুষ। তাই ফলের ঝুড়িটি সাজিয়ে নিচ্ছি। ওনাদের মন ভালো করার একটু চেষ্টা আর কী।’
রয়েল বাফেট ইফতার বাজারের সামনে কথা হয় সানজিদা ইয়াসমিনের সঙ্গে। বললেন, ‘আমরা দুজনই (দম্পতি) কর্মজীবী। আমি চাকরিজীবী। আমার স্বামী ব্যবসায়ী। সবাইকে নিয়ে আজই প্রথম একসঙ্গে ইফতার করব। পরে আবার কে কোন দিন সময় পাই, তা তো জানি না। ছুটির দিন পেলেও সামনের ছুটির দিনগুলোতে ঈদ কেনাকাটায় সময় দিতে হবে। তাই আজ ইফতার আয়োজনে বিশেষ মনোযোগ দেওয়া। লেবু, শসা, ধনেপাতা, পুদিনাপাতা, ডাব আরও কী কী যেন জুমার নামাজ সেরে বাসায় ফেরার সময়ই আমার স্বামী নিয়ে এসেছেন। জুমার নামাজের আগে আগেই তো এসব নিয়ে মসজিদের আশপাশে দোকানদাররা বসে যান। সেখান থেকেই নিয়ে নিয়েছে। আমি এখান থেকে খাসির হালিম, শামি কাবাব, চিকন জিলাপি এসব নিয়েছি। দেখছি, আর কী কী কেনা যায়।’
ব্যাংকার শহিদুজ্জামানের সঙ্গে কথা হয় আরেকটু উত্তর দিকে এগিয়ে ওয়েসিসের সামনে। বাজারদর প্রসঙ্গ টেনে অর্থনীতির ভাষায় কথা বললেন তিনি। বললেন, ‘এমনিতেই বছর বছর জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। কিন্তু ছুটির দিন হওয়ায় বাজারে ক্রেতা বেশি। অর্থনীতির বেসিক একটা টেনডেনসিই হচ্ছে ক্রেতা বেশি হলে বাজারদর বাড়বে। আজকে হচ্ছেও তা। অনেকে মাসের অর্ধেক গেলে পরে বেতন পান। তারা সামনের সপ্তাহে বেতন পাবেন। আবার পরের সপ্তাহ থেকে ঈদ বোনাস পেতে শুরু করবেন। তাই সামনের সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে বাসায় ইফতার করার সুযোগ কমে যেতে পারে। কারণ বেতন-বোনাস হাতে পেলেই অনেকে ছুটির দিনগুলোতে ঈদ শপিং করতে বের হবেন। তাই অনেকেই আজই পরিবারের সঙ্গে ইফতার করার সুযোগ নেবেন। এমনিতেই ধানমন্ডি এলাকায় সব জিনিসের দামই অন্যান্য এলাকার চেয়ে বেশি।’
সম্ভাব্য ক্রেতার চাপ আন্দাজ করে রাজধানীর গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের পশ্চিম পাশে ওয়েল ফুডসহ ইফতারসামগ্রীর দোকানগুলো বাহারি ইফতার সাজিয়ে বসেছিল জুমার নামাজের পর থেকেই। ইফতারসামগ্রীর মধ্যে বেশি কাটতি হালিমের। কেউ গরুর, আবার কেউ খাসির হালিম নিচ্ছিলেন। বড়, ছোট ও মাঝারি আকারের মাটির পাত্রে গরুর হালিমের দাম যথাক্রমে হাজার, ৫০০ ও ৩০০ টাকা। খাসির হালিম ১ হাজার ১০০, ৬০০ ও ৩০০ টাকা।
এ ছাড়া ক্রেতাদের চাহিদা তালিকায় আরও ছিল মোটা জিলাপি, চিকন জিলাপি, বুন্দিয়া, ছোলা, পেঁয়াজু, বেগুনি, শামি কাবাব, জালি কাবাব, কাঠি কাবাব, টিক্বা কাবাব, চিকেন সাসলিক, আলুর চপ, ডিম চপ, চিকেন রোল, ভেজিটেবল রোল ইত্যাদি।