ধনী গরিব শ্রেণিভেদে যে যার সাধ্যমতো সামগ্রী সাজিয়ে ইফতারের সময় হওয়ার অপেক্ষায় বসেন। মাগরিবের আজানের পরপরই ইফতারের সময় বেশির ভাগ রোজাদারই অন্যসব রেখে প্রথমেই হাতে তুলে নেন পানীয়। সাধারণত কেউ পানি পান করেন, কেউবা নেন শরবত। প্রথম চুমুকেই শীতল হয়ে ওঠে সারা দিন রোজা রেখে ক্লান্ত মানুষের প্রাণ। ফলে ইফতারে শরবতের কদর থাকে সব সময়ই। যুগযুগ ধরে দেশে-বিদেশে নানান স্বাদের নানান রেসিপির শরবতের প্রচলন রয়েছে আমাদের দেশে।
ইফতারের প্রস্তুতি পর্বে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার রেস্তোরাঁ ঘুরে দেখা যায়, টেবিলে টেবিলে সাজানো ইফতার সামগ্রির সঙ্গে রাখা হয়েছে বিভিন্ন স্বাদের শরবত। বড় বড় রেস্তোরাঁগুলোতে আবার এই শরবতের ওপর দেওয়া হয় বিশেষ প্রাধান্য। তাদের মেন্যুতে নজর কাড়ে ভিন্ন ভিন্ন ফ্লেভারের রঙিন শরবত।
অন্যদিকে পিছিয়ে নেই পথের ধারের শরবতের দোকানগুলোও। রোজাদারদের তৃষ্ণা মেটানোর পাশাপাশি প্রাণে তুষ্টি জোগাতে ইফতারের ঠিক আগে আগে প্রাণচঞ্চল হয়ে ওঠে রাস্তার ধারে ছোট ছোট সুস্বাদু পানীয়ের এই দোকানগুলো।
রাজধানীর বাংলামোটর এলাকায় ঘুরে ইফতারের আগে চোখে পড়ে ছোট এই দোকানগুলোতে তরমুজ, পাকা পেঁপে, আনারসসহ বিভিন্ন দেশি ফল ছোট ছোট টুকরো করে কেটে রাখা। ইফতারের ঠিক আগে আগে ব্লেন্ডারে এসব ফলের শরবত বানাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন দোকানিরা। বিদেশি ড্রাগন ফল ও স্ট্রবেরিরও শরবত পাওয়া যায় এসব দোকানে। আরও পাওয়া যায় বেলের শরবত, দইয়ের শরবত, লাচ্ছি ও মাঠা। কেউ কেউ আবার বিক্রি করেন তরমুজ দিয়ে বানানো বহুল আলোচিত মহব্বতের শরবত। আবার কোথাওবা বালতি, কোথাও বা কাচের বড় পাত্রে করে বেচাকেনা চলে নানান ধরনের ভেষজ শরবত। এসবের পাশাপাশি বিভিন্ন প্যাকেটজাত কোমল পানীয়ের সঙ্গে লেবুর রস মিশিয়ে শরবত বিক্রি করতে দেখা যায় নগরীর বিভিন্ন রাস্তায়।
এসব দোকানে ফলের প্রাপ্যতা, দাম ও পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে এসব শরবত বিক্রি করা হয় বিভিন্ন দামে। দেশি ফলের শরবত ছোট গ্লাস ২০ থেকে ৩০ টাকা দামে বিক্রি করা হয়। বড় গ্লাস বিক্রি করা হয় ৪০ থেকে ৬০ টাকা দামে। আবার বিদেশি ফলের শরবত ছোট গ্লাসের দাম শুরু হয় ৩০ বা ৪০ টাকা থেকে। বড় গ্লাস ৮০ থেকে ১০০ বা ১২০ টাকায় বিক্রি হয়। ভেষজ শরবত ২০ থেকে ৬০ টাকা দামে বিক্রি করা হয়।
পথের পাশে সাধারণত ঘৃতকমল, তোকমা, ইসুবগুলের ভুসির শরবতের প্রাধান্য থাকলেও রেস্তোরাঁয় থাকে বিভিন্ন ফলযোগে বানানো শরবত। এরমধ্যে সবার আগেই থাকে লেবুর শরবত। এরসঙ্গে থাকে মাল্টা, আনারস, কিউই, স্ট্রবেরি, আপেল, প্যাশন ফ্রুট, বেল, কমলা, পেঁপে, ড্রাগন ফ্রুট, তরমুজ, আঙুর, ব্ল্যাক বেরি, ব্লুবেরিসহ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ফলের রসনা তৃপ্ত করা পানীয়। রেস্টুরেন্ট ভেদে এসব শরবত ১২০ টাকা থেকে শুরু করে ৭০০-৮০০ টাকা বা বেশি দামেও বিক্রি করা হয়।
বড় রেস্তোরাঁগুলোতে সাধারণত এসব শরবত তৈরি করার সময় পরিষ্কার ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশের দিকে খেয়াল রাখা হয়। তবে এসব শরবতের দাম বেশি রাখার কারণে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষের ভিড় থাকে পথের ধারের শরবতের দোকানগুলোতেই। কিন্তু পথের ধারে দোকানগুলোতে শরবতের দাম নাগালে থাকলেও এর স্বাস্থ্যগত মান নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। বেশির ভাগ দোকানগুলোতেই দেখা যায়, ফল কাটার সময় হাতে গ্লাভস ব্যবহার করা হয় না। তা ছাড়া ফল রাখার পাত্র ও কাটার সরঞ্জামও অনেক সময় থাকে অপরিষ্কার। শরবত ঠাণ্ডা অবস্থায় পরিবেশন করার জন্য যে পানি আর বরফ ব্যবহার করা হয়, সে পানি আর বরফের বিশুদ্ধতা নিয়েও থাকে সংশয়।