ঢাকা ৩০ আশ্বিন ১৪৩১, মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৪

কালের সাক্ষী ৪১৫ বছরের আতিয়া মসজিদ

প্রকাশ: ১৯ আগস্ট ২০২৪, ১১:৪৩ এএম
কালের সাক্ষী ৪১৫ বছরের আতিয়া মসজিদ
৪১৫ বছর আগের মুসলিম স্থাপত্যকর্ম টাঙ্গাইলের আতিয়া মসজিদ ১৯৭৮ সালে ১০ টাকার নোটের প্রচ্ছদে প্রথম ঠাঁই পেয়েছিল। ছবি: খবরের কাগজ

বাংলাদেশে সুলতানি এবং মোগল স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত যেসব স্থাপত্য রয়েছে, তার মধ্যে টাঙ্গাইলে অবস্থিত আতিয়া মসজিদ অন্যতম। এই মুসলিম স্থাপত্যকর্মটি প্রায় ৪১৫ বছর আগেকার। মসজিদটির নান্দনিক কারুকাজ এখনো কৌতূহলী দর্শকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। 

মসজিদটি দেখতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আগ্রহী দর্শনার্থীরা ছুটে আসেন। সব মিলিয়ে আতিয়া মসজিদ যুগসন্ধিলগ্নের স্থাপত্য ও নিদর্শনরূপে পরিচিত। কিন্তু কালের পরিক্রমায় হারিয়ে যাচ্ছে শিল্পকর্মগুলো। এর সঠিক সংরক্ষণ ও যথাযথ পরিচর্যার জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। 

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, টাঙ্গাইল শহরের দক্ষিণ পশ্চিমে আট কিলোমিটার দূরে ঐতিহাসিক আতিয়া মসজিদটির অবস্থান। ১৯৭৮ সালে ১০ টাকার নোটের প্রচ্ছদে আতিয়া মসজিদটি প্রথম ঠাঁই পেয়েছিল। এরপর ১৯৮২ সালে পরিবর্তিত ১০ টাকার নোটের প্রচ্ছদেও আবার স্থান পায়। এতে দেশবাসীর কাছে সহজেই মসজিদটি পরিচিতি লাভ করে। তবে আজকাল দশ টাকার পুরোনো নোটটি তেমন দেখা যায় না।

পঞ্চদশ শতকে এই অঞ্চলে আদম শাহ বাবা কাশ্মীরি নামের এক সুফি ধর্মপ্রচারক এসেছিলেন। ১৬১৩ খ্রিষ্টাব্দে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি এখানে বসতি স্থাপন করে ইসলাম প্রচার করতে থাকেন। এই পুণ্যবান ব্যক্তির কবরও এখানেই অবস্থিত। শাহ কাশ্মীরির অনুরোধে মোগল সম্রাট জাহাঙ্গীর সাঈদ খান পন্নীকে আতিয়া পরগনার শাসক নিয়োগ করেন। সাঈদ খান পন্নীই করটিয়ার বিখ্যাত জমিদার পরিবারের প্রতিষ্ঠাতা। তার উদ্যোগে ১৬০৯ খ্রিষ্টাব্দে আতিয়া মসজিদ নির্মাণ করা হয়। ‘আতিয়া’ শব্দটি আরবি ‘আতা’ শব্দ থেকে এসেছে। এর অর্থ হলো ‘দান’। ওই সময় ধর্মীয় কার্যক্রম পরিচালনার ব্যয়ভার বহনের জন্য কররানী শাসক সোলাইমান কররানীর কাছ থেকে বিশাল একটি এলাকা তিনি ‘ওয়াক্ফ’ হিসেবে পান।

সুলতানি ও মোগল আমলের স্থাপত্য শিল্পরীতির সমন্বয়ে নির্মিত এ মসজিদের পরিকল্পনা ও নির্মাণ কাজে নিযুক্ত ছিলেন প্রখ্যাত স্থপতি মুহাম্মদ খাঁ। নির্মাণের পর ১৮৩৭ সালে রওশন খাতুন চৌধুরী ও ১৯০৯ সালে আবুল আহমেদ খান গজনবি মসজিদটি সংস্কার করেন বলে জানা যায়।

মূল্যবান প্রত্নসম্পদ এই মসজিদটি দৈর্ঘ্যে ১৮.২৯ মিটার, প্রস্থে ১২.১৯ মিটার। মসজিদের দেয়ালের পুরুত্ব ২.২৩ মিটার ও উচ্চতা ৪৪ ফুট। চারকোনা অষ্টকোনাকৃতি মিনার রয়েছে। মসজিদটি টেরাকোটার তৈরি। বাংলাদেশের অধিকাংশ মসজিদ ইট দিয়ে নির্মিত।

আতিয়া মসজিদটির প্রধান কক্ষ ও বারান্দা দুই ভাগে বিভক্ত। মসজিদের পূর্ব ও মাঝের দেয়ালে রয়েছে একটি করে দরজা। বারান্দাসহ উত্তর-দক্ষিণ দেয়ালে রয়েছে দুটো করে দরজা। ভেতরের পশ্চিম দেয়ালে আছে তিনটি সুন্দর মেহরাব। প্রধান কক্ষের প্রত্যেক দেয়ালের সঙ্গে দুটি করে পাথরের তৈরি স্তম্ভ আছে। প্রধান কক্ষের ওপরে শোভা পাচ্ছে বিশাল একটি মনোমুগ্ধকর গম্বুজ। বারান্দার পূর্ব দিকে রয়েছে তিনটি প্রবেশ পথ।

মাঝখানের প্রবেশপথের ওপরের অংশের নিম্নভাগে একটি শিলালিপি রয়েছে। বর্তমানে যে শিলালিপিটি রয়েছে, আগে সেখানে অন্য একটি শিলালিপি ছিল বলে ইতিহাসে উল্লেখ আছে। এই শিলালিপিটি ফার্সিতে লেখা। কোনো কারণে আদি শিলালিপিটি বিনষ্ট হয়ে যাওয়ার পর পরবর্তীকালে মসজিদ মেরামতের সময় বর্তমান শিলালিপিটি বসানো হয়। চুন, সুরকি গাঁথুনি দিয়ে মসজিদটি নির্মিত। সুলতানি আমলে প্লাস্টার পদ্ধতির চল ছিল না। চুন-সুরকির গাঁথুনি দিয়ে মসজিদ নির্মাণ করা হতো। আতিয়া মসজিদের নাম একবার হলেও শোনেনি বাংলাদেশে এমন ব্যক্তি হয়তো খুঁজে পাওয়া দুর্লভ। শতবছরের প্রাচীন মসজিদটি চালুর পর থেকে এখানে রোজ নামাজ আদায় চলছে।

মসজিদের ভারপ্রাপ্ত ইমাম মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমাদের এই প্রাচীন মসজিদের চওড়া দেয়ালে শোভাময় পোড়ামাটির ফলক (টেরাকোটা) ইতোমধ্যেই ক্ষয়ে গেছে। মোটা দেয়ালও বিবর্ণ হয়ে গেছে। ইটগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত। ভারী বৃষ্টি হলে ছাদ চুঁইয়ে পানি পড়ে। তাই সরকারের কাছে আমাদের আবেদন, দ্রুত সংস্কার সম্পন্ন করা হোক মসজিদটির। 

হাবিবুর রহমান নামে এক দর্শনার্থী জানালেন, আমাদের এলাকা বেশ পরিচিত হয়েছে এই অনিন্দ্যসুন্দর মসজিদটির কল্যাণে। আগে সরকারের ১০ টাকার নোটে এই মসজিদের ছবি ছিল। সেখান থেকেই পুরো দেশের মানুষ জায়গাটি এবং মসজিদকে চেনে। কিন্তু এখন আর ছবিটি ১০ টাকার নোটে নেই। তাই সরকারের কাছে আমাদের দাবি থাকবে, আবারও টাকার মধ্যে ঐতিহাসিক এই মসজিদটির ছবি যেন স্থান পায়।

মালেক মিয়া নামে অপর এক দর্শনার্থী বলেন, আমরা বেশ কয়েকজন বন্ধু মিলে এই মসজিদটি দেখতে সেই বগুড়া থেকে এসেছি। আসার মূল কারণ হলো, পুরোনো ১০ টাকার নোটে এই মসজিদটির ছবি দেখেছি। কিন্তু বাস্তবে কখনো দেখি নাই। তাই দেখতে আসলাম। তবে পর্যটন স্থান ও গুরুত্বপূর্ণ মসজিদ অনুযায়ী এই এলাকার সেরকম কোনো উন্নয়ন চোখে পড়ল না।

টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক কায়সারুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন অযত্ন-অবহেলায় থাকার পরে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ১৯৭৮ সালে মসজিদটির দেখভাল করার দায়িত্ব নেয়। আমি মসজিদের বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজ খবর নিয়েছি। কয়েক দিনের মধ্যে এই মসজিদটির প্রয়োজনীয় কাজ শুরু করা হবে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমরা সর্বদা পাশে থাকব। মসজিদটি যেন আরও শত শত বছর টিকে থাকতে পারে, সেভাবেই কাজ করা হবে।’

ঐতিহ্যবাহী হাট: ঘিওরের ডিঙি নৌকার কদর

প্রকাশ: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:৫২ এএম
ঐতিহ্যবাহী হাট: ঘিওরের ডিঙি নৌকার কদর
নৌকার হাটে চলছে বেচাকেনা। গত সপ্তাহে মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলা সদরের কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে। ছবি: খবরের কাগজ

হাটটি ২০০ বছরের পুরোনো। এর বিস্তৃতি ছিল প্রায় ৩ কিলোমিটার। শুরু থেকে গরু, পাট ও ধান বিক্রির জন্য সারা দেশে পরিচিত ছিল। কালের বিবর্তনে এটি ক্রমশ ছোট হয়ে বাজারে পরিণত হয়েছে। এখন এই হাটটিকে অনেকে নৌকার হাট নামে চেনেন। বলছিলাম মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী ডিঙি নৌকার হাটের কথা।

পদ্মা, যমুনা, ধলেশ্বরী ও ইছামতী নদীবেষ্টিত মানিকগঞ্জ জেলা। বর্ষা এলেই এ এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। ফলে মানুষের চলাচলের একমাত্র বাহন হিসেবে ব্যবহৃত হয় ডিঙি নৌকা। আর মানিকগঞ্জসহ আশপাশের জেলাগুলোর ডিঙি ও কোশা নৌকার জোগান দিয়ে আসছে ঐতিহ্যবাহী ঘিওরের এ হাটটি।

বর্ষা মৌসুমে প্রতি বুধবার উপজেলা সদরের কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে বসে এ নৌকার হাট। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে নৌকা বেচাকেনা। আকার ও মানভেদে প্রতিটি নৌকা ৩ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। মানিকগঞ্জ ছাড়াও পার্শ্ববর্তী ঢাকার সাভার, ধামরাই, টাঙ্গাইল ও রাজবাড়ী থেকেও আসেন ক্রেতা ও বিক্রেতারা। 

অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক মোহাম্মদ সিরাজ খান বলেন, ‘ব্রিটিশ শাসনামলে আঠারো শতকের প্রথম দিকে ধলেশ্বরী ও ইছামতী নদী তীরের এই ঘিওর হাটটি গরু, পাট ও ধান বিক্রির জন্য বিখ্যাত ছিল। এখনো প্রতি বুধবারে এখানে হাট বসে। কালের বিবর্তনে এই হাটটির ঐতিহ্য থাকলেও আগের মতো আর জৌলুস নেই। বর্ষা মৌসুমে এখানে প্রতিবছর নৌকার হাট বসে। অনেক জেলা উপজেলা থেকে নৌকার ব্যাপারী ও ক্রেতারা আসেন।’ 

বৃদ্ধ রহমত আলী বলেন, ‘এই ঘিওর হাটের ঐতিহ্য সারা দেশেই রয়েছে। আশপাশে এমন বড় নৌকার হাট না থাকায় অনেক নৌকা ওঠে এখানে। প্রতি মৌসুমে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকার নৌকা বিক্রি হয়। একটা সময় এই হাটটি ৪০-৪৫ লাখ টাকা সরকারি ডাক হলেও বর্তমানে তা ১০-১২ লাখ টাকায় ডাক নেন ইজারাদার। হাটের অব্যবস্থাপনার জন্যই এমন দশা হয়েছে। এতে করে একদিকে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। অপরদিকে সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব। আমরা চাই ঘিওরে হাটটির ঐতিহ্য আবার ফিরে আসুক।’

এই হাটে নৌকা বিক্রি করতে আসা ব্যবসায়ী রমিজ উদ্দিন বলেন, ‘এই হাটে ১৬ বছর ধরে বর্ষা মৌসুমে বিভিন্ন আকার ও মানের নৌকা বিক্রি করে থাকি। এ বছরের জুন মাসে প্রথম নৌকার হাট বসেছে। হাট কবে শেষ হবে তা নির্ভর করে নদীতে পানি থাকার ওপর।’

নৌকার কারিগর সুবল সরকার প্রায় এক যুগ ধরে নৌকা বানোনোর সঙ্গে জড়িত। তিনি বলেন, ‘এ হাটে আম, জাম, ঝিকা, ডুমরা, মেহগনি, কড়ই, চাম্বুল কাঠের নৌকা পাওয়া গেলেও চাম্বুল ও কড়ই কাঠের নৌকার চাহিদা অনেক বেশি। কিন্তু অধিকাংশ ক্রেতাই ছোট ও মাঝারি আকারের নৌকা কিনে থাকেন।’ 

দৌলতপুর উপজেলার কলিয়া গ্রামের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আগের নৌকাটা নষ্ট হওয়ায় ঘিওর হাটে এসেছি। নৌকার দাম তুলনামূলকভাবে আগের চেয়ে বেশি। আমি চাম্বুল কাঠের ৭ হাতের একটা নৌকা কিনেছি সাড়ে ৫ হাজার টাকা দিয়ে।’

নৌকার ব্যাপারী রহমত আলী বলেন, ‘নৌকা তৈরির কাঠ, পেরেক ও মিস্ত্রিখরচ বাড়ায় আমরা দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছি। দাম বাড়ায় অনেক ক্রেতা না কিনেই চলে যান। এতে করে আমাদের ব্যবসায় লোকসান হয়। কার্তিক মাস পর্যন্ত বেচাকেনা চলবে।’

নৌকা কেনার পর হাট থেকে অন্যত্র নেওয়ার জন্য ভ্যান ও ঘোড়ার গাড়ি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এই হাটে নৌকা পরিবহন করার জন্য অর্ধশতাধিক ঘোড়ার গাড়ি ও ভ্যান চালক রয়েছেন। ঘিওর নৌকা হাটের ইজারাদার আলমগীর হোসেন খবরের কাগজকে বলেন, ‘ঐতিহ্যবাহী ঘিওর নৌকার হাটে মানিকগঞ্জ জেলাসহ আশপাশের শতাধিক ব্যবসায়ী ও নৌকা তৈরির কারিগররা আসেন। এ হাটের স্থায়িত্ব নির্ভর করে নদীনালা ও খালবিলে পানি কতদিন থাকে তার ওপর। প্রতি বুধবার এ হাটে গড়ে এক থেকে দেড় শ নৌকা বিক্রি হয়, যা টাকার অঙ্কে প্রায় ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা।’

ঘিওর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘ঘিওর হাট জেলার অন্যতম বড় হাট হিসেবে পরিচিত। শুনেছি ব্রিটিশ আমলেও এই হাটটি বেশ জমজমাট ছিল। উপজেলায় মোট ৭টি হাট-বাজার রয়েছে। এগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ টাকায় ইজারা দেওয়া হয় এই ঘিওর হাটটিকে।’

কলকাতায় আর চলবে না ট্রাম

প্রকাশ: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৪৫ এএম
কলকাতায় আর চলবে না ট্রাম
অবসান হতে যাচ্ছে দেড়শ বছরের ঐতিহ্যের। কলকাতায় আর চলবে না ট্রাম। ছবি: খবরের কাগজ

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতায় বেড়াতে যাওয়া পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ ছিল ট্রাম। ভারতের একমাত্র কলকাতা শহরেই ছিল ট্রাম পরিষেবা। কলকাতায় গেছেন আর ট্রামে চড়েননি- এমনটা খুব কম পর্যটকের ক্ষেত্রে ঘটেছে। কলকাতার ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ সেই ট্রাম আর আর চলবে না। দেড় শ বছর ধরে বহু মানুষের যাত্রাপথের বিশ্বস্ত সঙ্গী হয়ে থেকে, দেশ-বিদেশের প্রশংসা কুড়িয়ে অবশেষে বিদায় নিচ্ছে বাহনটি। 

সম্প্রতি শহরে ট্রাম পরিষেবা চালু রাখার দাবিতে ‘ক্যালকাটা ট্রাম ইউজার্স অ্যাসোসিয়েশনের’ তরফে হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা করা হয়েছিল। তাতেই সরকারের ট্রাম-নীতি জানতে চেয়েছিলেন আদালত। নবান্ন সূত্রের খবর, প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ে আলোচনার পরে, শেষমেশ শহর থেকে ট্রাম তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বালিগঞ্জ-ধর্মতলা ও শ্যামবাজার-ধর্মতলা রুটে শেষ যে দুটি ট্রাম চলত, তাও বন্ধ করে দিচ্ছে রাজ্য সরকার।

তাহলে আগামী প্রজন্ম কী আর চোখেও দেখতে পাবে না এই যান? তা যাতে না হয়, সে জন্য ধর্মতলা থেকে ময়দান পর্যন্ত লুপ লাইনে ট্রামের জয় রাইডের ব্যবস্থা থাকবে বলে জানা গেছে। দেশ-বিদেশের পর্যটকরা উপভোগ করতে পারবেন ট্রামযাত্রা। সেটি বাদে শহরের বাকি সব ট্রামলাইনও এবার তুলে ফেলা হবে।

কলকাতায় প্রায়ই অভিযোগ ওঠে, ট্রামলাইনের জন্য দুর্ঘটনা ঘটার। শহরটিতে জনসংখ্যার তুলনায় রাস্তা অনেক কম। ফলে এমনিতেই যান নিয়ন্ত্রণ একটা বড় চ্যালেঞ্জ। তার মধ্যে রাস্তার ওপর ট্রামলাইন যেন আরও সমস্যা বাড়ায়। তাই সব দিক ভেবেই এই সিদ্ধান্ত।

এই প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের পরিবহনমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী বলেছেন, ‘আদালত এই নিয়ে আমাদের সিদ্ধান্ত জানতে চেয়েছিল। আমরা বলেছি, ময়দান-ধর্মতলা ছাড়া বাকি কোনো রুটে ট্রাম চলবে না। লাইনও তুলে ফেলব। রাস্তা বাড়েনি। যান বেড়েছে। তাই যানজট হচ্ছে। এভাবে ট্রাম চালানো অসম্ভব।’ 

অবশ্য বহু আগেই ট্রামের সংখ্যা কমিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রাজ্য সরকার। সময় যত এগিয়েছে বিকল্প যানও রাস্তায় নেমেছে। ফলে আগের মতো যাত্রী না হওয়ায় এক প্রকার যাত্রীশূন্যতায় ভুগছিল শহরের এই ঐতিহ্যবাহী পরিবহনটি। কাজেই সব রকম চিন্তা মাথায় রেখেই শহরের রাজপথ থেকে চিরতরে ট্রাম তুলে দেওয়ার এই সিদ্ধান্ত।

কলকাতায় ১৮৭৩ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রথমবার ঘোড়ায় টানা ট্রাম চালানো হয়। শিয়ালদহ থেকে আর্মেনিয়া ঘাট পর্যন্ত ওই ট্রাম চলে। পরে ‘কলকাতা ট্রামওয়ে কোম্পানি লিমিটেড’ গঠন করা হয়। এ কোম্পানির নিবন্ধন ছিল লন্ডনে। পরে ১৯০২ সালে কলকাতায় প্রথমবার চালু করা হয় বৈদ্যুতিক ট্রাম। কলকাতা শহরে ২৭-২৮টি রুটে ট্রাম চলত। ১৫ বছর আগেও ১২ রুটে সচল ছিল ট্রাম। শেষমেশ দুটি রুটে চলত।

ঐতিহ্যবাহী ট্রামের ১৫০ বছর পূর্তি উৎসব হয় ২০২৩ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি। দিবসটি উপলক্ষে কলকাতা ট্রাম কোম্পানি বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন করে। পুরোনো আটটি ট্রাম নতুন করে সাজিয়ে পথে নামানো হয়।

ওই দিন দাবি ওঠে, কলকাতার ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য ট্রাম চালু রাখতে হবে। কিন্তু সব দাবি উপেক্ষা করে বন্ধ করা হচ্ছে ট্রাম পরিষেবা।

নান্দনিক স্থাপনা চিনি মসজিদ

প্রকাশ: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৩ এএম
নান্দনিক স্থাপনা চিনি মসজিদ
নীলফামারীর সৈয়দপুর শহরের ইসলামবাগের চিনি মসজিদ মুসলিম স্থাপত্যশিল্পের এক অনন্য নিদর্শন। ছবি: খবরের কাগজ

নীলফামারীর সৈয়দপুরে কয়েকটি প্রাচীন স্থাপনা রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম চিনি মসজিদ। এটি মুসলিম স্থাপত্যশিল্পের এক অনন্য নিদর্শন। নীলফামারী জেলা সদর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে সৈয়দপুর শহরের ইসলামবাগে এই মসজিদ অবস্থিত। 

এলাকাবাসী ও মসজিদ কমিটির লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৮৬৩ সালে হাজি বাকের আলী ও হাজি মুকু ইসলামবাগে ছন ও বাঁশ ব্যবহার করে মসজিদটি নির্মাণ করেন। শঙ্কু নামের এক ব্যক্তি দৈনিক ১০ আনা মজুরিতে নির্মাণকাজ শুরু করেন। এলাকাবাসী স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে তাকে সাহায্য করেন। সে সময় মসজিদটি নির্মাণে ব্যয় হয় ৯ হাজার ৯৯৯ রুপি। 

১৯২০ সালে হাজি হাফিজ আবদুল করিমের উদ্যোগে ৩৯ ফুট বাই ৪০ ফুট আয়তনের মসজিদটির প্রথম অংশ পাকা করা হয়। তিনি নিজেই নকশা এঁকেছিলেন। পরে ১৯৬৫ সালে মসজিদের দক্ষিণ দিকে ২৫ বাই ৪০ ফুট আয়তনের দ্বিতীয় অংশ পাকা করা হয়। সম্প্রতি এটি আরও সম্প্রসারিত করা হয়েছে। বগুড়ার একটি গ্লাস ফ্যাক্টরি ১৯৬৫ সালে চিনি মসজিদের জন্য প্রায় ২৫ টন চীনা মাটির পাথর দান করে। এগুলো দিয়ে মোড়ানো হয় মসজিদের মিনারসহ বড় তিনটি গম্বুজ। মসজিদটির মূল অংশের বর্ণ অনেকটা লালচে হলেও, একটু খেয়াল করলেই বোঝা যায়, পরবর্তী সময়ে নির্মাণ করা অংশ অনেকটা সাদা। ১৯৮০-এর দশকে মসজিদের শেষ অংশ পাকা করা হয়। কারুকার্যের জন্য কলকাতা থেকে মর্মর পাথর ও চীনামাটির নকশা করা থালা আনা হয়। মসজিদের অধিকাংশ কারুকাজ চীনামাটির। কারিগরও কলকাতা থেকে আনা হয়েছিল। সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে দেয়ালে চীনামাটির থালা ও কাচের টুকরা বসানো হয়। এ পদ্ধতিকে ‘চিনি করা’ বা ‘চিনি দানার’ কাজ বলা হয়। ধারণা করা হয়, এখান থেকেই এর নামকরণ হয় ‘চিনি মসজিদ’। 

মসজিদটি নির্মাণে মুঘল আমলের স্থাপত্যশৈলী অনুসরণ করা হয়েছে। মসজিদের দেয়ালে ফুলদানি, ফুলের তোড়া, গোলাপ ফুল, একটি বৃন্তে একটি ফুল, চাঁদ-তারাসহ নানা কারুকাজ করা হয়েছে। মসজিদটি নির্মাণে প্রচুর মার্বেল পাথর ব্যবহার করা হয়েছে। এতে ২৭টি বড় মিনার, ৩২টি ছোট মিনার ও তিনটি বড় গম্বুজ রয়েছে। দোতলা মসজিদে প্রবেশ পথের পাশে আজান দেওয়