চলতি বছরের আগস্টে চীনের নতুন বাড়ির দাম গত ৯ বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কমেছে। গত শনিবার দেশটির একটি সরকারি পরিসংখ্যানে এই তথ্য জানানো হয়েছে। খবর বিবিসির। ব্রিটিশ সম্প্রচারমাধ্যমটির খবরে বলা হয়, আবাসন খাতের উন্নতিতে চীন সরকারের প্রণোদনাসহ সহায়ক পদক্ষেপগুলো সত্ত্বেও অর্থপূর্ণ পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হয় খাতটি। এই কারণে দেশটিতে বাড়ির দাম কমেছে।
চীনের ন্যাশনাল ব্যুরো অব স্ট্যাটিস্টিকসের (এনবিএস) তথ্যের ওপর ভিত্তি করে রয়টার্সের পরিসংখ্যান বলছে, চলতি বছরের আগস্টে দেশটিতে নতুন বাড়ির দাম গত বছরের তুলনায় ৫ দশমিক ৩০ শতাংশ কমেছে। সে হিসাবে ২০১৫ সালের মে মাসের পর এবার দাম সবচেয়ে বেশি কমেছে। এর আগে জুলাই মাসে দাম কমেছিল ৪ দশমিক ৯০ শতাংশ। মাস অনুযায়ী দেখলে নতুন বাড়ির দাম ১৪ মাস ধরে ধারাবাহিকভাবে কমছে। এমনকি চলতি মাসেই দাম প্রায় দশমিক ৭০ শতাংশ কমেছে, যা গত জুলাই মাসের একই সময়ের সমান।
খবরে বলা হয়, আবাসন বাজার বেশ কয়েকটি কারণে ভুগছে। এর মধ্যে রয়েছে চরমভাবে ঋণগ্রস্ত ডেভেলপার, অসম্পূর্ণ অ্যাপার্টমেন্ট এবং ক্রেতার আস্থা হ্রাস। এর ফলে দেশটির আর্থিক ব্যবস্থা কিছুটা চাপে পড়েছে এবং চলতি বছরের জন্য নির্ধারিত ৫ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা থেকে দূরে সরে গেছে চীন।
রয়টার্সের একটি জরিপে ভবিষ্যদ্বাণী করে বলা হয়, চীনের বাড়ির দাম ২০২৪ সালে ৮ দশমিক ৫০ শতাংশ কমবে এবং ২০২৫ সালে এটি কমবে ৩ দশমিক ৯০ শতাংশ। কারণ বর্তমানে আবাসন খাতটি স্থিতিশীল হওয়ার জন্য সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
আবাসন খাাতের কোম্পানি সেন্টালাইনের প্রধান বিশ্লেষক ঝাং দাওয়েই বলেছেন, চীনের আবাসন বাজার এখনো ধীরে ধীরে নিচের দিকে নেমে যাওয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। কারণ বাড়ির ক্রেতাদের চাহিদা, আয় ও আস্থা পুনরুদ্ধার হতে কিছুটা সময় লাগবে। তিনি আরও বলেন, বাজারটি একটি শক্তিশালী নীতির জন্য উন্মুখ হয়ে আছে।
শনিবার প্রকাশিত সরকারি তথ্য অনুসারে বিবিসি জানায়, আগস্টে চীনের আবাসন খাতের বিনিয়োগ কমেছে ১০ দশমিক ২০ শতাংশ এবং প্রথম আট মাসে বাড়ির বিক্রি এক বছর আগের তুলনায় ১৮ শতাংশ কমেছে।
চীনের নীতিনির্ধারকরা বন্ধকি ঋণের (মর্টগেজ) সুদহার কমানো এবং বাড়ি কেনার খরচ কমানোসহ এই খাতে সহায়তা করার প্রচেষ্টা জোরদার করেছে, যা আংশিকভাবে প্রধান শহরগুলোতে চাহিদা পুনরুজ্জীবিত করেছে। যেসব ছোট শহরে বাড়ি কেনার ক্ষেত্রে কম বিধিনিষেধ রয়েছে এবং যেখানে অবিক্রীত বাড়ির সংখ্যা বেশি, সেসব শহর বিশেষভাবে ঝুঁকিতে রয়েছে। এটি বিভিন্ন অঞ্চলে চাহিদা ও সরবরাহের ভারসাম্য রক্ষায় কর্তৃপক্ষের সম্মুখীন চ্যালেঞ্জগুলোকে আরও স্পষ্ট করেছে।
এনবিএসের সমীক্ষা করা ৭০টি শহরের মধ্যে মাত্র দুটিতে আগস্টে মাসিক ও বার্ষিক উভয় ক্ষেত্রেই বাড়ির মূল্যবৃদ্ধির কথা জানানো হয়েছে।
এক বিবৃতিতে জাপানভিত্তিক বৃহত্তম বিনিয়োগ ব্যাংক ও ব্রোকারেজ গ্রুপের মালিকানাধীন আবাসন খাতের কোম্পানি নোমুরা হোল্ডিংস বলেছে, চলতি বছরের দ্বিতীয়ার্ধে নতুন নতুন সমস্যার কারণে চীনের অর্থনীতির বৃদ্ধির হার আরও কমে যাবে। এই পরিস্থিতিতে বেইজিংকে বাধ্য হয়ে আগাম বিক্রি হওয়া আবাসিক প্রকল্পগুলোতে অর্থ দিয়ে সাহায্য করতে হবে। অর্থাৎ যখন আর কেউ এই প্রকল্পগুলোকে টাকা দেবে না, তখন চীনের সরকারকেই এই প্রকল্পগুলোতে অর্থ বরাদ্দ দিতে হবে।
ব্লুমবার্গ নিউজ অনুসারে চলতি মাসের প্রথম দিকে চীন বকেয়া থাকা মর্টগেজের ওপর সুদের হার ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি পরিমাণে কমাতে পারে।
অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক বহুজাতিক ব্যাংকিং ও আর্থিক পরিষেবা সংস্থা এএনজেডের অর্থনীতিবিদরা গত শুক্রবার প্রকাশিত একটি গবেষণা প্রতিবেদনে বলেছেন, মর্টগেজের সুদের হার কমানোর জন্য সেপ্টেম্বরে ৫ বছর মেয়াদি লোন প্রাইম রেট (একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সর্বনিম্ন সুদহারে দেওয়া ঋণ) কমানোর সম্ভাবনা রয়েছে, যার সঙ্গে মধ্যম মেয়াদি ঋণ সুবিধা (এমএলএফ) ২০ বেসিস পয়েন্ট এবং রিজার্ভ রিকোয়ারমেন্ট অনুপাত (কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোতে রাখা বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর আমানতের শতকরা হার) ৫০ বেসিস পয়েন্ট কমানো হতে পারে।