টানা ছয়দিন ধরে রুশ ভূখণ্ডে অভিযান চালাচ্ছে ইউক্রেন। ২০২২ সালে আগ্রাসন শুরুর পর এবারই প্রথম রাশিয়ার ভেতরে ঢুকে পড়েছে ইউক্রেন। গত মঙ্গলবার থেকে ইউক্রেনীয় সেনারা রাশিয়ার কারস্কে আকস্মিক হামলা শুরু করে এবং এবার ১০ কিলোমিটার ভেতরে ঢুকে অভিযান পরিচালনা করছে বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। যার ফলে বিশেষ প্রতিরোধ ব্যবস্থা হাতে নিতে বাধ্য হয়েছে মস্কো।
গত শনিবার (১০ আগস্ট) প্রথমবারের মতো দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এ অভিযানের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জেলেনস্কি জানিয়েছেন, ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনী রাশিয়ার পশ্চিমের কারস্ক অঞ্চলে হামলা চালাচ্ছে। স্থানীয় সময় শনিবার রাতে টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে জেলেনস্কি বলেন, ‘ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী এই যুদ্ধকে আগ্রাসনকারীদের অঞ্চলের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এটি নিশ্চিত করার জন্য আমি প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রতিটি ইউনিটের কাছে কৃতজ্ঞ। ইউক্রেন প্রমাণ করছে যে তারা প্রকৃতপক্ষে ন্যায়বিচার পুনরুদ্ধার করতে পারে এবং আগ্রাসনকারীদের ওপর প্রয়োজনীয় চাপ প্রয়োগ করতে পারে।’
রাশিয়ার কাছে ইউক্রেনের এই হামলা ছিল অপ্রত্যাশিত। তারা নিরাপত্তার জন্য সীমান্তের দুই পাশ থেকেই প্রচুর মানুষকে সরিয়ে নিচ্ছে। ইতোমধ্যে ৭৬ হাজার মানুষকে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে রুশ কর্তৃপক্ষ। কারস্ক অঞ্চলের প্রতিরক্ষায় রাশিয়া ট্যাংক ও রকেট লঞ্চিং সিস্টেম পাঠিয়েছে বলেও জানায় তারা।
ইউক্রেন সীমান্তবর্তী তিন অঞ্চলে প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে মস্কো। এ অঞ্চলগুলো হলো কারস্ক, বেলগোরদ ও ব্রিয়ানস্ক। এসব অঞ্চলে কর্তৃপক্ষ সম্ভাব্য হামলা ঠেকাতে বেশ কিছু উদ্যোগ হাতে নিয়েছে। যার মধ্যে আছে যানবাহন ও নাগরিকদের চলাচলের ওপর বিধিনিষেধ এবং ফোনে আড়ি পাতা ইত্যাদি।
রাশিয়া জানিয়েছে, মঙ্গলবার সকালে ১ হাজারেরও বেশি ইউক্রেনীয় সেনা কারস্ক অঞ্চলে প্রবেশ করে। তাদের সঙ্গে ট্যাংক ও সাঁজোয়া যানও ছিল। ইউক্রেনের বাহিনী বেশ কয়েকটি গ্রাম দখলে নেয় এবং প্রাদেশিক শহর সুদজা দখলেরও সম্ভাবনা তৈরি করে।
রবিবার (১১ আগস্ট) দিনের শুরুতেই ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ ও সুমি অঞ্চলে বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে। হামলায় এ পর্যন্ত চার বছর বয়সী এক শিশু ও তার বাবার নিহতের খবর পাওয়া গেছে।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, গতকাল কারস্কে তারা ইউক্রেনের ১৪টি ড্রোন এবং চারটি তচকা-ইউ মডেলের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করেছে।
কিয়েভের মেয়র ভিতালি ক্লিটস্চকো বলেন, শহরে বিমান হামলার বিষয়ে সতর্কতা দেওয়া হয়েছে এবং এ ধরনের হামলা ঠেকাতে কাজ করছে আকাশ হামলা প্রতিরক্ষা ইউনিট।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টেলিগ্রামে দেওয়া পোস্টে তিনি বেসামরিক নাগরিকদের সতর্ক করে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার অনুরোধ করেন।
যুদ্ধের শুরু থেকেই ‘প্রতিরক্ষায়’ ব্যস্ত থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে একাধিকবার রুশ ভূখণ্ডে হামলা ও অভিযানের চেষ্টা চালিয়েছে কিয়েভ। সূত্র: রয়টার্স ও বিবিসি