ইউক্রেনের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা জিইউআর-এর প্রধান কিরিলো বুদানভ বলেছেন, ‘রাশিয়া গাইডেড তথা নির্ভুল-নির্দেশিত বোমা উৎপাদন বৃদ্ধি করছে। একই সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার কাছ থেকে গোলাবারুদ আমদানি অব্যাহত রেখেছে। যা যুদ্ধক্ষেত্রে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর জন্য বড় সমস্যা তৈরি করেছে।’
গত শনিবার কিয়েভে ভিক্টর পিনচুক ফাউন্ডেশন আয়োজিত ইয়াল্টা ইউরোপিয়ান স্ট্র্যাটেজিক কনফারেন্সে বুদানভ এ মন্তব্য করেছেন।
তিনি রাশিয়াকে তার অন্যান্য মিত্রদের সমর্থনের চেয়ে উত্তর কোরিয়ার সামরিক সহায়তাকে সবচেয়ে বড় উদ্বেগ হিসেবে উপস্থাপন করেন। এ ছাড়া গাইডেড বোমা তৈরিতে রাশিয়ার মনোযোগও ইউক্রনকে চিন্তায় ফেলেছে।
তিনি আরও জানান, তারা (উত্তর কোরিয়া) প্রচুর পরিমাণে গোলাবারুদ সরবরাহ করছে, যা এই মুহূর্তে রাশিয়ার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশ এবং নিরপেক্ষ বিশ্লেষকরা বলছেন, কিম জং উন রাশিয়ায় অর্থনৈতিক ও অন্যান্য সামরিক সহায়তার বিনিময়ে ক্ষেপণাস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহ করে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে রাশিয়াকে সাহায্য করছেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, ইউক্রেনের বাহিনী রাশিয়ার পূর্ণ মাত্রার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ৩০ মাসেরও বেশি সময় ধরে লড়ছে। পূর্ব ইউক্রেনের প্রধান শহরগুলোতে রাশিয়ার অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সফলতার সঙ্গে কাজ করছে তারা। এ ছাড়া রাশিয়ার কারস্কেও অনুপ্রবেশ করে স্থল অভিযান পরিচালনা করছে ইউক্রেনীয় বাহিনী।
ইউক্রেনের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ঠেকাতে পুতিনের পারমাণবিক পরীক্ষার সম্ভাবনা
এদিকে গত শুক্রবার তিন বিশ্লেষক জানিয়েছেন, পশ্চিমারা যদি রাশিয়ায় আঘাত করার জন্য ইউক্রেনকে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দেয়, তবে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বিকল্প হিসেবে রাশিয়ার কাছে অবস্থিত ব্রিটিশ সামরিক অবকাঠামোগুলোতে আঘাত হানতে পারেন। এছাড়া প্রতিক্রিয়া হিসেবে পারমাণবিক পরীক্ষা চালানোর দিকেও ঝুঁকতে পারে রাশিয়া।
আলোচিত তিন বিশ্লেষক হলেন- হামবুর্গ ইনস্টিটিউট ফর পিস রিসার্চ অ্যান্ড সিকিউরিটি পলিসির অস্ত্র বিশেষজ্ঞ উলরিখ কুয়েন, অস্ট্রিয়ার ইনসব্রুক বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ গেরহার্ড ম্যাংগট ও জাতিসংঘে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেনের ওপর পূর্ব-পশ্চিম উত্তেজনা একটি নতুন এবং বিপজ্জনক পর্যায়। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেইর স্টারমার ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গত শুক্রবার ওয়াশিংটনে চলমান যুদ্ধে কিয়েভকে দূরপাল্লার মার্কিন এটিএসিএসএস বা ব্রিটিশ স্টর্ম শ্যাডো ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারে অনুমতি দেওয়া হবে কিনা এ বিষয়ে আলোচনার পরপরই তিন বিশ্লেষক এমন মন্তব্য করেছেন।
এদিকে ইউক্রেনের বিমান বাহিনী রবিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দাবি করেছে, গত শনিবার রাতে ইউক্রেনের ভূখণ্ড লক্ষ্য করে রাশিয়ার চালানো ১৪টি ড্রোন হামলার ১০টিই প্রতিহত করেছে তারা। তারা টেলিগ্রাম মেসেজিং প্লাটফর্মে আরও দাবি করেছে, রাশিয়া একই রাতে দুটি ইস্কান্দার এম-ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও একটি কেএইচ-৫৯ গাইডেড ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইউক্রেনের দক্ষিণের ওডেসা অঞ্চলে হামলা চালিয়েছে। গাইডেড ক্ষেপণাস্ত্রটি ধ্বংস করা হয়েছে দাবি করলেও ইস্কান্দার ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ক্ষয়ক্ষতি বা ফলাফলের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি ইউক্রেনীয় বাহিনী। সূত্র: রয়টার্স