লেবাননে গতকাল সোমবার ইসরায়েলি হামলায় হামাসের নেতা মারা গেছেন। ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী নিজেদের নেতা মারা যাওয়ার খবরটি নিশ্চিত করেছে। তারা জানিয়েছে, বৈরুতে ইসরায়েলি হামলায় তাদের মোট তিন নেতা মারা গেছেন। প্রথম হামলাটি শহরের সীমার মধ্যে হয়েছে বলেও উল্লেখ করেছে তারা।
হামাসের দেওয়া তথ্যানুসারে লেবাননে তাদের নেতা ফাতেহ শেরিফ আবু এল-এমিন মারা গেছেন। ওই নেতার স্ত্রী, ছেলেমেয়েও একই হামলায় মারা গেছেন। লেবাননের দক্ষিণের শহর টায়ারে এক ফিলিস্তিনি শরণার্থী শিবিরকে লক্ষ্য করে হামলা চালালে তারা মারা যান। সোমবার প্রথম ভাগে ঘটনাটি ঘটেছে বলে উল্লেখ করেছে রয়টার্স।
ইসরায়েলিরা ওই অঞ্চলে ইরানের মিত্রদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অব প্যালেস্টাইন (পিএফএলপি) জানিয়েছে, তাদের তিন নেতা বৈরুতের কোলা জেলায় ইসরায়েলের চালানো হামলায় মারা গেছেন। রয়টার্সের প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, আবাসিক ভবনের ওপরের তলায় হামলা হয়েছিল।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী তাৎক্ষণিকভাবে এ হামলা চালায়নি। লেবাননের হিজবুল্লাহ ও ইয়েমেনের হুতি বাহিনীর বিরুদ্ধে আক্রমণের তীব্রতা বাড়ছে ইসরায়েলের। সব মিলিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে বড় ধরনের যুদ্ধ দেখা দেওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এসব ডামাডোলে উদ্বেগের মুখে রয়েছে ইসরায়েলের প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্রও। যেকোনো সময় ইরানের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে পারে তারা এমন শঙ্কা ক্রমেই প্রবল হচ্ছে।
রয়টার্সের প্রতিবেদন বলছে, পিএফএলপি আরেকটি সশস্ত্র গোষ্ঠী যা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। গত রবিবার ইসরায়েল ইয়েমেনের হুথি উগ্রপন্থি সংগঠন ও কয়েক ডজন হিজবুল্লাহ লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে।
হুথি পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্যানুসারে, অন্তত চার ব্যক্তি মারা গেছেন। আহত হয়েছেন ২৯ জন। ইসরায়েলের দাবি হুথিদের ক্ষেপণাস্ত্র আক্রমণের জবাব দিতেই তারা হামলা চালিয়েছে। অন্যদিকে লেবাননের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, অন্তত ১০৫ জন ইসরায়েলি হামলায় মারা গেছেন।
লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, গত দুই সপ্তাহে ইসরায়েলি হামলায় ১ হাজারেরও বেশি লেবানিজ নিহত ও ৬ হাজারেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছে। তবে তাদের মধ্যে কতজন বেসামরিক তা এখনো জানায়নি কর্তৃপক্ষ। মোট জনসংখ্যার এক পঞ্চমাংশ বাস্তুচ্যুত হয়েছে বলেও উল্লেখ করেছে তারা।
গত দুই সপ্তাহে ইসরায়েলি বোমাবর্ষণে কয়েকজন শীর্ষ হিজবুল্লাহ কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে সায়েদ হাসান নাসরাল্লাহও রয়েছেন। ইসরায়েলের দাবি, তারা তাদের উত্তর এলাকা আবার নিরাপদ করতে চায়। হিজবুল্লাহর রকেট হামলায় সেখানে যেসব ইসরায়েলি বাস্তুচ্যুত হয়েছে, তাদের আবার ফিরিয়ে আনতে চায় তারা। এটি নিশ্চিত হওয়ার আগ পর্যন্ত হামলা চালিয়ে যাবে তারা।
গত রবিবারও বৈরুতের আকাশে ইসরায়েলি ড্রোন ঘুরে বেড়াতে দেখে গেছে। লেবাননের রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে নতুন নতুন বিমান হামলার বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। যুক্তরাষ্ট্র এরই মধ্যে লেবানন সংঘাতের কূটনৈতিক সমাধান চেয়েছেন। তবে ওই অঞ্চলের অন্যান্য স্থানে সামরিক বাহিনীও নিয়োজিত করেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, মধ্যপ্রাচ্যে পূর্ণমাত্রার যুদ্ধ এড়ানো সম্ভব হবে কি না। উত্তরে তিনি বলেছেন, এটি হতেই হবে। বাইডেন আরও জানান, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে কথা বলবেন তিনি। সূত্র: রয়টার্স