অবশেষে শেষ হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোট গ্রহণ। এবার ফলাফল ঘোষণার অপেক্ষা।
যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন নিয়ে আমেরিকা ছাড়াও গোটা বিশ্বেই উত্তেজনা বিরাজ করে। এবার সেই উত্তেজনা ছিল আরও বেশি। কে হচ্ছেন প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস নাকি ডোনাল্ড ট্রাম্প, সে ব্যাপারে ভোটের আগের দিন পর্যন্ত কিছুই বলা যাচ্ছিল না। কারণ দুই প্রার্থীর মধ্যে ছিল হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পূর্বাভাস। জরিপে তাদের ব্যবধান মাত্র ১ শতাংশ। তাই কোনো সমীকরণেই আঁচ করা যাচ্ছে না কে হচ্ছেন প্রেসিডেন্ট। তবে গতকাল ভোট দেওয়ার মাধ্যমে ভোটাররা তাদের মতামত ব্যক্ত করেছেন।
কয়েক দশকের প্রথা মেনে দেশটির নিউ হ্যাম্পশায়ারের কমিউনিটি ডিক্সভিল নচে ভোট শুরু হয় মধ্যরাতের পরপর। সাকল্যে ছয়জন নিবন্ধিত ভোটার সেখানে। ছয়জনই ভোট দেন। তিনটি পেয়েছেন ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী কমলা হ্যারিস, আর তিনটি পেয়েছেন রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। সে হিসাবে শুরু থেকেই লড়াইয়ে সমতায় ছিলেন কমলা ও ট্রাম্প।
যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় ভোর ৫টার দিকে ভোট শুরু হয় ভারমন্ট অঙ্গরাজ্যের কিছু কেন্দ্রে। মানুষকে এ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে দেখা যায়। পরে ধীরে ধীরে অ্যারিজোনা, আইওয়া, লুইজিয়ানা, মিনেসোটা, সাউথ ডাকোটা, নর্থ ডাকোটা, ওকলাহোমা, টেক্সাস, উইসকনসিন, নর্থ ক্যারোলাইনা, নিউইয়র্ক সিটিসহ সব অঙ্গরাজ্যের ভোটকেন্দ্র খুলে দেওয়া হয়। মূলত যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরেই সময়ের তারতম্য থাকায় একেক স্থানে একেক সময়ে ভোট শুরু হয়।
যুক্তরাষ্ট্রে এবার ভোট দেওয়ার মতো যোগ্য নাগরিক রয়েছেন ২৪ কোটি ৪০ লাখ। তাদের উপস্থিতির ওপর ভিত্তি করেই নির্ধারিত হবে কে হবেন দেশটির পরবর্তী প্রেসিডেন্ট। ভোটারদের উপস্থিত হওয়ার জন্য এরই মধ্যে অনুরোধ জানিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত সোমবার শেষ দিনের প্রচারে তিনি বলেছেন, কমলার বিরুদ্ধে নয়, দুষ্ট ডেমোক্র্যাট ব্যবস্থার বিরুদ্ধে লড়ছেন তিনি।
একই অনুরোধ জানিয়েছেন কমলা হ্যারিসও। তিনি বলেছেন, ট্রাম্পকে পরাজিত করার মধ্য দিয়ে বিভক্তির রাজনীতির যুগের অবসান করতে হবে। হ্যারিস নারীর গর্ভপাতের অধিকার ফিরিয়ে আনা, খাদ্য ও বাসস্থানের খরচ কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। অন্যদিকে ট্রাম্প সীমান্তে কড়াকড়িসহ ট্রিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ কর কর্তনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা যে শুধু প্রেসিডেন্ট বেছে নিচ্ছেন, তা নয়। তারা দেশটির কংগ্রেসের সদস্যও নির্বাচিত করছেন। নির্বাচনে আগেই দেশটির ৮ কোটি ২০ লাখেরও বেশি ভোটার ভোট দিয়েছেন।
সিনেটের ১০০ আসনের ৩৪টির ভাগ্য নির্ধারণ হচ্ছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে বিবিসি। সংবাদমাধ্যমটি আরও জানিয়েছে, কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের ৪৩৫টি আসনের সব কটিতে নির্বাচন হবে। প্রতি দুই বছর পরপর এটি হয়।
মঙ্গলবারের ব্যালটে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নাম নেই। তাই বলে তিনি যে নজর রাখছেন না, তা নয়। হোয়াইট হাউস থেকেই চোখ রাখছেন তিনি। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে বাইডেনকে খুব একটা বেশি দেখা যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, ইচ্ছা করেই আড়ালে থাকছেন তিনি।
ভোটের ফল পেতে কয়েক দিনও লাগতে পারে
ভোট গণনা করতে কয়েক দিনও লেগে যেতে পারে। তবে সাধারণত যেদিন ভোট হয়, তার পরের দিন সকালেই জয়ী কে, তা স্পষ্ট হয়ে যায়। এ বছর প্রায় ৮ কোটির বেশি ভোটার ডাকযোগে আগাম ভোট দিয়েছেন। সেই হিসাবে গতকাল বুথে গিয়ে ভোট দিতে পারেন মোট নিবন্ধিত ভোটারের অর্ধেক। ফলে বুথে পড়া ভোটের হিসাবে জয়-পরাজয় নির্ধারিত নাও হতে পারে।
ডাকযোগে যারা ভোট দিয়েছেন, তাদের ব্যালট পেপার পৌঁছাতে এবং গণনা শেষ হতে মঙ্গলবার পেরিয়ে আরও কয়েক দিন সময় লেগে যেতে পারে।
২০১৬ সালে নির্বাচনে জয়ের পর ট্রাম্প রাত ৩টায়ই নিউইয়র্কের মঞ্চে সমর্থকদের সামনে বিজয়ীর ভাষণ দিতে উঠেছিলেন। কিন্তু ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের চার দিন পর নিশ্চিত হয় যে জো বাইডেন হোয়াইট হাউসে যাচ্ছেন। সূত্র: বিবিসি, সিএনএন