প্লাস্টিক দূষণ কমানোর উদ্দেশ্যে চলমান আলোচনার চূড়ান্ত দিনে এসে চুক্তিটি নিয়ে তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার বুসানে বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) থেকে শুরু হওয়া জাতিসংঘের ইন্টারগভর্নমেন্টাল নেগোসিয়েটিং কমিটির (ইএনসি) পঞ্চম এবং চূড়ান্ত বৈঠকে এই চুক্তির বিষয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়।
আলোচনায় অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর মধ্যে ১০০টিরও বেশি দেশ প্লাস্টিক উৎপাদন সীমিত করার পক্ষে। তবে কিছু তেল উৎপাদনকারী দেশ শুধু প্লাস্টিক বর্জ্য নিয়ন্ত্রণের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। এই মতবিরোধকে কেন্দ্র করে আলোচনায় বেশ উত্তপ্ত অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
আলোচনায় বিশ্বব্যাপী প্লাস্টিক সীমিত উৎপাদনের একটি খসড়া চুক্তি প্রস্তুত করার কথা থাকলেও এ বিষয়ে চূড়ান্ত অধিবেশন এখনও শুরু হয়নি।
বৈঠকে এই চুক্তিটি চুড়ান্ত হলে তা পরিবেশগত সুরক্ষা এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রাখতে পারে বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের।
২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তির পর এটি নতুন মাইলফলক হতে পারে বলে মনে করছেন তারা।
আলোচনায় পানামার একটি প্রস্তাবে ১০০টিরও বেশি দেশ সমর্থন দিয়েছে। যেখানে তারা বিশ্বে প্লাস্টিক উৎপাদন কমানোর লক্ষ্যে কাজ করতে চায়। তবে আরেকটি প্রস্তাবে প্লাস্টিক উৎপাদনের সীমা আরোপ করা হয়নি।
ফিজির প্রধান আলোচক এবং পরিবেশমন্ত্রী সিভেন্দ্র মাইকেল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘কেউ যদি কার্যকর অবদান রাখতে না চান এবং এই ঐতিহাসিক চুক্তিতে সহায়তা না করেন, তবে দয়া করে আমাদের পথে বাঁধা সৃষ্টি করবেন না।’
তবে সৌদি আরবের মতো কিছু পেট্রোকেমিক্যাল উৎপাদনকারী দেশ শক্তভাবে প্লাস্টিক উৎপাদন সীমিত করার উদ্যোগের বিরোধিতা করেছে এবং আলোচনা বিলম্বিত করতে সব ধরনের কৌশল প্রয়োগের চেষ্টা করেছে।
চীন, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া এবং সৌদি আরব ২০২৩ সালের তথ্য অনুযায়ী বিশ্বের শীর্ষ পাঁচটি প্রধান পলিমার উৎপাদনকারী দেশ ছিল।
এদিকে বৈঠকের সময়সীমা শেষ হতে মাত্র কয়েক ঘণ্টা বাকি থাকলেও এখনো একটি চুক্তি নিয়ে ঐক্যমত্যে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি।
এই আলোচনা ভেঙে যেতে পারে অথবা পরবর্তী সেশনে স্থানান্তরিত হতে পারে বলে কিছু আলোচক এবং পর্যবেক্ষকের ধারণা।
মেক্সিকোর প্রতিনিধি দলের প্রধান ক্যামিলা জেপেডা রয়টার্সকে বলেছেন, ‘প্লাস্টিকের সীমিত উৎপাদন একটি জটিল প্রক্রিয়া। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য আমাদের দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা একটি জোট তৈরি করেছি। প্লাস্টিক কম উৎপাদনে আগ্রহী ১০০টিরও বেশি দেশ একসঙ্গে কাজ শুরু করতে পারি।’
প্লাস্টিক উৎপাদন ২০৫০ সালের মধ্যে তিনগুণ বাড়ার পথে রয়েছে এবং মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি বাতাস, তাজা শাক-সবজি এমনকি মায়ের বুকের দুধেও পাওয়া গেছে।
বৈঠকের চেয়ারম্যান লুইস ভায়াস ভ্যালদিভিয়েসো চুক্তির খসড়া হিসেবে একটি সংশোধিত দলিল প্রকাশ করেন। তবে, এই দলিলটিতে কিছু বিতর্কিত বিষয় রয়েছে। এর পাশাপাশি বেশ কিছু বিকল্প প্রস্তাবনাও রয়েছে, যেমন - প্লাস্টিক উৎপাদন সীমিত করা, প্লাস্টিক পণ্য ও রাসায়নিকের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা এবং চুক্তি বাস্তবায়নে উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থ সহায়তা নিশ্চিত করা।
২০২৩ সালের জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচি প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্লাস্টিকের মধ্যে তিন হাজার ২০০টিরও বেশি বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ রয়েছে। এগুলো নারী ও শিশুদের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
সিভেন্দ্র মাইকেল বলেন, ‘যদি কেউ এই চুক্তি করতে বাঁধা দেয় তাহলে তাদেরকে চুক্তির অন্তর্ভূক্ত হতে চাপ প্রয়োগ করা হবে। আমরা বুসান থেকে কোনো দুর্বল চুক্তি নিয়ে চলে যাব না।’ সূত্র: রয়টার্স
তাওফিক/নাইমুর/অমিয়/