যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বাংলাদেশে চলমান পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের উত্তরে এ কথা বলেন হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা যোগাযোগবিষয়ক উপদেষ্টা জন কিরবি। তিনি বলেন, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে।
শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সহিংসতার প্রতিবাদে হোয়াইট হাউসের বাইরে প্রতিবাদসহ যুক্তরাষ্ট্রে হিন্দু-আমেরিকান সংগঠনগুলোর বিক্ষোভ বিষয়ে একটি প্রশ্ন করা হয়। এ ব্যাপারে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, প্রেসিডেন্ট বাইডেন এ বিষয়ে অবগত কি না এবং জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মোহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাতে তিনি এটি উত্থাপন করেছিলেন কি না।
উত্তরে কিরবি বলেন, ‘আমরা এটি অত্যন্ত ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছি এবং প্রেসিডেন্টও ঘটনাবলির ওপর নিবিড় নজর রাখছেন।’
কিরবি যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার-সম্পর্কিত অবস্থানের ওপর জোর দিয়ে বলেন, ‘ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। শেখ হাসিনাকে অপসারণের পর বাংলাদেশে নিরাপত্তা পরিস্থিতি কঠিন হয়ে পড়েছে এবং আমরা এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করছি, যাতে তাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর সক্ষমতা বাড়ানো যায়।’
কিরবি আরও বলেন, ‘আমাদের অবস্থান সব সময়ই স্পষ্ট। বাংলাদেশের সব নেতার সঙ্গে আমাদের আলোচনায় বারবার উল্লেখ করেছি, ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অন্তর্বর্তী সরকারের নেতারা বারবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে তারা সব বাংলাদেশির জন্য ধর্ম ও জাতিগত পরিচয় নির্বিশেষে নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন। আমরা চাই তাদের এই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হোক।’
বাংলাদেশে গত বছর কোনো আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী হামলা হয়নি
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশে ২০২৩ সালে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী হামলার কোনো ঘটনা ঘটেনি। যদিও ওই সময় সরকার প্রায়ই রাজনৈতিক বিরোধিতাকে ‘সন্ত্রাসবাদ’ হিসেবে চিত্রিত করেছে। তবে নিরাপত্তা বাহিনীর কিছু সংস্থার বিরুদ্ধে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও অন্যান্য মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে।’
২০২৩ সালের সন্ত্রাসবাদ নিয়ে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর প্রকাশিত প্রতিবেদনে বাংলাদেশ সম্পর্কে ওই তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দে সন্ত্রাসবাদের নামে আটক করা হয়েছে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাদের। প্রতিবেদনটিতে মানবাধিকার লঙ্ঘনেরও অভিযোগ এসেছে।
ওই বছর সরকার কঠোরভাবে জঙ্গিদের দমনের চেষ্টা করেছে উল্লেখ করে বলা হয়, ‘বিশেষ করে আল-কায়েদা, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম (আনসার আল-ইসলাম নামেও পরিচিত) ও আইএসআইএস-সংশ্লিষ্ট নব্য জেএমবি সদস্যদের আটক করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাছে প্রশিক্ষিত বাংলাদেশ পুলিশ ইউনিট একাধিক সন্দেহভাজন সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করেছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, মে মাসে জাতিগত বিচ্ছিন্নতাবাদী কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) হামলায় বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় পার্বত্য জেলা চট্টগ্রামে দুই সৈন্য নিহত হন। মার্চে একই ধরনের হামলায় আরেক সেনা নিহত হন। এ ছাড়া কেএনএফের বিরুদ্ধে নতুন আল-কায়েদা থেকে অনুপ্রাণিত গ্রুপ জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়াকে (জেএএইচএস) প্রশিক্ষণ দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের শুরুর দিকে তারা এই সংগঠনের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে আনে। সংগঠনটির কথিত আমিরকে জুলাই মাসে গ্রেপ্তার করা হয়। এতে সংগঠনটির কার্যক্রম অনেকটা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে।
এ ছাড়া প্রতিবেদনে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধনের বিষয়টিও তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়েছে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধন করে সাইবার নিরাপত্তা আইন নামকরণ করা হয়েছে। অনলাইনে সম্ভাব্য সন্ত্রাসী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে এ আইন সংশোধন করা হলেও এর দ্বারা মূলত নাগরিকের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ন্ত্রণ এবং গ্রেপ্তারের অনুমতি দেয়।
মাহফুজ/