যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরে প্রস্তুত দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বাইডেন বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরে তার সরকার বদ্ধপরিকর। এর আগে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী ও ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসও জানান, তারা শান্তিপূর্ণভাবেই ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন। এর মধ্য দিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের চিন্তাধারা থেকে যে বাইডেন ও কমলা ভিন্ন, সেটিই যেন প্রকাশ পেল।
২০২০ সালের নির্বাচনে বাইডেন বিজয়ী হওয়ার পর ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, ভোটে কারচুপি হয়েছে। তিনি ফল উল্টে দেওয়ার চেষ্টাও করেছিলেন। ট্রাম্পের বক্তব্যে ক্ষুব্ধ সমর্থকরা যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল হিলে হামলা চালিয়ে বসেছিলেন।
এবারের নির্বাচনে ভূমিধস বিজয় পেয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ঐতিহাসিক বিজয়ের দুই দিন পর গত বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসের রোজ গার্ডেনে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বাইডেন বলেন, ‘শুধু বিজয়ী হয়েই দেশকে ভালোবাসা যায় তা নয়, পরাজিত হয়েও দেশকে ভালোবাসতে হবে। আমাদের জনগণ তাও পারে।’ সেই সঙ্গে ডেমোক্র্যাট সমর্থকদের দেশ গঠনে আরও আন্তরিক হওয়ার আহ্বান জানান বাইডেন।
তিনি বলেন, ‘আমি আশা করছি যার জন্যই আপনি ভোট দিয়ে থাকুন না কেন, আমরা একে অন্যকে শত্রু হিসেবে নয়, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে দেখব। আমি আরও আশা করি, যুক্তরাষ্ট্রের ইলেকটোরাল সিস্টেমের বিশুদ্ধতা নিয়ে যেসব প্রশ্ন ওঠানো হয়েছিল, তার উত্তর মিলবে।’
এর আগে গত বুধবার কমলা হ্যারিস নির্বাচনে পরাজয় স্বীকার করে নেন। তবে জানান লড়াই অব্যাহত থাকবে। ক্ষমতা শান্তিপূর্ণভাবে হস্তান্তরের কথা জানিয়ে কমলা সমর্থকদের বলেন, ‘এটি গণতন্ত্রের মৌলিক নীতি যে আমরা একটি নির্বাচনে যখন পরাজিত হব, তখন ফল মেনে নেব। এই নীতিটাই গণতন্ত্রকে রাজতন্ত্র বা স্বৈরতন্ত্র থেকে আলাদা করে। জনসাধারণের আস্থা অর্জন করতে চান এমন যেকোনো ব্যক্তিকে অবশ্যই এটি মেনে চলতে হবে।’
এদিকে বিজয়ী হওয়ার পর সরকার গঠনের প্রস্তুতি শুরু করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এরই মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ গঠনে সম্ভাব্য তালিকা নিয়েও চলছে বিচার-বিশ্লেষণ। এসবের মধ্যেই সামনে এসেছে চিফ অব স্টাফের নাম। ট্রাম্প চিফ অব স্টাফ হিসেবে সুসি ওয়াইলসকে বেছে নিয়েছেন। ওয়াইলস ট্রাম্পের নির্বাচনি প্রচার ক্যাম্পেইনের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা ছিলেন এবং মঙ্গলবার এক নৈশভোজের অনুষ্ঠানে ট্রাম্প তার প্রশংসা করেন।
হোয়াইট হাউসের চিফ অব স্টাফ সাধারণত প্রেসিডেন্টের প্রশাসনিক কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তারা মূলত হোয়াইট হাউসের ম্যানেজার হিসেবে কাজ করেন এবং প্রেসিডেন্টের কর্মীদের একত্রিত করার দায়িত্ব থাকে তাদের ওপর। যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যম ও রাজনীতিবিষয়ক আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের টিম এরই মধ্যে কাগজপত্র নেই এমন অবৈধ অভিবাসীদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কারের পরিকল্পনা শুরু করেছে। সেই সঙ্গে অর্থনীতিকে চাঙা করা ও মূল্যস্ফীতি রোধে কাজ চলছে। এসব বিষয়ে ট্রাম্প নির্বাচনি প্রচারের সময়ই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
২০২৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের আড়াই শ বছর পূর্তি হবে। এ উপলক্ষে ট্রাম্প প্রশাসন ২০২৫ সাল থেকেই বছরব্যাপী উৎসব উদযাপনের প্রস্তুতি নেবে। রিপাবলিকানরা এরই মধ্যে দেশটির আইনসভার উচ্চকক্ষ সিনেটের নিয়ন্ত্রণ পেয়ে গেছে। নিম্নকক্ষের নিয়ন্ত্রণ পাওয়ারও খুব কাছে রয়েছেন ট্রাম্প ও তার দল। দুই কক্ষেরই নিয়ন্ত্রণ পেয়ে গেলে ট্রাম্পের জন্য নীতি ও পরিকল্পনা বাস্তবায়ন অনেকটাই সহজ হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসে প্রত্যাবর্তনের তোড়জোড় শুরু হয়ে গেছে। নতুন বছরের ২০ জানুয়ারি শপথ নেবেন নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট। সূত্র: এএফপি, রয়টার্স