ডোনাল্ড ট্রাম্প যে ঢেউয়ের ওপর ভর করে হোয়াইট হাউসে এসেছেন, সে ঢেউই আগামীতে তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়াতে পারে। তিনি যে নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটারদের দলে টেনেছেন, সেগুলো যদি রাখতে না পারেন, তাহলেই বাধবে বিপত্তি।
যুক্তরাষ্ট্রের ভোটাররা বর্তমানে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য থেকে শুরু করে গাড়ি বিমা সব কিছুর খরচ নিয়ে বিরক্ত। ডেমোক্র্যাটদের ওয়াশিংটনে ক্ষমতা থেকে নামিয়ে দিয়ে সে বিরক্তিই প্রকাশ করেছেন তারা। ট্রাম্প প্রচারের সময় বারবারই আশ্বস্ত করেছেন, তিনি যদি ক্ষমতায় থাকেন, তাহলে মূল্যস্ফীতি সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে না। তবে সিএনএনের বিশ্লেষণ বলছে, ট্রাম্প নিজেও মূল্যস্ফীতি সমস্যার মুখে পড়বেন।
মূল্যস্ফীতি বাদেও অভিবাসন ও কর আরোপ নিয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, প্রচুর অবৈধ অভিবাসীকে তিনি বের করে দেবেন এবং দেশে বেশ কিছু পণ্যের আমদানির ওপর উচ্চ কর আরোপ করবেন। সমস্যা হলে এ দুটোই মূল্যস্ফীতি বাড়াতে ভূমিকা রাখবে।
এ ছাড়া ট্রাম্প রাষ্ট্রীয় ঋণে ট্রিলিয়ন ডলার যোগ করার পরিকল্পনা করেছেন। এটি হলে বন্ডের বাজারে প্রভাব পড়বে। বাড়ির মর্টগেজ ও তারল্য ঋণ এবং গাড়ি কেনার মতো বিষয়গুলো আরও ব্যয়বহুল হয়ে যাবে।
অক্সফোর্ড ইকোনমিক্সের প্রধান মার্কিন অর্থনীতিবিদ রায়ান সুইট বলেন, ‘এই নির্বাচনের ফলাফল উপেক্ষা করা উচিত হবে না রিপাবলিকানদের। ভোটাররা মূল্যস্ফীতি পছন্দ করেন না এবং তারা এটি ভুলবেন না।’
তবে এখনো সুনির্দিষ্টভাবে বলা যাচ্ছে না ট্রাম্প তার প্রতিশ্রুতি রাখবেন কি না। অনেক বিনিয়োগকারীই মনে করছেন ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের তিন ট্রিলিয়ান ডলার মূল্যের আমদানি বাজারে কর আরোপ করতে যাবেন না এবং তিনি কাগজপত্র না থাকা লাখ লাখ অবৈধ অভিবাসীকেও ফেরত পাঠাবেন না। তারা হয়তো ঠিকই বলছেন। কারণ প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের কড়া প্রতিশ্রুতি দিয়ে পরে নরম হয়ে যাওয়ার নজির রয়েছে। দায়িত্ব শুরু হওয়ার পর অনেক কিছুই বদলে যায়।
এটি হলেও ট্রাম্পের বিপদই বেশি। যুক্তরাষ্ট্রের দুই-তৃতীয়াংশ ভোটার (৬৭ শতাংশ) জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি ভালো নেই বা দুর্বল অবস্থায় রয়েছে। মাত্র ৩২ শতাংশ বলেছেন অর্থনীতি ভালো বা অসাধারণ অবস্থায় রয়েছে। যারা অর্থনীতি ভালো নেই বা দুর্বল রয়েছে বলে জানিয়েছেন, তাদের ৬৯ শতাংশ ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছেন। এ ছাড়া ট্রাম্পের জয়ের নেপথ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা ল্যাটিনো ভোটারদের ৪০ শতাংশ জানিয়েছেন, অর্থনীতি এক নম্বর সমস্যা। ফলে ভোটাররা জীবনযাত্রার খরচ নিয়ে কতটা বিরক্ত তা সহজেই বুঝা যাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দাদের খরচ আগের তুলনায় বেড়েছে। গড়ে প্রত্যেক মাসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি পরিবারের ১ হাজার ১২০ ডলার বা তার বেশি খরচ করতে হয়। অথচ ২০২১ সালের জানুয়ারিতেও এ খরচ কম ছিল।
আয়ও কিছুটা বেড়েছে। গড় আয় প্রতি মাসে ১ হাজার ১৯২ ডলার। তার মানে দাঁড়াচ্ছে, মানুষ যা আয় করছেন, তার পুরোটাই প্রায় চলে যাচ্ছে দামের ঊর্ধ্বগতির কারণে। এগুলো গড় হিসাব। মূল চিত্র আরও অনেক ভিন্ন। বহু মানুষের আয় বাড়েনি। তারা দামের ঊর্ধ্বগতির সঙ্গে তাল মেলাতে পারছেন না। সিএনএনের ফিল ম্যাটিংলি বলেন, ট্রাম্প পেনসিলভানিয়ায় এমন অনেক কাউন্টির ডেমোক্র্যাট ভোটারদের দলে টেনেছেন, যারা এরকম পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
এখন ট্রাম্প যদি কাপড়, খেলনা, আসবাব, বাসাবাড়ি এবং গৃহস্থালি পণ্য, জুতা ও ভ্রমণ দ্রব্যাদির ওপর কর আরোপ করে। তাহলে মার্কিনিদের বছরে খরচ হবে অন্তত ৪ হাজার ৬০০ কোটি ডলার। এ তথ্য দিয়েছে দেশটির ন্যাশনাল রিটেইল ফাউন্ডেশন। এ প্রসঙ্গে ওয়েস্টউড ক্যাপিটালের ব্যবস্থাপনা অংশীদার ড্যানিয়েল অ্যালপার্ট বলেন, ‘আমরা দুই দিকেই নেতিবাচক একটি পরিস্থিতি তৈরি করব। একদিকে আমাদের দেশীয় পণ্য ও সেবার দাম বেড়ে যাবে… এবং অন্যদিকে চাকরি বা মজুরিতে আমাদের তেমন কোনো উন্নতি হবে না।’
ট্রাম্পের প্রস্তাবিত কর পরিকল্পনা পছন্দ করেননি রক্ষণশীল অর্থনীতিবিদ স্টিফেন মুর। তিনি ট্রাম্পের অন্যান্য অ্যাজেন্ডা মেনে নিলেও কর আরোপের ‘ভক্ত নন’ বলেই জানিয়েছেন।
মুর আরও বলেন, ট্রাম্প যদি কর আরোপকে আলোচনার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে, তাহলে আমার সমস্যা নেই। তবে আমি আমদানি পণ্যের ওপর নাটকীয়ভাবে কর বাড়ুক তা চাই না। আমার উদ্বেগ হলো, এটিকে টেনে বেশি দূরে নিয়ে গেলে আপনি ইটের বদলে পাটকেল পরিস্থিতিতে পড়বেন।’
ফলে ট্রাম্প আদতে কী করবেন, সেটিই এখন দেখার বিষয়। সূত্র: রয়টার্স