ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানানো বিশ্ব নেতাদের মধ্যে প্রথম একজন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘ইতিহাসের সবচেয়ে বড় প্রত্যাবর্তনের জন্য অভিনন্দন!’ এর আগেও ট্রাম্পকে হোয়াইট হাউসে ইসরায়েলের সর্বকালের সেরা বন্ধু বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।
গত মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইরানের পারমাণবিক চুক্তি বাতিল করে দিয়েছিলেন। সেই সঙ্গে আরব দেশেগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য ঐতিহাসিক কিছু চুক্তি করেছেন। আবার জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী স্বীকৃতি দিয়ে সেখানকার সমর্থনও অর্জন করেছেন।
ফলে ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদ ইসরায়েলের জন্য ভালো ছিল বলে মনে করছেন সাবেক ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত মাইকেল ওরেন। তিনি বলেন, ইসরায়েল-ফিলিস্তিন ও সর্বোপরি মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান পরিস্থিতি নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পুনর্বিবেচনা করবেন বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু আমাদের অবশ্যই স্পষ্টভাবে বুঝতে হবে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে এবং তিনি কি জন্য দাঁড়িয়েছেন। প্রথমত, ট্রাম্প যুদ্ধ পছন্দ করেন না। কারণ তিনি এগুলোকে ব্যয়বহুল মনে করেন। ট্রাম্প ইসরায়েলকে গাজার যুদ্ধ দ্রুত শেষ করারও আহ্বান জানিয়েছেন। এ ছাড়া দখলকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতিরও সমর্থন করেন না। এমনকি সেসব দখল করা এলাকার কিছু অংশ সংযুক্ত করার পক্ষে রয়েছেন এমন ইসরায়েলি নেতাদের বিরোধিতাও করেছেন তিনি।
ট্রাম্পের এ রকম দুই ধরনের নীতির ফলে নেতানিয়াহুর বর্তমান শাসক জোটের কট্টর ডানপন্থি দলগুলোর সঙ্গে সংঘাত দেখা দিতে পারে। তারা অবশ্য এরই মধ্যে হুমকি দিয়েছেন যে প্রধানমন্ত্রী তাদের কথা না মানলে সরকার পতনের আন্দোলন শুরু হবে। এ ক্ষেত্রে নেতানিয়াহু নতুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে যা চাইবেন তা পাবেন কি না, তা নিয়ে ব্যাপক অনিশ্চয়তা রয়েছে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের দাবি এবং জোট অংশীদারদের দাবির মধ্য থেকে একটি বেছে নিতে হয়েছিল নেতানিয়াহুকে। তিনি সে সময় তার জোটকেই বেছে নেন। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে তার বৈরিতা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়। এ রকম অবস্থায় মাইকেল ওরেন মনে করছেন, নতুন প্রেসিডেন্টের (ট্রাম্প) সঙ্গে নেতানিয়াহুকে ভিন্নভাবে এগোতে হবে। যদি ট্রাম্প জানুয়ারিতে দায়িত্ব গ্রহণ করে বলেন, ঠিক আছে, এই যুদ্ধ শেষের জন্য আপনাকে এক সপ্তাহ সময় দিলাম। তা হলে নেতানিয়াহুকে তা সম্মানের সঙ্গে গ্রহণ করতে হবে।
ফিলিস্তিন-লেবাননে হামলা অব্যাহত
এদিকে ফিলিস্তিন ও লেবাননের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রতিনিয়ত হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। গতকাল আল-জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, উত্তর গাজায় ভোর থেকে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ১৩ জন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া যুদ্ধবিধ্বস্ত এ অঞ্চলের অন্যান্য স্থানে আরও চারজন নিহত হয়েছেন বলে চিকিৎসা সূত্রে জানা গেছে। আর দক্ষিণ লেবাননের জন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ৫২ জনের মৃত্যুর বিষয় নিশ্চিত করেছে।
গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে অন্তত ৪৩ হাজার ৪৬৯ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১ লাখ ২ হাজার ৫৬১ জন। অন্যদিকে লেবাননে অন্তত ৩ হাজার ১০২ জন নিহত এবং ১৩ হাজার ৮১৯ জন আহত হয়েছেন। সূত্র: বিবিসি, আল-জাজিরা