বিদ্রোহীদের আক্রমণের পর দলে দলে আলপ্পো ছাড়তে থাকেন বাসিন্দারা। ছবি: সংগৃহীত
বিদ্রোহীদের দখলে যাওয়ার পর ধীরে ধীরে সচল হতে শুরু করেছে সিরিয়ার আলেপ্পোর জনজীবন। শহরটি থেকে নৈশকালীন কারফিউ প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। খাবারের দোকানে আবারও পাওয়া যাচ্ছে রুটি। ট্রাফিক পুলিশ ফিরে এসেছে রাস্তার মোড়ে মোড়ে। বিদ্রোহীদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট টেলিকম নেটওয়ার্কের মাধ্যমে যোগাযোগও বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইন্টারনেট সংযোগেরও অগ্রগতি লক্ষ করা গেছে। সিরিয়ার হামা শহর দখলের পর হোমসের দিকে অগ্রসর হচ্ছে বিদ্রোহীরা। ওই শহর থেকে বাসিন্দারা পালিয়ে যেতে শুরু করেছে। এ ছাড়াও রাশিয়া নিজ নাগরিকদের সিরিয়া থেকে সরে আসার নির্দেশ দিয়েছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স আলেপ্পোর বেশ কয়েকজন বাসিন্দা ও কিছু ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে এ খবর জানিয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, মূলত এসব পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত আল-তাহরির আল শামস (এইচটিএস) পশ্চিম ও সিরিয়ার কাছে প্রমাণ করতে চাইছে যে, তারা নির্ভরযোগ্য এবং বাশার আল-আসাদের বিকল্প হিসেবে ভূমিকা রাখতে সক্ষম।
এইচটিএসকে এখনো সন্ত্রাসী দল হিসেবেই ধরে যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্ক ও জাতিসংঘ। দলটি বেশ কয়েক বছর ধরেই নিজেদের ভাবমূর্তি ঠিক করার চেষ্টা করছে। ৫২ বছর বয়সী মোহাম্মদ খলিল বিদ্রোহী প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমরা ভেবেছিলাম পরিস্থিতি অত্যন্ত খারাপ হবে। কিন্তু তরুণ বয়সীরা ভালোই সামলে নিয়েছে।’ খলিল আলেপ্পোর একটি পর্যটন প্রতিষ্ঠানের মালিক।
এইচটিএস জানিয়েছে, তারা পশ্চিমের জন্য কোনো হুমকি নয়। দলটি এরই মধ্যে ইদলিবের বড় একটি অংশ দখলে রেখেছে। পরিত্রাণ সরকার নামে একটি প্রশাসনও প্রতিষ্ঠা করেছে, যারা ৩০ লাখের কাছাকাছি মানুষকে ৫ বছর ধরে শাসন করছে। সেখানে তাদের নির্বাচিত সরকার রয়েছে। তুরস্কের লিরা তারা মুদ্রা হিসেবে ব্যবহার করছে এবং সিরিয়া ফোন নামে নিজেদের নেটওয়ার্কও রয়েছে, সেটি এখন আলেপ্পো পর্যন্ত বিস্তৃত করেছে। থিংক ট্যাংক ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ বলছে, শরিয়া আইনের কট্টর ব্যাখ্যা ও প্রয়োগও এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে ওই এলাকায়।
তবে আলেপ্পো নতুন চ্যালেঞ্জ হাজির করেছে বিদ্রোহীদের সামনে। ওই শহর এবং একই নামের প্রদেশে সিরীয় খ্রিস্টান, আর্মেনিয়া, কুর্দ ও শিয়া মুসলিমরা বসবাস করেন। তাদের অনেকেই বিদ্রোহীদের নিয়ে শঙ্কিত। তবে আলেপ্পোর সংখ্যালঘুসহ সবাইকে টেক্সট মেসেজ দিয়ে আশ্বস্ত করেছেন বিদ্রোহীরা। সে বার্তায় জানানো হয়েছে, কাউকে ঝুঁকির মুখে ফেলা হবে না এবং মৌলিক সেবাগুলো সচল থাকবে।
হোমস থেকে পালাচ্ছেন মানুষ
এদিকে এইচটিএসের বিদ্রোহীদের অগ্রসর হওয়া অব্যাহত থাকার আশঙ্কায় হাজার হাজার মানুষ সিরিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম নগরী হোমস থেকে পালিয়ে যাচ্ছে। এক যুদ্ধপর্যবেক্ষক গত বৃহস্পতিবার এ খবর জানান।
ব্রিটেনভিত্তিক যুদ্ধপর্যবেক্ষক সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানায়, হোমসের আশপাশের এলাকা থেকে বিদ্রোহীদের অগ্রগতির ভয়ে হাজার হাজার মানুষ সিরিয়ার উপকূলের দিকে পালিয়ে যাচ্ছে। নগরীর উপকণ্ঠে বসবাসকারী খালেদ এএফপিকে বলেন, উপকূলীয় তারতুস নগরীর দিকে তাদের যাত্রার সড়কটি শত শত গাড়ির আলোয় ঝলমল করছিল। সূত্র: রয়টার্স, এএফপি