
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় চলমান ইসরায়েলি হামলার পাশাপাশি শীতের প্রকোপে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। ঠাণ্ডা আবহাওয়ার কারণে গত রবিবার থেকে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত গাজায় ছয় শিশু এবং এক নার্স মারা গেছেন। গাজার সরকারি মিডিয়া অফিসের প্রধান ইসমাইল থাওয়াবতেহ জানিয়েছেন, মানবিক বিপর্যয় আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
চলমান যুদ্ধের কারণে গাজার বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলো অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তাঁবুতে বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছে। এর মধ্যে মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে দেখা দিয়েছে তীব্র শীত। দুই সপ্তাহ ধরে ধারাবাহিক সাত ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা গাজার শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য সংকটময় পরিস্থিতি তৈরি করেছে। পর্যাপ্ত পোশাক ও কম্বলের অভাবে নবজাতকসহ শিশুরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। গত রবিবার থেকে উপত্যকায় ভারী বৃষ্টি আরও দুর্ভোগ সৃষ্টি করেছে।
মাত্র তিন সপ্তাহ বয়সী সিলা আল-নাজমেহ হাইপোথারমিয়ায় (তীব্র ঠাণ্ডা) মারা গেছে। তার পরিবার গাজার দক্ষিণাঞ্চলের একটি অস্থায়ী শিবিরে বসবাস করছিল, যেখানে প্রচণ্ড শীত পড়েছে। সিলা তার বাবা-মা ও দুই ভাইবোনসহ ১০ বারের বেশি স্থানচ্যুত হয়েছেন।
শুধু সিলা নয়, আরও অনেক নবজাতক এবং শিশু শীতের প্রকোপে মারা যাচ্ছে। গত সোমবার মধ্য গাজার আল আকসা শহিদ হাসপাতালে তীব্র ঠাণ্ডায় মৃত্যু হয়েছে এক মাস বয়সী শিশু আলি আল-বাতরানের। এর মাত্র একদিন আগেই বাতরানদের দেইর-আল-বালাহ এলাকার জীর্ণ তাঁবুতে মারা গেছে তার যমজ ভাই জুমা আল-বাতরান। মৃত্যুর সময় জুমার মাথা ‘বরফের চেয়েও ঠাণ্ডা’ ছিল বলে জানান তার বাবা। স্থানীয় চিকিৎসক ড. আহমদ আল-ফারা জানান, অপুষ্টির কারণে মায়েরা পর্যাপ্ত দুধ সরবরাহ করতে পারছেন না, আর খাদ্যসামগ্রীর অপ্রতুলতা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে।
গাজার স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, শিশুদের মৃত্যুর অন্যতম কারণ অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রগুলোর অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, মৌলিক চাহিদার অভাব এবং যুদ্ধের প্রভাবে অকালজন্ম।
জাতিসংঘের তথ্যানুযায়ী, ইসরায়েলি হামলার কারণে গাজার ৯০ শতাংশ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। পরিস্থিতি এতটাই শোচনীয় যে, শিশুদের শীতজনিত কারণে মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। ইসমাইল থাওয়াবতেহ এ বিপর্যয়ের জন্য ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের সমর্থকদের দায়ী করেছেন। ইসরায়েলের হামলায় অক্টোবর ২০২৩ থেকে এখন পর্যন্ত ৪৫ হাজার ৫০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
এদিকে গাজায় একের পর এক জাতিসংঘকর্মী হত্যার বিষয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক ত্রাণ ও পুনর্বাসন সংস্থা-ইউএনআরডব্লিউয়ের প্রধান ফিলিপ্পে লাজ্জারিনি।
এক টুইট বার্তায় তিনি বলেছেন, ‘বিশ্বের সামনেই এই অবিরাম বিভীষিকা সংঘটিত হচ্ছে।’
তিনি আরও জানান, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত সংস্থাটির ২৫৮ জন কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। তাদের বিভিন্ন স্থাপনায় কমপক্ষে ৬৫০ বার হামলা হয়েছে এবং এখন পর্যন্ত ২০ জন জাতিসংঘকর্মী ইসরায়েলের বন্দিশালায় আটক রয়েছেন। এ ছাড়া সংস্থাটি অভিযোগ করেছে, ইসরায়েল ‘পরিকল্পিতভাবে’ গাজায় ত্রাণসামগ্রী সরবরাহে বাধা দেওয়া অব্যাহত রেখেছে। সূত্র: বিবিসি ও আল-জাজিরা