
অভিবাসী রোধে মেক্সিকো সীমান্তে সেনা মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত বুধবার দেশটির সামরিক বাহিনীর একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সিবিএস নিউজকে বলেছেন, ১ হাজার সেনাসদস্য এবং নৌবাহিনীর ৫০০ সদস্য ক্যালিফোর্নিয়ার সান ডিয়েগো এবং টেক্সাসের এল পাসোতে স্থানান্তর করা হবে। তবে গতকাল বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি এক নথির সূত্রে সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, প্রকৃতপক্ষে ১০ হাজার সৈন্য মোতায়েন করা হতে পারে।
সরকারি সংস্থা কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রোটেকশনের (সিবিপি) নথিটি ট্রাম্পের অভিষেকের এক দিন পরের। এতে সংস্থাটিকে সহায়তা করার জন্য ১০ হাজার সেনা পাঠানোর পরিকল্পনা উল্লেখ করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে দেড় হাজার সেনা সীমান্তে আগে থেকেই অবস্থানরত আড়াই হাজার সেনার সঙ্গে যোগ দেবে বলে জানা গেছে।
তারা সেখানে ‘সীমান্ত মিশন’ নিয়ে কাজ করবে। তবে তারা আইন প্রয়োগের কাজে জড়িত থাকবে না বলে জানান এই কর্মকর্তা। দুটি সি-১৭ এবং দুটি সি-১৩০ বিমান ও কয়েকটি হেলিকপ্টারসহ এ সেনা সদস্যদের মেক্সিকোর নিকটবর্তী যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্তে পাঠানো হবে। ভারপ্রাপ্ত প্রতিরক্ষা সচিব রবার্ট সেলেসেস বলেছেন, পাঁচ হাজারের বেশি অবৈধ অভিবাসীকে সরানোর জন্য সামরিক বিমান সরবরাহ করা হবে।
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিটকে ট্রাম্পের সর্বশেষ নির্বাহী আদেশ সম্পর্কে প্রশ্ন করলে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ সীমান্তে ১ হাজার ৫০০ অতিরিক্ত সেনা পাঠানো হবে বলে জানান তিনি। যারা অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করবে তাদের পরিণতি ভোগ করতে হবে বলেও মন্তব্য করেন লেভিট।
তিনি বলেন, আমেরিকান জনগণ এমন একটি সময়ের জন্য অপেক্ষা করছে, যাতে আমাদের প্রতিরক্ষা বিভাগ প্রকৃতপক্ষে দেশের নিরাপত্তাকে গুরুত্বের সঙ্গে নেয়। এটি আমেরিকান জনগণের ১ নম্বর অগ্রাধিকার। প্রেসিডেন্ট ইতোমধ্যেই সেই লক্ষ্যে কাজ করছেন। লেভিট আরও জানান, ট্রাম্পও যুক্তরাষ্ট্র থেকে অবৈধ অভিবাসীদের বিতাড়িত করাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন।
অবৈধ অভিবাসন রোধে হোয়াইট হাউসে ২৬৩-১৫৬ ভোটে ‘লেকেন রাইলি’ আইনের একটি সংশোধিত সংস্করণ পাস হয়েছে। গত সোমবার শপথ নেওয়ার পর আইনসভায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রথম জয় এটি। যেহেতু এটি ইতোমধ্যেই সিনেটে পাস হয়েছে, তাই বিলটিকে এখন আইনে পরিণত করতে তার স্বাক্ষরের জন্য যাবে। এই বিলটি অনিবন্ধিত একজন অভিবাসীর হাতে নিহত এক নারীর নামে নামকরণ করা হয়েছে। বিলটিতে সুনির্দিষ্ট অপরাধে অভিযুক্ত, গ্রেপ্তার বা দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে এমন অনিবন্ধিত অভিবাসীদের আটক করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আটকযোগ্য অপরাধের পরিধি বাড়ানোর জন্য সিনেটে চূড়ান্ত সংস্করণে দুটি সংশোধনী যুক্ত করা হয়েছে। হাউস অব রিপ্রেজেনটিটিভের ৪৫ জনেরও বেশি ডেমোক্র্যাট সংস্করণটিকে সমর্থন করার পক্ষে ভোট দিয়েছেন। সিনেটের ডজনখানেক ডেমোক্র্যাট সদস্য বিলটিকে সমর্থন করেছেন। অভিবাসন বিষয়ে তারা যে ডানপন্থি হতে পারেন, এটি সেদিকেই ইঙ্গিত করে।
মেক্সিকোর দক্ষিণ সীমান্তজুড়ে অভিবাসনের ক্ষেত্রে বাইডেন প্রশাসনের তীব্র সমালোচনা করেছেন ট্রাম্প। বর্তমান অভিবাসনকে ‘আক্রমণ’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন তিনি। বাইডেন প্রশাসনের সময়ে সীমান্ত অতিক্রম রেকর্ড স্তরে পৌঁছেছিল। তবে ট্রাম্প নির্বাচনে জয়লাভ করার এবং ক্ষমতা গ্রহণের আগেই এ সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমতে শুরু করে।
এদিকে মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লডিয়া শেইনবাউম বলেছেন, অভিবাসন নিয়ে মেক্সিকো এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে। স্থানীয় সময় গতকাল দেশটির এক সংবাদ সম্মেলনে শেইনবাউম বলেছেন, এ বিষয়ে মেক্সিকোর পররাষ্ট্রমন্ত্রী জুয়ান রামন দে লা ফুয়েন্তে এবং মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও গত মঙ্গলবার প্রথম ফোনালাপ করেছেন।
দুর্যোগ-ত্রাণ নিয়ে নতুন বাজেট-যুদ্ধ শুরু: ট্রাম্প
ফক্স নিউজে সম্প্রচারিত এক সাক্ষাৎকারে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, কংগ্রেসে বাজেট নিয়ে লড়াই করতে হবে। বাজেটে লস অ্যাঞ্জেলেস এবং উত্তর ক্যারোলাইনার জন্য দুর্যোগ সহায়তার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেছেন তিনি।
দাবানলের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে ট্রাম্প বলেন, লস অ্যাঞ্জেলেসের সবকিছু বদলে গেছে। কারণ লস অ্যাঞ্জেলেসে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হবে।
অনুষ্ঠানের উপস্থাপক শন হ্যানিটি বলেন, উত্তর ক্যারোলাইনার ভোটাররা তাকে (ট্রাম্প) ভোট দিয়েছে এবং সেপ্টেম্বরের হারিকেন হেলিনের কারণে তারা এখনো ভুগছে। এ সময় ট্রাম্প বলেন, ডেমোক্র্যাটরা উত্তর ক্যারোলাইনা নিয়ে চিন্তা করে না। রাজ্যগুলোকে ফেডারেল তহবিল দেওয়ার বিষয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, ‘আমি বরং দেখতে চাই রাজ্যগুলো তাদের নিজস্ব সমস্যার সমাধান করছে।’ সূত্র: বিবিসি